নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো-
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বর্ণিত এমন ৯টি কথা- যা মানব জাতিকে সঠিক জীবন দর্শনের দেখাবে ।
বন্ধুরা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হিন্দুদের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। মহাভারতের বিশাল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণ নিজের মিত্র অর্জুনকে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন তাই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা জ্ঞান্। সেই সময় ভগবান কৃষ্ণ জীবনের রহস্য নিজের কথার মাধ্যমে অর্জুন কে বুঝিয়েছিলেন। বন্ধুরা সেই কথা গুলি আজও প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে ততটাই মহত্বপূর্ণ ও সঠিক দিশা দেখায় যতটা মহাভারত কালে অর্জুনের জন্য ছিল। বন্ধুরা আপনি যদি কখনো কোনো সময় নিজের জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে আপনার সেই সমস্যার সমাধান ভগবদ্গীতাতে অবশ্যই পাওয়া যাবে। তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক সেই নয়টি গুরুত্বপূর্ণ কথা সম্পর্কে।
প্রথমত, যা হয়েছে তা ভালোর জন্য হয়েছে। যায় এখন হচ্ছে তাও ভালোর জন্যই হচ্ছে। আর যা ভবিষ্যতে হবে, তাও ভালোই হবে। বন্ধুরা আপনি যে বিষয়েই মন খারাপ করে থাকুন না কেন! তা ভুলে যান। বর্তমানে যদি কিছু আপনাকে খুবই দুঃখ দিয়ে যাচ্ছে তাহলে তার পেছনে নিশ্চিত কোনো ভালো কারণই থাকবে। এটা একটি এমন চক্র যা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। এইজন্য গতকালের ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে কষ্ট পাওয়া বন্ধ করুন। আপনার কাছে এখন বর্তমান সময় রয়েছে, এই বর্তমান জীবনকে খুশিতে আনন্দের সঙ্গে কাটান।
দ্বিতীয়ত, পরিবর্তনই হল এই সংসারের নিয়ম। একটি ক্ষণে আপনি রাজা হয়ে থাকতে পারেন। আবার তার পরক্ষণে আপনি ফকিরও হয়ে যেতে পারেন। এই পৃথিবী স্থির নয়। এটি সব সময় ঘুরতে থাকে। দিন শেষ হওয়ার পর রাত আসে। আবার অনেক গরমে কষ্টের মধ্যে থাকার পরেও এক সুখময় ঠান্ডা আবহাওয়াও আসে। অর্থাৎ সব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে এই সংসার। এখানে ভালো এবং খারাপ সব কিছুই রয়েছে। এই কথাগুলি এই বিষয়টির প্রমাণ দেয় যে, পরিবর্তনই হল এই সংসারের নিয়ম। এই জন্য সেই কারণগুলি ভেবে কখনোই দুঃখিত হতে নেই যেগুলি আপনার জীবনে নিশ্চিত নয়। বরং সেই পরিবর্তনটিকে স্বীকার করে নেওয়া আপনাকে সকল কঠিন পরিস্থিতিতে খুশি থাকার শক্তি দেয়।
তৃতীয়ত, বন্ধুরা তৃতীয়ত যে কথাটি তা হলো- ধ্যান। এই ধ্যানের ফলে মন একটি প্রদীপের শিখার মত অটুট হয়ে ওঠে। বন্ধুরা আমাদের প্রধান সমস্যা হলো আমরা নিজেই নিজেকে জানি না। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকই কখনো নিজেকে ভেতর থেকে বোঝার চেষ্টাই করে না। কখনো যে নিজের অন্তরাত্মা সঙ্গে নিজের সংযোগ সাধন করা - তা আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ কখনো প্রয়াসই করেনি। ধ্যান আমাদের ভেতরের অন্তরাত্মার সঙ্গে আমাদেরকে পরিচিত করায়। আর আমরা যখন ভেতর থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে জানতে পারি তখন আমরা এটা বুঝতে পারি যে এই জীবন আসলে কি! আমরা কি করতে চাই, আমাদের জীবনের লক্ষ্য কি? সেই সমস্ত কিছু বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে । ধ্যান যেকোনো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। এই কারণে আমাদের সকলের উচিত প্রত্যেক দিন ধ্যান করা।
চতুর্থত,
"সকলে খালি হাতে এসেছে এবং খালি হাতেই ফিরে যেতে হবে।"
বন্ধুরা আজকে আমাদের বেশিরভাগ মানুষের জীবন অনেকটা এরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সবসময়ই মানুষ অর্থের পিছনে ছুটে চলেছে। কিন্তু, মানুষ এই বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞাত যে, এই সকল অর্থই কি তারা তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবে? না, বন্ধুরা কখনোই পারবে না। আমরা সকলেই খালি হাতে এসেছি এবং খালি হাতে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু তা সত্বেও মানুষ এটা বুঝে উঠতে পারে না বা বোঝার চেষ্টা করে না যে, সে কেন এত বিপুল পরিমাণে অর্থের পিছনে ছুটে চলেছ। এটা সম্পূর্ণই অর্থহীন। জরুরী এটা নয় যে আপনি কতটা পরিমাণ ইনকাম করলেন। জরুরি হলো এটা যে আপনি যতটা পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন তার মধ্যে আপনি কতটা পরিমাণ খুশি থাকতে পারছেন। আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য আমাদের পুরো জীবনটাকে সুখময় করে রাখা। কিন্তু বর্তমানে এখনকার মানুষের চিন্তাধারা এমন এসে দাঁড়িয়েছে যে, তার কাছে এখন যা আছে - যখন সে তার থেকে আরো অধিক মাত্রায় পৌঁছাবে তখনই সে খুশি হবে এরকম ভেবে থাকে। এই কারণেই মানুষ অর্থের পিছনে দৌড়াতে থাকে এবং তার জীবনে খুশি অনুভব করতে পারে না।
পঞ্চমত, মানুষ বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই বড় হতে থাকে। আপনি যেমনটা বিশ্বাস করবেন ঠিক সেরকমই হয়ে উঠবেন। বন্ধুরা যা আপনি ভেবে থাকেন এবং যেই বিষয়গুলির উপর আপনি বিশ্বাস করেন আপনার সঙ্গে সেরকমটাই হয়। যদি আপনি এটা বিশ্বাস করে চলেন যে আপনি একজন ঠান্ডা মাথার হাসিখুশি থাকা মানুষ তাহলে আপনি ঠিক সেরকম ভাবেই হাসিখুশি থাকবেন। আর আপনি যদি নেগেটিভ বিষয়গুলিকে বিশ্বাস করতে থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনি দুঃখী হয়ে যেতে থাকবেন। যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে আজকের দিনটি ভালো, তাহলে সত্যিই সেই দিনটি আপনার ভালো কাটবে। বন্ধুরা এই জিনিসটি একবার নিজের জীবনে অবশ্যই প্রয়োগ করে দেখবেন। আপনি যেরকমটা হতে চান সেটা আগে নিজেকে নিজে বিশ্বাস করিয়ে নিন।
ষষ্ঠত, "কর্ম করো, ফলের আশা করো না।"
বন্ধুরা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার এই পংক্তিটি আমাদের সকলের জন্য খুবই মহত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় ভালো বাড়ি, গাড়ি এবং সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে থাকি। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই জীবনকে একটি দৌড়ের প্রতিযোগিতা মনে করে এইভাবে দৌড়াচ্ছে যে, সে যেন খুব দ্রুত তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। সেই সমস্ত মানুষদের কাছে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যায় না। তারা যখন নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করে নেয়। তখন তাদের লক্ষ্য আবার আরেকটি লক্ষ এসে দাঁড়ায়। এইভাবে একটার পর একটা লক্ষ্য আসার ফলে সেই মানুষ এটাই মনে মনে ভাবতে থাকে যে, যখন সেই লক্ষ্য পূরণ হবে তখনই আমি খুশি হব; না হলে হব না। এই ভাবেই তার জীবন কেটে যায় এবং সারা জীবন তার দুঃখেই কাটে। কখনো সে আনন্দিত হয়ে খুশি মনে থাকতে পারে না। তাই বন্ধুরা এই বিষয়গুলি এড়িয়ে চলা আমাদের সকলেরই প্রয়োজন। নিজের লক্ষ্য বানানোর সাথে সাথে নিজের জীবনকে আনন্দময় করে তুলুন। বন্ধুরা সবসময় মনে রাখবেন জীবন একটি যাত্রা। না এটি একটি প্রতিযোগিতা। তার জন্য জীবনের এই সম্পূর্ণ যাত্রাটিকে সুখময় করে তুলুন।
সপ্তমত, বন্ধুর সপ্তমত যে বিষয়টির কথা বলবো তা হলো - সন্দেহ। মনে সন্দেহ নিয়ে জীবন যাপন করলে কখনোই খুশি মেলে না। না সেটা এই মৃত্যুলোকে নাতো পরলোকে। বন্ধুরা সংশয় অর্থাৎ সন্দেহ আমাদের মস্তিষ্কে একটি অস্পষ্ট পর্দা এনে দেয়। সন্দেহ আমাদেরকে ভীতু ও অস্থির করে তোলে। সন্দেহের কারণে ব্যক্তি কখনো সাহস ভরপুর নির্ণয় নিতে পারে না। আর এই সন্দেহের কারণেই একটি মানুষ নিজের সঠিক কর্ম করার পরেও একজন অসফল ব্যক্তির মতো জীবনযাপন করতে থাকে। এই জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের জীবন থেকে সন্দেহকে বের করে বাইরে ফেলে দিন। মানুষ নিজের বিচারের মাধ্যমে অনেক বড় হতে পারে । আবার এই বিচারের মাধ্যমেই নিজেকে অনেক নিচে নামিয়ে দিতে পারে। কেননা সকল ব্যক্তিই নিজের বন্ধু এবং শত্রু দুই হয়।
অষ্টমত, বন্ধুরা আপনার সবথেকে নিজের ও কাছের বন্ধু হল আপনি স্বয়ং নিজেই। তাই আপনার সকল সমস্যার সমাধান আপনিই সবথেকে ভালো ও সঠিকভাবে করতে পারবেন। যদি আপনি আপনার সমস্যার জন্য 10 জন বন্ধুর কাছে গিয়ে সমাধান চান তাহলে আপনি সঠিক সমাধান পাবেন না। কিন্তু, তাদের কাছে অন্যান্য সমাধান থাকবে। যা আপনি গ্রহণ করার পূর্বে নিজে অন্তত একবার হলেও ভেবে দেখবেন যে আপনার সঙ্গে কোন সমাধান টি সবথেকে ভালো যাচ্ছে সেই অনুযায়ী আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এই কারণেই নিজের উপর বিশ্বাস রাখবেন এবং সমস্যায় পড়লে সঠিক বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
নবমত, বন্ধুরা সবশেষে যে কথাটি বলবো তা হল - "আত্মা না তো কখনো জন্ম নেয়, নাতো মৃত্যু হয়।" শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অনুসারে সব সময় ভীতু হয়ে থাকলে আমরা আমাদের জীবনে কিছুই পাবো না। ভয় এবং চিন্তা হলো এমন একটি জিনিস যা আমাদের সুখের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এই জন্য আমাদের পূর্ণরূপে নিজেদের মনকে এগুলিকে বের করা উচিত। কিন্তু বন্ধুরা কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরকে ভয় পেতেই হবে - যেমন কোনো খারাপ কাজ করা, অধর্ম করা, মিথ্যা কথা বলা প্রভৃতি খারাপ কর্ম করার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বদা ভয় পাওয়া উচিত।
বন্ধুরা সবশেষে এটাই বলব যে ভগবদ্গীতা হল একটি সম্পূর্ণ জ্ঞানের সাগর। যার ছিটেফোঁটও যদি কোনো মানুষের উপর পড়ে সেই মানুষ বৃহৎ জ্ঞানী হয়ে ওঠে। এই ভগবদ্গীতার সামান্য পরিমাণ জ্ঞানও যদি কেউ নিজের জীবনে গ্রহণ করতে পারে তাহলে সেই ব্যক্তির মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে এবং সেই মানুষের জীবন ধন্য হয়ে উঠবে। এই কারণেই সম্ভব হলে ভগবদ্গীতা আমাদের প্রত্যেকের পড়া উচিত এবং তার মধ্যে যে লুকানো জ্ঞান রয়েছে তা নিজের জীবনে প্রয়োগ করা উচিত।
তো বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- বেশি লোভ করলে কি হয়? || What happens to people full of Greed? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা