নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - মন খারাপ থাকলে কি করবেন? (বিকাশের সূত্রের ৩য় ভাগ)
আমাদের সকলকে জীবনে আনন্দিত হওয়ার কলা কৌশল শেখার জন্য এবং
দুঃখী থাকতে কোন জিনিসগুলি আবশ্যক? কোনো কিছুরই না। আমরা কেবল দুঃখময় বিচার নিজের মধ্যে উৎপন্ন করলেই দুঃখী হয়ে যাব। ঠিক একই প্রকার ভাবে সুখ প্রাপ্তির জন্য কোন জিনিস আবশ্যক? কিছুরই না। শুধুমাত্র সুখময় বিচার নিজের মধ্যে বৃদ্ধি করা। তাহলেই দেখবেন আন্তরিক আনন্দে-খুশিতে আপনি ভরে উঠবেন।
একদা এক ভক্ত তার স্বামীজির কাছে গেলেন এবং বললেন স্বামীজি আমি খুবই দুঃখিত এবং খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছি। তখন স্বামীজী তাকে বললেন কি হয়েছে? তখন সেই ব্যক্তি বলল, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আমার বাড়িতে এসেছে। তারা এখন আমার বাড়িতেই থাকছে। আমার পত্নীর সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই, আমরা দুজনে খুব সুখে থাকি। কিন্তু, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে আমার ঠিক বনে না। তো আপনি এখন বলুন আমি এখন কি করি? এই কথা শুনে স্বামীজি বললেন, তোমার কাছে কি বাড়িতে কুকুর আছে? তখন সেই ভক্ত বললো, না । স্বামীজি তখন তাকে বলল তাহলে তুমি কিভাবে সুখে থাকতে পারো। তাড়াতাড়ি গিয়ে কিছু কুকুর নিয়ে আসো। সে স্বামীজীর খুবই আজ্ঞা পালনকারী একজন ভক্ত ছিল। এরপর এসে কুকুর কিনে আনে নিজের বাড়িতে। কিন্তু, এর তিনদিন পর আবার ওই ভক্ত স্বামীজীর কাছে আসলো। সে তখন স্বামীজি কে বলল, স্বামীজি আমার তো সমস্যা আরও বেড়ে গেল। ওই কুকুরগুলো তো আমাকে পুরো বিরক্ত করে দিচ্ছে। এখন আমি কি করব আপনিই বলুন? তখন স্বামীজি বললেন তোমার কাছে ঘরে বিড়াল আছে? তখন সেই ভক্ত বলে, না নেই। তখনই স্বামীজি তাকে পুনরায় আবার বলল, বিড়ালছারা তুমি কিভাবে সুখে থাকতে পারো? এরপর সে আবারও তিনটি বিড়াল কিনে এনে রাখে তার বাড়িতে। কিন্তু, এইবার সে দুই দিন বাদে আবারও স্বামীজির কাছে ধেয়েপেয়ে ছুটে গেল এবং বলল, স্বামীজি আমি তো আগে থেকেই সমস্যায় ছিলাম; তার ওপর সমস্যা আরও বেড়ে গেল। দিয়ে স্বামীজি তাকে বলল, কি হয়েছে? তখন সে বলল কুকুরগুলো বিড়ালদের তারিয়ে তারিয়ে পিছু করে। আর বিড়ালগুলো ঘরের সমস্ত জিনিস গুলো কে ওলট পালট করে ফেলে দিয়ে দৌড়াতে থাকে। তখন স্বামীজী তাকে আবারও বললো , তোমার কাছে বাড়িতে তোতা পাখি আছে? তখন সেই ভক্ত বলল - না নেই। তখন স্বামীজী তাকে আবারও বললো- তোতা না থাকলে, তুমি দুঃখী হয়েই থাকবে। এই কথা শোনার পর সে আবারও একটি খাচায় করে তোতা পাখি নিয়ে এলো তার বাড়িতে। কিন্তু, এইবার সেই ভক্ত একদিন বাদেই স্বামীজির কাছে আবার ছুটে গেল। তখন সামগ্রী তাকে জিজ্ঞাসা করল - আবার কি হলো তোমার? তখন সেই ভক্ত বলল এতদিন তো তবু ঠিক ছিল। এখন ওই তোতা গুলো আনার পর তোতা গুলোও তো কুকুর এবং বিড়ালের মত আওয়াজ করতে শুরু করে দিয়েছে। আপনি একজন স্বামীজি, আমি আপনার কাছে এসেছি সুখের রহস্য জানার জন্য কিন্তু আপনি তো আমাকে আরো বেশি দুঃখী করে দিলেন।
তখন স্বামীজি তাকে বললেন তাহলে একটি কাজ করো - তোতা গুলিকে আকাশে উড়িয়ে দাও। কুকুরগুলি কে বেঁচে দাও। আর বিড়াল গুলিকে বাইরে গিয়ে কোথাও ছেড়ে আসো। তারপর তুমি এসো আমার কাছে। সে স্বামীজীর কথা অনুযায়ী এরকমটা করল তার পরে পুনরায় স্বামীজির কাছে গেল। তখন স্বামীজী তাকে জিজ্ঞাসা করল- এখন কি তুমি সুখে আছো?
তখন সেই ব্যক্তি বলল স্বামীজি এখন খুবই শান্তি লাগছে। তখন স্বামীজী তাকে বলল কিন্তু তোমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি তো এখনো তোমার বাড়িতেই রয়েছে? তখন সেই ভক্ত বলল-হ্যাঁ তারাতো আছেন। তখন স্বামীজি তাকে বললেন, ওই পরিস্থিতিতে তুমি প্রথমে দুঃখী হচ্ছিল আর এখন তুমি সুখী হচ্ছ, তাহলে এই দুই পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর বা পার্থক্য কি আসলো? তখন সেই ভক্তের মনে বিচার এল - কথাতো এটা ঠিক,পরিস্থিতি তো আমার দুঃখের কারণ ছিল না কখনোই।
এই দুঃখের বিচার কেন আসে? আর সেই বিচারকে সুখের বা আনন্দের বিচারে বা মনোভাবে পরিবর্তন করার রহস্য কি? - চলুন বন্ধুরা এটা বুঝুন।
একজন নববিবাহিত স্বামী-স্ত্রী একটি বাড়ি কিনেছিলেন। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তারা বাড়িটি কিনেছিলেন। স্ত্রী ছিল গৃহবধূ আর স্বামী চাকরি করতেন। কিন্তু, লকডাউনে তার চাকরি চলে যায়। যেই কারনে সে ব্যাংকের লোনের কিস্তি দিতে পারছিল না। তখন ব্যাংক নোটিশ পাঠায় যদি 10 দিনের মধ্যে কিস্তি শোধ না করা হয় তাহলে এই বাড়িটি ব্যাংকের হস্তক্ষেপে চলে যাবে। তখন স্বামী-স্ত্রী খুবই চিন্তা করতে লাগলেন এবং ভাবতে লাগলেন 10দিন বাদে তাদের পথে বসতে হবে। এখন কি করা যায় - এই ভেবে তারা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ল। এমত অবস্থায় ঠিক 7 দিন বাদে তার আবার চাকরি হলো। তখন সে ভগবানের কাছে হাতজোড় করে বলতে লাগল - হে ঈশ্বর, তুমি খুবই দয়ালু। তোমার কৃপাতে আমার কাছে এখন আমার ঘর আছে থাকার জন্য।
কিন্তু, ওই ঘর তার কাছে আগেও ছিল। সে কখনো একবারও ভগবানকে ধন্যবাদ জানায় নি সেই ঘরটি তার থাকার জন্য। এখন যখন বাড়িটি তার আর থাকার কোনো কথাই ছিল না; কিন্তু ঠিক শেষ মুহূর্তে বাড়িটি তারই হয়ে রইল তখন তার অনুভুতি হল - আমার কাছে থাকার জন্য নিজের বাড়ি আছে।
তো বন্ধুরা এই থেকে বোঝা গেল আমরা সকলেই এটা ভুলে যাই আমাদের উপর কতটা কৃপা রয়েছে ভগবানের। এই কারণেই ছোট ছোট বিষয়ের উপর আমরা সকলে মুড অফ করে দুঃখী হয়ে যাই। তার বদলে যখনই এই দুঃখের ভাব উৎপন্ন হতে থাকে আমাদের মনে তখন যদি আমরা নিজেদের বিচার কে একটু ঘুরিয়ে করতে পারি আর গুণতে থাকি আমাদের উপর করা ভগবানের অশেষ কৃপা গুলিকে তাহলে আমাদের সামনে একটি নয়, দুটি নয়, হাজারো এরকম কারণ এসে উপস্থিত হবে সুখে থাকার জন্য।
কোনো ব্যক্তির কাছে যদি তার চোখ থাকে, প্রত্যেকটি চোখে সাড়ে 12 কোটি করে সেনস্যার থাকে যার মাধ্যমে আমরা সূর্য উদয় থেকে সূর্য অস্ত অবধি সবকিছু দেখতে পাই। আকাশে উড়তে চলা পাখি থেকে রামধনুর সাতটি রং পর্যন্ত দেখা যায় এই চোখের মাধ্যমে। এটা কি ভগবানের অশেষ কৃপা নয় আমাদের উপর?
আমাদের সকলের কাছে দুটি করে কান রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা সকল প্রকার আওয়াজ শুনতে পাই। যখন প্রবল বেগে হাওয়া বয় তখন গাছের পাতার শব্দ, যখন সমুদ্র তরঙ্গ ঢেউ পাথরের উপর গিয়ে আটকে পড়ে সেই শব্দ আমরা শুনতে পাই এই কানের মধ্যমে। এটা কি ভগবানের কৃপা নয় আমাদের উপর?
আমাদেরকে শুধু অনুভব করতে হবে, একে বলা হয় কৃতজ্ঞতার ভাব। যদি আমরা আমাদের বিচার গুলিকে সুখময় বানাতে চাই তবে জীবনে অভাব যেটা আছে তাকে ভাবার বদলে যা ভগবান আমাদেরকে দিয়েছে সেটাকে ফর গ্রান্টেড পাওনা বলে না মেনে নিয়ে, সেটাকে যদি ভগবানের অশেষ কৃপা বলে মনে করা হয় তবে সুখের প্রাপ্তিসর্বদাই হতে থাকবে এবং মনে মনে ভগবান কে এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মন কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকবে যে হে প্রভু আমি এইসবের যোগ্যই ছিলাম না। আপনি আমাকে এই সকল কিছু দিয়ে কৃপা করেছেন। আপনার চরণে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।
তো বন্ধুরা আশাকরি আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনার সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন - কিভাবে আমরা আমাদের অভাব-অনটনের বিষয়টিকে ভেবে মন খারাপ না করে, তার বদলে যেটা আমাদের কাছে রয়েছে তার জন্যই ভগবানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সর্বদা সুখে থাকা যায়।
ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- জীবনে সুখে ও আনন্দে থাকার জন্য কি প্রয়োজন? Click here
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা