নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - বালক গনেশ মস্তক কাটার পর পুনরায় বাঁচলেন কিভাবে? বালক গনেশের প্রথম মস্তকটি কি হলো?
বন্ধুরা যেমনটা আমরা সকলেই জানি হিন্দু ধর্মে যখন কোনো শুভ কাজের সূচনা করা হয় তখন সবার প্রথমে ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর প্রিয় পুত্র শ্রী গনেশের পূজা করা হয়। তারপরে অন্যান্য দেবতাদের পূজা করা হয়। আর এটাই কারণ শ্রী গনেশ দিকে 'বিঘ্নহর্তা' বলার।
বন্ধুরা আমরা সকলে এখন গনেশজির যেই গজানন স্বরূপটি দেখি তার সঙ্গে জড়িত কথাটি তো সকলেই জানেন। গনেশ জির মাথা তার ধড় থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। যার পড়ে একটি বাচ্চা হাতির গলা কেটে গনেশজিরর সঙ্গে জোড়া হয়েছিল। কিন্তু বন্ধুরা আপনারা কি জানেন গনেশ জির ধড় থেকে আলাদা হওয়া আসল মাথাটির কি হলো এবং আজকের সময়ে সেটি কোথায় আছে?
শিব পুরাণে বর্ণিত কথা অনুযায়ী ভগবান শ্রী গনেশ জির জন্ম মাতা পার্বতীর ময়লা থেকে হয়েছিল। এমনটা মনে করা হয় মাতা পার্বতী সবার প্রথমে তার শরীরের ময়লা দিয়ে একটি বালকের পুতুল তৈরি করেন। আর তারপর সেই পুতুলটিকে জীবন দান করেন। কিন্তু, সেই সময় ভগবান শিব কৈলাসে উপস্থিত ছিলেন না। বালক রুপি পুতুল টিতে জীবন দান করার পর মাতা পার্বতী স্নানের উদ্দেশ্যে জান এবং যাওয়ার আগে তিনি সেই বালকটিকে বলেন -হে বৎস, আমি স্নানের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। তুমি দুয়ারে দাঁড়িয়ে পাহারা দাও এবং আমার আজ্ঞার পালন করো। আমার আজ্ঞা বিনা কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেবেনা। এইটুকু বলার পর মাতা পার্বতী স্নানের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন।
ঠিক তখনই ভগবান শিব ফিরে এলেন এবং মাতা পার্বতীর ভবনে যেতে লাগলেন। ঠিক তখনই বালক গণেশ ভগবান শংকর কে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দিলেন। তখন ভগবান শিব বিচলিত হয়ে পড়লেন এবং তিনি ওই বালকে জিজ্ঞাসা করলেন- কে তুমি? তখন বালক গণেশ বলল আমি মাতা পার্বতীর পুত্র গণেশ। আমি তার আজ্ঞা পালন করছি। তার আজ্ঞা বিনা আমি কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেব না। এই কথা শোনার পর ভগবান শংকর এই বালকটিকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, গণেশ কিছুতেই বোঝেনা। তখন ক্রোধের বসে এসে ভগবান শিব বালক গনেশ এর মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেন এবং তারপর ভগবান-শিব ভিতরে প্রবেশ করেন।
ওদিকে মাতা পার্বতী যখন গণেশের মৃত্যুর খবর পান তখন সে ক্রুদ্ধ হয়ে বিলাপ করতে শুরু করেন। তখন ত্রিলোকে হাহাকার মেতে যায়। মাতা পার্বতী কে প্রসন্ন করার জন্য ভগবান শিব তখন একটি বাচ্চা হাতির মাথা গণেশের ধড়ের সঙ্গে জুড়ে দেন। আর তাকে পুনরায় জীবিত করে তোলেন। এমনটা মনে করা হয় ভগবান গণেশ তখন থেকেই 'গজানন' বলে পরিচিত হলেন।
দ্বিতীয় আরেকটি কথা অনুযায়ী যখন বালক গণেশের জন্ম হলো তখন কৈলাস পর্বতে উৎসব পালন করা হচ্ছিল। এই উৎসবে সকল দেবতা বালক গণেশ কে আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য শিবধাম পৌঁছেছিলেন। তখন শনিদেব কৈলাস পর্বতে তো গিয়েছিলেন কিন্তু, তিনি গনেশকে না দেখেই সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন। এই দেখে পার্বতীর ক্রুদ্ধ হন এবং তিনি শনিদেবের কাছে কারন জানতে চান। তখন শনিদেব মাতা পার্বতী কে বললেন- যদি তার দৃষ্টি গণেশের উপর পড়ে তাহলে তার অমঙ্গল হবে। এই শোনার পর মাতা পার্বতী তার কথা না মেনে তাকে গণেশ কে দেখার আদেশ দেন। যখনই শনিদেব গণেশ কে দেখলেন তখনই গণেশের মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে বিলীন হয়ে গেল। তখন গণপতি নিচে পড়ে যান ও মাতা পার্বতী অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর ভগবান বিষ্ণু একটি সদ্যজাত হাতির মাথা কেটে গণেশের সঙ্গে জুড়ে দেন। এটা তো ছিল বালক গণেশের ধর থেকে মাথা আলাদা হওয়ার কাহিনী।
চলুন বন্ধুরা এবার জেনে নেওয়া যাক ভগবান গণেশের বাস্তবিক আসল মাথাটি কোথায় গেল?
ধর্ম জ্ঞানীদের মতানুযায়ী ভগবান শিব বালক গনেশ এর সেই মাথাটি একটি গুহায় রেখে দেন। এই গুহাটি বর্তমানে 'পাতাল ভুবনেশ্বর গুহা' নামে পরিচিত। এই গুহায় অবস্থিত গনেশ জির মূর্তি কে 'অর্ধ গনেশ' বলা হয়। বর্তমানে এই গুহাটি উত্তরাখণ্ডের পিথরাগড়ের রাঙ্গলি হাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এমনটা মনে করা হয় এই গুহায় রাখা ভগবান গণেশের কাটা মস্তকটিকে ভগবান শিব রক্ষা করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে।
আরো পড়ুন: - মহাভারতের বিশাল সেনাবাহিনীর খাবারের ব্যবস্থা কে কিভাবে করতেন? Click here
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সম্বৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা