Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

মৃত্যুর 24 ঘন্টা পরে আত্মা আবার তাঁর বাড়ীতে ফিরে আসে কেন?

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।  



আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো- মৃত্যুর 24 ঘন্টা পরে আত্মা আবার তাঁর বাড়ীতে ফিরে আসে কেন?



বন্ধুরা এটা তো আমরা সবাই জানি যে মর্তলোকে জন্ম নেওয়া কোন প্রাণী অমর নয় অর্থাৎ তাকে একদিন না একদিন মরতেই হয়। কিন্তু, আপনারা কি জানেন মৃত্যুর পর আত্মার কি হয়? কিংবা মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পর আত্মা তার নিজের ঘরে পুনরায় কেন ফিরে আসে কেন? আর সে কতদিন নিজের ঘরে থাকে? - যদি না জেনে থাকেন তাহলে বলি যে, এই সকল প্রশ্নের উত্তর গরুড় পুরানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। 


বন্ধুরা গরুড় পুরানে বলা হয়েছে যে, যখন কারো মৃত্যু হয় তখন যমরাজের দূত তার আত্মাকে নিজের সাথে যমলোকে নিয়ে যায়, যেখানে তার পাপ এবং পুণ্য কাজের লেখালেখি করা হয়। আর তারপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে যমদূত সেই আত্মাকে আবার তার ঘরে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। যমদূত এর দ্বারা ঘরে ফিরিয়ে দেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির আত্মা তার পরিবার-পরিজনের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। আর তার পরিজনদের ডাকে ;কিন্তু তার আওয়াজ কেউ শুনতে পায়না। এসব দেখে মৃতের আত্মা বিচলিত হয়ে পড়ে আর জোরে জোরে চেঁচামেচি করতে থাকে। তখনও তার আওয়াজ কেউ শুনতে পায়না। এরপর মৃতের আত্মা তার নিজের শরীরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে কিন্তু যমদূতের কাছে বন্দী থাকার কারণে সে মৃত শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। 


এছাড়াও গরুর পুরানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর যখন তার পরিবার-পরিজন কান্না করে তখন তা দেখে মৃত আত্মা দুঃখ পায়, আর সেও কান্না করতে থাকে। কিন্তু সে কিছু করতে পারে না; আর নিরুপায় হয়ে তার জীবিত সময়ে করা কর্মের কথা ভেবে দুঃখী হয়ে যায়। 


গরুর পুরানে বলা হয়েছে যখন যমদূত মৃতের আত্মাকে তার পরিজনের কাছে রেখে যায় তখন তারপর ওই আত্মার মধ্যে এতটাও শক্তি থাকে না যে, সে যমলোকে যাত্রা করতে পারে।


গরুর পুরাণ অনুসারে কোনো মানুষের মৃত্যুর পর - 10 দিন পর্যন্ত পিণ্ডদান করা হয় যার ফলে মৃত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের রচনা হয়। আর তারপরে ১১ তম এবং ১২ তম দিন যে পিণ্ডদান করা হয় তার ফলে মৃতের শরীরের মাংস এবং ত্বকের নির্মাণ হয়। আর যখন ১৩ তম দিনে শ্রাদ্ধশান্তির কাজ করা হয় তখন মৃতের নামে যে পিণ্ডদান করা হয় তার ফলেই মৃতের আত্মা যমলোকে যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে ১৩ দিন পর্যন্ত মৃত আত্মার নামে যে পিণ্ডদান করা হয় তার ফলে আত্মা মৃত্যুলোক থেকে যমলোক পর্যন্ত যাওয়ার শক্তি পায়। 


বন্ধুরা এই জন্য গরুর পুরানে বলা হয়েছে যখন কোনো মানুষের মৃত্যু হয় তখন তার আত্মা ১৩ দিন পর্যন্ত নিজের পরিবার-পরিজনের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। আর তারপর মৃতের আত্মা মর্তলোক থেকে যমলোকের যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে। যেই যাত্রাপথ পূরণ করতে তার এক বছর অর্থাৎ বারো মাস সময় লাগে। গরুড় পুরাণ অনুসারে এই ১৩ দিন পর্যন্ত করা পিন্ডদান মৃত আত্মার এই এক বছরের ভোজনের সমান হয়। 


বন্ধুরা এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে যদি কোনো মৃত আত্মার জন্য পিন্ডদান করা না হয় তাহলে কি হবে? - আপনাদের বলে দেই যে, এর বর্ণনাও গরুর পুরানে আলোচনা করা হয়েছে। গরুর পুরান অনুসারে যে মৃত আত্মার নামে পিণ্ডদান করা না হয় তাকে ১৩ তম দিন যমদূত জোর করে টেনে-হিঁচড়ে যমলোকে নিয়ে যায়। যার ফলে মৃত আত্মাকে যাত্রার সময় অনেক কষ্ট পেতে হয়। এই কারণে হিন্দু ধর্মে সমস্ত মৃত আত্মার জন্য ১৩ দিন পর্যন্ত পিণ্ডদান করা আবশ্যক বলা হয়েছে।এইসব ছাড়া গরুর পুরানে এও বলা হয়েছে যে - ১৩ তম দিন মৃত আত্মার জন্য পরিজনের দ্বারা করানো ভোজ যদি ধার করে করা হয়ে থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায় না। মৃত ব্যক্তির আত্মার এইসবে খুবই কষ্ট হয় এবং সে মনে মনে ভাবে সে যদি একাই এই কষ্ট ভোগ করত তাহলে ভালো হতো। তার সাথে গরুর পুরাণে এও বলা হয়েছে যে ব্যক্তি মৃতের পরিবারকে ধার নিয়ে ভোজ দেওয়ার জন্য বাধ্য করে এমন মানুষকে যমরাজ কখনোই ক্ষমা করেনা। আর তার মৃত্যুর পর তাকে বিভিন্ন রকমের যন্ত্রণা দেয়। আর তারপর তাকে মর্তলোকে পুনরায় পাঠিয়ে দেয়। এর সাথে গরুর পুরানে এও বলা হয়েছে যে, যেসব মানুষ জীবিত কালে পুণ্য কর্ম করে তাকে যমদূত মৃত্যুর ১৩ দিন পর যমলোকে নিয়ে যায়, আর এরকম পূর্ণ আত্মাকে মর্তলোক থেকে যমলোকে নিয়ে যাওয়ার সময় কোন রকম কষ্ট ভোগ করতে হয়না। যেসব মানুষ তার জীবিত সময়ে খারাপ কাজ করে তাকে যমদূত পুরো রাস্তায় বিভিন্ন রকমের যন্ত্রণা দেয়। যার ফলে সে থর থর করে কেঁপে ওঠে, আর যমদূত এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিন্তু তাকে যমদূত কোনরকম ক্ষমা করেনা। যখন পুণ্য আত্মা যমলোকে পৌঁছায় তখন যমরাজ তাকে স্বর্গলোকে পাঠিয়ে দেয়। আর অন্যদিকে পাপী আত্মাকে তার করা খারাপ কাজের শাস্তি ভোগ করার জন্য নরকে পাঠিয়ে দেয় এবং সাজা সম্পূর্ণ হওয়ার পর পুনরায় তাকে মর্তলোকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
 

তো বন্ধুরা আশাকরি আপনাদের বোঝাতে পেরেছি মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পর আত্মা কেন তার নিজের ঘরে আসে।


বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 

আরো পড়ুনঃ- মৃত্যুর পরে ও নতুন জন্মের আগের সময়তে আত্মা কোথায় থাকে?  CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা