Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২

যুগের পরিবর্তনের সাথে কি করে বদলে যায় মানুষের লক্ষণ?

 



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।    


বন্ধুরা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী পরম পিতা ব্রহ্মা সময়কে চারটি যুগের ভাগ করেছিল। যা সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগ নামে পরিচিত। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী এই কাল খন্ডের সময়ের শুরু সত্যযুগ থেকে হয় আর কলি যুগে এসে একটি শেষ হয়। কলিযুগের সমাপ্তির পর পুনরায় সত্য যুগের সূচনা হয়। আর এই চক্রটি সৃষ্টির শুরুর প্রথম থেকে ঘুরে চলেছে। কলিযুগ সমাপ্তি হয়ে সত্য যুগের সূচনা এই বিষয়টি অনেকবার হয়েছে। এখন তার 23 তম ঘূর্ণন ক্রিয়াটি চলছে। আমরা এখন বর্তমানে যে কালখণ্ড তে বসবাস করছি তা কাল খন্ড পরিবর্তনের 23 তম চক্র । এখন আপনি হয়তো ভাবছেন এই চার যুগ কি এমন আলাদা হয়, যার কারণে ব্রহ্মাজিকে এই কাল খণ্ডকে চারটি যুগে ভাগ করতে হলো?  


বন্ধুরা এর উত্তর আমরা পাই হিন্দু ধর্মের লিঙ্গ পুরানে। যেখানে এই চারটি যুগের মধ্যে কি পার্থক্য তা বিস্তারে বর্ণনা করা রয়েছে। তার সাথে এটাও বলা হয়েছে যে কিভাবে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের স্বভাব ও জীবন যাপনেরও পরিবর্তন হয়। 



সত্যযুগ:- সবার প্রথমে আমরা জানবো সত্যযুগ নিয়ে। ব্রহ্মাজি যখন সমগ্র কালখন্ডকে চারটি যুগে ভাগ করলেন তখন সবথেকে প্রথম যুগের নাম দিলেন সত্যযুগ। এর পরবর্তী কালখন্ডের নাম ত্রেতা, তারপরে দ্বাপর এবং সবশেষে কলি। প্রথম কালখন্ড অর্থাৎ সত্যযুগে সকল মানুষের একটিই ধর্ম ছিল সেটা হল স্বার্থের ত্যাগ। অর্থাৎ সত্য যুগের মানুষদের মধ্যে কেউই স্বার্থপর নয়। সকলে একে অপরের সাহায্য করে থাকে। সত্য যুগে কোন মানুষের কোনরকম শরীর খারাপ হতো না। যার কারণ হলো তখনকার দিনের মানুষেরা নিজের সকল ইন্দ্রিয়কে সচেতন রাখত এবং কেউ অন্যের কোনো দোষ ধরতে যেত না। শুধু তাই নয় সত্যযুগের মানুষ কখনোই দুঃখী হত না। যার ফলে তাদের চোখ দিয়ে কখনোই অশ্রু ঝরত না। সত্যযুগের কারো মধ্যে কোন প্রকার অহংকার ছিল না। সত্য যুগের মানুষেরা কখনোই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিবাদে জড়াতো না। এই যুগের মানুষেরা সকলেই নিজেদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার ভাব নিয়ে থাকতো। এই শিব পুরাণেই সত্য যুগের মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তারা অত্যন্ত কর্মপরায়ণ ছিলেন। অলসতার ফলে কি হয় তা এই যুগের মানুষেরা জানেনই না। সত্য যুগের মানুষের সবথেকে বড় প্রশংসাজনক বিষয়টি হলো - তারা না তো কখনো কারো সাথে ঝগড়া ঝামেলা করত, না তো কখনো অন্যকে নিয়ে খারাপ কথা বলে সমালোচনা করত। সত্যযুগের সকল মানুষ নিজের নিজের কর্তব্য পালন করেন। সত্যযুগের সকল বর্ণের মানুষেরা পরমব্রহ্ম, পরমাত্মার উদ্দেশ্যে সকল আচার-অনুষ্ঠান করতে পারত। এই যুগের বেশিরভাগ মানুষের অধিকার সময় ধর্ম-কর্ম করতেই কেটে যেত। সকল লোকেরা পরমাত্মার ধ্যান করত। এই যুগে স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ করা হত না। সকল বর্ণের মানুষ দেরি শিক্ষা, শাস্ত্র কলা শিখতে সমান অধিকার দেওয়া হতো। এই যুগের স্ত্রীরা বিবাহের পরে নিজের পত্নী ধর্মের পালন করতো। আর সব সময় নিষ্ঠার সঙ্গে পতিদেবের সেবা করতেন। বাচ্চারাও মাতা-পিতার কথা সর্বদা শুনত এবং মাতা-পিতার বৃদ্ধ বয়সে খুব সেবা করতো। সত্য যুগের মানুষরা তাদের কর্মের ফলের উপর লোভ না করায় পরমগতি লাভ করে। 


পুরাণ অনুযায়ী এই যুগে মানুষের উচ্চতা 32 ফুট হত। আর মানুষ তার ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের শরীর ত্যাগ করতে পারত। বন্ধুরা সত্যযুগের কাল অব্দি 17 লক্ষ 28 হাজার বর্ষ বলা হয়ে থাকে। আর যখন এই সময় অতিক্রম হয়ে যায় তখন সূচনা হয় অন্য একটি নতুন যুগের। 


ত্রেতা যুগ-  সত্যযুগের পরেই সূচনা হয় কালখণ্ডে দ্বিতীয় যুগ অর্থাৎ ত্রেতা যুগের। বন্ধুর ক্রেতা যুগের মানুষেরা নিজেদের কর্তব্য পালন করে। কিন্তু, সত্য যুগের মানুষদের মতো নিজের ইন্দ্রিয় প্রতি সচেতন নয়। এই যুগে মানুষ ধীরে ধীরে শুধুমাত্র নিজের আপনজনেদের মধ্যে আবদ্ধ হয়। অর্থাৎ ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে 'স্বার্থের' সূত্রপাত ঘটে। মানুষের মধ্যে ঈশ্বর সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু, এই মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই যুগে সমাজ বর্ণাশ্রম অর্থাৎ সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারটি ভাগে বিভাজিত হয়ে যায়। কিন্তু ত্রেতাযুগে সত্যযুগের অপেক্ষা ধর্ম লোপ পাওয়া সত্ত্বেও এই যুগে স্ত্রীরা নিজের ধর্মের পালন করে। ক্রেতা যুগের পুরুষরাও নিজের পত্নীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা কখনোই করতো না। সন্তানও তার মাতা পিতার যথেষ্ট সেবা করতো এই যুগে। পুরাণ অনুযায়ী এই যুগে মানুষের আয়ু 10 হাজার বর্ষ পর্যন্ত হয়। এই যুগের কাল অব্দি 12 লক্ষ 96 হাজার বর্ষ। এই কালঅব্দি শেষ হওয়ার পর কালখণ্ডের তৃতীয় যুগের সূচনা ঘটে। যা দ্বাপর যুগ নামে পরিচিত।


দ্বাপর যুগ:-  লিঙ্গ পুরাণ অনুসারে দ্বাপর যুগে মানুষ নিজের কর্তব্য থেকে ধীরে ধীরে দূর হতে থাকে। অর্থাৎ এই যুগে মানুষ হয়ে ওঠে স্বার্থপর।এই যুগে বাস্তবিক সুখ লাভ করার জন্য মানুষ অনেক অধর্ম করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ধর্মকে ত্যাগ করতে থাকে। যেমনভাবে ধীরে ধীরে এই যুগের কাল অব্দি এগিয়ে যেতে থাকে ততই মানুষের মধ্যে কাম, ক্রোধ, লোভ বাড়তে থাকে। এই যুগে মানুষের পরিচয় কর্মের দ্বারা হয় না। বরং জন্মের সঙ্গে মানুষের পরিচয় সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ এই যুগে ব্রাহ্মণ এর পুত্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় পুত্র ক্ষত্রিয়, বৈশ্য সন্তান বৈশ্য আর শূদ্রের সন্তান শূদ্র হিসাবেই পরিচিত হতো। সত্যযুগের মত এই যুগে শুদ্রদের বেদ পড়ার কোনো স্বাধীনতা ছিল না। আর তারা ক্ষত্রিয় দের মত অস্ত্র চালানোর অধিকারও পেত না। অর্থাৎ দ্বাপর যুগের সমাজ পুরোপুরি বিভিন্ন জাতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দ্বাপর যুগের লোকেদের অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে সাথে নিজেদের উপরেও ঈর্ষা হতে শুরু হয়। দ্বাপর যুগের মানুষেরা স্ত্রীদের নিজের সম্পত্তি বলে মনে করতে থাকে। এই যুগের মানুষ নিজের ইন্দ্রিয়ের উপর কাবু রাখতে পারতেন না, যে কারণে সমাজে অনেক অধর্ম হত। স্ত্রীর ইজ্জতের সঙ্গে খেলা হতো, আর সন্তানও তার মা-বাবার কথা শুনত না। আর বন্ধুরা এটাই ছিল কারণ যার ফলে মহাভারতের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই দ্বাপর যুগে।


দেখুন বন্ধুরা এই যুদ্ধের মূল কারণ এটাই ছিল যা লিঙ্গ পুরাণে বর্ণিত রয়েছে। যদি দুর্যোধনের রাজ সিংহাসনের লোভ না হত, তাহলে সে নিজের ভাই পান্ডবদের বিরুদ্ধে কখনোই যুদ্ধ করত না। এক স্ত্রীকে ভরা সভায় অপমান করত না। এই সমস্ত বিষয়গুলি যদি না করতো তাহলে হয়তো এই মহাযুদ্ধ হতোই না। যাইহোক পুরাণ অনুযায়ী এই দ্বাপর যুগে মানুষের আয়ু 1 হাজার বর্ষ ছিল। এই যুগের কাল অব্দি 8 লক্ষ 64 হাজার বর্ষ। আর এই কাল অব্দি সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই কাল খন্ডের অন্তিম যুগ অর্থাৎ কলি যুগের সূচনা। 


কলিযুগ:- বন্ধুরা কলি যুগের মানুষ কেমন এটা জানার পূর্বে আপনার এটা জানা জরুরী যে, যুগের হিসেবে মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আধার কিভাবে হয়? 


আসলে সত্য যুগে ধর্মের আধার চারটে পায়ে হয়। যা ত্রেতা যুগে এসে দাঁড়ায় তিনটি পায়ে। দ্বাপর যুগে এটি এসে দাঁড়ায় দুটি পায় এবং কলিযুগে এটি এসে দাঁড়ায় একটি পায়ে। ধর্ম লোপ পাওয়ার ফলে মানুষের প্রবৃত্তিতেও একাধিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যার ফলে যুগ অনুযায়ী মানুষের শরীরে কাম, ক্রোধ, ক্লেস, রোগ এবং দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এই কলিযুগের মানুষরা বেদ, শাস্ত্র এই সবকিছু ত্যাগ করে দেয়। আর এই অন্তিম কালখন্ডে অর্থাৎ কলিযুগে মানুষ মায়া, তপস্বীদের বধ করতে থাকে। এই কলিযুগের মানুষরা অধর্মী, অনাচারী, মহাক্রোধী এবং স্বল্প বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন। এই যুগে বেশীরভাগ মানুষই নিজের কর্তব্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেমন ধরুন ব্রাহ্মণ বেদ পড়া ছেড়ে দেয়, ক্ষত্রিয় প্রজাদের রক্ষা করে না। এছাড়াও এই কলি যুগের মানুষের একটি অন্যতম নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য হলো এই কলি যুগের মানুষেরা গর্ভের নারী সন্তানকে গর্ভেই মেরে ফেলে। এই বিষয়টি সম্পর্কে পুরাণেও 'ভ্রুণ হত্যা' বলে উল্লেখ হয়েছে। এই যুগে লোক তপ এবং যজ্ঞের ফলকেও বিক্রি করে দেন। কলিযুগের স্ত্রী হোক বা পুরুষ কেউ নিজের ধর্ম পালন করে না। এই কলি যুগের কাল অব্দি শেষ হওয়ার পর সৃষ্টির নতুন একটি যুগের সূচনা হয়। অর্থাৎ পুনরায় শুরু হয় সত্যযুগের। এই চারটি যুগের মধ্যে কলিযুগে সবথেকে বেশি অভিশপ্ত বলে মনে করা হয়। কিন্তু বন্ধুরা কলিযুগের সবথেকে ভালো দিক এটাই - কলিযুগে করা একদিনের ধর্মের কাজ তা সত্য যুগের 10 বর্ষ, ত্রেতাযুগে 1 বর্ষ, আর দ্বাপর যুগে 1 মাস করা ধর্মকম্মের সমান বলে মনে করা হয়। আর এই কলিযুগে শ্রী হরির নাম নিলেই মানুষদের মুক্তি মেলে। 


তো বন্ধুরা চারটি যুগের মানুষের ব্যাখ্যা এবং বৈশিষ্ট্য এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে।আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনার সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যুগের সাথে সাথে মানুষের বৈশিষ্ট্য কিভাবে পরিবর্তন হয়েছে। 


আজ এখানেই শেষ করলাম । ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুনঃ- কুম্ভকর্ণের কাছে কোন শর্তে হারলেন হনুমানজি? CLICK HERE




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা