নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো- মৃত্যুর পরে ও নতুন জন্মের আগের সময়টুকুতে কোথায় থাকে আত্মা?
বন্ধুরা যেমনটা আমরা সকলেই জানি আমাদের শরীর কোনো না কোনো দিন নষ্ট হবেই। আরেকটি নির্জীব শরীরে আত্মার বাস কিছু সময়ের জন্যই হয়। যা জীবনচক্র থেকে একটি শরীর থেকে অন্য শরীরে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু, বন্ধুরা এখানে এই প্রশ্নটি উঠেছে যে, একটি শরীর ত্যাগ করার পর ও নতুন শরীর ধারণের পূর্বের সময়টুকুতে ওই আত্মাটি কোথায় থাকে? এটা একটি এমন প্রশ্ন যার উত্তর বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। আর আপনিও যদি এমন লোকদের মধ্যেই পড়েন তাহলে আজকের এই লেখাটি পুরো পড়ুন।
বন্ধুরা যেমনটা আমরা আপনাকে আগেই বলেছি আমাদের সনাতন ধর্মে 'গরুড় পুরাণে' মানুষের জীবন মৃত্যুর চক্রের সঙ্গে যুক্ত সকল রহস্য কে উজাগর করা হয়েছে। এর মধ্যেই একটি আত্মার শরীর ত্যাগ করার পরের যাত্রার বর্ণনা পাওয়া যায়। যেখানে আমাদের প্রশ্নের উত্তরটি লুকিয়ে রয়েছে।
গরুর পুরাণে উল্লেখিত রয়েছে যখনই একটি আত্মা নিজের শরীর ত্যাগ করে তখন তাকে যমলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যমের দূতেরা আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত থাকে। যাদের দেখে ভালো কর্ম করা ব্যক্তির আত্মা খুবই সহজেই তাদের সঙ্গে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু, খারাপ কর্ম করা ব্যক্তির আত্মা যমদূত দ্বারা জোর জবরদস্তি করে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। যার পর যমদূতেরা সেই আত্মাটির সঙ্গে যমদেবের সামনে গিয়ে হাজির হন। যেখানে সেই আত্মাকে নিজের জীবন কর্মের সঙ্গে জড়িত সকল ভালো ও খারাপ কাজের হিসাব দিতে হয়। আর 24 ঘন্টা পর্যন্ত এই আত্মা ওই যমলোকেই থাকে। তারপর যমদূতরা সেই আত্মাটিকে পুনরায় আবার সেই স্থানে এসেই রেখে দেন যেখানে তার মৃত্যু হয়েছিল। যার পর সেই স্থানে ওই আত্মাটি 13 দিন পর্যন্ত থাকে। আর 13 দিন অতিক্রম করার পর অন্তিম সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত সকল বিধি নিয়ম হয়ে যাবার পর যমদূত আবার সেই আত্মাকে নিতে আসে। আর সেই আত্মাকে নিজের সঙ্গে যমলোকের যাত্রাতে নিয়ে যান।
বন্ধুরা এখন শুরু হয় একটি আত্মার আসল পরীক্ষা। যেখানে যমলোকের পথে খারাপ আত্মা গুলিকে যমের ভয়ানক নগরী অর্থাৎ নরকের দর্শন করানো হয়। এই পথে খারাপ আত্মাকে অনেক ভয়ানক জ্বালা যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। গরুর পুরাণে যমলোকের এই রাস্তাতেই বৈতরনী নদীর বর্ণনা পাওয়া যায়। এই নদী বিষ্ঠা ও রক্তে ভরা থাকে । যে ব্যক্তি নিজের জীবনের গরু দান ও অন্যান্য ভালো কর্ম করে থাকে তারা এই নদী সহজেই পার করতে পারে । আর যে ব্যক্তি নিজের জীবনে অধর্ম ও পাপ কাজ করে থাকে তাদের আত্মা এই নদীতে ডুবে যেতে থাকে। আর যমে দূতেরা সেই আত্মাকে টেনেহিঁচড়ে ঠেলতে ঠেলতে সেখান থেকে এগিয়ে নিয়ে যায়। 17 দিন ধরে এই যাত্রা করার পর 18 দিনে যমদূতেরা আত্মাকে নিয়ে যমপুরীতে পৌঁছায়। যমপুরীতে পৌছানোর পর আত্মা পুষ্পোদকা নামে আরেকটি নদীর খুব কাছে চলে আসে। যার জল খুবই স্বচ্ছ হয় এবং সেখানে পদ্ম ফুল ফুটে থাকে। এই নদীর পাড়েই ছায়া-দ্বার বটের একটি বড়ো বৃক্ষ হয়ে থাকে। যেখানে আত্মা কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে। এখানে এই গাছের নিচেই সেই আত্মাটির- তার পুত্র অথবা পরিবার-পরিজন দ্বারা করা পিন্ডদানের ভোজন প্রাপ্ত হয়। যার ফলে সেই আত্মাটির পূর্ণ শক্তি সঞ্চার ঘটে। এরপর দক্ষিণ দুয়ার হইতে সেই আত্মাটি যমদূত দ্বারা যমলোকে প্রবেশ করে। প্রবেশ করার পরই অত্যন্ত ভয়ংকর রুপি যমদেবকে দেখে সেই আত্মা। যার চারপাশে ভয়ানক পশু ও যমদূতেরা উপস্থিত থাকে।
বন্ধুরা গরুড় পুরাণ অনুসারে যমরাজ সবসময় আমাদের থেকে শুভকর্ম আশা করেন। কিন্তু, যখন কোনো জীবাত্মা শুভ কর্ম না করে পাপ কর্ম করে - তখন সেই জীবাত্মাটিকে শুদ্ধ করার জন্য দণ্ড দেওয়াই হল যমরাজের কাজ। আর এই বিশাল কার্য সম্পাদন করার জন্যই যমলকের সৃষ্টি।
পাপি আত্মাদের যমরাজ নরকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সকল আত্মাকে এই কঠিন দন্ডের সম্মুখীন হতে হয় না। অর্থাৎ ভালো কর্ম করা সেই আত্মাগুলি এই ভয়ানক দণ্ড থেকে মুক্তি পায়। ভালো কর্ম করা আত্মাগুলি জন্য একটি দিবিও বিমান আসে, যেখানে বসে এই ভালো জীবাত্মা গুলি বিষ্ণুলোক অর্থাৎ পরমধামে চলে যায়। মনে করা হয় যেসব জীবাত্মাদের বিষ্ণুলোকে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়, তাদের দ্বিতীয়বার জন্ম নেওয়ার আবশ্যকতা থাকে না। অর্থাৎ, তাদের মোক্ষলাভ হয়।
যজুর্বেদেও বর্ণিত রয়েছে যে তপ্ ,ধ্যান করা মানুষের আত্মার ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে রাক্ষসী কর্ম করা ব্যক্তির আত্মা প্রেত যোনিতে অনন্তকালের জন্য ঘুরে বেড়ায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটা হয়, যারা পাপ পুণ্য মিশিয়ে কর্ম করেন তারা মানুষ যোনী বাদে বিভিন্ন প্রকার যোনিতে জন্ম নেয়। আর জন্ম নেওয়ার পূর্বে এরা সকলেই পিতৃ লোকে থাকে। অর্থাৎ কর্মের আধারের উপর ভিত্তি করেই নরক, স্বর্গ ও অন্যান্য যোনিতে জন্ম হয়। এর সাথে এটাই হলো সেই জায়গা যেখানে সেই আত্মার দ্বিতীয় শরীর ধারণের সময় ঠিক করা হয়। প্রকৃতি তাকে তার ভাব, বিচার ও জাগরনের আঁধারের ওপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় গর্ভে প্রেরণ করে। এটাকে আপনি এভাবেও বুঝে নিতে পারেন যে, যার যেমন যোগ্যতা সেরকমই কর্ম। অথবা যার যেরকম গতি তার সেরকমই সুগতি অথবা দুর্গতি। আপনার গতির সম্বন্ধ সোজাসুজি আপনার মতির সঙ্গে বা মতের উপর ভিত্তি করেই হয়। অর্থাৎ যতটা সুমতি আপনি ব্যবহার করবেন সে আপনাকে ততটাই সুগতি এনে দেবে।
প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে আপনার দ্বিতীয় জন্ম ততদিন পর্যন্ত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি পুরোপুরি অজ্ঞান ও স্মৃতিহীন না হয়ে যান। কেননা স্মৃতিমান ব্যক্তি ভূত-প্রেত অথবা পৃত্রি যোনিতে থেকে যায়। আর যে জাগ্রুক হয়ে থাকে সে কিছুকাল পর্যন্ত ভালো গর্ভের খোঁজ করে থাকে। তারপর নিজের আবশ্যকতা অনুযায়ী দ্বিতীয় গর্ভধারণ করে।
তো বন্ধুরা আজকের এই প্রস্তুতিতে শুধুমাত্র এটুকুই। আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আত্মার মৃত্যুর পরের থেকে দ্বিতীয় জন্ম ধারণ করার আগের সময় পর্যন্ত কি কি ঘটে থাকে সেই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে আপনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- কেমন হবে কল্কি অবতার? কবে নেবে জন্ম? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা