নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো- কলিযুগের অন্ত কবে হবে? আর এরপরে কোন যুগ আসবে? সত্যযুগের প্রকৃতি কেমন হবে?
বন্ধুরা যেমনটা আমরা সকলেই জানি এখন যুগের চক্রের মধ্যে কলির কাল চলছে। লোভ, ক্রোধ, মিথ্যা - হল এই যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। হালেই হওয়া বিশাল মহামারী গোটা বিশ্বকে এটা বুঝিয়েছে যে এই কলির কাল কতটা খারাপ হতে পারে। যখন লাখ লাখ মানুষ নিজের কাছের পরিবার-পরিজনদের হারিয়ে ফেলেছিল তখন সেই সময়ে নিশ্চিত সেই মানুষগুলির মনে এই প্রশ্নটিই অবশ্যই এসেছিল যে - এই কলিযুগের অন্ত কবে হবে? আর এরপরে কোন যুগ আসবে? সেই যুগ কি এই কলিযুগের থেকে আরো ভালো হবে?
বন্ধুরা এরকম প্রশ্ন যদি আপনার মনেও জেগে থাকে - তো বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক এই প্রশ্নের উত্তর।
বন্ধুরা ভগবতদ্গীতা অনুসারে বর্তমানে এখন যুগের 22 তম চক্র চলছে। আর যে প্রকার ভাবে আত্মার একটি শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীর ধারণ করা, দিনের পরে রাত হওয়া, সময়ের সঙ্গে ঋতু পরিবর্তন হওয়া - এই সমস্ত কিছু হবেই হবে ঠিক সেরকমই একটি নির্ধারিত কালখন্ডের পরে যুগের পরিবর্তন হওয়া - এই সৃষ্টির একটি অটুট সত্য। আর বন্ধুরা মানা হয় যে যুগের এই পরিবর্তনের ক্রিয়াতে কলিযুগের সমাপ্ত হতে ও সত্য যুগের সূচনা হতে এখনো অনেক সময় বাকি। কিন্তু, এই নতুন যুগের সম্পর্কে জানার আগে আপনার এটি জানা অত্যন্ত আবশ্যক যে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে কলিযুগের কাল - 4,32,000 বর্ষ পর্যন্ত লম্বা। আর এখন কলিযুগের কেবলমাত্র প্রথম চরণই চলছে। কেননা পুরানে স্পষ্টরূপে বর্ণনা করা হয়েছে যে কলিযুগের প্রারম্ভ বা সূচনা 3102 ইসা পূর্বেই হয়ে গিয়েছিল। যার অর্থ এসে দাঁড়ায় এখন কেবলমাত্র কলিযুগের 5123 বর্ষই কেটেছে। আর এখনো 4,26,878 বর্ষ বাকি আছে। তো বন্ধুরা এই থেকে আপনারা এটা হয়তো বুঝেছেন যে, কলিযুগ এখনো তার শেষ চরণে পৌঁছায়নি।
বন্ধুরা এবার এই প্রশ্নটি তে আসব যে, এই কলিযুগের অন্ত কিভাবে হবে? - বন্ধুরা যদি এই প্রশ্নটির উত্তর জানতে আপনারা যদি খুবই উৎসুক হন তাহলে বলি এর উত্তর সনাতন ধর্মের অনেক গ্রন্থে রয়েছে। যার মধ্যে একটি ব্রহ্মা পুরাণ অনুযায়ী - কলিযুগের অন্তের সময় মানুষের আয়ু শুধুমাত্র 12 বর্ষ করে হবে। আর এই সময়ে মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুর্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। আর কলিযুগের আয়ু যেরকম করে বাড়তে থাকবে ঠিক সেরকম ভাবেই ধীরে ধীরে নদীর জল শুকিয়ে যেতে থাকবে। বেঈমানি ও অন্যায়ভাবে ধনসম্পত্তি কামানো ব্যক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ধন সম্পত্তির লোভে মানুষ অন্য কারো হত্যা করার জন্যেও পিছপা হবে না। তখন মানুষেরা পূজা-পাঠ, ধার্মিক উপবাস, ব্রতকথা পাঠ করা এবং সকল ধার্মিক কাজ করা বন্ধ করে দেবে। শুধু তাই নয় সেই সময় গরু দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। মানবতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। নারীরা কখনো সুরক্ষিত অনুভব করবে না। এমনকি নারীদের নিজের বাড়িতেই শোষণ করা হবে। তার নিজের মানুষরাই তার সঙ্গে ব্যভিচার করবে। পিতা-কন্যা, ভাই-বোন এই সকল সম্পর্ক মর্যাদা হারাবে। এক ভাই অন্য ভাইয়ের শত্রু হয়ে যাবে। বিবাহের মত পবিত্র একটি সম্পর্কেরও কোনো গুরুত্ব থাকবে না। প্রত্যেকের বিবাহিত জীবনে কোনো না কোনো সমস্যা অবশ্যই আসবে। পতি পত্নী একে অপরকে ধোকা দিতে শুরু করবে। শুধু তাই নয় কলি যুগের সমাজ হিংসায় ভরে উঠবে। যেই লোকগুলি শক্তিশালী হবে চারিদিকে তাদেরই আধিপত্য বজায় থাকবে। আর কলিযুগের এই প্রকোপ যখন চরম সীমায় পৌঁছবে তখন ভগবান বিষ্ণু - কল্কি অবতার ধারণ করবেন এবং পৃথিবী থেকে এই সমস্ত অধর্মীদের নাশ করবে।
কল্কি অবতারের সঙ্গে যুক্ত একটি কথার বর্ণনা মহাভারতে পাওয়া যায়। যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগের অন্ত এবং তার কল্কি অবতার ধারনের কথা বলেছেন। যেখানে ভগবান নিজেই স্বয়ং বলেছেন - কলিযুগের অন্তের সময় বড় বড় ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংঘটিত হবে। সেই সময় ভারী বর্ষা ও গরমের দিনে প্রচণ গরম পড়বে। সেই সময় কৃষকের জমি থেকে ফসল চুরি হয়ে যাবে, জলের জন্য মানুষ হাহাকারে পড়ে যাবে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে যে, চোর নিজের মতই অন্য কোনো চোরের বাড়ি থেকে চুরি করতে আরম্ভ করবে। খুনিদের হত্যা করার জন্য তার মতোই অনেক খুনি থাকবে। এভাবেই চোররাই চোরদের নাশ হবে। যুগান্তরে মানুষের আয়ু অধিক থেকে অধিকতর 12 বর্ষ পর্যন্ত হবে। মানুষ হবে - দুর্বল, পাপী, ক্রোধ, লোভ ও শোকাগ্রস্ত। সেই সময় একাধিক রোগের কারণে মানুষ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়বে এবং মানুষের ইন্দ্রিয় শীল হয়ে যাবে। আর যখন কলিযুগে পাপ নিজের চরম সীমায় পৌঁছবে আর পৃথিবী লোক থেকে ধর্ম পুরোপুরি সমাপ্ত হয়ে যাবে তখন আমি কল্কি রূপে অবতারির হয়ে এই ধারাটিকে পাপ থেকে মুক্ত করবো। আর তারপরে যে নতুন যুগ আসবে তাই সত্য যুগ নামে পরিচিত হবে। অর্থাৎ এই সৃষ্টি যুগ পরিবর্তনের 22 তম চক্রটি পূর্ণ করে 23 তম চক্রে প্রবেশ করবে।
বন্ধুরা অন্যদিকে আবার শিব মহাপুরাণে কলিযুগের অন্তের কিছু সংকেত বলা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ঘোর-কলিযুগ আসলে মানুষ পুণ্যকর্ম করা ছেড়ে দেবে এবং মানুষ হয়ে উঠবে অত্যান্ত দুরাচারী, সত্য থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে, অপরের নিন্দা করতে সবসময় ব্যস্ত থাকবে মানুষ আর অন্যের সম্পদ লুটে নেয়ার ইচ্ছা মানুষের মনে প্রবল হয়ে উঠবে। সবকিছু বিচার করে দেখা যাবে যে, এই যুগে মানুষ- নাস্তিক ও পশুবুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে উঠবে। ব্রাহ্মণ বেদ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করবে। কোনো মানুষ জ্ঞান আহরণের জন্য বিদ্যা চর্চা করবে না। শুধুমাত্র ধন উপার্জনের জন্য মানুষ বিদ্যা চর্চা করবে। শুধু তাই নয় কলিযুগের অধিকতর মানুষ বেশিরভাগ সময় মদ্যপানে সময় নষ্ট করবে। কলিযুগের স্ত্রীরা প্রায় সদাচার থেকে ভ্রষ্ট হবে এবং নিজের পতির অপমান করবে।
বন্ধুরা যদি ঠিকভাবে আপনি ভেবে দেখেন তাহলে দেখবেন শিব পুরাণে বর্ণিত এই কথাগুলো এখনই বর্তমানে কোথাও না কোথাও সত্যি হচ্ছে। যেখানে কলিযুগ এখন পর্যন্ত মাত্র 5,000 বর্ষই পূরণ করেছে। তাহলে একবার ভেবে দেখুন যে, কলিযুগ যখন নিজের চরমতম শেষ পর্যায় পৌঁছাবে তখন কলিযুগের প্রকৃতি কেমন হবে!
যাইহোক বন্ধুরা চলুন এখন একত্রে মিলে জানা যাক কলিযুগ শেষের পরে সত্যযুগ কেমন হবে?
বন্ধুরা আপনাকে জানিয়ে দেই যে, পুরাণে বর্ণিত রয়েছে সত্যযুগের কাল অব্দি 17 লক্ষ 28 হাজার বর্ষ। আর এই যুগে মানুষের আয়ু 4 হাজার থেকে 10 হাজার বর্ষ হবে। পৃথিবীর লোকে আরাকবার পুনরায় ধর্মের জাগরণ ঘটবে। মানুষ যখন বাহ্যিক সুখ ত্যাগ করে মানসিক সুখ পাওয়ার উপর জোর দেবে। মানুষের মধ্যে একে অপরের প্রতি হিংসার কোনো জায়গা থাকবেনা। চারিদিকে শুধু প্রেম আর ভালোবাসা থাকবে। মানবতার পুনঃস্থাপনা হবে এই সত্যযুগে। এর সাথেই মানুষের পরম জ্ঞানপ্রাপ্ত হবে। মানুষেরা ভগবানের পূজার্চনার প্রতি বিশ্বাস রারাখবেন। এই সত্যযুগে মানুষ নিজের তপবলের মাধ্যমে বা তপস্যার মাধ্যমে ভগবানের সাথে কথা বলতে পারবে। এই যুগের মানুষের নিজের শরীরের উপর পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আর আত্মা ও পরমাত্মার মিলনের ফলে সবাই সুখী হবে। অর্থাৎ সত্যযুগকে এই সৃষ্টির স্বর্ণযুগ বলা হবে।
বন্ধুরা সত্যযুগ আসতে এখনো অনেক সময় বাকি। কিন্তু, আমরা আমাদের কর্মের মাধ্যমে এই কলিযুগের স্বরূপকে - সত্যযুগে রূপান্তর করতে পারি। আমাদের ধর্ম গ্রন্থ বলে যে, কলিযুগের যেই মানুষ ধর্ম-কর্মের উপর বিশ্বাস করবে তাদের সত্যযুগের মতনই সুখ প্রাপ্ত হবে। যদি আপনিও নিজের জীবনে সত্য যুগের সুখ অনুভব করতে চান তাহলে এই কলিযুগে নিজের কর্মের উপরে খেয়াল রাখুন। আর সেই প্রত্যেকটি কর্ম থেকে বিরত থাকুন যেগুলি আপনাকে পাপের ভাগীদার করতে পারে।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- মদ্যপান করা ব্যক্তির সঙ্গে নরকে কি হয়? || what happens to those who drink alcohol? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা