নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো- স্বামী-স্ত্রীর ৭ জন্মের রহস্য সম্পর্কে। স্বামী-স্ত্রীর পূর্বজন্মের সম্পর্ক কি ছিল? স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অজানা রহস্য!!
বন্ধুরা 'পূর্বজন্ম' এই কথাটি মনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মনের মধ্যে অনেক ধরনের চিন্তাভাবনা আসতে থাকে। কেননা এই বিষয়টিই একটু অন্যরকম। এই দুনিয়াতে একমাত্র হিন্দু ধর্মই হল এমন একটি ধর্ম যার ধর্ম গ্ৰন্থতে এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এমনিতেই সনাতন ধর্মে সকল সম্পর্কের সঙ্গে পূর্ব জন্মের গভীর সম্পর্কের মিল বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আজকে আমরা কথা বলব সেই সম্পর্কটির যেই সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সাথে সাথে মানুষের দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়। আর সে একটি নতুন জীবন শুরু করে। হ্যাঁ বন্ধুরা; সেই সম্পর্কটি হল- পতি-পত্নীর অটুট সম্পর্ক। আর এর সঙ্গে যুক্ত একটি কথা আপনিও হয়তো শুনেছেন যে, এই সম্পর্ক উপর থেকেই তৈরি হয়ে আসে। তো বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক এই কথাগুলো কি সত্যিই নাকি এমনিই বলার জন্যে বলে থাকে মানুষজনেরা।
বন্ধুরা পতি পত্নীর মধ্যে প্রেম ভালোবাসা ও পূর্বজন্মের সম্পর্ককে বোঝার জন্য সবথেকে বড় উদাহরন হিসেবে ভগবান শিবকে নেওয়া যেতে পারে। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ভগবান শিব নিজের পত্নীকে এত বেশি ভালোবাসতেন যে তাকে ছাড়া তিনি এক মুহূর্তোও থাকতে পারতেন না। ঠিক একই প্রকার ভাবে মাথা সতীও নিজের পতি শিবের উপর ভালোবাসায় এতটা পরিমাণে ভরেছিলেন যে, তিনি তার পিতার এক যজ্ঞতে ভগবান শিবের অপমান সহ্য করতে পারেননি। আর মাতা সতী তখন আত্মহত্যা করে নেয়। কিন্তু এটা ছিল সম্পর্কের অটুট বন্ধন ও ভালোবাসা। যে কারণেই পরের জন্মে তারা আবার একত্রে মিলিত হয়। মাতা সতী পরের জন্মে পার্বতী রূপে জন্ম নেয় এবং নিজের পূর্ব জন্মের সম্পর্কের অটুট বন্ধন ও ভালোবাসার কারণে তিনি এই জম্নেও ভগবান শিবকে নিজের পতি হিসেবে পান। বন্ধুরা প্রারম্ভের এই কথা থেকে এই সংকেতটি স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় যে, পতি ও পত্নীর আগের জন্মেও কোনো সম্পর্ক অবশ্যই থাকতে পারে।
হিন্দু ধর্মে বিবাহ জন্ম-জন্মান্তরের এমন একটি সম্পর্ক যাকে কোনো পরিস্থিতিতে ভাঙা যায় না। বিবাহ হলো সেই পবিত্র বন্ধন যেখানে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সাত পাকের বন্ধনে সবসময়ের জন্য বাঁধা হয় দুজন মানুষকে। বন্ধুরা এখানে সবথেকে নজর দেওয়ার বিষয় হলো এটি যে, হিন্দু ধর্মে বিবাহ রীতি অনুযায়ী পতি পত্নীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের তুলনায় আত্মিক সম্পর্ককে বেশি মাহাত্ম্য দেওয়া হয়েছে। আর এই সম্পর্ক ধার্মিক রীতি অনুযায়ী করা বিবাহ আর সেই বিবাহের সময় করা মন্ত্র পাঠ তথা বিশ্বাস জেতার উপর কায়েম হয়। কিন্তু যেই ব্যক্তির ধর্ম, আধ্যাত্ম ও দর্শনের জ্ঞান থাকেনা - তার কাছে বিবাহ একটি সাধারন সংস্কার বা রীতি। অন্যদিকে ধার্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহের মাহাত্ম্য খুবই বেশি হয়।
হিন্দু ধর্মে আট রকমের বিবাহ রীতির কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে ব্রম্ভ বিবাহকে সবথেকে উত্তম বলে মনে করা হয়। কেননা ব্রম্ভ রীতিতে সম্পন্ন বিবাহতে প্রেম, বিশ্বাস, সমর্পণ, আপন মনে করা, সম্মান দেওয়া আর সম্পর্কের অটুট বন্ধন কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিবারের পূর্ণ সম্মতিতে করা ব্রম্ভ বিবাহতে পতি এবং পত্নী একে অপরের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে পরস্পর প্রেম পূর্বক জীবন কাটিয়ে চলে। সাত পাক ঘোরার সময় নেওয়া নিজের বচন গুলিকে সব সময় মাথায় রেখে পতি পত্নী নিজের কুল ও বংশের সম্মানেরও খেয়াল রাখে। সাত পাক ঘোরার সময় সাতটি বচনের খুবই মাহাত্ম্য রয়েছে। পতি এবং পত্নী একে অপরকে নিজেদের কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে বলেন অথবা এই কথাটিকে এভাবেও বলা যায় তারা জীবনে নিজেরদের ভূমিকাকে সুনিশ্চিত করে।
বিবাহের সময় সাতটি বচনের মধ্যে চারটি বচন পতিকে নিতে হয় এবং বাকি তিনটি বচনের ভার পত্নীর উপর থাকে। এই কারণেই বন্ধুরা যখন পতি-পত্নীর চিৎ একে অপরের জন্য ব্যথিত হয় আর তারা একে অপরের প্রতি প্রেম, অনুরাগ ও আসক্তিতে ভরে যায় তখন মনে করা হয় তাদের এই জন্মে তো দূরে থাক পরের সাত জন্মেও আলাদা হওয়া অসম্ভব। চিৎ- তথা জীবাত্মার নেওয়া সেই বচন গুলি তাদের মৃত্যুর পরও পরের জন্মে পুনরায় আবার এক করে দিতে পারে। যখন একজন স্ত্রী ও পুরুষ একে অপরকে খুবই বেশি পরিমাণে প্রেম নিবেদন করে থাকেন তাহলে নিশ্চিত ভাবেই সেই প্রেম তথা ভালোবাসা তাদের পরের জন্মেও এক করে দেয়। এমনটাও মনে করা হয় এই সকল বিষয়গুলি হল প্রকৃতির পদ্ধতি। বলা হয় যেমন মতি তেমন গতি, আর যেমন গতি তেমন জন্ম। অর্থাৎ মনের মধ্যে যেরকম ভাব থাকবে তার পরিনামও সেরকমই হবে। এই কারণেই দুটি মানুষের মধ্যে যখন অটুট প্রেম ও স্নেহ হয়ে যায় তখন তারা সবসময়ের জন্য এক হয়ে যায়।
আপনার পত্নী যদি আপনার পূর্বজন্মের সঙ্গী হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিত রূপে আপনার মনে তার জন্য এবং তার মনে আপনার জন্য একটি আলাদাই টান থাকবে। বন্ধুরা আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন অনেকবার কোনো স্ত্রী অথবা পুরুষকে প্রথমবার দেখাতেই একটি কেমন যেন আকর্ষণ তৈরি হয়। আবার অনেক সময় এমনটাও হয় কোনো মানুষকে প্রথমবার দেখলে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। এর কারণ আমাদের ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে।যা অনুসারে আমাদের চিৎ বা জীবাত্মার অভ্যন্তরে একাধিক পূর্ব জন্মের স্মৃতি সঞ্চিত রয়েছে; কিন্তু এই স্মৃতি আমরা স্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারিনা। এই স্মৃতিই আমাদেরকে বর্তমান জন্মে অস্পষ্টভাবে পূর্বজন্মের কিছু স্মৃতি সম্পর্কে দোলা দেয় । যেই কারণেই আমাদের কখনো কখনো কোনো মানুষকে অথবা কোনো জায়গা চেনা চেনা লাগে। কিন্তু হয়তো সেই মানুষটিকে আমরা প্রথমবার দেখছি কিংবা সেই জায়গাতে আমরা প্রথমবার গিয়েছি তা সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে এমনটা হয়। অনেকবার কিছু মানুষের সঙ্গে আমাদের এমনই সম্পর্ক তৈরি হয় যে আমরা তার সঙ্গেই পুরো জীবন কাটাতে চাই। কিন্তু, তা সত্ত্বেও আপনার এটা জানা প্রয়োজন আপনার মনে কোনো ব্যক্তির প্রতি আকর্ষণ কেন জাগে? এর পিছনে কোথাও আপনার পূর্বজন্মের ঘটনা জড়িয়ে নেই তো? বন্ধুরা আপনাদের কি কোনো অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে প্রথমবার দেখা করার পর এমনটা অনুভব হয়েছে - একে তো আমি অনেক আগে থেকেই চিনি!
আসলে অবচেতন মনে আমাদের পূর্ব জন্মের সকল স্মৃতি সঞ্চিত হয়ে থাকে। যখন আমরা এরকম কোনো মানুষের সঙ্গে দেখা করি যে আমাদের পূর্ব জন্মের সাথি বা চেনা মানুষ ছিল তখন আমরা তার সামনে আসা মাত্রই আমাদের মন সেই ব্যক্তির চিৎ বা জীবাত্মার সঙ্গে জুড়ে যায়। অথবা সেই ব্যক্তির এবং আমাদের আভা মন্ডল যখন একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ লীপ্ত হয় তখন কিছু ভালো অনুভূতি হয়। আর আমরা সহজেই একে অপরের প্রতি সমর্পণ আর প্রেম পূর্ণভাবে ভরে যাই। আমাদের মনে সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া, প্রেম, করুনা জেগে ওঠে। এখানে এই বিষয়টিতে নজর দেয়া প্রয়োজন কোন ভাগগুলি আপনার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে। হতে পারে শারীরিক সুন্দরতার কারণে এই আকর্ষণ হতে পারে। কিন্তু যদি এই একে অপরের প্রতি টানের ভাব লম্বা সময় ধরে চলে এবং পড়ে গিয়ে সেটি একটি নতুন সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়। তবে পুনর্জন্মের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করা যাবে না।
অনেকবার বন্ধুরা এমনটাও দেখা গিয়েছে দুটি আলাদা আলাদা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গভীর প্রেমের পর বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যায়। আর সেই সম্পর্ক সফলোও হয়। আর বন্ধুরা যখন এমন ধরনের ঘটনা আমাদের সামনে আসে তখন সে ক্ষেত্রে পুনর্জন্মের সম্পর্কের ধারণা আরো মজবুত হয়ে যায়। কেননা এখানে দুটি মানুষের সকল জিনিস যেমন - ভাষা, খাওয়া-দাওয়া, বেশভূষা এইসব আলাদা হওয়া সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে পূর্বজন্মের টান থাকায় তারা একত্রিত হয়ে যায়।
বন্ধুরা আমাদের মধ্যে অনেকেই জ্যোতিষশাস্ত্র তে অনেক বিশ্বাস করেন। এই জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে পূর্ব জন্মের সিদ্ধান্ত আমাদের সম্পর্ক ও সম্বন্ধের সঙ্গে একটি আদিরূপে চক্রের আকারে চলতে থাকে । যখন কোনো নবজাতক শিশু জন্ম নেয় তখন সে নিজের ভুক্ত ও ভোগ্য দশার সঙ্গে সঙ্গে তার পূর্ব জন্মেরও কিছু সূত্র নিয়ে আসে। এমন কোন জাতক নেই যে, ভুক্ত দশা ও ভোগ্য দশার শূন্য তে জন্ম নিয়েছে। এইজন্যই তো বিবাহের সময় কুণ্ডলী মিলানো হয়। এমনটাও মনে করা হয় পতি-পত্নীর সম্পর্কতেও এর গভীর প্রভাব পড়ে।
বন্ধুরা আজকে আমরা সকল মানুষেরা আধ্যাত্ম থেকে দূর হয়ে যাচ্ছি, যার পরিণামে পতি-পত্নীর সম্পর্ক তে অল্পতেই ব্যাঘাত ঘটছে। আর অনেকবার তো এর পরিণাম এতই খারাপ হয় যে পতি পত্নী ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বন্ধুরা হিন্দু ধর্মে পতি পত্নী ছাড়াছাড়ি বা তালাকের কোনো প্রাবধান নেই। বরং হিন্দু ধর্মে উল্লেখ করা হয়েছে একবার যদি পতি পত্নী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় তাহলে সেই সম্পর্কটি জন্ম-জন্মান্তরের হয়ে যায়। বিবাহের সময় নেওয়া সেই সাতটি বচনই এই সম্পর্কের আধার। যেখানে পতি পত্নী একে অপরের খেয়াল রাখার সাথে সাথে একে অপরকে ভালো রাখার শপথ নেন। এই কারণেই পতি পত্নীর মধ্যে মতভেদ হওয়ার সময় সেই বচন গুলিকে মাথায় রেখে পুনরায় সম্পর্কে মধুর ভাব আনা সম্ভব। যার ফলে কলহের সম্ভাবনা কম এবং প্রেমের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
তো বন্ধুরা আপনিও কি আপনার জীবন সাথী সম্পর্ক এমন টাই ভাবেন যে, আপনাদের দুজনের সম্পর্ক শুধু এই জন্মের না, অনেক আগে থেকেই এই সম্পর্ক চলে আসছে।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গীতাজ্ঞান - এই জ্ঞান লাভ করলে আর কখনো দুঃখ মনে ঠাই পায় না।CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা