Breaking

Search Content

Follow Us

বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মহাভারতের যুদ্ধে অভিমন্যুর মৃত্যুর সময়কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন তাকে বাঁচালেন না ?

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।


আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল

 - "মহাভারতের যুদ্ধে অভিমন্যুর মৃত্যুর সময়কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন তাকে বাঁচালেন না ?"


বন্ধুরা মহাভারত হলো রহস্যে আবৃত একটি এমন ঝুলি যাকে আপনি যত বেশি মোচড়াবেন ততোই উৎসুক হয়ে পড়বেন। এই মহাভারতেরই অন্তর্গত আজকে আপনাদের 'অভিমুন্যর' সঙ্গে যুক্ত এমন এক রহস্যের কথা জানাবো-  যা জানার পর আপনিও অবাক হয়ে যাবেন।


বন্ধুরা এই কথাটি আমরা সকলেই জানি যে কৌরবরা যুদ্ধের সকল নিয়ম লংঘন করে অভিমন্যুকে বধ করেছিল। কিন্তু, আপনি কি জানেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ - অভিমন্যুর মৃত্যুর ব্যাপারে আগে থেকেই জানতেন। তাহলে এখানে একটিই প্রশ্ন ওঠে - ভগবান কৃষ্ণ যদি সত্যিই আগে থেকে জানতেন তাহলে তিনি ঘটনাটি ঘটার পূর্বেই বাঁধা দিলেন না কেন?      যে ভগবান কৃষ্ণ পুরো মহাভারতে নিজের বুদ্ধি এবং চাতুর্যের মাধ্যমে পান্ডবদের পক্ষ নিলেন তাহলে তিনি অভিমুন্য কে এত ছোট বয়সে বীরগতি প্রাপ্ত করার (বীরের মতো মৃত্যুবরণ) থেকে বাঁধা দিলেন না কেন? 


বন্ধুরা মহাভারতের এক কথা অনুযায়ী যখন মহাভারতের মহাযুদ্ধ শুরু হবে হবে করছিল তখন ওইসময় সকল দেবতা নিজের পুত্রদের পৃথিবীলোকে বিভিন্ন অবতার রূপে পাঠাচ্ছিলেন। আর এভাবেই যখন চন্দ্রমার পুত্র 'বজ্রের' পৃথিবীলোকে আসার সময় আসলো তখন চন্দ্রমা - ব্রহ্মার নির্দেশ মানতে রাজি হয় না। আর বললেন তার পুত্র 'বজ্র'- কোনো অবতারে রূপান্তরিত হবেন না। চন্দ্রমার এই কথা শোনার পর বাকি সকল দেবতা চন্দ্রমার উপর নারাজ হলেন। এরপর বাকি অন্যান্য সকল দেবতা চন্দ্রমা কে বুঝিয়ে বলতে লাগলেন - ধর্মের রক্ষা করা আমাদের সবার পরম কর্তব্য। আমারা কখনো এ থেকে পিছু হটতে পারবোনা। এই জন্য আপনিও আপনার মূল কর্তব্য থেকে বিমুখ হবেন না। তাদের এইভবে জোর করার ফলে চন্দ্রমা মন থেকে না চেয়েও রাজী হতে বাধ্য হয়। কিন্তু, এর সাথেই তিনি বিভিন্ন শর্ত রাখেন। 


'চন্দ্রমা' সবার প্রথমে শর্ত রেখে বললেন - তার পুত্র বজ্র বেশি সময়ের জন্য পৃথিবীতে থাকবে না। কেননা চন্দ্রমা অধিক সময়ের জন্য তার পুত্রকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। 


চন্দ্রমার দেওয়া দ্বিতীয় শর্তটি ছিল-তার পুত্র বজ্র -পৃথিবীলোকে যাওয়ার পর অর্জুন পুত্র অভিমন্যুর অবতার ধারণ করবে। আর সে যখন একা যুদ্ধ করতে করতে বীরগতি প্রাপ্ত (বীরের মতো মৃত্যুবরণ) হবে, তখন তার পরাক্রমশালী ক্ষমতার প্রশংসা আসতে চলা বহুযুগ ধরে হয়ে যাবে।


শুধু এটুকুই নয় চন্দ্রমা সকল দেবতার কাছে এই শর্ত রেখেছিলেন- অভিমন্যুর পুত্রই পরবর্তীতে কুরুবশের উত্তরাধিকারী হবে। চন্দ্রদেবের এইসকল শর্তের জন্য অন্যান্য দেবতা তার ওপর রুষ্ট হন। কিন্তু, যেহেতু যুদ্ধের কথা ছিল সেই অনুযায়ী সকল দেবতা-  চন্দ্রদেবের সকল শর্তই মেনে নেয়। আর তখনই চন্দ্রদেবের পুত্র বজ্র - অর্জুনের অবতারের জন্মগ্রহণ করে পৃথিবীলোকে।


বন্ধুরা মহাভারতের যুদ্ধের ১৩ তম দিনে ১৬ বছর বয়সী অভিমুন্যর যুদ্ধ কৌরবদের সঙ্গে সংঘটিত হয়। আর অভিমন্নু দ্রোণাচার্য দ্বারা পরিকল্পিত চক্রব্যূহের মধ্যে প্রবেশ করে কৌরবদের বড়ো বড়ো যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয় এবং তাদের সঙ্গে নিজের অসীম পরাক্রমশালী ক্ষমতার মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যান। শুধু তাই নয় অভিমুন্য একাই মহাপরাক্রমী জয়দৃতের পুত্র লক্ষণ কে মেরেছিলেন। কিন্তু, অভিমুন্য চক্রব্যূহ ভেদ করে কিভাবে তার ভিতরে প্রবেশ করতে হয় তা তিনি জানতেন। কিন্তু, কীভাবে চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে হয় সেই কৌশল তিনি জানতেন না। এইজন্য কৌরবরা সবাই মিলে একত্রিত হয়ে তাকে ঘিরে ফেলে; আর জয়দৃত তলোয়ার দিয়ে তাকে হত্যা করে। অভিমন্যুর মৃত্যুর পর চন্দ্রমার সকল শর্ত পূরণ হয়েছিল।


অভিমুন্য কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীলোকে ছিলেন। আর তার চরম সাহসের প্রশংসা আজও ত্রিলোকেই শোনা যায়।


এছাড়াও আরেকটি বিশেষ কারণ ছিল-সেটা হল ভগবান কৃষ্ণ নিজেও চাইতেন অভিমুন্য যাতে যুদ্ধ মারা যায়। কেননা সে অর্জুনের ব্যবহারের সঙ্গে খুব ভালোভাবেই পরিচিত ছিলেন। মহাভারতের যুদ্ধের প্রথম দিন যখন অর্জুন নিজের সামনে বিরোধী পক্ষ হিসাবে নিজের আপন পরিবারের সকল সদস্যদের দেখলেন তখন অর্জুনের মন ধীরে ধীরে যুদ্ধ থেকে সরে যাচ্ছিল। অর্জুন কোথাও না কোথাও নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাইছিলেন না। যে কারণেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চাইছিলেন এমন কোনো ঘটনা ঘটুক - যার ফলে অর্জুনের নিজের পরিবার সম্পর্কিত মোহরূপি সুতলিটি একটি বড় ক্রোধ ও প্রতিকার করার ভাবনায় পরিবর্তিত হয়।বন্ধুরা অভিমন্যুর মৃত্যুর পর ঠিক এমনটাই হলো। অর্জুন কৌরবদের ওপর প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলেন। 'অর্জুন' - জয়দৃত সমেত কৌরব দের আরো অনেক শক্তিশালী যোদ্ধাদের বদ করে দেয়।


এইজন্য বন্ধুরা এটা মনে করা হয় মহাভারতের যুদ্ধকালীন অবস্থায় অভিমন্যুর মৃত্যুর সময়কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু না করাটা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধনীতি ছিল।


বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছে। ভালো লাগলে আপনজনেদের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা