Breaking

Search Content

Follow Us

রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

একটি খারাপ ভাবনার পরিনাম || বিকাশের সূত্রের প্রথম ভাগ।

 



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু । 


আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - একটি ভুল ভাবনার পরিনাম কি হতে পারে? - বিকাশের সূত্রের ১ম ভাগ ।


বন্ধুরা আমরা সকলেই নিজের মনের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে আগে থেকেই ফলের আশা করে ফেলি। আর যখন এই সংসার আমাদের আশানুরূপ ফল দেয় না, তখন আমরা নিরাশ হয়ে পড়ি। আমরা এটা ভুলে যাই যে এই সংসারের মধ্যকেন্দ্র আমাদের ইচ্ছা নয়। এই সংসার সর্বদা আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী চলে না । কিন্তু বন্ধুরা যখন আমরা আমাদের ইচ্ছা গুলি কে একটু ঢীলা করে দেব তখন আমরা পাব - যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা কি ভাবি, তা সর্বদা আমাদের সামনে একটি বিকল্প হয়ে থাকে। খুশি অথবা দুঃখ যেটি ইচ্ছে সেটিকে বেছে নিতে পারি।



বন্ধুরা আপনার কি কখনো এমনটা অনুভব হয়েছে? আপনি সকালে গিয়ে আপনার নিজের গাড়িতে বসলেন। গাড়ি স্টার্ট করলেন। কিন্তু, গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে না। আপনি এক্সেলেরেটর কে আরো জোরে দাবালেন কিন্তু, তাও গাড়ি এগোচ্ছে না। তখন আপনার মনে পড়ল হ্যান্ড ব্রেক তো আপনি ডিসএঞ্জেজডই করেননি। হ্যান্ডব্রেক চালু থাকা অবস্থাতেও যদি আপনি এক্সেলেটর কে দাবাতে থাকেন, তাহলে এর দুটি পরিণাম হতে পারে। প্রথমত ইঞ্জিন হিট আপ হয়ে ব্রেক ডাউন হয়ে যাবে অথবা ব্রেকটি হিট আপ করে গলে যেতে থাকবে।


কিন্তু, আমরা সকলেই জীবনে সব সময় নিজের হ্যান্ডব্রেক চালু রেখেই চলি। এই হ্যান্ড ব্রেক টি হল আমাদের চিন্তা ভাবনা, বিচার, ইমোশন,শোক,ভয় ইত্যাদি। এগুলিকে কি করে আমরা ডিসএঞ্জেজ্ড করব? এর কলা কৌশল আমাদের শিখতে হবে। 


একজন জিওলজিস্ট গঙ্গায় রিসার্চ করতে করতে গঙ্গার ম্যাপ টি নিয়ে সে ম্যাপ বরাবর ঋষিকেশ থেকে নিচের দিকে নামছিলেন। তিনি বারবার নকশাটির সঙ্গে গঙ্গার মিল খুঁজেতে চাইছিলেন। নকশা বা ম্যাপটি যেখানে বলে গঙ্গাকে এইবার ডান দিকে ঘুরতে হবে সেইখানেই নদী ডান দিকে ঘোরে, নকশা যেখানে বলে এবার নিচে যেতে হবে - হ্যাঁ , সেখানেও ঠিকই যাচ্ছে। কিন্তু, একটি জায়গায় অন্তর দেখা দিল। তার নকশা অনুযায়ী গঙ্গাকে বাঁদিকে যেতে হতো। কিন্তু, সেখানে গঙ্গা সোজা হয়ে গেছে নিচের দিকে। সে তখন নকশাটি কে ফেলে দিলেন এবং বললেন যদি গঙ্গা আমার নকশা অনুযায়ী না বয়ে চলে তাহলে রিসার্চের কোনো মানেই হয়না। 


এখন দেখুন সে ভুলটি কোথায় করছিল - গঙ্গা নদীর কি তার নকশা অনুযায়ী চলতে হবে, নাকি নকশাটি কে গঙ্গা নদীর সঙ্গে ম্যাচ করতে হবে। আমরাও এই সংসারে এই ভুলগুলো করে থাকি। আমরা নিজের মনে আগে থেকেই এক্সপেক্টেশন, আশা বানিয়ে নি। আর যখন এই সংসার আমাদের আশানুরূপ ফল দেয় না, তখনই আমাদের দুঃখের সূত্রপাত হয় এবং আমরা নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু, আমরা এটা ভুলে যাই এই সংসারের মধ্য কেন্দ্র আমাদের ইচ্ছা নয়। যখন আমরা আমাদের ইচ্ছাগুলোকে একটু ঢিলে করে দেবো তখন আমরা পাব যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা কি ভেবে থাকি এটা সদা আমাদের সামনে একটি বিকল্প হয়ে থাকে। আমরা চাইলে তো খুশি হতে পারি অথবা দুঃখে নিরাশ হতে পারি।


এই বিষয়টি দুটি রোগীর কাছ থেকে বুঝুন, একই হাসপাতালে আই সি উউতে দুটি রোগী শুয়ে ছিল। দুজনা ওখানেই থাকতো 24 ঘন্টা, এই জন্য তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তারা একে অপরকে নিজের পরিবার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজের সম্পর্কের কথা বার্তা বলতে থাকতো। প্রতিদিন প্রথম রোগীটিকে এক ঘন্টা করে বসিয়ে রাখা হতো যাতে করে তার ফুসফুস থেকে ফ্লুয়েড ড্রেন আউট হয়ে যায়। এই জন্য সে এক ঘন্টা ওই ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে পারত। আর বাইরে খুব সুন্দর একটি বাগান ছিল, যার মাঝখানে একটি ঝর্ণার ফোয়ারা ছিল। যার মধ্যে হাঁস দেখা যেত। কখনো পাখিরা এসে সেখানে স্নান করত। এদিক ওদিকে বেঞ্চ পাতা ছিল যেখানে বৃদ্ধ মানুষেরা এসে গল্পগুজব করত এবং রোদ পোহাত। আর ছোট বাচ্চারা সাইকেল চালাতে ওখান দিয়ে। এই সমস্ত দৃশ্যের বর্ণনা যখন প্রথম রোগীটি তার পাশে শুয়ে থাকা তার মিত্রের কাছে করত তখন সেই দ্বিতীয় রোগীটির মন খুবই ভরে উঠত। ঐ দৃশ্যগুলি হাসপাতালের প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। এই সমস্ত দৃশ্যের বর্ণনা শুনে দ্বিতীয় রোগীটি অপেক্ষা করতে লাগলো, কবে সে ঠিক হয়ে উঠবে এবং তার পাশের মিত্রকে অর্থাৎ প্রথম রোগীকে ওই দৃশ্যের বর্ণনা করবে। একদিন সে তার মনে একটি খারাপ বিচার আনল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল ভগবান আমার প্রতি এত নিষ্ঠুর কেন। এই বিষয়টি দ্বিতীয় রোগীটি নিজের মনে পুষে রাখতে রাখতে নিজের মনের মধ্যে এই বিষয়টিকে খুব বড় করে ফেলল। সে তার পাশের মিত্রকে অর্থাৎ প্রথম রোগী কে সহ্য করতে পারছিল না। 


এরপর একটি রাত্রে প্রথম রোগী শরীর খারাপ হয়ে যায় প্রচুর এবং সে কাশতে থাকে। এমন মনে হচ্ছিল যে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এখন উচিত এটা ছিল ওই পরিস্থিতিতে এমার্জেন্সি বেলটি বাজানো। কিন্তু তার মনে এটার বিচার আসে না অথবা তারা এমন কষ্ট হচ্ছিল সে এই বিষয়টি সম্পর্কে ভুলে গিয়েছিল। এর পরবর্তী উপায়টি ছিল দ্বিতীয় রোগীটি নিজের এমার্জেন্সি বেলটিকে বাজানো। কিন্তু দ্বিতীয় রোগীটি নিজের মনের মধ্যে ঘৃনা পুষে রেখেছিল প্রথম রোগীর জন্য সেই কারণে সে মনে মনে ভাবতে লাগল- ওর কষ্ট হচ্ছে হোক , এটা ওর প্রাপ্য। খুব ভালো হয়েছে। 


এরপর প্রথম রোগীটি আরো তিন চারবার কাশির পর সে চুপ হয়ে গেল। পরের দিন নার্সরা এল এবং মৃতদেহটিকে দেখলেন এবং কিছু না বলেই মৃতদেহটিকে নিয়ে চলে গেলেন। তখন দ্বিতীয় রোগীটি ভাবতে থাকলো তিন দিন কেটে যায় কোনো রকমে যাতে কেউ আমার ওপরে সন্দেহ না করে। তারপর দ্বিতীয় সেই রোগীটি রিকুয়েস্ট করল- তার বিছানা জানালার ধারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন সেখানের মেডিকেল অ্যাটেনডেন্সরা বললেন- অবশ্যই। এরপর সে আবার বলল এখন তো আমি কিছুমাত্রায় সুস্থ তাহলে আমি কি এখন বসতে পারি। তখন নার্সেরা বললেন অবশ্যই বসতে পারেন। তারপর তাকে বসিয়ে দেওয়া হল জানালার ধারাতে। সে তিন সপ্তাহ ধরে হসপিটালে ভর্তি থাকা সত্বেও এই প্রথমবার জানালা দিয়ে বাইরে দেখল। সে বাইরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। সেখানে একটি পুরনো ভাঙ্গা বাড়ির দেয়াল ছিল। এরপর ওই রোগীটি মেডিকেল অ্যাটেনডেন্স দের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন- এখানে এটা কি? তখন উত্তরে তারা বললেন এটা একটি পুরনো ওয়ারহাউজ। সাইডে এই ওয়্যারহাউজ টি থাকার কারণে আপনি যখন জানালা দিয়ে দেখেন তখন বাইরে কিছুই দেখা যায় না।


 তখন সেই দ্বিতীয় রোগীটি অবাক হয়ে বলল তাহলে আমার মিত্র যা দেখতো সেটা কি ছিল? তখন হাসপাতালের অ্যাটেনডেন্সরা বললেন- সেটা তার মনের সুন্দরতা ছিল। 


এই সংসার সকলের জন্য একই রকম। আমরা কি দেখতে চাই, আমরা কি ভাবতে চাই এটা সম্পূর্ণ আমাদের মনের বিচারের উপর নির্ভর করে। বলতে গেলে এটা সম্পূর্ণ আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। আমরা যখন আমাদের নিজের মনের মধ্যে দুঃখের বিচার রেখে থাকি তখন আমরা এই জিনিসটি ভুলে যাই যে আমরা সব সময় বেছে নিতে পারি - চাইলে ওই পরিস্থিতিতেই আমরা কারণ বানাতে পারি খুশি হওয়ার জন্য ও নিজের মনের মধ্যে ভালো বিচার আনার জন্য। তাহলে আমরা সবসময়ই খুশি থাকতে পারবো। 


তো এই আনন্দে থাকার জন্য মোকাবিলার প্রথম দিন আমরা সাধনা এবং মনকে ঠিক করার যন্ত্র জানতে পেরেছি। পরিস্থিতির সাথে নিজের আনন্দকে বেঁধে রাখা উচিত নয় এবং মনে রাখা প্রয়োজন আমরা আমাদের ভাবনা কে বেছে নিতে সক্ষম। সুখে থাকার ভাবনা গুলোকে বেছে নাও এবং আনন্দের সঙ্গে জীবন যাপন করো। 


তো বন্ধুরা আশাকরি লেখাটা পড়ে আপনারা সম্বৃদ্ধ হয়েছেন এবং আমাদের সুখে থাকার একুশটি কলাকৌশলের মধ্যে প্রথম দিনের এই একটি বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- নিজের জীবনের সুখ প্রাপ্তির উপায়? আত্মসুখ, আত্ম প্রাপ্তি ও আত্মবিকাশের জন্য প্রথম ছোটো পদক্ষেপটি কি? Click here


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা