Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২

Bhagwat Geeta Saar - ভগবত গীতার পুরো সারাংশ || How to reach God?

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।   

আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - শ্রীকৃষ্ণের ভগবদ্গীতার জ্ঞান সম্পর্কে। 


প্রত্যেকটা মানুষের শরীরেই জীবাত্মা বসবাস করে। আমাদের এই মানুষরূপে জীবন হল সকল মানুষের মধ্যে থাকা জীবাত্মাদের পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটি হলো আমাদের ভেতর থেকে আমাদের সব থেকে ভালো রূপটি বাইরে আনার পরীক্ষা। আর ভগবদ্গীতা হল আমাদের এই ভালো রূপটি ভেতর থেকে বার করে এনে এই পরীক্ষাটি পাস করার একটি বই বা পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।ভগবদ্গীতায় আঠারোটি অধ্যায় রয়েছে। এটি মূলত সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে সংস্কৃত ভাষা ধীরে ধীরে অচল হতে থাকে এবং এই জ্ঞান মানুষের থেকে দূর হতে শুরু করে। এখন বর্তমানে এই প্রচেষ্টায় ভগবদ্গীতার জ্ঞান সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই লেখা টি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা। 


পরমাত্মা এই জ্ঞান ভগবান কৃষ্ণ দ্বারা সবথেকে বড় ধর্মযুদ্ধের রণভূমি মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের সময় অর্জুনকে আজ থেকে প্রায় 5000 বছর আগে দিয়েছিল। এটা ছিল সেই সময় যখন বারবার ধর্মের উল্লঙ্ঘন হয়েছিল। পরমাত্মার ভয় মানুষের মন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। লোভের বশবর্তী হয়ে ভাই ভাইকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। শুধু তাই নয় নারী জাতিকে অসম্মান ও অপমান করা হয়েছিল এই সময়ে। এই জিনিসগুলো যাতে বারংবার না ঘটে এবং অধর্ম পথ থেকে মানুষকে ধর্মের পথে ফিরিয়ে আনতে পরমাত্মা এই পবিত্র ভগবদ্গীতার জ্ঞান সকল মানুষ জাতির উদ্দেশ্যে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা দিয়েছিলেন। পরমাত্মা এই পবিত্রজ্ঞান দিয়েছিলেন মানবজাতির কল্যাণের জন্য।


বন্ধুরা শ্রীমদ্ভগবদগীতা, বাইবেল, কোরআন এইসকল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুলি পরমাত্মা দ্বারা দেওয়া। এগুলি শুধুমাত্র একটি ধর্মের সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য নয়। এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থের জ্ঞান মানবজাতির কল্যাণের জন্য দেয়া হয়েছিল। পরমাত্মার দেওয়া এই পবিত্র জ্ঞান গুলির মাধ্যমে যে কোনো মানুষই জীবনযাপনের সঠিক সুনির্দিষ্ট পথ গ্রহণ করতে পারে। এইসকল পবিত্র ধর্মগ্রন্থের জ্ঞান মানুষ জাতির মধ্যে থাকা জীবাত্মার সবথেকে ভালো রূপটি বাইরে আনার জন্য এবং সুশৃংখল জীবন যাপনের নিয়ম সম্পর্কে ব্যক্ত করে। এই নিয়মগুলি মানুষের মৃত্যুর পর পরীক্ষা করে দেখা হবে জীবাত্মা কতটা সঠিক ভাবে পালন করেছে। যদি কর্ম সৎ এবং সঠিক থাকে তাহলে এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে সব সময়ের জন্য মুক্তি পাওয়া যায়। 


পরমাত্মা ভগবদ্গীতা বলেন, আমিই সব কিছুর শুরু। আমি শুরুরও আগে ছিলাম এবং সবকিছু শেষ হওয়ার পরেও থাকব। সবাই আমার মধ্যেই আছে এবং আমি সবার মধ্যেই আছি। যা তুমি শুনতে পাও, যা তুমি দেখতে পাও তার সবকিছুই আমি। এই নদী, পাহাড়, সূর্য, চাঁদ, তারা সবকিছুই আমার সৃষ্টি। আমিই ভগবান, শয়তান, রাক্ষস আর মানুষ তৈরি করেছি। আমি সর্বব্যাপী, সবার মধ্যেই আমার বাস। সবকিছুর মধ্যে আমি আছি, আমি আছি এবং আমিই আছি। আমি এই সৃষ্টির এইভবেই বানাবো এবং ভাঙতে থাকবো। যাতে আত্মারা সুযোগ পায় এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে নিজেদেরকে ছাড়িয়ে মোক্ষলাভ করে সব সময়ের জন্য পরমাত্মার সঙ্গে থাকার। 


ভগবদ্গীতা আমাদেরকে বলে সব থেকে বড় পরীক্ষার জন্য অর্থাৎ নিজের জীবাত্মার সবথেকে ভালো রূপকে বার করার জন্য পরমাত্মা প্রকৃতিকে পাঁচটি তত্ত্ব দ্বারা নির্মিত করেছেন। এই পাঁচটি তথ্য হলো - বায়ু, জল, অগ্নি, পৃথিবী এবং ইথর দিয়ে করেছেন। যেগুলোকে আমরা হাত দিয়ে ছুঁয়ে, নাক দিয়ে সুখে এবং চোখ দিয়ে দেখে বুঝতে পারি। কিন্তু পরমাত্মা নিজে এই পাঁচটি ইন্দ্রিয় থেকে বোঝার বাইরে। পরমাত্মাকে মানুষের শরীরের জীবাত্মা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কখনো বুঝতে পারবে না। আত্মা পাঁচটি ইন্দ্রিয় সঙ্গে সেরকম ভাবে রয়েছে যেমন একটি যন্ত্র চালিত রোবট। যার নিজেকে বানানো মালিকের কোনো খোঁজখবর নেই।


অর্জুনকেও এই পরমাত্মা তার বিশাল রূপ দেখানোর জন্য ভগবান কৃষ্ণ দ্বারা তাকে দিব্য নেত্র বা চক্ষু প্রদান করেছিলেন। ভগবদ্গীতা এটা বোঝায় যে, আত্মা অজন্মী; একে কেউ মারতে পারেনা। কেউ এই আত্মাকে জ্বালিয়ে দিতে পারেনা, ডুবাতে পারেনা, না পারে কাটতে। কিন্তু আত্মাকে পরমাত্মা সঙ্গে সবসময়ের জন্য সময় কাটাতে হলে এই মানুষরূপী জীবনযাত্রার পরীক্ষায় বসতেই হবে। এই পরীক্ষার জন্যই পরমাত্মার থেকে আলাদা হয়ে আত্মাকে এই পৃথিবীতে কোনো না কোনো রূপে জন্ম নিতে হয়। আর কোটি কোটি জন্ম নেওয়ার পরে একটি আত্মা মানুষ্য যোনিতে জন্ম নেয়। আর সকল মানুষকে এই পরীক্ষা চলাকালীন বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যেখানে তারা নিজেদেরই আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোন প্রভৃতিদের সঙ্গে ভালো এবং খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এই পরীক্ষা চলাকালীন প্রত্যেক মানুষ নিজের ভিতরের তামসিক ও রাজসিক গুণগুলিকে নিজের থেকে আলাদা করে রেখে সাত্ত্বিক জীবনে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। আমাদের তামশিক ভাবনা হল সেই গুলি যেগুলি আমাদের ভিতরে হিং ভাবনা জাগিয়ে আমাদের নিজেদেরই উদাস করে দেয়। আর আমাদের রাজসিক গুণগুলো ঈর্ষা ভরপুর এবং আমাদেরকে লোভী বানিয়ে অন্যের ক্ষতি করাতে পারে। এই জন্যই এই পরীক্ষা চলাকালীন সকল আত্মাকে নিজের ভিতরের রাজসিক ও তামসিক গুন গুলি কে শেষ করে নিজের সাত্বিক গুনগুলির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। সাত্ত্বিক গুণ হলো সেটা যা আত্মাকে নিজের আশেপাশে থাকা সকল বিষয়বস্তুকে আত্মার সঙ্গে যুক্ত করে। সাত্ত্বিক গুন মানুষের মধ্যে লোভ, লালসা, ঈর্ষা এগুলিকে হটিয়ে দিয়ে মানুষকে ভালবাসতে শেখায়। 


এই পরীক্ষা চলাকালীন সকল মানুষকে জীবনের চারটি স্তম্ভ - ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জ্ঞান পাবার পরেই মুক্তি মেলে। এই চারটি স্তম্ভই হল সেই দুয়ার যা বোঝার মাধ্যমেই জীবাআত্মা - পরমাত্মাকে বুঝতে পারে। প্রথম দুয়ার হল ধর্মের। ধর্ম সেটাই যা গীতাতে লেখা রয়েছে, বেদে লেখা রয়েছে। ধর্ম সেটাই যা ধারণ করা হয়েছে, যা আপনার মন মেনে চলে। যেমন- মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা, অন্যের ক্ষতি না করা প্রভৃতি এইসকল বিষয়ই হলো ধর্ম। আর সকল আত্মাকে নিজের জীবন কালে এই ধর্মের পালন করতে হবে এবং সব সময় ধর্ম রক্ষা করতে হবে। 


দ্বিতীয় দুয়ারটি হলো অর্থের। সকল আত্মা এই দ্বিতীয় দুয়ারে তার পৃথিবীতে হওয়ার মূল কারণ বা অর্থ সম্পর্কে বুঝতে পারবে। এই জীবনে সম্পর্কের আনন্দ উপভোগ করবে। ভালো ভাই, ভালো বোন, ভালো স্বামী, ভালো স্ত্রী, ভালো বাবা, ভালো মা, ভালো ছেলে অথবা ভালো মেয়ে হয়ে সকল আত্মা এই দুনিয়ার নিজস্ব জীবনের কর্তব্য পালন করবে এবং মানুষরূপে জীবনযাত্রার এই পরীক্ষাটি পাস করবে। 


তৃতীয় দুয়ারটি হল কামের। ভগবদ্গীতা আমাদেরকে বোঝায় সকল মানুষের মধ্যে কাম, ক্রোধ, ঈর্ষা, লোভ, অহংকার এবং মোহের মত ছয় ধরনের ভাবনা আমাদেরকে নিজেদেরকে এবং অন্যেরও ক্ষতি করতে পারে। এই ভাবনাগুলিকে সকল মানুষদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কেননা এই ছয় ধরনের ভাবনার বশবর্তী হয়ে করা যেকোনো কাজ আমাদের জীবনে সমস্যা ডেকে আনতে পারে। একটি আত্মা যদি এই বিষয়টির ওপর বিজয় প্রাপ্ত হতে পারে বা এই 6 ধরনের ভাবনাগুলিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাহলে সেই আত্মাটির মোক্ষলাভ আরো সহজ হয়ে যায়।


চতুর্থ স্তম্ভ হল মোক্ষ লাভের। এই পরীক্ষার সময় সকল মানুষ তাদের নিজস্ব জীবনে কিছু ইচ্ছা রেখে থাকে। কিছু ইচ্ছা একটি জন্মেই পূর্ণ হয়। কিন্তু, কিছু ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। আর সেগুলি পূর্ণ করার জন্য আত্মাকে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসতে হয়। ভগবদ্গীতা আমাদেরকে এটা বোঝায় আমাদের ইচ্ছাই হলো মূল কারণ এই পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসার। আর আমরা যদি কোনো ইচ্ছা না রাখি তাহলে আমরা এই জীবন মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হতে পারব এবং মোক্ষলাভ করতে পারব। এর সাথেই এই চতুর্থ দুয়ারটি ক্ষমা করার দুয়ার। যারা আপনার সঙ্গে খারাপ করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া এবং আপনি যাদের সঙ্গে খারাপ করেছেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া - এরূপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


যতক্ষণ পর্যন্ত না আত্মা জীবনের এই চারটি দুয়ার সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মাকে জীবনচক্রের জন্ম মৃত্যুতে আবদ্ধ হয়ে বারবার এই পৃথিবীতে পরীক্ষা দিতে ফিরে আসতেই হবে। এই পরীক্ষা শেষ হলেই আত্মা শরীর এবং অন্য সকল বস্তু ত্যাগ করে দেয়। যা কিছু সে এই সংসারে বানিয়েছে তা অন্যকারো হবে। তখন আত্মা নিজের কর্মের ফলের জন্য বা এই পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়ে মানুষ রূপে যে পরীক্ষা সে দিয়েছে তার ফলের জন্য চলে যায়। আর আত্মার ভালো-খারাপ কর্মের হিসাব করা হয়। ভালো কর্মের জন্য কিছু সময়ের জন্য সে স্বর্গে থাকে এবং খারাপ কর্মের জন্য নরকে চলে যায়। নরকে আত্মা তার পাপ অনুযায়ী সাজা ভোগ করে। কিন্তু সেই সাজা শেষ হওয়ার পর আত্মা আবার একটি নতুন শরীর লাভ করে এই পরীক্ষায় আবার বসার জন্য। আর প্রতিটা পরীক্ষায়ই একইভাবে এই বিষয়গুলি আবারো হতে থাকবে। জীবনের চারটি দুয়ার ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ বোঝার জন্য আবারো সুযোগ পাবে প্রতিটি আত্মা। প্রতিটি জন্মাতেই নিজের পূর্বের 3 জন্মের কর্ম অনুযায়ী বর্তমান জীবনের পরিস্থিতি ভালো অথবা খারাপ হয়ে থাকে সেই আত্মাটির। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না আত্মা - পরমাত্মার সঙ্গে নিজের যোগসুত্রের সম্পর্কে বুঝতে না সক্ষম হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তার মুক্তি সম্ভব নয়।


বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পরে আপনারা সম্মৃদ্ধ হয়েছে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 


আরো পড়ুনঃ- ইন্দ্রদেব কর্ণের কবচ কুণ্ডল কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন? || Mystery of Karna's Kavach and Kundal- Click here

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা