নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আমাদের সনাতন অথবা হিন্দু ধর্মে বেশিরভাগ দেবদেবীর ভারতেরই আলাদা আলাদা প্রান্ত থেকে সম্বন্ধ লক্ষ্য করা যায়। সেটা শ্রীরাম হোক যিনি অযোধ্যা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিংবা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হোক যিনি অবতার নেওয়ার জন্য পবিত্র মথুরা নগর বেছে নেন। এই সময় এই প্রশ্নটি ওঠাও তো স্বাভাবিক - সকল হিন্দু ধর্মের দেবী দেবতাদের জন্ম ভারতেই কেন হল?
বন্ধুরা এটা বোঝার জন্য সবার প্রথমে আমাদের ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের উপর নজর দিতে হবে। যার উল্লেখ আমাদের পৌরাণিক গ্রন্থে পাওয়া যায়। আসলে বন্ধুরা ভারতের যেই মানচিত্রটি বর্তমানে আমরা দেখেছি তার ভিত্তিতে আমাদের আন্দাজ বা ধারণা যে ভারতবর্ষ এই টুকুই। কিন্তু, বন্ধুরা এটা সত্য নয়। হাজার হাজার বছর আগে ভারতের আকৃতি ছিল বর্তমানের মানচিত্র থেকেও বড়। প্রাচীনকালে ভারতকে 'জম্বু দ্বীপ' বলা হত।
মার্কণ্ডেয় পুরাণে ভারতের তথা জম্বুদ্বীপের বিস্তার সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে জম্বুদ্বীপের বিস্তার উত্তর ও দক্ষিণের তুলনায় মধ্যভাগে বিস্তার বেশি ছিল। আর সেই বিস্তারকে 'মেরুবর্ষ' বলা হত। এই মেরু বর্ষের অন্তর্গত ছিল সকল পাহাড়ের রাজা 'মেরু পর্বত'। এই মেরু পর্বতের অবস্থান করতেন ব্রহ্মা। মেরু পর্বতে অবস্তিত ছিল ব্রহ্মার নগরী যা 'ব্রহ্মপুরী' নামে খ্যাত ছিল। ব্রহ্মপুরীর আশেপাশেই আরও ৮টি নগর ছিল। যার মধ্যে ১ টি ছিল ভগবান বিষ্ণুর। তখনকার দিনের ভারত যাকে বর্তমানে অনেকে অখন্ড ভারত বলেন সেই ভারতের বিস্তার অনেক বড় ছিল। আর তার মধ্যে বর্তমান সময়ে বেশ কিছু দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ইরাক, ইরান ও চীনের কিছুটা অংশ সেই তখনকার দিনের ভারতের অন্তর্গত ছিল।
বন্ধুরা এমনটা নয় যে শুধুমাত্র হিন্দু মন্দির ভারতে দেখা যায়। বিশ্বের অনেক অনেক দেশ আছে যেখানে প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্বের এমন অনেক জায়গায় আছে যেখানে আজও সনাতন ধর্মের রীতি নীতি মেনে পূজা পাঠ করা হয়। থাইল্যান্ডের রাজপরিবারে যুগ যুগ ধরে হিন্দু ধর্মের প্রভাব রয়েছে। সেখানকার লোক তো এটাও ভাবেন যে থাইল্যান্ডের রাজা ভগবান বিষ্ণুর অবতার। সনাতন ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েই থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসাবে গরুর পুরান আকৃতির ন্যায় প্রতীক চিহ্ন রাখা হয়েছে। মেক্সিকোতে একটি খোদাই কার্যে গণেশ ও মা লক্ষ্মীর প্রাচীন মূর্তি খুঁজে পাওয়া গেছে। এছাড়াও মেক্সিকোতে আরো এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় যার মাধ্যমে এটা বোঝা যায় হিন্দু ধর্মের বিস্তার তখনকার সময়ে মেক্সিকো পর্যন্ত ছিল। এথেকে এটাও আন্দাজ করা যায় অখন্ড ভারতের বিস্তার তখনকার দিনে কেমন ছিল। অন্যদিকে আবার স্পেনে হাজার বছর পুরনো একটি মন্দির রয়েছে। যেখানে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি আঁকা রয়েছে। শুধু তাই নয় রাশিয়ার মস্কোতেও ইসকন মন্দির রয়েছে। এ থেকেই হিন্দু ধর্মের বিস্তার আন্দাজ করা যায়। এছাড়াও বন্ধুরা কম্বোডিয়াতে বেশকিছু বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ মূর্তি লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে বোঝা যায় কম্বোডিয়াতেও কখনো হিন্দু ধর্ম চরম শীর্ষে ছিল।
বন্ধুরা এই সমস্ত বিষয় জানার পর আপনি হয়তো এটা বুঝতে পেরেছেন প্রাচীনকালে হিন্দু ধর্মের প্রসার গোটা বিশ্ব জুড়েই ছিল। কিন্তু, বর্তমানে ভারত বর্ষ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবার পর ধীরে ধীরে ছোট একটি আকার ধারণ করেছে। এখন ভারতবর্ষে আমাদের হিন্দু ধর্ম মূল কেন্দ্রবিন্দু যার কারণেই বর্তমানে বেশিরভাগ হিন্দু দেবদেবীর সম্বন্ধ ভারতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। সেই জন্য আমারা যে সমস্ত ধর্মীয় বিষয়ে প্রাচীন কথাগুলি জানতে পারি তা ভারতবর্ষের অথবা আমাদের আশেপাশের কথাই বেশি হয়ে থাকে। আসলে সত্যিটা হল জম্বুদ্বীপ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর নতুন নতুন দেশ সৃষ্টি হতে থাকে। আর ভারত ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনার সমৃদ্ধ হয়েছে এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন বিশ্বজুড়ে হিন্দু ধর্মের বিস্তার সম্পর্কে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- বর্তমান সময়ে শুধু সৎ হলে চলবে না, চালাকও হতে হবে। সৎ হওয়ার সাথে সাথে চালাক হওয়ার কলাকৌশল-CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা