নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো - "বেশি লোভ করলে কি হয়"? - সেই সম্পর্কে।
বন্ধুরা কোথায় আছে -
"লোভে পাপ। পাপে মৃত্যু।"
এর সাথেই ধর্মগ্রন্থেও বর্ণিত রয়েছে যে, লোভ যেরকমই হোক না কেন - এই 'লোভই' সবসময় মানুষের অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোনো মানুষ যদি ধনসম্পত্তির লোভ করে তাহলে এটা সবথেকে বড় পাপ বলে মানা হয়। আপনাদের মধ্যে অনেকেই এই জিনিসটি নিজের জীবনে অনুভব করেছেন হয়তো। আবার কেউ অনুভব করার পথে রয়েছেন হয়তো। কেননা আজকের এই কলিযুগে এরকম ব্যক্তি পাওয়া খুবই কঠিন - যার মধ্যে কোনো প্রকার লোভ নেই। তো বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক মানুষের এই প্রবৃত্তি তাকে কোথায় নিয়ে যায় এবং কতটা নিচে নামিয়ে দেয়।
বন্ধুরা বলা হয়ে থাকে যে, যেই ব্যক্তির মধ্যে অত্যান্ত লোভ-লালসা থাকে সে ভগবান কুবেরের আশীর্বাদেও সন্তুষ্ট হয় না। কেননা মানুষের এই লালসা ও কামনা তাকে কোথায় নিয়ে যায় এটা কেউ জানে না। এই কারণে আজকে আমরা আপনাদের জন্য এমন একটি গল্প কথা নিয়ে হাজির হয়েছি যা এই ধরনের প্রবৃত্তির মানুষের ওপর অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। তো বন্ধুরা চলুন এই কথাটি শুরু করা যাক।
একদা এক রাজা ছিল। যে সবসময় ভগবানের পূজা পাঠে এতটা পরিমাণে আনন্দিত থাকতো যে, সেই রাজা জঙ্গলে নিজের মন্দির বানিয়ে নিয়েছিল। যেখানে সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত ভাবে রাজা পূজার্চনা করত। একদিন ভগবান রাজার ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে তার সামনে এসে উপস্থিত হলেন। ভগবানের দর্শন পাওয়ার পর রাজা ধন্য হয়ে গেলেন। এরপর সেইরাজা ভগবানকে বলতে লাগল - হে দেব, আমি কি আপনার থেকে কিছু চাইতে পারি!?
তখন ভগবান বললেন - হ্যাঁ অবশ্যই । তোমার ভক্তিতে আমি খুবই প্রসন্ন হয়েছি। এই কারণে এখানে আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতেই এসেছি।
তখন ধর্মআত্মা রাজা উত্তর দিল - হে দেব, আপনি তো আমাকে সবকিছুই দিয়ে দিয়েছেন। না আমার কোনো ধনসম্পত্তির অভাব রয়েছে, না আমি সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত। কিন্তু, আমি আপনার কাছ থেকে নিজের প্রজাদের জন্য কিছু ইচ্ছা রাখতে চাই। হে দেব, কৃপা করে আপনি আমার সকল প্রজাদের একবার দর্শন দিয়ে তাদের জীবনও ধন্য করুন।
ভগবান রাজার এই ইচ্ছাটি পূরণ করতে রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু, ভগবান এই শর্তটি রাখল যে - আমি এই স্থানে এই সময়েই দেখা দেব। যে আমার কাছে আসতে পারবে শুধুমাত্র সে-ই আমার দর্শন পাবে। বাকি কেউ পাবে না। রাজা ভগবানের এই শর্তটি মেনে নিলেন। আর তার পুরো রাজ্যে ভগবানের দর্শনের কথাটি ছড়িয়ে দিলেন।
পরের দিন রাজার রাজ্যের সকল জনগণ সকাল সকাল স্নানপর্ব সেরে নিয়ে হরির দর্শনের জন্য সঠিক সময়ে হরির ভজন গাইতে গাইতে সেই স্থানে যেতে থাকলো। যেই সকল মানুষ গ্রাম থেকে বেরিয়ে সেই জঙ্গলে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ঠিক তখনই ভগবান তার লীলা শুরু করল। ভগবান রাস্তায় অমূল্য ধন সম্পদ ছড়িয়ে রাখলেন। তখন গ্রামের মানুষ সেই ধরনের সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে কাড়াকাড়ি করতে শুরু করল । তখন রাজা তার প্রজাদের বোঝাতে লাগলো যে, ভগবান এখান থেকে কিছুমাত্র দূরেই রয়েছে যদি তোমরা একবার তার দেখা পেয়ে যাও তাহলে এই ধনসম্পত্তি তার সামনে কিছুই নয়। কিন্তু বেশিরভাগ নগরবাসী রাজার কথায় কান দিল না। আবার অনেকে কেউ কেউ বলল। হে মহারাজ, আমরা অনেক জায়গায় ঋণী রয়েছি এই ধনসম্পত্তি পেলে আমরা তা শোধ করতে পারব। তখন গ্রামবাসীরা বলল আমরা এই অমূল্য ধনসম্পত্তি নিজেদের বাড়িতে রেখে তার পরে আসছি। বেশিরভাগ নগরবাসীই রাজার কথা বুঝতে চাইল না। নগরবাসীরা রাজাকে বলতে লাগলো আপনি এগিয়ে চলুন, আর ভগবানকে যেতে দেবেন না; আমরা আসছি। কিন্তু এদের মধ্যে কিছু কিছু লোক এমনও ছিলেন যারা রাজার কথাটি বুঝতে পেরেছিলেন। আর তারা ধন-সম্পত্তির আগে ভগবানের দর্শন পাওয়া বড় ব্যাপার এটা মনে করে রাজার সঙ্গে এগিয়ে যান। এইভাবে কিছুক্ষণ এগিয়ে যাবার পর তারা আবারো দেখতে পান রাস্তার উপর আগের থেকেও অধিক মূল্যবান ধনসম্পত্তি পরে রয়েছে। যে স্বল্প সংখ্যক নগরবাসী রাজার সঙ্গে এগিয়ে এসেছিলেন তারাও সেই আগের থেকে বেশি মূল্যবান ধনসম্পত্তি দেখে আর বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে কি করবে। তখন রাজা আবারো সেই স্বল্পসংখ্যক নগরবাসীকে বোঝালেন ভগবান আর একটু দূরেই রয়েছেন। রাজার এই কথা শুনে সেই স্বল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যেও কিছু মানুষ রাজার সঙ্গে আগে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু, কিছু মানুষ আর এগিয়ে গেলেন না। তারা ওই অমূল্য ধন সম্পদ নিয়ে মারামারি কাড়াকাড়ি করতে লাগলেন। এইভাবে আবারো রাজা তার সঙ্গে কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই তারা যা দেখলেন তা দেখে তারা অবাক হয়ে গেলেন। এইবার রাস্তার ওপরে আগের তুলনায় আরো বেশি মূল্যবান সম্পদ পড়ে রয়েছে। এইবার রাজা সঙ্গে যে কয়জন লোক এসেছিল সেই লোকগুলি এই মূল্যবান সম্পদ গুলো দেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে পরল। রাজা তাদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে যে, ভগবান এখান থেকে শুধুমাত্র দুই পা দূরেই রয়েছেন। তোমরা যদি এগুলো এখন ত্যাগ করে এগিয়ে চলো তাহলে তোমরা ভগবানের দেখা পাবে। কিন্তু, নগরবাসীরা এটা বলে রাজাকে মানা করে দিল যে, হে মহারাজ! এই ধনসম্পত্তি তো ভগবানই আমাদের কৃপা করে দিয়েছে। এই ধনসম্পত্তি পাওয়ার পর এখন আমাদের জীবন ধন্য হয়ে গেছে। আর আমরা ভগবানের দেখা পেয়ে কিই বা করব! রাজার শত চেষ্টা করার পরও যখন তারা বুঝল না তখন সেই যাত্রাতে শেষমেষ রাজা এবং রাণী রইল। রাজা এবং রাণী দুজনা একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু ভগবানের পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। এইবার রাস্তায় ভগবান এমন হিরে, মতি,গয়না ও রত্নের ঢের করে দেন যা রানি জীবনে দেখেননি। সেই মূল্যবান গয়না গুলি দেখে রানীর মন খুশিতে ভরে যায়। তখন রাজা রানী কে বলল - হে প্রিয়, তুমি এসব কি করছো ভগবান ওখানে রয়েছে চলো ভগবানের দর্শন করে আসি। তখন রানী রাজা কে বলল আমি এরকম মূল্যবান রত্ন ও গয়না কোনদিনও দেখিনি। আমাকে এগুলি অর্জিত করতে দাও। ভগবানের দর্শন আমি অন্য কোনো সময় করে নেব। রানীর এই কথা শোনার পর রাজা একাই ভগবানের দর্শন এর উদ্দেশ্যে চলে গেল। এরপর যখন সেই রাজা ভগবানের দর্শনের জন্য সেখানে গিয়ে উপস্থিত হল, তখন ভগবান তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন - হে রাজা! তুমি তো পুরো প্রজাদের আমার দর্শনের জন্য নিয়ে আসতে চেয়েছিল; তাহলে কি হলো এখন?
এখন সেই রাজা উত্তর দিল - হে ভগবান! সবাই একত্রিত হয়ে বেরিয়েছিল তো আপনার দর্শনের জন্যই । কিন্তু, আসার পথে রাস্তায় সবাই কিছু না কিছু বিষয়ের জন্য এই পর্যন্ত আসতে অক্ষম হয়। কেউ টাকা পয়সা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি; কেউ মূল্যবান ধনরত্ন দেখে লোভ সামলাতে পারেনি; আবার কেউ হিরে, মূল্যবান গহনা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। এই কথা শোনার পর ভগবান বললেন- এই কারণেই তো সংসারের এই মোহ মায়া ত্যাগ করে যে আমার কাছে আসতে পারে, তার মোক্ষলাভ হয়। যে মানুষের এই সকল বিষয়ের উপরে লোভ থেকে যায় সেই মানুষটি হয়তো এই মৃত্যু লোকে তার সকল জিনিস পেয়ে সুখে থাকতে পারে। কিন্তু, এই মৃত্যু লোকে মৃত্যুর পরে তার কাছে তার পাপ কর্মের ফল ভোগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
এই জন্যই বলা হয়েছে যে, যতই আপনি আপনার সম্পূর্ণ জীবন ধন সম্পত্তি অর্জন করেই কাটান না কেন! কিন্তু, কখনো এর জন্য অন্য কারো খারাপ করতে যাবেন না অথবা এই ধন সম্পত্তি অর্জন করতে গিয়ে কোনো খারাপ কর্ম করবেন না। আর আপনার কাছে যতই ধন থাকুক না কেন এর জন্য কখনও মায়া-মমতা ত্যাগ করে লোভের বশবর্তী হবেন না। সময় থাকতেই আমাদের প্রত্যেককে উচিত এই লোভ লালসা নিজের থেকে দূর করা।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- মানুষের মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকে, শরীরের - এই অঙ্গ গুলি || Human Body parts are stay Alive after Death Click her
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা