নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - ভারতের বেদ এবং পুরান শুরু থেকেই একে অপরের সম্বন্ধী বা পরিপূরক। কিন্তু, তাও আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছেন যারা বেদ এবং পুরানের মধ্যে কি পার্থক্য সেটা জানেন না।
**|বেদ|**
বেদ শুধুমাত্র ভারতবর্ষের নয় এটা সম্পূর্ণ সংসারের প্রাচীন গ্রন্থ। বেদের মধ্যে উল্লেখিত তথ্য বৈজ্ঞানিকরাও সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। এমনটা বলা হয়ে থাকে বেদ থেকেই বিশ্বের অন্যান্য ধর্মের উৎপত্তি। 'বেদ' শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত 'বিদ' শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো 'জ্ঞান'। বিদ্যা, বিদ্যান এই শব্দগুলির উৎপত্তি এখান থেকেই হয়েছে। বেদের অপর নাম হল- শ্রুতি। কারণ এই জ্ঞান ঈশ্বর দ্বারা ঋষি মুনিদের শোনানো হয়েছিল। ওই সময়ে বেদ লিখিত রূপে ছিল না। এই জন্য এই জ্ঞান কে শুনে শুনেই মনে রাখা হতো, যার কারনে এর নাম শ্রুতি। এটি স্মৃতি( অর্থাৎ, যা শুনে শুনে মনে রাখা হয়েছে সেই স্মৃতি) ও বুদ্ধির উপর ভিত্তি করে জ্ঞান প্রদান করে। বেদকে হাজার বছরের পুরনো বলে মনে করা হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে বেদ ১৯০ কোটি বছরেরও অধিক পুরনো। বর্তমানে সাধারণত বেদ চার প্রকার। যথা- ঋক, সাম, যজুঃ, অথর্ব। এছাড়াও আরো কিছু বেদ আছে সেগুলি হল- ধনুর্বেদ, আয়ুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ, স্থাপত্যবেদ। কিন্তু , এমনটা বলা হয়ে থাকে সবার প্রথমে শুধুমাত্র একটিই বেদ ছিল। দ্বাপর যুগের সমাপ্তির আগে পর্যন্ত বেদ শুধুমাত্র একটিই ছিল। কিন্তু, এরপরে বেদ কে সহজ ভাবে বোঝার সুবিধার্থে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঋকবেদের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান, যজুর্বেদ এর মধ্যে মুখ্য সম্পর্কিত জ্ঞান, সামবেদের মধ্যে কাম সম্পর্কিত জ্ঞান, অথর্ব মধ্যে অর্থ সম্পর্কিত জ্ঞান (এখানে অর্থ বলতে মূলধনকে বোঝানো হয়নি, কোনো বিষয় কি বা কেমন সেটা বোঝার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে) এই চার প্রকার ভেদে এই চার ধরনের বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আর বন্ধুরা এই চার প্রকার বেদর চার ধরনের জ্ঞান থেকেই- ধর্মশাস্ত্র, মোক্ষ শাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র লেখা হয়েছে।
বেদের মধ্যে মানুষ সম্পর্কিত সকল কথা উল্লেখ করা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় - জ্যোতিষ, রসায়ন, আয়ুর্বেদ, প্রকৃতি, গণিত, ব্রহ্মাণ্ড, ভূগোল, বিধি-বিধান, আদি, ইতিহাস প্রভৃতি সকল বিষয়ে বেদে উল্লেখ রয়েছে। এমনটা মনে করা হয় অগ্নি, বায়ু ও সূর্য তপস্যা করে ঋগবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এর জ্ঞান লাভ করেছিল। এই কারণে এই বেদ গুলিকে অগ্নি, বায়ু ও সূর্যের সঙ্গে জোড়া হয়ে থাকে। ঋগবেদ কে সবথেকে প্রথম ও প্রাচীন বেদ, একে বেদের প্রথম ভাগও বলা যায়।
ঋগ্বেদে রয়েছে 10 টি অধ্যায়। এখানে দেবতাদের কিভাবে আহ্বান করা যায় সেই সকল মন্ত্র উল্লেখিত আছে। এর সাথেই চিকিৎসা ও দেবলোকে থাকা দেবতাদের স্থিতি বাদেও আরো অন্যান্য অনেক তথ্য মেলে।
যজুর্বেদ এর দুটি শাখা। যার নাম কৃষ্ণ ও শুক্ল। এই বেদে বিভিন্ন যজ্ঞের প্রক্রিয়া ও মহাযজ্ঞের বাস্তবিক মন্ত্র উল্লেখ করা রয়েছে।
সামবেদে ঋগবেদকেই গীতের মাধ্যমে রচনা করা হয়েছে। এরমধ্যে সকল মন্ত্রই বলতে গেলে ঋকবেদেরই।
অথর্ববেদে প্রাকৃতিক ঔষধ, আয়ুর্বেদ ও বিভিন্ন জরিবুটির বা গাছ-গাছড়ার, রহস্যময় বিদ্যার উল্লেখ পাওয়া যায়।
** |পুরান |**
পুরাণের সংখ্যা সবমিলিয়ে 18 টি। এমনটা মনে করা হয় যে বেদকে লিখিত রূপে প্রকাশ করার পরেও 100 কোটি শ্লোক বেঁচে ছিল। এই শ্লোকের সংকলন বেদব্যাস দ্বারা করা হয়েছিল। যার মধ্যে মুখ্য 18টি সংকলন কে পুরান বলা হয়েছে। এছাড়াও বেঁচে থাকা শ্লোক গুলি দিয়ে 28টি উপপুরাণও লেখা হয়েছিল।
মুখ্য 18টি পুরাণের মধ্যে 6টি পুরান ব্রহ্মা, 6টি বিষ্ণু, 6টি মহেশ্বরের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করা হয়েছে।
ভগবান বিষ্ণু কে সমর্পিত 6টি পুরাণের নাম হল- বিষ্ণুপুরাণ, নারদ পুরাণ, বামন পুরান, মৎস্য পুরাণ, গরুড় পুরাণ ও শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুরাণেরই অনুসরণ করে থাকে।
ব্রহ্মকে সমর্পিত 6টি পুরাণ হলো- ব্রহ্মপুরাণ, ভবিষ্যৎ পুরাণ, অগ্নিপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ ও পদ্মপুরাণ।
ভগবান শিব মহাদেব কে সমর্পিত 6টি পুরাণ হলো- শিব পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, কূর্ম পুরান, মার্কণ্ডেয় পুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বারাহ পুরান।
• বেদ-পুরাণের মধ্যে পার্থক্য কী?
বন্ধুরা বেদে মানব জীবন সম্পর্কিত সকল কথার বর্ণনা পাওয়া যায়। বেদে শ্লোকের মাধ্যমে নিয়ম বলা হয়েছে যে কিভাবে জীবনে কার্যের মাধ্যমে সঠিকভাবে সব কিছু করা যায় । কিন্তু, কলিযুগে বর্তমান সময়ের মানুষদের বেদকে বোঝা খুবই কঠিন। প্রত্যেক তথ্যের পিছনে কি ধারণা ও মন্তব্য রেয়েছে তা বোঝা আমাদের পক্ষে খুবই মুশকিল। এইজন্যই বন্ধুরা পুরানে বেদের নিয়মগুলি কে গল্পের ছলে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। গল্প ও ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা সহজেই বুঝতে পারব আমাদের জীবনে কিভাবে ও কোন পথে অগ্রসর হতে হবে।
তো বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন বেদ এবং পুরাণের মধ্যে কি পার্থক্য বা মেলবন্ধন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার, ধন্যবাদ ।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- জীবনে সুখে ও আনন্দে থাকার জন্য কি প্রয়োজন? Click here
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা