নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো - "শ্রীকৃষ্ণের মতে - ভালো মানুষের সঙ্গে সর্বদা ধোকা কেন হয় ?" (জীবন বদলে দেওয়া গল্প)
বন্ধুরা যেমনটা আমরা জানি এখন কলিযুগ চলছে এবং এই যুগে অধিকতর লোকেদের খারাপ নজরে দেখা হয়। কিন্তু, এমনটাও নয় যে এই অভিশপ্ত যুগে আপনি ভালো মানুষের দেখা পাবেন না। আর আপনি কোথাও না কোথাও যদি ভালো মানুষের দেখা পান তাহলে তখন আপনিও লক্ষ করে দেখেছেন হয়ত এই যুগে ভালো মানুষের সঙ্গে সবসময় খারাপই হয়ে থাকে। আপনি কি কখনো এটা ভেবেছেন এমনটা কেন হয়? - যদি এর কারণ আপনি না জেনে থাকেন তাহলে এই লেখা টি সম্পূর্ণ পড়ুন।
বন্ধুরা এই বিষয় সম্পর্কিত বর্ণনা- শ্রীমদ্ভগবদগীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একবার করেছিলেন। বন্ধুরা যেমনটা আমরা সকলেই জানি গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানুষের মনে ওঠা সকল প্রশ্নের উত্তর বিস্তারের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা অনুসারে অর্জুনের মনে যখনই কোনো সন্দেহ দেখা দিত তখনই অর্জুন সেই প্রশ্নের সমাধানের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে চলে যেতেন। এরকমই একটি দিনের কথা - অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন- হে বাসুদেব, আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগে উঠছে এবং এর সমাধান আপনিই করতে পারেন। তখন এই শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে বললেন - নিজের মনের দুবিধা আমার কাছে বিস্তারে বলো।
তখন অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- কৃপা করে আমাকে বলুন, ভালো মানুষের সঙ্গে সবসময় ধোকা হয় কেন? যেখানে খারাপ মানুষের সঙ্গে এমনটা খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। অর্জুনের মুখে এই কথা শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একটু হাসলেন এবং বললেন - হে ধনঞ্জয়, মানুষ যেরকমটা দেখে অথবা অনুভব করে বাস্তবে অমন কিছুই হয় না। বরং, অজ্ঞানী হওয়ার কারণে সে সত্যিটা বুঝতেই পারেনা। শ্রীকৃষ্ণের এরকম কথা শুনে অর্জুন অবাক হয়ে গেলেন। আর বললেন- হে নারায়ন, আপনি কি বলতে চাইলেন? আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না; কৃপা করে স্পষ্ট ভাবে বলুন।
তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন কে বললেন - আমি তোমাকে একটি গল্প শোনাচ্ছি ; যার মাধ্যমে তুমি বুঝতে পারবে প্রত্যেক প্রাণীই তার কর্ম অনুযায়ী ফল প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ, যে খারাপ কাজ করে, তার খারাপ ফল-ই প্রাপ্ত হয়। আর যে ভালো কর্ম করে সে ভালো ফল-ই পায়। খারাপ কর্ম এবং ভাল কর্ম তো মানুষ দ্বারা করা কার্জের উপরই নির্ভর করে। প্রকৃতি প্রত্যেককেই নিজের রাস্তা বেছে নেওয়ার একটি সুযোগ দেয়। কিন্তু প্রত্যেকটি মানুষ কোন রাস্তায় চলতে চায় ভালো নাকি খারাপ সেটা সম্পূর্ণ সেই ব্যক্তির ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে।
জীবন বদলে দেওয়া গল্প
এরপর ভগবান কৃষ্ণ কথা শুরু করে বলেন, অনেকদিন আগে একটি নগরে দুটি পুরুষ থাকতেন। ওর মধ্যে একজন পুরুষ ব্যাপারি ছিলেন। যার জন্য নিজের জীবনে ধর্ম-নীতির মাহাত্ম্য ছিল প্রচুর। সে পূজা পাঠ এবং ভগবানের ভক্তিতে বিশ্বাস করত। যা কিছুই হয়ে যাক না কেন সে প্রতিদিন মন্দির যাওয়া কখনোই ভুলতো না। সে গরীব দুঃস্থদের দান করতেও কখনো ভুলতো না। সে নিত্য ভগবানের পূজা অর্চনায় লেগে থাকতেন।
অন্যদিকে ওই নগরীর দ্বিতীয় পুরুষটি প্রথম পুরুষটির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। সে প্রতিদিন মন্দির যেত কিন্তু পূজা পাঠের উদ্দেশ্য নয়; বরং মন্দিরের বাইরে থেকে চপ্পল চুরি করার জন্য। তার দান-ধ্যান, ন্যায়-নীতির সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক ছিল না। শুধু তাই নয় সে মন্দিরের ভিতরে ঢুকে মন্দিরের ধনসম্পত্তি চুরি করে নিতো। এই ভাবেই সময় কেটে যাচ্ছিল। একদিন ওই নগরীতে খুব জোরে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। যার কারণে ওই নগরীর মন্দিরটিতে শুধুমাত্র পুরোহিত ছাড়া আর কেউ ছিলনা। যখন এই বিষয়টিই দ্বিতীয় পুরুষ জানতে পারলো তখন সে মনে মনে ভাবলো এটাই সঠিক সময় মন্দিরের ধন চুরি করার। সেই অনুযায়ী দ্বিতীয় পুরুষটি ওই বৃষ্টির মধ্যেই মন্দিরে পৌঁছে গেলেন। মন্দিরে পৌঁছানোর পর ওই খারাপ ব্যক্তি পুরোহিতের নজর এড়িয়ে মন্দিরের সমস্ত ধনরত্ন এবং ঠাকুরের মূল্যবান গয়না চুরি করে নেয়। এরপর সে খুব চালাকি করে মন্দির থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
ঠিক ওই সময় ধর্ম-কর্মের উপর বিশ্বাস রাখা প্রথম পুরুষটি মন্দিরে পৌঁছায়। সে ভগবানের দর্শন করে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মন্দিরের পুরোহিত ওই ভালো ব্যক্তিটিকে চোর ভেবে নেয় এবং পুরোহিত তখন জড়ে চিৎকার করে ওঠে। পুরোহিতের চেঁচামেচি শুনে আশেপাশের সকল ব্যক্তিরা মন্দিরে গিয়ে উপস্থিত হয়। ওখানে উপস্থিত সকল মানুষই ভালো ব্যক্তিটিকে চোর ভাবতে শুরু করলো। সকল মানুষ ওই ভালো মানুষটি কে অপমান করতে লাগলো। এই দেখে ওই ভালো মানুষটি অবাক হয়ে যায় এবং সে কিছুই বুঝতে পারেনা, তার সাথে এসব কি হচ্ছে। এরপর সে কোনোভবে ওই লোকগুলির থেকে বেঁচে মন্দির থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য তখনও তার সাথ ছাড়ে না। মন্দির থেকে বেরোনোর সাথে সাথেই একটি ঘোড়ার গাড়ির সাথে তার ধাক্কা হয় এবং সে আহত হয়। এরপর সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যেতে থাকে। তখনই রাস্তায় তার দেখা ঐ খারাপ ব্যক্তির সঙ্গে হল, যে আসলে সত্যিই মন্দিরের ধন চুরি করেছিল। সে অত্যান্ত খুশি ছিল এবং নিজেই নিজেকে বলছিল- "আজ তো আমার ভাগ্যই পাল্টে গেছে, একসাথে এত ধনসম্পদ পেলাম।"
যখন এই কথা ঐ ভালো মানুষটি শুনতে পেল সে অত্যান্ত রেগে গিয়ে বাড়ি চলে গেল এবং বাড়ি গিয়ে সে তার ঘর থেকে ভগবানের সমস্ত ছবি বাইরে ফেলে দিল। সে ভগবানের উপর অভিমান করে নিজের জীবন কাটাতে লাগলো। কিছু সময় বাদে ওই দুজন ব্যক্তিরই মৃত্যু হয়ে যায়, আর দুজনেই যমরাজের সভায় উপস্থিত হয়। তখন ঐ ভালো মানুষটি নিজের পাশে দুষ্ট ব্যাক্তিকে দেখে সে যমরাজ কে জিজ্ঞাসা করল - আমি তো সব সময় ভাল কাজ করতাম পূজা-পাঠ, দান-ধর্ম যার বদলে আমি আমার পুরো জীবনে শুধু অপমান আর কষ্টই পেয়েছি। কিন্তু, অন্যদিকে এই অধর্ম করা পাপী ব্যক্তিটি জীবনে এক ব্যাগ ভর্তি ধন সম্পদের অধিকারী হলো কেন?
এই কথা শোনার পর যমরাজ ওই ভালো মানুষটিকে বললেন - হে পুত্র, তুমি ভুল ভাবছো। যেদিন তোমার ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা হল বাস্তবে ঐদিন ছিল তোমার জীবনের শেষ দিন অর্থাৎ তোমার মৃত্যুর দিন। কিন্তু তোমার দ্বারা করা ওই ভালো কাজ গুলোর জন্যই তোমার মৃত্যুটি একটি ছোটখাটো চোটে পরিবর্তিত হয়েছে। আর এই অধর্মী ব্যক্তির বিষয়ে জানতে চাও! এই অধর্মী ব্যক্তির জীবনে একটি- রাজযোগ ছিল। যার ফলে সে অনেক অনেক ধন সম্পত্তির মালিক হতে পারত। কিন্তু, সে অধর্ম করার ফলে সে যে পরিমাণ ধন সম্পদের অধিকারী হতো তার খুবই কম পরিমাণ সে পেয়েছে। তার ধন সম্পদের পরিমাণ শুধুমাত্র একটি ব্যাগের মধ্যে সামান্য পরিমাণে প্রাপ্ত হয়েছে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই গল্পকথা অর্জুনকে বলতে বলতে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন - তুমি কি এবার তোমার প্রশ্নের উত্তর পেলে? এমনটা ভাবা - যে ভগবান মানুষের ভালো কাজগুলোকে লক্ষ্য করেন না; এটা কখনো সত্য নয়। যদি আপনি ভালো কাজ করতে থাকেন তাহলে ভগবানের কৃপা আপনার উপর সব সময়ই থাকে।
বন্ধুরা এই গল্পটি থেকে এটা শিক্ষা পাওয়া যায় যে কখনো নিজের কর্ম খারাপ করা উচিত নয়। কেননা আপনার কর্মের ফল আপনাকে এই জীবনে ভোগ করতে হবে। সেই অনুযায়ী সবসময় ভালো কর্ম করার চেষ্টা করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন :- ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হল কিভাবে - Click here
আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনার ও সমৃদ্ধ হয়েছেন । ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা