Breaking

Search Content

Follow Us

বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

মরার সময় কর্ণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে কি চাইলেন || কর্নের শেষ ইচ্ছা কি ছিল? | Karna's Last Wishes before Death

 



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।  


আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল- শরীর ত্যাগ করার পূর্বে যখন শ্রীকৃষ্ণ কর্ণের কাছে গেলেন তখন কর্ণ শ্রীকৃষ্ণের কাছে তার শেষ ইচ্ছা কি চাইলেন?


মহাভারতের এমন একজন মানুষ যিনি জীবনভর ন্যায় পাননি। আর সারাজীবন লোকেরা তাকে সূতপুত্র বলেছে। সবথেকে বড় মুশকিল ছিল এটাই যে তিনি নিজেও জানতেন না তিনি সূর্যদেব ও মাতা কুন্তীর পুত্র ছিলেন। বন্ধুরা আজকের এই লেখাটিতে সূতপুত্র কর্ণের বদলে সূর্যপুত্র কর্ণের সম্পর্কে আপনাদের সঙ্গে আজকে আলোচনা করতে চলেছি। 


বন্ধুরা এই কাহিনীটি মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সেইসময়ের ঘটনা, যখন কর্ণের বধ অর্জুনের হাতে হয়েছিল। কিন্তু, তাও তার প্রাণ অবশিষ্ট ছিল। আর সে তখন জানত যে, সে সূর্যদেবের অংশ। 


মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ১৭ তম দিন যখন কর্ণ ও অর্জুন সামনাসামনি বিরোধী পক্ষ হিসেবে যুদ্ধ করতে আসেন তখন দুজনের মধ্যে ভিসন সংগ্রাম হল। যা দীর্ঘক্ষন ধরে চলতে থাকে। এই দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং আপন মনে নিজে ভাবতে লাগলেন যদি আজ সূর্যাস্তের আগে কর্ণ না মারা যায় তাহলে পান্ডবদের পক্ষে এই যুদ্ধ জেতা অসম্ভব। তখন শ্রীকৃষ্ণের মাথায় একটি উপায় এল এবং তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ময়দান থেকে অর্জুনকে নিয়ে দূরে চলে যেতে লাগলেন। এটি দেখার পরে সবার প্রথমে অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে জিজ্ঞাসা করেন- হে বাসুদেব! আপনি আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ না করে পলায়ন করা তো কাপুরুষের মতো কাজ। অর্জুনের মুখ থেকে এসব কথা শোনার পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন - হে পার্থ, কখনো কখনো যুদ্ধ জেতার জন্য রণভূমি ছাড়তে হয়। অন্যদিকে কর্ণ আবার শ্রীকৃষ্ণের অর্জুনকে নিয়ে রণভূমি ছাড়তে দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলেন - বাসুদেব অর্জুনকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?  


কর্ণ এমন ভাবার পরে তিনিও তার রথ অর্জুনের রথের পেছনে ছুটিয়ে নিয়ে এগিয়ে গেলেন। ওদিকে আবার অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে তার রথ থামাতে বললেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ একটু হেসে রথটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পেছনে কর্ণও তার রথ নিয়ে এগিয়ে আসছিল। কিছুদুর যাওয়ার পর শ্রীকৃষ্ণ রথ থামিয়ে দেয়। তারপর দুই পক্ষের মধ্যে তীরের মাধ্যমে চরম যুদ্ধ হতে লাগলো। এর মধ্যেই কর্ণের রথের একটি চাকা মাটিতে দেবে যায়। এই দেখে অর্জুন কর্ণের উপর তীর চালানো বন্ধ করে দেয়। তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, হে পার্থ! তুমি বান বা তীর চালানো বন্ধ করলে কেন? তখন অর্জুন বললেন- হে বাসুদেব! আপনি দেখছেন না - কর্ণের রথের একটি চাকা মাটিতে দেবে গেছে। তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন- পার্থ, কর্ণ মহারথী যোদ্ধা। আর সে চাইলে তার নিজের রথ পরিবর্তন করতে পারে। এমন সময়ই কর্ণ বলে ওঠে - হে অর্জুন! আমার রথের চাকা মাটিতে দেবে গেছে; আমি চাকাটি তোলার জন্য আমার রথ থেকে নিচে নামছি। এখন বান(তীর) চালিও না। কর্ণের এই কথা শোনার পর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, হে পার্থ! এটাই কর্নের বদের জন্য উপযুক্ত ও সঠিক সময়। শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- হে নারায়ন! কর্ণ এখন নিচে রয়েছে, এমন সময় আমি তার ওপর প্রহার করাটা যুদ্ধ নিয়ম লঙ্ঘন করা হবে ও অধর্ম হবে। আমি এটি করতে পারবো না।


তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, হে অর্জুন! তুমি কোন ধর্মের কথা বলছ? রণভূমি তে কর্ণ কি অভিমুন্যকে প্রহার করার সময় যুদ্ধ নিয়ম সম্পর্কে ভেবেছিল? তখন কি পিতামহ ভীষ্ম যুদ্ধ নিয়ম সম্পর্কে কি জানতো না? যখন ভরা সভায় দ্রৌপদীর মান-সম্মান ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছিল কর্নে চোখের সামনে তখন কেন কর্ণ চুপ করেছিল? কেন কিছু বলেনি? তখন কি অধর্ম হয়নি? তুমি কি এসব কিছু ভুলে গেছো। হে পার্থ, মহারথী কর্ণ অধর্মের ভাগিদার। এই জন্য তাকে তার অধর্মের জন্য অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আরো বললেন, হে পার্থ! ধর্মের কথা ছাড়ো; আর কর্ণের উপর অঞ্জলিকা বান দিয়ে প্রহার করো। শ্রীকৃষ্ণের এই কথা শোনার পর অর্জুন কর্ণের উপর অঞ্জলিকা বান দিয়ে প্রহার করে। সেই বান অর্জুনের বুক ছেদ করে দেয়। পরিনাম স্বরূপ ওই বান (তীর) কর্নের মৃত্যু ডেকে আনে। কিন্তু, তখনও কর্নের পুরোপুরি মৃত্যু হয় না তার প্রাণ অবশিষ্ট থাকে। 


তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মনে কর্নের দানবীরত্বের পরীক্ষা নেওয়ার বিচার এল, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে কর্নের কাছে গেলেন। তারপর কর্ণের কাছে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন-হে অঙ্গরাজ! আমি আপনার দানবীরত্বের অনেক গুনগান শুনেছি। আমি আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি; কৃপা করে আমাকে সাহায্য করুন। আমার পুত্রীর বিবাহ আর আমি তাকে স্বর্ণ দিতে অপারক। কৃপা করে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। একথা শুনে দানবীর কর্ণ বললেন, হে দেব! আমি এখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছি। এই সময় আপনাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই। এই কথা শোনার পর ব্রাহ্মণ রুপী শ্রীকৃষ্ণ বললেন, আপনার কাছে এখনও একটি জিনিস রয়েছে যেটি আপনি দান করতে পারেন। এই শুনে কর্ণ বুঝতে পারলেন এ কোনো সাধারন ব্রাহ্মণ নয়, ব্রাহ্মণ রুপি কোনো দেবতা। কর্ণ তখন কিছু না বুঝতে পেরে তার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হে দেব! আমার কাছে কি এমন আছে যা এখন আমি তোমাকে দিতে পারি? তখন ব্রাহ্মণ বললেন আপনার সোনার দাঁতটি। তখন কর্ণ বিনা সংকোচ করে তার সামনে পড়ে থাকা একটি পাথর দিয়ে ব্রাহ্মণ কে তার দাঁতে মেরে সোনার দাঁতটি নিতে বললেন। এই শুনে ব্রাহ্মণ বললেন - হে রাজন! দান দানবীর দ্বারা দেয়া হয়ে থাকে। স্বয়ং নিজে নিয়ে নিতে নেই। তখন কর্ণ নিজে কষ্ট সহ্য করে নিজেই নিজের দাঁতে পাথর দিয়ে মেরে সেই সোনার দাঁত বের করে ব্রাহ্মণ কে দান করে। তখন তার ওপর আপত্তি করে ব্রাহ্মণ রুপি শ্রীকৃষ্ণ বলেন, দান তো পবিত্রভাবে নিতে হয় আমি এটা কিভাবে স্বীকার করব! তখন কর্ণ মাতা গঙ্গাকে আহ্বান করল। এরপর মাতা গঙ্গার শুদ্ধ ও পবিত্র জল দিয়ে সেই সোনার দাঁতটিকে পবিত্র করে তারপর কর্ণ সেটি ব্রাহ্মণকে দান করলেন। 


এরপর সবশেষে কর্ণ সেই ব্রাহ্মণ কে বললেন, হে দেব! আমাকে আপনার সত্য আসল রূপের দর্শন দিন। আমি আপনার দর্শন করতে চাই। কর্ণের দানবীরত্ব দেখে প্রসন্ন হয়ে ভগবান শ্রী হরি কর্ণের সামনে তার আসল রূপ ধারণ করেন। তারপর তিনি কর্নের উদ্দেশ্যে বলেন, হে কর্ণ! তোমার মত দানবীর এই ত্রিলোকে কোথাও নেই। যতদিন পর্যন্ত এই সংসারে সূর্য ও চন্দ্রমা থাকবে ততদিন অবধি তোমার নাম দানবীর কর্ন রূপে থাকবে। আমি তোমার দান বীরত্বে অত্যান্ত প্রসন্ন হয়েছি। তুমি আমার কাছে যা ইচ্ছে হয় তাই বরদান চাইতে পারো।


তখন দানবীর কর্ণ বললেন- হে প্রভু! আমি আমার পরের জন্মে আপনার রাজ্যে জন্মগ্রহণ করতে চাই। এরপর কর্ণ আরো বললেন আমার এই জন্ম হয়েছিল এক কুমারী মাতার গর্ভে। তাই জন্য আমি চাই আমার অন্তিম সংস্কার এমন কোনো কুমারী ভূমি অর্থাৎ এমন ভূমিতে হোক যেখানে কোনো অধর্ম নেই। এই বলেই কর্ণ কষ্টে কাতর হয়ে নিজের প্রাণ ত্যাগ করলেন।


এরপর শ্রীকৃষ্ণ ও পঞ্চপান্ডব সংশয় পড়ে গেলেন তারা এখন কুমারী ভূমি কোথায় খুঁজে পাবেন! গোটা পৃথিবী খোঁজার পরেও যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এমন কোনো ভূমি খুঁজে পেলেন না তখন ভগবান কৃষ্ণ দানবীর কর্নের অন্তিম সংস্কার নিজের হাতে করার সিদ্ধান্ত নেন। তো বন্ধুরা আশাকরি কর্ণের সাথে যুক্ত এই কথা শুনে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন।


লেখাটি ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- সকল হিন্দু ধর্মের দেবী দেবতাদের জন্ম ভারতেই কেন হল? CLICK HERE


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা