নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল- বর্তমানে কলিযুগে আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন কুকুর তুলসী গাছে প্রস্রাব করে এর কারণ কি? বুদ্ধগয়াতে ফল্গু নদীর জল সবসময় শুকিয়ে থাকে কেন?
এছাড়াও আজকের এই লেখাটিতে আলোচনা করব কারা ছিলেন সেই 4 জন লোক, যারা মাতা সীতার অভিশাপের ফল আজও ভোগ করছেন !?
ত্রেতাযুগে ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর অবতার রাম এবং সীতা রাজা দশরথের মৃত্যুর পর তার পিন্ডদানের জন্য বিহারের বুদ্ধগয়া বা বোধ গয়ায় পৌঁছালেন। সেই সময় কিছু এমন ঘটনা ঘটল যে কারণে মাতা সিতা 4 জন লোককে এমন অভিশাপ দিলেন যার প্রভাব আজও রয়েছে।
বুদ্ধগয়া পৌঁছানোর পর শ্রী রাম ও লক্ষণ পিন্ডদানের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনতে গেলেন। কিন্তু দুই ভাই আসতে দেরি করায় পিন্ডদানের সময় পার হয়ে যাচ্ছিল। তখন হঠাৎই রাজা দশরথ মাতা সিতাকে স্বয়ং দর্শন দিলেন এবং পিন্ডদান করতে বললেন। রাজা দশরথ মাতা সীতাকে বললেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ; খুব তাড়াতাড়িই যেন তার উদ্দেশ্যে পিন্ডদান করা হয়। তখন মাতা সিতা বললেন তার দুই পুত্র অর্থাৎ রাম ও লক্ষণ আসা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে। শ্রী রাম ও লক্ষণ পূজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে এলে তবেই চাল ও তিল দিয়ে পিণ্ড তৈরি করে তিনজন তাকে দান করতে পারবেন। কিন্তু রাজা দশরথ প্রতীক্ষা করতে না করে দিলেন। তিনি মাতা সিতা কে বললেন ফল্গু নদীর পারের বালি দিয়ে পিণ্ড বানিয়ে দান করতে বললেন। তখন শ্রী রাম তথা লক্ষনের আসার আগেই মাতা সিতা বিধির বিধান অনুযায়ী পিন্ডদান করে দিলেন। সেই সময় সেখানে যেই 5 জন সাক্ষী ছিলেন অর্থাৎ মাতা-সিতাকে পিন্ডদান করতে দেখেছিলেন - অক্ষয় বট অর্থাৎ বটবৃক্ষ, ফল্গু নদী, একটি গরু, একটি তুলসী গাছ ও আর একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন।
যখন শ্রীরাম ও লক্ষণ ফিরে এলেন এবং পিন্ডদানের বিষয়ে মাতা সিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন - তখন মাতা সিতা তাদেরকে সময়ের মহাত্ম্য বুঝিয়ে বললেন, তিনি পিন্ডদান করে দিয়েছেন। এরপর শ্রীরামের কাছে এই কথাটির সত্যতা প্রমাণ করার জন্য মাতা সিতা সেই পাঁচজন সাক্ষীকে শ্রী রামের সামনে সত্য বলতে বলল। তখন বটবৃক্ষ বাদে বাকি সকলেই মিথ্যা বলে। ফল্গুনদী, গরু, তুলসী ও ব্রাহ্মণ এই চারজন সকলেই শ্রী রামের সামনে মিথ্যা বলেন। তারা বলেন মাতা সিতা পিন্ডদান করেননি। তখন আবারও রাজা দশরথ স্বয়ং নিজে দেখা দেন এবং শ্রী রাম তথা লক্ষণের উদ্দেশ্যে বলেন, সিতা বিধি-বিধান অনুযায়ী আমার পিণ্ডদান করেছে। তখন মাতা সিতা যে সত্যি কথা বলছে সেটা প্রমাণিত হলো। এই ঘটনার পরিসমাপ্তি এখানে ঘটেনি। সীতা সেই চারজন সাক্ষী কে মিথ্যে বলার জন্য অভিশাপ দিলেন।
ফল্গু নদী কে মাতা সিতা অভিশাপ দিয়ে বললেন, গয়াতে নদী কেবল পৃথিবীর নিজ দিয়েই বয়ে যাবে। নদীর সবসময় উপর থেকে শুকিয়ে থাকবে। নদীর বুকে জল থাকবেনা।
গরু অভিশাপ পেল প্রত্যেক বাড়িতে গরুর একটি আলাদা মাহাত্ম্য থাকবে, অনেক ক্ষেত্রে তাকে ভগবানের সমান পূজা করা হবে। কিন্তু তাকে সব সময় প্রত্যেক বাড়ির এঁটো খাবার খেতে হবে।
মাতা সিতা থেকে তুলসি অভিশাপ পেলো যে, গয়ায় কোথাও তুলসী গাছ আর জন্মাবে না এবং কলিযুগে তুলসী গাছ দেখলেই কুকুরে প্রস্রাব করবে।
ব্রাহ্মণ কে অভিশাপ দিলেন যে ব্রাহ্মণ কখনো তার জীবনে সন্তুষ্ট হবে না এবং সর্বদা দরিদ্রই থেকে যাবে।
এই চারজনকে অভিশাপ দেওয়ার পর সবশেষে মাতা সিতা বটবৃক্ষকে বরদান দিলেন, এরপর থেকে যে কেউ এই বুদ্ধগয়াতে আসবে পিন্ডদান করতে সে বটবৃক্ষের মাধ্যমেই পিন্ডদান করতে পারবে।
তো বন্ধুরা এই ছিল মাতা সীতার অভিশাপ। যার ফল আজও ভোগ করে চলেছে এই চারজন।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- একজন মানুষ কেন অন্য মানুষকে অপমান করে? | motivational Krishna Katha CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা