নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো- হিন্দু ধর্মে সত্যিই কি আছে তেত্রিশ কোটি দেব দেবী? তেত্রিশ কোটি দেব দেবীর রহস্য সম্পর্কে আলোচনা করব আজকে আপনাদের সঙ্গে।
বন্ধুরা আপনারা এই কথাটি অবশ্যই শুনেছেন যে হিন্দু ধর্মের ৩৩ কোটি দেব দেবী রয়েছে। আর হিন্দু ধর্মে অনেক দেব-দেবীর পূজা করা হয়। এই কথাটি সত্যি? -নাকি মিথ্যা? আর যদি মিথ্যাই হয়ে থাকে তাহলে কেন মানুষের মধ্যে এই ধারণাটি ছড়িয়ে পড়েছে? আসল সত্যিটা কি? কি রহস্যইবা লুকিয়ে আছে হিন্দু ধর্মের এই ৩৩ কোটি দেব দেবীর পূজা অর্চনার কথাটির মাধ্যে?
বন্ধুরা এটাতো সর্ববিদিত বা সবাই জানে যে সনাতন ধর্ম হল অনেক পুরাতন একটি ধর্ম। আমাদের ধর্মগ্ৰন্থও অনেক প্রাচীন। সময়ের সাথে সাথে এতে অনেক কথা যুক্ত হয়েছে এবং অনেক কথার অনুবাদও করা হয়েছে। এর ফলে কিছু ভ্রান্ত কথারও উৎপত্তি হয়েছে। আর এই ভ্রান্ত কথাগুলি এত ব্যাপক পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছে যে, মানুষেরা একে সত্যি বলে মনে করতে শুরু করেছেন। ৩৩ কোটি দেবদেবী- এই কথাটিও এরই পরিনাম।
হিন্দুধর্মের বেদ, উপনিষদ এবং পুরাণেও ৩৩ কোটি দেব দেবী আছে এই কথাটির উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এখানে কোটি বলতে সেই সংখ্যাকে বোঝানো হয় নি। বন্ধুরা প্রত্যেকটি শব্দের একাধিক অর্থ থাকতে পারে। যেমন ধরুন - তৃর্ষা। এর অর্থ বানও হয় , আবার এর অর্থ কিনারাও হয়, আর এর অর্থ সমীপও হয়। এই ধরনের আরও অনেক শব্দ রয়েছে যেগুলির বহু অর্থ এসে দাঁড়ায়। ঠিক সেরকমই ৩৩ কোটি বলতে সেই সংখ্যাকে বোঝানো হয়নি। এখানে কোটি শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে - এক হচ্ছে 'সংখ্যায় কারোর' বোঝাতে এবং অন্যটি হলো 'প্রকার'। বেদে ৩৩ কোটি বলতে প্রকার কে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু, অনুবাদ করার সময় ভুলবশত ত্রুটি হওয়ার দরুন সেখানে কোটি কে সংখ্যার 'কারোর' হিসেবে ধরা হয়েছে। আর এই ভ্রান্ত মূলক কথাটি এত বিপুল পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছে যে, অধিকাংশ মানুষই একে সত্যি বলে মানতে শুরু করেছে। বেদে ৩৩ কোটি বলতে ৩৩টি প্রকার কে বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও বৃহদারণ্যকোপনিষদ্-এ এই ৩৩ প্রকার দেবদেবীর বর্ণনা মেলে।
বন্ধুরা আপনারা হয়তো দেখেছেন বেশিরভাগ সময় কোনো মানুষ কাউকে প্রণাম করার সময় কোটি শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু, বন্ধুরা এখানে তারা কোটি কে সংখ্যা অর্থে ব্যবহার করছে না। তারা কোটি বলার মাধ্যমে এটা বোঝাতে চাইছে যে, যত প্রকারের প্রণাম আছে সবই আমি তোমাকে করছি।
বন্ধুরা কোটি শব্দের দুটি অর্থ কি কি এবং কোনটি কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এই বিষয়টি হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছেন।চলুন বন্ধুরা এবার জেনে নেওয়া যাক সেই ৩৩ কোটি অর্থাৎ ৩৩ প্রকার দেবদেবীর কথা।
এই ৩৩ প্রকারের মধ্যে ৮ টি প্রকার হচ্ছে বসু। বসু অর্থাৎ আমাদেরকে বসানোর মালিক। এই বসুতেই আত্মা নিবাস করে।এই আটটি বসু হল- পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, চন্দ্রমা, সূর্য এবং নক্ষত্র। এই আটটি বসু মানুষদের বসতির মালিক। এই আটটি বসুই প্রজাদের ধারণ এবং পালন করে। ঠিক এই ভাবেই ১১টি রুদ্র রয়েছে। আসলে এই রুদ্র গুলি শরীরেই থাকে। যখন এই রুদ্র গুলি শরীর থেকে এক এক করে বেরিয়ে যায় তখন মানুষকে মৃত বলে মানা হয়। শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া এই রুদ্র গুলির নাম হল - প্রাণ, অপ্রান, বেয়ান, সমান, উদান, নাগ, কূর্ম, ক্রিরকল, দেবদত আর ধনঞ্জয়। প্রথম পাঁচটি প্রাণ এবং পরের পাঁচটি উপপ্রাণ। সবশেষে ১১তম হল- জীবাত্মা। এই 11 টি রুদ্র যখন শরীর থেকে বের হয়ে যায় তখন আত্মীয়-স্বজন কান্না করতে শুরু করে। এইজন্যই এগুলিকে রুদ্র অর্থাৎ সংস্কৃতে বলা হয় - রুলানে বালা। ৮টি বসু এবং ১১টি রুদ্র মিলে হল ১৯ প্রকার। এখনো ১৪ প্রকার বাকি রয়েছে। যার মধ্যে ১২ টি হল আদিত্য। আদিত্য বলা হয় সূর্যকে। ভারতীয় ক্যালেন্ডারে এই সূর্যের উপরেই আধারিত। সময়ের ১২ মাস কে ১২টি আদিত্য বলা হয়। এগুলিকে আদিত্য বলার কারণ হলো এই সময় আমাদের আয়ু কে ধীরে ধীরে কমায়। যেভাবে সময়ের সাথে সাথে এক একটি করে আদিত্য পার হতে থাকে ঠিক সেভাবেই আমাদের আয়ু ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সূর্যের ১২টি রশ্মিকেও এই শ্রেণীতেই রাখা হয়েছে। ৮টি বসু, ১১টি রুদ্র, ১২টি আদিত্য মিলে হল ৩১ প্রকার। ৩২তম প্রকারটি হল ইন্দ্র। ইন্দ্রের অর্থ হলো- উর্যা। আর সব শেষে ৩৩তম হল - যজ্জ্ব। যজ্জ্ব অর্থাৎ প্রজাপতি। যা বায়ু, দৃষ্টি, জল, শিল্প শাস্ত্র, ঔষধি এই কয়টি ভাগে বিভক্ত। এই ৩৩ কোটি দেবদেবী অর্থাৎ ৩৩ প্রকার হলো - অবায়ব। এগুলিকে দেব বলা হয়েছে। দেব এর অর্থ হল - দিবিও গুণের অধিকারি।
আমাদেরকে ঈশ্বর যে প্রকার ও ভাবের মাধ্যমে এই ৩৩ কোটি অবয়ব দিয়েছে, সেগুলিকে একই প্রকার ভাবে শুদ্ধ, নির্মল ও পবিত্র করে রাখা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। উচ্চকক্ষের ৩৩ কোটি বা প্রকারের দেবতাই পুরো প্রকৃতির সঞ্চালন করে। যদি এর মধ্যে একটিও কম হয় তাহলে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত হতে পারে। এই ৩৩ কোটি বা দেবদেবীকে চেতনার দাড়াও বোঝা সম্ভব। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের চেতনা জাগ্রত করতে পারবে সে এগুলিকে বুঝতে সক্ষম হবে।
বন্ধুরা এই পৃথিবীতে জীবের প্রজাতির সংখ্যাই ৮৪ লাখ বলা হয়েছে। তেত্রিশ কোটি দেব দেবী কি করে সম্ভব? আপনিই নিজে একবার ভেবে দেখুন।
হিন্দু ধর্মে যেকোন উপাসকই নিজের রুচি অনুযায়ী দেবতা বেছে নিতে পারবে । তথাপি শাস্ত্রেও এই বিষয়টি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে নিজের কার্য অনুযায়ী দেবতা বেছে নিয়ে তার উপাসনা করা যায়। তো বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে হিন্দু ধর্মে ৩৩ প্রকারের দেবতা রয়েছে। ৩৩ কোটি বা কারোর নয়।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- খারাপ সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত কি করে নেবেন? - by Lord Krishna - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা