নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বিশাল সেনাবাহিনীর খাবারের ব্যবস্থা কিভাবে করা হতো?
বন্ধুরা মহাভারতের যুদ্ধ তে কৌরব দের পক্ষে ১১ অক্ষৌহিণী সেনা এবং পান্ডবদের পক্ষে ৭ অক্ষৌহিণী সেনা লড়াই করেছিল। ১ অক্ষৌহিণী সৈন্য বলতে ২১,৮৭০ টি রথ, ২১,৮৭০টি হস্তী, ৬৫,৬১০টি ঘোড়া, ১,০৯,৩৫০জন পদাতিক সৈন্য বোঝায়। এখন একটি রথে ২ জন, একটি হাতী তে ২ জন, ১ জন করে ঘোড়াতে।
এই যুদ্ধে ছোট বড় সকল যোদ্ধা মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ সেনার উপরে যোদ্ধা অংশগ্রহণ করে। কিন্তু, এখন এখানে প্রশ্ন ওঠে এত বিপুল পরিমাণের সেনার জন্য যুদ্ধের সময় ভোজন কারা বানাতেন? কি করে হত এই প্রক্রিয়াটি? আর বন্ধুরা সব থেকে বড় প্রশ্ন হল এটি যে যখন রোজ বহু সেনা যুদ্ধ করতে করতে মারা যেতেন তখন কোন হিসাবে খাবার তৈরি করা হতো?
মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কে আমরা বিশ্বের প্রথম বিশ্বযুদ্ধও বলতে পারি। কারণ ওই সময় এমন কোনো রাজ্য ছিল না, যে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। সেই সময়ে সকল রাজ্যের রাজা কৌরব অথবা পাণ্ডব যেকোনো একটি পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আমরা সবাই জানি শ্রী বলরাম আর রুকমী এই দুই ব্যক্তি ছিল যারা শুধুমাত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু এছাড়া আরো একটি রাজ্য ছিল যারা এই যুদ্ধের ময়দানে থাকা অবস্থায় তেও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। আর সেটি ছিল দক্ষিণের উদিপী বা উডিপী রাজ্য।
মহাভারত কথা অনুযায়ী যখন দক্ষিণের ওই উদিপী বা উডিপী রাজ্যটির রাজা তার সেনাদের নিয়ে কুরুক্ষেত্রের ময়দানে পৌঁছালো তখন পাণ্ডব এবং কৌরব দুই পক্ষই তাকে নিজেদের দিকে আহ্বান করলো। কিন্তু উডিপীর রাজা খুবই দূরদর্শী ছিলেন।তখন উদিপীর রাজা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে গিয়ে বলেন- হে মাধব, দুদিক থেকেই যুদ্ধ করার জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু, দুই পক্ষ কি এটা ভেবেছে যে এই দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হলে উপস্থিত দুই পক্ষের এই বিশাল সেনাদের ভোজনের ব্যবস্থাকে কে করবে?
এই কথা শ্রীকৃষ্ণ শোনার পর তাকে বললেন - হে মহারাজ, আপনি একদম সঠিক ভেবেছেন। আপনার এই কথা শোনার পর আমার মনে হচ্ছে আপনার কাছে এর কোন উপায় নিশ্চয়ই আছে। যদি আপনার কাছে এর কোনো উপায় থেকে থাকে তা কৃপা করে আমার কাছে বলুন।
এরপর উডিপীর মহারাজ বললেন - হে মাধব, আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে ভাইদের মধ্যে হওয়া এই যুদ্ধকে আমি উচিত বলে মনে করি না। এই কারণে এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। কিন্তু বর্তমানে এখন যেমন পরিস্থিতি এই যুদ্ধটি আর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এইজন্য আমার এটা ইচ্ছে যে আমি আমার সেনার সঙ্গে মিলে এইখানে উপস্থিত সকল সেনার ভোজনের ব্যবস্থা করব।
এই কথা শোনার পর শ্রীকৃষ্ণ একটু হেসে বলেন, মহারাজ আপনার বিচার অতি উত্তম। এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ লক্ষ সেনা অংশ নেবে। আর যদি আপনার মতো বুদ্ধিমান একজন রাজা তাদের ভোজনের দায়িত্ব নেন তবে আমরা সবাই ওই দিকটা থেকে নিশ্চিন্ত থাকবো। এছাড়াও আমি জানি সাগরের মত এমন বিশাল সেনার ভোজনের ব্যবস্থা করা আপনি এবং ভীম সেন ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ভীমসেন এই যুদ্ধ থেকে বিরত হতে পারবেন না। আপনার কাছে আমি প্রার্থনা করি যে আপনি এই বিশাল সেনার ভোজনের ব্যবস্থার দায়িত্ব নিন। এই ভাবেই উডিপীর মহারাজা মহাভারতের যুদ্ধের বিশাল সেনার ভোজনের দায়িত্বভার সামলান।
যুদ্ধের প্রথম দিন তিনি উপস্থিত সকল সেনার ভোজনের দায়িত্বভার সামলান। তার কৌশলতা এত সুন্দর ছিল যে দিনের শেষে অন্নের একটি দানাও নষ্ট হতো না। যত দিন বাড়তে থাকে ততই যোদ্ধার সংখ্যা কমতে থাকে। দুই পক্ষের যোদ্ধা এটি দেখে আশ্চর্য হতেন যে প্রতিদিনে উডিপীর মহারাজা কেবল ততটুকুই ভজন তৈরি করতেন যতটা প্রয়োজন। না বেশি, না কম। কেউই এটা বুঝতে পারছিলেন না যে তিনি কীভাবে বুঝতেন যে আজকে কতজন সৈন্য মারা যাবেন, কতজনের ভজন তৈরি করতে হবে?
কারণ বাস্তবিক ক্ষেত্রে এত বিশাল পরিমাণে সেনার ভজন তৈরি করাই একটি অসম্ভব ব্যাপার। তার উপর আবার একদম সঠিক পরিমাণে নির্দিষ্ট মাত্রায় ভজন তৈরি করা , রাতে অন্নের একটি দানাও বেশি বা কম না হয় - একটি চমৎকার এর থেকে কম ছিলনা।এই বিষয়টি নিয়ে সকলেই আশ্চর্য।
এইভাবে যুদ্ধের ১৮ তম দিন যুদ্ধ সমাপ্ত হল এবং যুদ্ধে পাণ্ডবরা জয়ী হলেন। নিজের রাজ্যভিষেক এর দিন শেষমেষ যুধিষ্ঠির আর থাকতে না পেরে তিনি মহারাজ উডিপীর জিজ্ঞাসা করলেন- হে মহারাজ, সমস্ত দেশের রাজারা আমাদের প্রশংসা করছে। আমাদের পক্ষে কম সেনা থাকা সত্ত্বেও আমরা আমাদের বিপক্ষকে পরাজিত করেছি যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পিতামহ ভীষ্ম, গুরু দ্রোণাচার্য এবং আমাদের জ্যেষ্ঠভ্রাতা কর্ণের মত মহারথী। কিন্তু, আমার মনে হয় আমাদের সকলের থেকে অধিক প্রশংসার অধিকারী আপনি। যিনি শুধুমাত্র মহাভারতের যুদ্ধের এই বিশাল সেনার ব্যবস্থা এমন ভাবে করছেন যাতে অন্নের একটি দানাও বেশি না হয়। যুধিষ্ঠির মহারাজ উডিপীকে বললেন - আমি আপনার থেকে এই কৌশলতার রহস্য জানতে চাই?
এই কথা শোনার পর উডিপী নরেশ একটু হাসলেন এবং যুধিষ্ঠির কে বললেন - সম্রাট আপনি যে এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা কাকে দেবেন? কার দৌলতে আপনি এই যুদ্ধটি দিতে সক্ষম হলেন? যুধিষ্ঠির বললেন এর কৃতজ্ঞতা একমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া আর কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়। তখন উডিপীর নরেশ বললেন, হে মহারাজ আপনি যাকে আমার চমৎকার বলছেন সেটাতেও ঠিক শ্রীকৃষ্ণেরই হাত রয়েছে। এটা শোনার পর ওখানে উপস্থিত সকল লোক আশ্চর্য হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন:- জেনে নিন শিব পুরাণে বর্ণিত ১০টি সংকেত সম্পর্কে , যা পেলে বুঝবেন আপনার মৃত্যু নিশ্চিত! Click here
তখন উডিপীর নরেশ এই রহস্যটি থেকে পর্দা সরিয়ে বললেন- হে মহারাজ, শ্রীকৃষ্ণ প্রতিদিন রাত্রিরে বাদাম খেত। আমি প্রতিদিন তার শিবিরে গুনে গুনে বাদাম রাখতাম এবং তার খাওয়ার পরে আবার পুনরায় গুনে দেখতাম কতগুলি বাদাম বেঁচে রয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে কটি বাদাম রোজ খেতেন তার হাজার গুণ সৈন্য ঠিক তার পরবর্তী দিনে মারা যেত। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ যদি ৫০ টি বাদাম খেতেন তাহলে আমি বুঝে নিতাম পরদিন ৫০ হাজার সৈন্য যুদ্ধে মারা যাবে। সেই অনুপাতেই আমি তারপর দিন ভোজনর ব্যবস্থা কম করে করতাম। এটাই কারণ ছিল যে কখনো ভজন নষ্ট হয়নি।
শ্রীকৃষ্ণের এই চমৎকার টি শুনে সবাই তার আগে নতমস্তক হয়ে গেল। এই কথাটি মহাভারতের সব দুর্লভ কথাগুলির মধ্যে একটি। কর্নাটকের উডিপী জেলায় অবস্থিত কৃষ্ণ মঠে এই কথা সব সময় শোনানো হয়। এমনটা মনে করা হয় এই মঠের স্থাপনা উডিপীর সম্রাট দ্বারাই করা হয়েছিল। যাকে পরবর্তীতে শ্রী মাধব আশ্চর্য এগিয়ে নিয়ে যান।
আরো পড়ুন:- জেনে নিন শিব পুরাণে বর্ণিত ১০টি সংকেত সম্পর্কে , যা পেলে বুঝবেন আপনার মৃত্যু নিশ্চিত! Click here
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সম্বৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা