Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

জীবনে সুখে ও আনন্দে থাকার জন্য কি প্রয়োজন || বিকাশের সূত্র ২য় ভাগ।

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু । 


আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - জীবনে সুখে ও আনন্দে থাকার জন্য কি প্রয়োজন? (বিকাশের সূত্র ২য় ভাগ)


জীবনে আনন্দ পাওয়ার জন্য কোন জিনিসটি আবশ্যক? কতটা পরিমাণ মূলধন বা সম্পদের প্রয়োজন? কত বড় ঘর থাকা প্রয়োজন?  কেমন প্রকৃতির মাঝে আমরা রয়েছি তার উপর নির্ভর করে আমরা আনন্দিত হই। আশ্চর্যের বিষয় বেশিরভাগ মানুষের কাছে এই সকল কিছু থাকা সত্বেও তারা দুঃখী। কিন্তু অন্য লোকেদের কাছে এই সকল কিছু না থাকা সত্বেও তারা সুখী। এর মানে কি দাঁড়ালো? আনন্দ বা সুখ বাহ্যিক জগতের ঐ সমস্ত বস্তুর উপর নির্ভর করে না। আসলে আমরা কেমন ভাবি নিজের মন থেকে তার পরিণামে আনন্দ বা সুখ কিংবা দুঃখের প্রাপ্তি হয়। 



একদা এক রাজা ছিল। সে নিজের মহলের ছাদে ঘুরে ঘুরে হাঁটাচলা করছিল এবং নিজের দুঃখ গুলি নিয়ে সমস্যায় ছিলেন। রানী তার কথা শোনেন না এবং তার রাজকুমারও তার কথায় গুরুত্ব দেয় না, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এর উপরে আবার রাজ্যের একটি খণ্ড বিদ্রোহ করে চলছে। এই সকল বিষয় নিয়ে রাজা অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন। ঠিক তখনই মহলের পাশের একটি ঝুপড়ি থেকে হাসির আওয়াজ রাজার কানে এলো। ওই ঝুপড়ি থেকে খুবই ভালো ভাবে হাসির আওয়াজ আসছিল। তখন রাজা ভাবছিলেন এদের কাছে কোনো মূলধন নেই, একটি ঝুপড়িতে বসবাস করে এরা, তা সত্ত্বেও কত আনন্দ এদের জীবনে। কিন্তু, আমার কাছে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও আমার জীবন দুঃখে জর্জরিত। তখন রাজার আপন মনেই প্রশ্ন জাগলো - এটা কি করে সম্ভব? রাজা তখন নিজের মন্ত্রী কে ডাকলেন এবং বললেন এই বিষয়টি সম্পর্কে।


তখন মন্ত্রী বললেন, মহারাজ আপনার এত অমূল্য জ্ঞান চাই! তাহলে আমাকে 99 টি সোনার কয়েন বা স্বর্ণমুদ্রা দিন। তখন রাজা বললেন, যদি 99 টি স্বর্ণমুদ্রা জ্ঞানের একটি মাত্র ছোট সূত্রও পাওয়া যায় তাহলেও তা খুবই ভালো। এরপর 99 টি কয়েন আনা হলো, মন্ত্রী সেই কয়েনগুলি একটি ছোট পুটলিতে রেখে ভালোভাবে বেঁধে দিলেন। এরপর রাত হতেই মন্ত্রী ওই 99 টি কয়েনের পুটলিটিকে সেই গরীব ঝুপড়িটির দিকে ছুড়ে দিলেন। সকালে যখন ওই গরিব পরিবারের সদস্যরা ঘুম থেকে উঠলেন তারা দরজা খুলেই দেখলেন সেই পুটিলিটি পড়ে আছে। তখন তারা নিজেদের পরিবারের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলো - যে এটা কি জিনিস? তারা ভাবতে লাগল তাদের পাশের বাড়ির প্রতিবেশী কেউ কোনো তন্ত্র করছে তাদের উপর। তাদের মনে আরো খেয়াল আসছিল এর ভিতরে কোনো শত্রু দ্বারা রাখা বিস্ফোরক পদার্থোও থাকতে পারে। তাও তারা সাহস করে শেষমেষ সেটিকে খুলল। আর তারা অবাক হয়ে দেখল সোনা। তারা এর আগে শুধুমাত্র  দোকানে দূর থেকে সোনা দেখেছিল মাত্র। আর এখন তারা সোনার মালিক হয়ে গেল, এটা ভেবে তারা খুবই খুশি হচ্ছিল। তারা সেই স্বর্ণমুদ্রা গুলিকে গুনতে লাগলো। গুনতে গুনতে তারা শেষমেষ 99টি স্বর্ণমুদ্রা পেল। তারা তখন একটু ভাবুক হয়ে পড়ল। এটা আবার কি রকম সংখ্যা? ভগবানের যখন দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তাহলে পুরোপুরি 100 টি স্বর্ণমুদ্রাই দিতে পারতো। তারা এমনটা ভাবতে লাগলো। 


যদি কোন ক্রিকেটার যেমন ধরুন শচীন টেন্ডুলকার যদি সেঞ্চুরি করার থেকে একটি রান আগেই আউট হয়ে যায়। অর্থাৎ 99 রানে আউট হয়ে গেলে পুরো ভারতবর্ষই শোক মানায় এবং ভাবতে থাকে শচীন টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি কেন করল না! 


অনেকটা এরকমই ওই পরিবারের অবস্থা হয়ে গেল। তারা ভাবলেন ঠিক আছে সমস্যা নেই, ভগবান আমাদের 99 টি স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছে, আরেকটি আমরা নিজেরাই কামিয়ে তারপরে কিনব। তারা তখন ভাবলেন প্রতিদিন তারা তাদের খরচ কমিয়ে দেবে এবং কিছু পরিমাণ অর্থ জমিয়ে রাখবে এবং একটি নির্দিষ্ট দিনের পর সেই জমানো টাকা দিয়ে তারা ১টি স্বর্ণমুদ্রা কিনবে।


এরপর যেই দিনেই ঘরে কিছু পরিমাণ অর্থ না জমানো হতো সেই দিনই প্রচুর পরিমাণে ঝামেলা লেগে যেত তাদের মধ্যে। তখন সেই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকতো ছোটখাটো বিষয় নিয়ে। স্বামী তার স্ত্রীকে বলতো - তুমি বেশি পরিমাণে ঘির ব্যবহার করে দিয়েছো রান্না করার ক্ষেত্রে। অন্যদিকে আবার স্ত্রী তার স্বামীকে বলতো- তুমি ঠিক ভাবে কামাই করতে পারনি। এরপর ধীরে ধীরে ওই পরিবারের শান্তি শেষ হয়ে গেল। 


একমাস পর রাজা আবারো তার মহলের ছাদে বিচরণ করছিল। তখন ওই ঝুপড়ি থেকে ঝামেলার আওয়াজ রাজার কানে এসে পৌঁছালো। তখন রাজা অত্যন্ত আশ্চর্য হলেন এবং তার মন্ত্রী কে বললেন, মন্ত্রী এদের কি হয়ে গেল হঠাৎ ? 

তখন মন্ত্রী রাজাকে বললেন, মহারাজ একেই বলে 99 অংকের খেলা বা 99 এর চক্কর। এই পরিবার 99 এর চক্বরে ফেঁসে গেছে। তারা এটি ভাবছে আমাদের কাছে যা আছে তা সুখী হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নয়। আগে তাদের সুখের কারণ এটি ছিল যে এরা বর্তমান সময়ে বেঁচে থাকতো। যতটা ভগবান দিয়েছিলেন তাদের তারা তা আনন্দের সঙ্গে মজা করে কাটাতেন। 


এখন আপনারাই ভাবুন যে আমরা সবাই 99এর চক্করে কি ফাঁসিনি?  

যারা এই প্রবচনটি পড়ছেন সবার কাছে খাওয়ার জন্য দুটো রুটি,পড়ার জন্য দুটো জামা আছে, তাও এত হায় হায় করে দুঃখের বহিঃপ্রকাশ কেন হচ্ছে?

শুধু তিনটে বেডরুম আছে চারটি বেড রুম হলে আরো আনন্দ হতো। আমি তো ডেপুটি ম্যানেজার যখন জেনারেল ম্যানেজার হবো তখন আনন্দ পাবো। কেবল এই সব নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে আমরা চলতে থাকি। 


এখন আমাদের ভারতবর্ষে মানুষদের মনে হয় এখানে তো অতটা আনন্দ নেই। সবথেকে সমৃদ্ধ দেশ হলো আমেরিকা, সেখানে পৌঁছে যাব তো আনন্দ হবে। আমি যাই প্রতি বছর আমেরিকা এবং জিজ্ঞাসা করি তাদের অর্থাৎ ওখানকার ভারতবাসীদের যে, আমাদের ভারতবর্ষের মানুষরা মানেন যে আমেরিকায় বসবাসকারীরা সুখী হন। আপনারা কি সুখী? 


তখন তারা উত্তরে বলেন স্বামীজি কি বলবো ওই একই কথা এখানেও। কিন্তু, ভারতীয়রা তা মানেন না। ভারতীয় কিছু মানুষ উল্টো ভাববে - আমেরিকায় বসবাসকারী কিভাবে সুখী হবে না!


যাইহোক এরপর দক্ষিনে ছিল ফ্লোরিডা। তো সেখানে একজন ফর্সা মহিলা আমায় জিজ্ঞাসা করলেন স্বামীজি আপনার পরবর্তী প্রবচন কোথায় হবে? আমি বললাম নিউইয়র্ক-এ। নিউইয়র্ক! তার চোখ অবাক হয়ে খুলে রইল। সে আমাকে বলে , আপনি তো আনন্দের নগরে যাচ্ছেন। এরপর আমি যখন নিউইয়র্কে পৌছালাম তখন আমি সেখানকার মানুষকে বললাম আমেরিকা নিউইয়র্ক সম্পর্কে এসব ভাবেন। আপনারা কি সুখী? 


তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করা আবশ্যকতা নেই। তারা যখন মেট্রোতে যায়, যেমন এখানে আমাদের মুম্বাই এর লোকেরা যায়। তখন খারাপ অবস্থা তো হয়েই যায় সব আনন্দ লুটে নেওয়া হয়। নিউইয়র্ক এর মানুষদের দেখেই বোঝা যায় যে কতটা দুঃখী তারা। কিন্তু সব ব্যক্তি এই ভ্রান্তিতে আছে যে, আমার কাছে যতটা আছে তা সুখের জন্য পর্যাপ্ত নয়। 

সকলেই এটা ভাবতে থাকেন, আমি তো লাখপতি। যে কোটিপতি সে হয়তো সুখী। আবার কোটিপতিরা বলেন বিলগ্রেট আরাবপাতি; সুতরাং, সে সুখে আছেন। আর আমাদের শাস্ত্র-বেদ বলে, সকল মানুষ তোমাদের সুখ বাইরের বস্তুর ওপর নির্ভর করেই না। সুখ হল ভেতরের জিনিস, নিজের ভাবনা থেকে পাওয়া যায়। নিজের ভাবনা চিন্তা পরিবর্তন করো, আর জীবনে আনন্দ পাও। 


তো আজকের শিক্ষা হলো এই যে, আমাদের সুখ বস্তু থেকে পাওয়া যাবে, নাহলে আমরা সারা জীবন এইভাবে দৌড়াতে থাকব, সেখানে পৌঁছাব তারপরে আনন্দ পাব - এইরকম চিন্তা ভাবনা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। 


একজন ভারতের প্রসিদ্ধ ইংরেজ লেখক আছেন 'রাস্কিন বন্ড'। তিনি বলেছেন, জীবনে দুটি নিরাশা আছে। প্রথমটি হল কোনো জিনিসের আশা করলাম কিন্তু সেটা পেলাম না তাহলে - নিরাশা। আর দ্বিতীয়টি হল সেই জিনিসটা আশা করলাম আর পেয়ে গেলাম এবং পাওয়ার পরে তারমধ্যে কিছুই নেই এমনটা মনে হতে থাকে। তো এখন ছুটে চলেছে একটি লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যার যাত্রা দুঃখময় এই আশাতে কি লক্ষ সুখময় হবে। কিন্তু, সব শেষে যদি লক্ষটিই খারাপ হয়ে থাকে তো ? 


একারনেই জীবনযাপনের পদ্ধতি বা কৌশল হলো আমাদেরকে আমাদের জীবনের এই যাত্রা সুখময় বানাতে হবে ও আনন্দের সঙ্গে প্রত্যেকটা মুহূর্ত কাটাতে হবে। আরেকটি জিনিস সব সময় মাথায় রাখতে হবে বস্তুর উপর সুখ না খুঁজে, বিচারের মাধ্যমে নিজের কার্য করতে হবে।  আর এই বিচার গুলিকে বেছে নেওয়া বা চিহ্নিত করার কলাকৌশল টি আমাদেরকে শিখতে হবে।


বন্ধুরা আজকে আমরা বিকাশের এই দ্বিতীয় শিক্ষাটি শিখলাম। আশাকরি বন্ধুরা সম্পূর্ণ লেখাটি আপনারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- একটি খারাপ ভাবনার পরিণাম কি হতে পারে? (বিকাশের সূত্রের ১ম ভাগ)  Click here


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা