নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - খারাপ সময় সারা জীবন থাকে না। (বিকাশের সূত্রের ৪র্থ ভাগ)
যখন আমরা এই কথাটি স্বীকার করব যে আমার মনের বিচারের জন্য শুধুমাত্র আমিই দায়ী। যদি আমার বিচার দুঃখময়, ঘৃণার সঙ্গে যুক্ত ও নিন্দনীয় হয় তবে এটি আমারই ভুল হচ্ছে, আর এই ভুলটি ঠিক আমাকেই করতে হবে। তখন দেখবেন আপনা থেকেই জীবনে আত্মবিকাশের মার্গ খুলে যাবে।
আপনার জীবনে এমনটা কি কখনো হয়েছে - আপনি আপনার জীবনে আনন্দের চাবি অন্য কোনো ব্যক্তিকে দিয়ে দিয়েছেন?
এটা তখন হয় যখন আপনি মনে এরকম বিচার আনেন যে দ্বিতীয় ব্যক্তি তার ওই ব্যবহারটিকে এইভাবে ঠিক করুক বা বদলে ফেলুক তাহলেই আমি সুখী হব। এর মানে আমার নিজের সুখের জন্য আবশ্যক হয়ে দাঁড়ালো - দ্বিতীয় ব্যক্তি নিজের ব্যবহারকে পাল্টে ফেলুক। এখানে সমস্যা এটি হয়- তার কাছে চাবি আছে যার দ্বারা সে নিজের ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদেরকে দুঃখী করতে পারে। এখন দেখুন, কল্পনা করুন- আপনার অফিসের বস আপনাকে বললেন, একটি জরুরী মিটিং আছে কালকে সকাল ৮ টায় আমার সঙ্গে অফিসে দেখা করবে। আপনি রাত্রে ঘুমানোর সময় এলাম দিলেন সকাল ৬:৩০ এর। কিন্তু, ঘড়িটি খারাপ হওয়ার জন্য এলাম বাজে না। আপনি যখন উঠলেন উঠে দেখলেন তখন ৭:৩০ বেজে গেছে। আপনি তাড়াহুড়ার মধ্যে দিয়ে ফ্রেশ হতে গেলেন। কিন্তু, দেখলেন আপনার পত্নী ভেতর থেকে স্নানঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। আপনি এভাবে ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করতে লাগলেন। এরপর আপনি ভিতরে ভিতরে রেগে যেতে থাকলেন। তারপর আপনি ১২-১৩ মিনিট পর স্নানঘর পেলেন। স্নানপর্ব সেরে, সকালের খাবার খেয়ে যখন আপনি গাড়ি নিয়ে যাবেন তখন দেখলেন পেট্রোল শেষ হয়ে গেছে। পেট্রোল এর ব্যবস্থা করে যখন আপনি গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেন তখন ৮:৩০ বেজে গিয়েছিল। এরপর রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে আপনি দেরি করে অফিসে পৌঁছালেন। যেখানে আপনার ৮ টার সময় অফিসে বসের সঙ্গে মিটিং করার কথা ছিল সেখানে আপনি ৯:৩০ - এ পৌঁছালেন বসের কেবিনে। বস আপনার উপর প্রচন্ড রেগে গেলেন ও বললেন তোমার কি কোনো আত্ম অনুশাসন আছে? এত দেরি করে কেন এসেছো; ঠিক টাইমে কেন আসতে পারোনি। বসের বকা খেয়ে আপনার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। এখন কথা হচ্ছে আপনার এই মন খারাপের জন্য কে দায়ী?
সেই ঘড়িটি যে বাজেনি, নাকি আপনার পত্নী যে স্নান ঘরটিতে আগে থেকেই ঢুকেছিল, নাকি আপনার গাড়ি যার পেট্রোল শেষ হয়ে গিয়েছিল, নাকি রাস্তায় থাকা জ্যাম, নাকি অফিসের বস যে আপনাকে বকা ঝকা করল। বিচার করুন কে দায়ী আপনার মুড অফ বা মন খারাপের জন্য?
আপনি যে মন খারাপ করলেন তার দায়িত্ব মাত্র আপনার উপরেই। পরিস্থিতি যেরকমই হোক না কেন সবসময় আমাদের কাছে এই সুযোগ থাকে যে আমরা আমাদের বিচার গুলিকে বেছে নিতে পারি।
এইজন্য শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন - হে অর্জুন, তোমার মন তোমার সব থেকে বড় শত্রু হতে পারে। কিন্তু, ওই মনের ভালো-খারাপ বিচারের দায়িত্ব তুমি স্বয়ং নিজে নিলে তাহলে তুমি তোমার মনের সবথেকে বড় মিত্র বা বন্ধু হতে পারবে। এইজন্য অর্জুন মনের শক্তির মাধ্যমে তুমি নিজের পতনের বদলে উত্থান ঘটাও।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালে হিটলার লাখ লাখ সৈন্য দের ধরে ধরে জেলে বন্দী করেন ও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের মেরে ফেলেন। সেই সময় অস্ট্রিয়ার একজন মনবিজ্ঞানী ছিলেন সাইকোলজিস্ট ভিক্টর ফ্রাঙ্কেন। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার ছিলেন। তাকেও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তার পরিবার থেকে তাকে আলাদা করে দেওয়া হয়। তিনি সেখানকার যন্ত্রণা বুঝতে পারেন। বিনা বস্ত্রে তাকে ওখানে রাখা হতো। রাতে ঘুমানোর সময় এটা ঠিক থাকত না যে পরের দিন জীবিত থাকবেন কি, থাকবেন না। এত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল সেখানে। কিন্তু,ওই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ভিক্টর ফ্রাঙ্কেন অনুভব করেন তার কাছে একটি স্বতন্ত্রতা আছে যা কেউ তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সেই স্বতন্ত্রতা টি হল - নিজের বিচার সঠিকভাবে করা। তখন সে মনে মনে নিজেই ঠিক করলো আমি খুশি থাকব। যত যাই হোক না কেন আমি খুশি থাকব। এরপর মাঝেমধ্যেই তাকে ওই ক্যাম্পে দেখা যেত কখনো তিনি হাসছেন, কখনো তিনি আকাশে সুন্দরতার মজা নিচ্ছেন। এই দেখে ওখানে বন্দি আরো কিছু লোক তারা তাকে জিজ্ঞাসা করল - তুমি এত সুখে কিভাবে আছো? এমনকি ওই ক্যাম্পে যে জার্মান গার্ড ছিলেন তারাও তার থেকে প্রেরণা নিতে থাকলেন।
ভিক্টর ফ্রাঙ্কেন সকলকে বলতেন - আমার ইচ্ছা আমি সুখে থাকবো। এরপরে যখন যুদ্ধ সম্পূর্ণ হল এবং জার্মানি যুদ্ধে পরাজিত হল, তখন সেই ক্যাম্প থেকে ভিক্টর ফ্রাঙ্কেন সহ সকলকে ছেড়ে দেওয়া হল। ভিক্টর ফ্রাঙ্কেন তখন ইজরাইলে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করলেন, তখন সে একটি বই লিখলেন - 'Man's search for meaning in life'. এই বইটির অনুবাদ বিশ্বের 29 টি ভাষায় করা হয়। এরপর তাকে ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়। সে নিজের মনের অনুভূতির মাধ্যমে এই বিচার করেছিলেন যে - কঠিন পরিস্থিতি সকলের জীবনে আসে। কিন্তু, এর জন্য যে দুঃখী হয়ে থাকতে হবে তা কিন্তু একেবারেই জরুরী নয়।
আমরা সকলে যদি এমনটা ভেবে নিতে পারি যে আমার সুখের চাবি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির কাছে আছে অর্থাৎ সেই দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি তার খারাপ ব্যবহার কে পরিবর্তন করলে তাহলেই আমি সুখে থাকবো তাবে এর পরিণাম স্বরূপ আমরা সুখ এবং দুঃখের মাঝা মাঝি সর্বদা ঝুলে থাকবো।
আর যখন আমরা এই জিনিসটি ভাবতে থাকবো - কি আমার মনের বিচারগুলো সম্পূর্ণ আমার উপর নির্ভরশীল। আমি যা বিচার গ্রহণ করব তার জন্য শুধুমাত্র আমি দায়ী থাকব। আমার বিচার যদি দুঃখময়, ঘৃণার সঙ্গে যুক্ত ও নিন্দনীয় হয় তবে এটি আমারই ভুল হচ্ছে, আর এর ঠিকটা আমাকেই করতে হবে। তখন দেখবেন আপনা থেকেই জীবনে আত্মবিকাশের মার্গ খুলে যাবে। কেননা পরিস্থিতি যেরকমই হোক না কেন আমরা সবসময় উৎকৃষ্ট, তীব্র ও সঠিক বিচারটি করে নিজের মার্গকে প্রসন্ন করে জীবনে উপরে উঠতে থাকবো ও সুখে থাকতে পারবো। এইজন্যই নিজের সুখের চাবি সর্বদা নিজের হাতেই রাখুন।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলো আপনজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- মন খারাপ থাকলে কি করবেন?Click here
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা