নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো- মৃত্যুর 13 দিন পর আত্মা কোথায় যায়?
বন্ধুরা এটা তো আমরা সকলেই জানি যে এই পৃথিবী লোকে যে-ই জন্ম নিয়েছে তাকে কোনো না কোনদিন নিজের শরীর ত্যাগ করে যেতেই হবে। অর্থাৎ এই সৃষ্টির যদি কোনো বড় সত্য থেকে থাকে তাহলে সেটা হল - আমাদের মৃত্যু। যাকে কেউ কোনদিন এড়িয়ে যেতে পারবেনা। আর আপনিও হয়তো দেখেছেন যে, হিন্দু ধর্মে যখন কোনো মানুষের মৃত্যু হয় তখন তার- শ্রাদ্ধ বা তেহরভি (Tehrvi) পালন করা হয়। কিন্তু, আপনি কি কখনো এটা ভেবে দেখেছেন যে, শ্রাদ্ধের পড়ে মৃত ব্যক্তির আত্মা কোথায় যায়? আর এরপরে আত্মার সঙ্গে কি কি হয়? - এই বিষয়ে না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের আজকের এই লেখা টি অবশ্যই পড়ুন।
গরুর পুরাণে বলা হয়েছে - মৃত্যুর পরে আত্মা 13 দিন পর্যন্ত সেখানেই থাকে যেখানে সে তার শরীর ত্যাগ করেছে। বন্ধুরা মৃত্যুর 13 দিন পর আত্মার সঙ্গে কি কি হয় এটা জানার পূর্বে আগে এটা জেনে নেওয়া যাক যে, মৃত্যুর পরের 13 দিন আত্মার সঙ্গে কি কি হয়?
গরুড় পুরাণ অনুযায়ী শরীরে থাকা 'উর্যা'- যাকে আমরা 'আত্মা' বলে থাকি - তা কখনো নষ্ট হয় না; শুধুমাত্র রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ একটি শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করে । এই আত্মারূপী উর্যা যখন শরীর থেকে বের হয় তখন তা - কুয়াশার মতো হয়ে থাকে। মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরেই এই জীবাত্মাটির অদ্ভুত রকমের অনুভব হতে থাকে। যা আত্মার জন্য খুবই কষ্টদায়ী থাকে।
গরুর পুরাণে বলা হয়েছে মৃত্যুর পরে আত্মা শরীর থেকে বের হয়ে কিছু সময় পর্যন্ত অচেৎ অবস্থাতে থাকে। তারপরে আত্মার এমন অনুভব হয় যেমনটা কোনো কঠিন পরিশ্রম থেকে ক্লান্ত ব্যক্তি গভীর ঘুমের মধ্যে অনুভব করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি অচেৎ থেকে সচেৎ হয়ে ওঠে। তারপরে আত্মাটি সোজা হয়ে ওঠে। এরপর শরীর থেকে বের হওয়া আত্মাটি নিজের প্রিয় পরিবার পরিজনদের ডাকতে থাকে। কিন্তু, তার আওয়াজ কেউ শুনতে পান না। এর ফলে আত্মাটির খুবই ছটফটানি ও অদ্ভুত অনুভব হতে থাকে। আত্মাটি তখন কোনো কিছু না বুঝতে পেরে সকল মানুষকে কিছু বলতে চায়। কিন্তু, তার আওয়াজ কেউ শুনতে পান না। কেননা সেই আত্মাটির গলার স্বর তখন অভৌতিক ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষ শুধুমাত্র ভৌতিক জিনিসগুলোকে বুঝতে পারে। যেই কারণে মানুষ আত্মার ওই অভৌতিক ধ্বনি মানুষ শুনতে পান না। বহু বছর ধরে শরীরের মধ্যে অবস্থান করায় যে সংসারের মায়ার আচ্ছাদন আত্মার উপর পড়েছে - তার ফলে দুঃখী হয়ে আত্মাটি কখনো নিজের মৃত শরীরকে কখনো নিজের পরিবার পরিজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু আত্মার প্রয়াস বিফল হয়। আত্মা চেষ্টা করে সে যেন পুনরায় আবার তার শরীরে প্রবেশ করে যায়। কিন্তু যমের দূতেরা তাকে শরীরে প্রবেশ করতে দেয় না। ধীরে ধীরে ব্যক্তির আত্মা এটা স্বীকার করে নেয় যে এখন এই মৃত্যুলোক থেকে চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। এইজন্য মায়ার বন্ধন ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
বন্ধুরা গরুর পুরাণে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৃত্যুর পরে আত্মাকে যমদূতেরা শুধু 24 ঘন্টার জন্যই নিয়ে যায়। আর এই 24 ঘণ্টার মধ্যে আত্মাকে দেখানো হয় সে কতটা পরিমাণ পাপ এবং কতটা পরিমাণ পূর্ণ করেছে। এরপর আত্মাকে আবার সেই ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে ছেরে দেওয়া হয় যেখানে সে তার শরীর ত্যাগ করেছিল। 13 দিন পর্যন্ত আত্মা ওখানেই থাকে তারপর আবার 13 দিন পরে যমদূতেরা সেই আত্মাটিকে পুনরায় নিয়ে যায়। এর মধ্যেই পরিবার-পরিজনরা আত্মার শান্তি কামনার জন্য নিয়মিত রূপে পিন্ডদান করে থাকেন।
গরুড় পুরাণ অনুসারে মৃত্যুর পরে 10 দিন পর্যন্ত যে পিণ্ডদান করা হয় তাতে মৃত আত্মার বিভিন্ন অঙ্গ নির্মিত হয়। 11 ও 12 দিনে করা পিন্ডদানে্র ফলে আত্মা সম্পূর্ণরূপে সুগঠিত হয়। এরপর 13 দিনে মৃত ব্যক্তির নামে যে পিণ্ডদান করা হয় তার ফলেই সেই আত্মা যমলোক পর্যন্ত যাত্রা করতে পারে। পিন্ডদানের ফলে আত্মা বল পায় ও নিজের পায়ে চলতে পারে। এই 13 তম দিনে পিন্ডদানের ফলে আত্মাটি মৃত্যুলোক থেকে যমলোক পর্যন্ত নিজের পায়ে যাত্রা সম্পন্ন করতে পারে। আত্মাকে মৃত্যুলোক থেকে যমলোকে পৌঁছাতে এক বছর সময় লাগে। মনে করা হয় পরিবার - পরিজন দ্বারা 13তম দিনে যে পিণ্ডদান করা হয় তা 1 বছর পর্যন্ত মৃত আত্মার ভোজন হিসেবে প্রাপ্ত হয়। এর সাথেই এটা মনে করা হয় যে, শ্রাদ্ধের দিন বা তেরহবির দিন কম করে 13 জন ব্রাহ্মণের ভোজন করানোর ফলে আত্মার প্রেতযোনি থেকে মুক্তি মেলে। অন্যদিকে যে মৃত ব্যক্তির আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধের দিন বা 13তম দিনে পিণ্ডদান করা হয় না - সেই মৃত ব্যক্তির আত্মাকে যমদূতেরা জবরদস্তি টেনে-হিঁচড়ে যমলোকে নিয়ে যায়। এরকম অবস্থায় যাত্রার সময় আত্মার অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। এইজন্য মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য মৃত্যুর পরে 13তম দিনে পিণ্ডদান করা অতি জরুরী বলে মনে করা হয়।
গরুড় পুরাণ অনুসারে যখনই কোনো মানুষের মৃত্যু হয় আর আত্মা শরীরকে ছেড়ে যাত্রা শুরু করে যমকের উদ্দেশ্যে, তখন সেই আত্মাকে তিন প্রকারের রাস্তার সম্মুখীন হতে। যা হল - ১) আর্চি মার্গ ২) ধুম মার্গ ৩) উৎপত্তি বিনাশ মার্গ।
আর্চি মার্গ ব্রহ্মলোক ও দেব লোকের যাত্রার জন্য হয়ে থাকে। ধুম মার্গ পিতৃলোকের যাত্রায় নিয়ে যায়। আর উৎপত্তি বিনাশ মার্গ নরকের যাত্রার জন্য হয়ে থাকে।
বন্ধুরা গরুর পুরান ছাড়া যজুর্বেদে এটা বলা হয়েছে শরীর ত্যাগ করার আগে যারা তপস্যা ও ধ্যান করেছেন তারা ব্রহ্মলোকে চলে যায়। অর্থাৎ ব্রহ্মলীন হয়ে যায়। কিছু সৎকর্ম করা ব্যক্তিরা স্বর্গলোক লাভ করেন। আর খারাপ কর্ম করা, পাপ কর্ম করা মানুষের আত্মা প্রেতযোনিতে অনন্তকালের জন্য ঘুরতে থাকে।
তো বন্ধুরা আজকের এই লেখাটিতে আমরা তেহরভির মাহাত্ম্য জানার সাথে সাথে এটাও জানলাম যে মৃত্যুর পরের 13 দিন পর্যন্ত আত্মা তার পরিবার-পরিজনের সঙ্গেই থাকে। আর 13 দিন এরপর সেই আত্মা মৃত্যুলোক থেকে যম লোকের জন্য যাত্রা করে।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- কলিযুগের পরে কেমন হবে সত্য যুগ ? || সত্যযুগের প্রকৃতির - বর্ণনা। CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা