নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - "ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু কিভাবে হল" সেই সম্পর্কে।
শ্রীকৃষ্ণ কে ভগবান বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করা হয়। আর এটা আমরা সকলেই জানি সৃষ্টির পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণু। কিন্তু, আপনি কখনো এটি ভেবেছেন শ্রীকৃষ্ণের অবতারে সৃষ্টির পালন কর্তার মৃত্যু কিভাবে হল?
যদি না জেনে থাকেন তবে চলুন বন্ধুরা জেনে নেয়া যাক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু কখন কিভাবে হয়েছিল।
এটা আমরা সকলেই জানি দ্বাপর যুগে ভগবান বিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণের অবতারে মর্তলোকে এসেছিলেন। কিন্তু,এই কথাটি অনেকেই জানেন না ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর আসল কারণ ছিল তার রাম অবতার করা একটি কার্যের ফল। বন্ধুরা আমরা সকলেই জানি প্রত্যেকটি ভালো ও খারাপ কাজের ফল আমাদেরকে ভোগ করতে হয়। ঠিক সেরকমই রাম অবতার করণীয় কাজের ফল ভোগ করায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছে এমনটাই মানা হয়।
এছাড়াও পৌরাণিক কথা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ ছিল মহাভারতের যুদ্ধে কৌরবদের পরাজয়। 18 দিন ধরে চলা মহাভারতের যুদ্ধে দুর্যোধনের মৃত্যুর পরে যখন যুধিষ্ঠিরের রাজ তিলক পর্ব সারা হচ্ছিল, তখন নিজের শত পুত্রের মৃত্যুর শোকে মাতা গান্ধারী সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং শ্রীকৃষ্ণ কে অভিশাপ দেন। গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণ কে অভিশাপ দিয়ে বলেন-
"যেভাবে কৌরব বংশের নাশ হয়েছে ঠিক সেরকম তোমার বংশেরও নাশ হবে।"
মহাভারতের মৌষল পর্বে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মানব রূপ পরিত্যাগ করার বর্ণনা পাওয়া যায়। এই পর্বে বর্ণিত কথা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু মহাভারতের যুদ্ধের 35 বছর পরে হয়েছিল। 35 বছর পরে দারোকা নগরীতে মাতা গান্ধারীর অভিশাপ ধীরে ধীরে কার্যকর হচ্ছিল। গান্ধারীর অভিশাপ এর ফলে দারোকা নগরীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় উঠে আসছিল। দারোকা নগরির জনগণ মদ্যপান করে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এমত অবস্থায় শ্রীকৃষ্ণ বুঝতে পেরেছিল গান্ধারীর অভিশাপ ধীরে ধীরে তার প্রভাব বিস্তার করছে। গান্ধারীর অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য শ্রীকৃষ্ণ এরপর যদু বংশীয়দের নিয়ে প্রভাসক্ষেত্র তে চলে যান। প্রভাসক্ষেত্র গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ ব্রাহ্মণদের অন্ন দান করার পর যদুবংশীয় দের বললেন- তোমরা এখন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করো।
প্রভাস ক্ষেত্র তে পৌঁছানোর কিছুদিন পরেই মহাভারতের যুদ্ধ নিয়ে চর্চা করতে থাকেন যদুবংশীয়রা। তখনই একে অপরের সঙ্গে কথা কাটাকাটির ফলে সাত্যিকি ও কৃতবর্মার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় এবং সাত্যিকি রেগে গিয়ে কৃতবর্মার ধর থেকে মুণ্ড আলাদা করে দেন। ফলে অন্যান্য সকলে একে অপরের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করতে লাগে। এই যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র পদ্যুমন ও মিত্র সাত্যিকি সমেত সকল যদুবংশীয়রা মারা যান। কেবল বাবরু ও দারুখ শুধুমাত্র বেঁচে ছিলেন।
যদু বংশের নাশের পর কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভাই বলরাম একটি সমুদ্রতটে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে পড়েন ও একাগ্ৰচীৎ হয়ে পরমাত্মায় লীন হয়ে যান। এইভাবে শেষনাগের অবতারে বলরামজি নিজের দেহ ত্যাগ করলেন, আর স্বধাম ফিরে যান।
বলরাম জির দেহত্যাগের পর একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বনে একটি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। তখন সেখানে জীরু নামে এক ব্যাধ হরিন শিকার করতে উপস্থিত হন। জিরু দূর থেকে শ্রীকৃষ্ণের পায়কে হরিণের মুখ ভেবে নেয় এবং সে কোনো বিচার না করে দূর থেকে তীর চালিয়ে দেয়। সেই তীর শ্রীকৃষ্ণের পায়ে গিয়ে লাগে। এরপর যখন জিরু কাছে গেলো তখন সে দেখলো- সে শ্রীকৃষ্ণের পায়ে তীর চালিয়ে দিয়েছে। এরপরে জিরুর খুবই পশ্চাতাপ হল। সে শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলো।
তখন শ্রীকৃষ্ণ জিরুকে বলেন, তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি কোনো ভুল করনি। এটা আমার পূর্ব জন্মের কর্মের ফল ছিল।
কৃষ্ণ জিরুকে আরো বললেন, তুমি আমার রাম অবতারের সময় 'রাজা বলী' ছিলে। যাকে আমি জঙ্গলে গাছের পেছনে লুকিয়ে হত্যা করেছিলাম। এই জন্য আমি এই জনমে নিজের মৃত্যুর কারণ ঠিক একই ভাবে তোমার হাতে বেছে নিয়েছি। এই জন্য তুমি আমার মনের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজটি করেছ। অতএব তুমি আমার আঞ্জায় স্বর্গলোক প্রাপ্ত করবে।
এরপরে জিরু সেখান থেকে চলে যায়। জিরুর যাওয়ার পর শ্রীকৃষ্ণের সারথি দারুখ সেখানে উপস্থিত হলেন। দারুখকে দেখার পর শ্রীকৃষ্ণ তাকে বললেন - হে দারুখ, তুমি দারোকা নগরীর সবাইকে গিয়ে বলে দাও পুরো যদুবংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর বলরাম সমেত শ্রীকৃষ্ণ স্বধাম ফিরে গেছেন। অতএব, সবাই যেন দারোকা নগরির পরিত্যাগ করে কারণ খুব তাড়াতাড়ি এই নগরীটি জলমগ্ন হতে চলেছে।
এরপর সেই স্থানে স্বর্গের সকল দেবতারা আসেন এবং তারা শ্রী কৃষ্ণের আরাধনা করতে থাকেন। এই আরাধনা করতে থাকাকালীন সময়ে ধীরে ধীরে শ্রীকৃষ্ণ নিজের চোখ বন্ধ করে নিলেন এবং তিনি স্বশরীর নিজের বৈকুণ্ঠধাম ফিরে গেলেন।
আরো পড়ুন:- প্রভু শ্রী রাম ও লক্ষণের মৃত্যু হল কিভাবে? Click here
আরো পড়ুনঃ সকল স্ত্রীদের মাতা সিতা থেকে শেখা উচিত এই কাজ - Click here
আশাকরি বন্ধুরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মানব শরীর পরিত্যাগ এই কাহিনী আপনাদের ভালো লেগেছে এবং লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার,ধন্যবাদ।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা