নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - এমন একটি জায়গা সম্পর্কে যেখানে দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং লুকিয়ে রেখেছেন কর্ণের যুদ্ধ কবচ ও কুন্ডল। এই জায়গাটির কথা শোনার পর আপনিও অবাক হবেন। কেননা আজ পর্যন্ত এই কলিযুগে এই জায়গাটি সম্পর্কে কেউই জানতেন না। আর এখানেই রাখা হয়েছে সূর্যপুত্র দানবীর কর্নের যুদ্ধ কবচ ও কুন্ডল।
ধর্ম অধর্মের যুদ্ধ মহাভারত যেখানে কিছু এমন শক্তিশালী যোদ্ধাও ছিল যারা পান্ডবদের একাই হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন। আর সেই মহান যোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিল সূর্যপুত্র কর্ণ। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের লীলা পান্ডবদের মহাভারতের যুদ্ধ হেরে যেতে দেয়নি। নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের জন্য কর্ণ কৌরবদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। কৌরব দের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করার পরেও কর্ণকে আদরপূর্ণ ভাবের সঙ্গে দেখা হয়।
বন্ধুরা আমরা সকলেই জানি কর্ণের জন্ম দিবিও কবচ ও কুন্ডলের সঙ্গেই হয়েছিল। এই কবচ ও কুন্ডল এত শক্তিশালী ছিল যে, কোনো অস্ত্রশস্ত্রের পক্ষে একে ভেদ করা অসম্ভব ছিল। মহাভারতের কৌরবদের পক্ষ ভারী ছিল কেননা কৌরবদের পক্ষ নিয়ে অনেক মহান যোদ্ধার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। যেমন- ভীষ্ম পিতামহ, গুরু দ্রোণাচার্য, অশ্বত্থামা ও সূর্যপুত্র দানবীর কর্ণ।
আজকের দিনে আমরা এখন এটা জানতে চাই - কর্ণের কবচ ও কুন্ডল বর্তমানে কোথায় রয়েছে? কিন্তু, এর আগে এটা জানা জরুরী যে, ওই কবচ ও কুন্ডল এত শক্তিশালী কেন ছিল? সেগুলি কোন ধাতু দিয়ে তৈরি এবং তার মধ্যে কোন দিদিও শক্তি সমাহিত ছিল?
বেদব্যাস এর লেখা মহাভারতে এই বিষয়টির বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাভারতের আদিপর্বের 112 অধ্যায়ে এই বিষয়টি নিয়ে একটি কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কর্ণের কবচ ও কুন্ডলের সঙ্গে জন্ম নেওয়ার নিশ্চিত কারণ সম্পর্কে আমাদের বোঝানো হয়েছে। আসলে এই কবচ ও কুন্ডল অমৃত দিয়ে তৈরি ছিল। বলা হয়ে থাকে এগুলি এত শক্তিশালী যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সুদর্শন চক্র এবং ভগবান শিবের ত্রিশূল দ্বারা আঘাত করলেও এগুলি নষ্ট হবে না। বন্ধুরা উদাহরণ হিসেবে আপনাদেরকে বলি যখন সমুদ্র মন্থন হয়েছিল সেই সময় রাক্ষসদের পক্ষ থেকে রাহু অমৃত সেবন করে নিয়েছিল। তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাহুর শরীরের অঙ্গকে সুদর্শন চক্র দিয়ে ভেদ করেছিল। কিন্তু সেটি দুইভাগে বিভাজিত হয়। এমন অবস্থায় রাহু মরে না, বরং দুইভাগে বিভাজিত হয়ে রাহু ও কেতু সৃষ্টি হয়। আর সেই অমৃত দিয়েই সূর্যপুত্র কর্নের এই কবচ ও কুন্ডল তৈরি হয়েছিল। এর সাথেই বেদব্যাসের মহাভারতে অনেকবার কুন্ডল ও কবজ এর সঙ্গে জন্ম নেওয়া কর্নকে একজন শক্তিশালী যুব যোদ্ধা বলা হয়েছে। এর পেছনে যে কারণ রয়েছে তা হলো - কুন্ডল কর্ণকে যে উর্যা প্রদান করত তার ফলে কর্ণ সবসময় একজন যুবক যোদ্ধার মত লড়াই করতে পারতেন। যুদ্ধ ময়দানে কর্ণের গতি ছিল খুবই দ্রুত, ওই কুন্ডনের কারণেই কর্ণের মধ্যে সবসময় জোশ ভরপুর থাকতো। আর তার সাথেই কর্ণের কবজ ছিল অভেদ্য অর্থাৎ কোনো অস্ত্র তাকে ভেদ করতে পারত না। এই কারণে আপনি যদি বেদব্যাসের মহাভারত পরে থাকেন তাহলে দেখবেন সেখানে সূর্যপুত্র কর্ণ কে সবসময় একজন যুব মহারথী যোদ্ধা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে এটা একদম পরিষ্কার যে, কর্ণের কবচ ও কুন্ডল এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সেগুলি সব সময় কর্ণকে উর্যা প্রদান করে তার শক্তি ও জোশ ভরপুর করে রাখত এবং তার সাথে শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে সর্বদা তাকে রক্ষা করত।
চলুন বন্ধুরা এবার জেনে নেওয়া যাক বর্তমানে এই কবচ ও কুন্ডল কোথায় রয়েছে? বন্ধুরা আমরা সকলেই এটা তো জানি মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে দেবরাজ ইন্দ্র একজন ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করেন এবং কর্নের সূর্য পূজার সময় তার কাছে ব্রাহ্মণ ছদ্মবেশে দান চাইতে যান। আর তখনই কর্ণ তার কবজ ও কুন্ডল দান হিসেবে তাকে দিয়ে দেন। তা দেওয়ার পরেই তার অঘম অস্ত্রের প্রাপ্তি হয়। তারপর ইন্দ্রদেব ব্রাহ্মণ ছদ্মবেশে সেখান থেকে সেই কবজ ও কুন্ডন নিয়ে যান। আমাদের পুরানে এমনকি মহাভারতেও এর বর্ণনা রয়েছে যে, ইন্দ্রদেব যখন তার রথে করে কবজ ও কুন্ডল নিয়ে স্বর্গের দিকে এগিয়ে যান তখনই সেখানে একটি আকাশবাণী হয়। যেই আকাশবাণীতে দেবরাজ ইন্দ্র কে বলা হয়- আপনি অনেক বড় একটি পাপ করেছেন। আপনি ওই কবজ ও কুন্ডল নিয়ে স্বর্গলোকে প্রবেশ করতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার কাছে ওই কবজ ও কুন্ডল থাকবে স্বর্গলোকের দরজা আপনার জন্য ততক্ষন বন্ধ। এমন অবস্থায় ইন্দ্রদেব সেগুলিকে "ওঁম পর্বতে" গিয়ে লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু, তারপরে চন্দ্রদেব সেগুলি চুরি করার চেষ্টা করেন। যার ফলে ইন্দ্রদেব পুনরায় সেই কবজ ও কুন্ডল নিয়ে সূর্যদেবের সহায়তায় কোনারকের সূর্য মন্দিরে আবারো গোপন ভাবে লুকিয়ে রাখেন। বলা হয় সূর্য মন্দিরের নীচে এমন একটি গুহা রয়েছে যেখানে আজও কর্ণের কবচ ও কুন্ডন রয়েছে। আর এটাও বলা হয় যে, ভবিষ্যতে আসতে চলা কলিযুগের অন্ততে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দশম অবতার অর্থাৎ কল্কি অবতার এই কবজ ও কুন্ডলকে ধারণ করবে।
বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পরে আপনারা সম্মৃদ্ধ হয়েছে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- হিন্দুধর্মে গরুকে এত পবিত্র বলে মনে করা হয় কেন? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা