Breaking

Search Content

Follow Us

বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

কলিযুগের সমাপ্তি কিভাবে হবে - কলিযুগের শেষের পর কি পুনরায় সত্য যুগ আসবে || সত্যযুগের সূচনা কিভাবে হবে || Satyug after Kalyug explained

 



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু । 


বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো - 

" কলিযুগের প্রকৃতি কিরূপ হবে এবং কিভাবেই বা কলিযুগের অন্ত হবে ; কলি যুগের পরে কি পুনরায় সত্যযুগ আসবে? সত্যযুগের প্রকৃতি কিরকম হবে ? "



বন্ধুরা আপনারা সকলেই জানেন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী কাল অর্থাৎ সময়কে চারটি যুগে ভাগ করা হয়েছে। সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ, কলিযুগ। এখন আমরা বর্তমানে কলিযুগে রয়েছি। কলিযুগ অর্থাৎ এমন একটি যুগ যে যুগে মানুষ জাতির মন অসন্তোষে ভরা। সবাই মানসিক ভাবে দুঃখিত, আর ধর্মের এক চতুর্থ অংশ অর্থাৎ চার ভাগের এক ভাগ শুধুমাত্র বেঁচে রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুযায়ী চারিদিকে অহংকার, লোভ এবং প্রতিশোধই শুধুমাত্র দেখা যায়। পুরাণে বর্ণিত এই কলিযুগ মানুষের জন্য অভিশপ্ত একটি যুগ বলে গন্য। কিন্তু বন্ধুরা আপনি কি কখনও ভেবেছেন এই কলিযুগ কবে শুরু হলো অথবা এই অভিশপ্ত যুগটি শেষ হবে কিভাবে?


ধার্মিক গ্রন্থ অনুযায়ী যুগচক্রের এটি 22 তম পর্ব চলছে। শ্রীমদ্ভগবদগীতা অনুযায়ী পরিবর্তনই এই সৃষ্টির নিয়ম। যেভাবে আত্মা একটি শরীর ছেড়ে অন্য শরীর পরিবর্তন করে, দিনের পরে রাত হয়, যেভাবে ঋতু নিজের নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় ঠিক একই প্রকার ভাবে একটি নির্দিষ্ট কাল খন্ডের পরে যুগের পরিবর্তন হওয়াও অটুট সত্য। 


হিন্দু ধর্মগ্রন্থে একটি কথার বর্ণনা পাওয়া যায় - যেই কথা অনুসারে একদিন ভগবান বিষ্ণুর কাছে একজন জিজ্ঞাসা করলেন - প্রভু এখন দ্বাপর যুগ চলছে, আর কাল খন্ডের নিয়ম অনুযায়ী এরপর কলিযুগ আসতে চলেছে; কিন্তু, মানুষ ওই যুগকে কিভাবে চিনবে? 


তখন ভগবান বিষ্ণু বললেন - যখন দুনিয়াতে পাপ বেড়ে যাবে তখন বুঝে নেবে কলিযুগ শুরু হয়ে গেছে। কলি যুগের সূচনা স্ত্রীর কেশের (চুল) দ্বারা হবে। যেই কেশ কে স্ত্রীর ভূষণ বলে মনে করা হয়, কলিযুগে স্ত্রীকে ছোট ছোট করে কাটা শুরু করে দেবে। এরপর সকল স্ত্রী-পুরুষ সুন্দর দেখার জন্য নিজের চুল রঙিন করা শুরু করবে। আর তারপর কলিযুগে কারোর চুল কালো এবং লম্বা দেখা যাবে না। এরপর যেদিন পুত্র পিতার উপর হাত তোলা শুরু করে দেবে সেই দিন বুঝে নিও কলিযুগ শুরু হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় যখন প্রতি ঘরে ঘরে ঝামেলা অশান্তি লেগেই থাকবে কেউ কারো সাথে আর থাকতে চাইবে না, লোক নিজের ঘরেই নিজের আপন দের সঙ্গে মারামারি করতে শুরু করবে তখন বুঝে নিও কলিযুগ খুব ভালো ভাবে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে। এরপর আমি, ভগবান শিব ও ব্রহ্মা এক হয়ে যাব। যখন কলিযুগ পুরোপুরিভবে গ্রাস করবে, তখন আমরা তিনজন মিলে এই যুগের অন্ত বা সমাপ্তি ঘটাবো। আরেকটি নতুন যুগের সূচনা হবে যেখানে সব কিছু সত্য হবে।


হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী কলিযুগের কালঅব্দি ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বছর লম্বা। যার মধ্যে এখন কলি যুগের প্রথম ভাগটি চলছে। এমনটা মনে করা হয় ৩১০২ খ্রিষ্ট পূর্বে কলিযুগের সূচনা হয়েছিল। যখন পাঁচটি গ্রহ মঙ্গল, বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি ও শনি মেষ রাশিতে জিরো ডিগ্রীতে (0°) হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ এর মানে হলো কলিযুগে ৫১২৩ বছর আপাতত কেটে গিয়েছে। আর ৪২৬৮৭৭ বছর এখনো বাকি আছে।  


কলিযুগের সমাপ্তি কিভাবে ঘটবে তার বর্ণনা পাওয়া যায় ব্রহ্মপুরাণে। ব্রহ্মা পুরাণ অনুযায়ী কলিযুগের শেষের দিকে মানুষের আয়ু হবে 12 বছর। এই সময়ে লোকেদের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুর্ভাবনা বাড়তে থাকবে। কলিযুগ যত তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে ততই নদীগুলি শুকিয়ে যেতে থাকবে। বেইমানি এবং অন্যায়ের সঙ্গে ধন-সম্পদ কামানো ব্যক্তি গুলি একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বে এবং ধন-সম্পদ কামানোর জন্য তারা একে অপরের হত্যা করতেও পিছপা হবে না। মানুষ পূজা পাঠ, উপবাস এবং সমস্ত ধার্মিক কাজ করা বন্ধ করে দেবে এবং গরু দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। মানবতা আর বেঁচে থাকবে না এবং মেয়েরা সুরক্ষিত থাকবে না। আর তাদের নিজেদের ঘরেই শোষণ করা হবে। ভাই বোন, বাবা মেয়ে এসব কোনো সম্পর্কের মূল্যই থাকবেনা। এক ভাই অপর ভাইয়ের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে। বিবাহর মত পবিত্র বন্ধন অপবিত্র হয়ে যাবে। কোনো মানুষেরই বিবাহিত জীবন ঠিক ভাবে চলবে না। স্বামী স্ত্রী দুজনাই একে অপরকে ধোঁকা দেবে। কলি যুগের সমাজ হবে হিংসাত্মক। যেসব মানুষ বলবান হবেন তাদেরই রাজ চলবে। এই ভাবেই চারিদিকে আতঙ্ক যখন সবকিছু ক্রাশ করে নেবে তখন ভগবান বিষ্ণু তার কল্কি অবতারে আবির্ভাব হবেন এবং এই পৃথিবী থেকে সমস্ত অধর্মের নাশ করবেন।


অন্যদিকে শিব পুরাণেও কলিযুগ সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়। শিব পুরাণ অনুযায়ী ঘোর কলিযুগ শুরু হলে মানুষ দুরাচারে ফেঁসে যাবে এবং সবাই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। মানুষ সব সময় অন্যের নিন্দা করায় তৎপর থাকবে। অন্যের সম্পত্তি হরণ করার ইচ্ছা মানুষের মনে জাগবে। মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের হিংসা করতে লাগবে এবং প্রত্যেকটি মানুষ নিজের শরীরকে আত্মা মনে করবে। এটি একটি এমন যুগ হবে যেখানে মানুষ পশু বুদ্ধি সম্পন্ন হবে। সন্তানরা নিজের মাতা-পিতা থেকে দূরে থাকতে চাইবে। ব্রাহ্মণরা বেদ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করবে। নিজের লাভের জন্য অন্যকে ঠকাতে দ্বিধাবোধ করবে না, ঘোর কলি যুগের মানুষ। এছাড়া সকল ক্ষত্রিয় নিজের ধর্ম ভুলে চুরি করতে লাগবেনা এবং তার মাধ্যমে নিজের ও নিজের পরিবারের ভরণ পোষণ করবেন। এছাড়াও বেপারী বা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বেশিরভাগ ব্যক্তি ওজনে অন্যান্য ব্যাক্তিদের মাল কম দেবে। এছাড়াও কলিযুগের স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে; তাদের স্বামীদের অপমান করবে। নিজের শ্বশুর-শাশুড়ী দের ঘৃন্না করবে। তারা নিজের পতিদের সেবা থেকে সর্বদা বিমুখ থাকবে। বন্ধুরা শিব পুরাণে বর্ণিত এই সকল কথা বর্তমানে ধীরে ধীরে ঘটছে তা আমরা সকলেই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছি। কিন্তু বর্তমানে কলিযুগ ধরতে গেলে প্রায় মাত্র 5000 বছর কেটেছে। এখন কলিযুগের প্রথম ভাগ চলছে। কলিযুগের এখনো লাখ লাখ বর্ষ বাকি রয়েছে। এ থেকেই কলিযুগের মধ্যভাগ এবং কলিযুগের অন্ত বা শেষের দিকে কেমন যুগের পরিবর্তন হবে তা আন্দাজ করা যায়।


আরো পড়ুন:-  শ্রীকৃষ্ণের মতে, ভালো মানুষের সঙ্গে খারাপ হয় কেন? Click here



এছাড়াও কলিযুগের অন্ত কিভাবে হবে তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ণনা করে দিয়ে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী কলিযুগের অন্ত বা শেষের দিকে বড় বড় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। একদিকে যেমন ভারী বর্ষা সবকিছু ডুবিয়ে দেবে , অন্যদিকে প্রচন্ড গরমও পড়বে। মানুষজন মাঠের ফসল চুরি করে নেবে। চোর যার থেকে চুরি করবে সেও তার মতনই একজন চোরই হবে। এছাড়াও হাতিয়াড়া বা খুনি যাকে খুন করবে সেও তার মতনই খুনি হবে। চোর এবং খুনিরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে সাধারণ জনগণের এতে মঙ্গল হবে। যুগান্তর কলিযুগের অন্ত বা শেষ সময় মানুষের আয়ু কাল হবে 12 বছর। ওই সময় মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের উৎপত্তি হবে। এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন কলিযুগে যখন পাপের পরিমাণ 100 ভাগ হবে তখন আমি আমার কল্কি অবতারের পৃথিবীতে আবির্ভূত হব এবং সকল অধর্মের নাশ করব। তারপর এই যুগের সমাপ্তি ঘটবে এবং এর পরবর্তীকালে নতুন একটি যুগের সূচনা ঘটবে। সেই যুগের নাম হবে সত্যযুগ।অর্থাৎ সৃষ্টির যুগ চক্রের 22 তম পর্ব শেষ হয়ে শুরু হবে 23 তম পর্বের।


এই কলিযুগের শেষ হওয়ার পর নতুন যে যুগের সূচনা হবে তার নাম সত্যযুগ। সত্য যুগের কাল অব্দি হবে-17 লক্ষ 28 হাজার বর্ষ। এই যুগে মানুষের আয়ু 4 হাজার থেকে 10 হাজার বর্ষ হবে। পৃথিবী লোকে পুনরায় আবার ধর্মের সূচনা হবে। সকল মানুষ পুনরায় মানসিক সুখে তাদের জীবন কাটাবে। মানুষদের মধ্যে একে অপরের প্রতি কোনো হিংসা থাকবে না। চারিদিকে শুধু থাকবে প্রেম আর ভালোবাসা। মানবতার নতুন সূচনা হবে। সকল মানুষের পরম জ্ঞানপ্রাপ্ত হবে। লোক পূজা, ধর্ম আচার - আচরণের উপর পুনরায় বিশ্বাস করতে শুরু করবেন। সত্য যুগের মানুষ নিজের তপস্যার মাধ্যমে ভগবানের দেখা পেতে পারে। এই যুগে সকল মানুষের নিজের শরীরের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে। আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের ফলে সবাই সুখে থাকবে। অর্থাৎ সত্যযুগকে এই সৃষ্টির স্বর্ণযুগ বলা হবে। কিন্তু, বন্ধুরা সত্য যুগ আসছে এখনো অনেক সময় বাকি। এইজন্যই আমরা চাইলেই কলিযুগে নিজেদের জীবন ভগবানের পূজা এবং সৎ কর্মের মাধ্যমে সত্যযুগের মত করে কাটাতে পারি। কেননা ধর্মগ্রন্থ তেও এই কথার বর্ণনা পাওয়া যায় কলিযুগে যে সকল ব্যক্তি ধর্ম ও কর্মের উপর বিশ্বাস রাখবেন তাদের সত্যযুগের মতো সুখ ও শান্তি প্রাপ্ত হবে। 


আরো পড়ুন:-  শ্রীকৃষ্ণের মতে ,ভালো মানুষের সঙ্গে খারাপ কেন হয় - Click here


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা