Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ১১ জুন, ২০২২

কেউ যদি অপমান করে তাহলে কি করবেন - জেনে নিন গৌতম বুদ্ধের এই গল্প থেকে ।।


 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


আজকে আমি গৌতম বুদ্ধের যে গল্পটা আপনাদের জানাবো সেই গল্পটা আপনাদের বোঝাবে যে, কেউ যদি আমাদের অপমান করে কিংবা বিভিন্ন কারণে আমাদের ছোট করে তাহলে আমাদের কি করা উচিত? কিন্তু, গল্পটা শুরুর আগে আমি একটা কথা বলতে চাই বিশেষত এই গল্পটার জন্য, সেটা হলো এই লেখাটি শেষ অব্দি পড়বেন, কারণ লেখাটি অর্ধেক পড়লে লেখাটির মধ্যে কি বলতে চাওয়া হয়েছে তা নিয়ে আপনার মনের ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে চলুন গল্পটা জানা যাক।


একবার গৌতম বুদ্ধের আশ্রমে গৌতম বুদ্ধের এক শিষ্য সব সময় মন খারাপ করে থাকতো। তার মন খারাপের কারণ ছিল সে কারোর বলা ছোটো বড়ো কথা সহ্য করতে পারত না। সে যখন গ্রামবাসী বা নগরবাসীর কাছে ভিক্ষা চাইতে যেত তখন এমন অনেক বাড়ি থাকতো যেখান থেকে তাকে ছোটো বড়ো কথা শোনানো হতো, তাকে অপমান করা হতো। কেউ তাকে বলতো এত হাট্টাকাট্টা যুবক হয়ে তোমার ভিক্ষা করতে লজ্জা করে না, ভালো কাজ করতে পারো তো কোনো। কেউ তাকে বলতো পরিবারকে ছেড়ে এরকম সন্ন্যাসী হতে তোমার লজ্জা করে না। এরকম বিভিন্ন ছোট বড় কথা তাকে কিছু কিছু মানুষের থেকে শুনতে হতো, সবার থেকে কিন্তু নয়, কিছু কিছু মানুষের কাছ থেকে। কিন্তু যাদের থেকে এই অপমান গুলি শিষ্যটি পেতো, তাদের প্রতি তার একটা রাগ ক্ষোভ তৈরি হতো। সে চাইতো সবাইকে জবাব দিতে কিন্তু গৌতম বুদ্ধ সবসময় ক্ষমার কথা বলেন, তিনি সবসময় সহ্যের কথা বলেন এবং ভিক্ষা চাইতে গিয়ে যে যাই বলুক তাকে ঘুরিয়ে অপমান কেউ যেন না করে। গৌতম বুদ্ধ তার সব শিষ্যদের সেই কথা বলে দিয়েছিলেন সেই কারণে সে চেয়েও তাদের কিছু বলতে পারতোনা। কিন্তু বাইরে থেকে কিছু না বললে কি হবে তার মনের মধ্যে এই সব জিনিস গুলি নিয়ে সব সময় যুদ্ধ চলত, কখনো খুব রাগ হতো কখনো মনে হতো সে যেন সন্ন্যাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ভুল করেছে। তো তার সহ্যের সীমা যখন একদম ছাড়িয়ে গেল, সে বুদ্ধের কাছে গিয়ে তার মনের মধ্যে চলা সব ব্যাপারটা খুলে বলল। বুদ্ধ সব শুনে তাকে বললেন আমাদের মনের মধ্যে চিন্তা করার অনেক শক্তি আছে। মনের মধ্যে চিন্তা যদি সঠিক হয় সেটা যেমন আমাদের সফলতা চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যেতে পারে তেমনি চিন্তা যদি ভুল হয় সেটা আমাদের অনেক বড় ক্ষতিও করবে। এই শুনে সেই শিষ্য মনে মনে ভাবলো এসব বলতে খুব সহজ করতে খুব কঠিন। আসল সমস্যা তো ওই মানুষগুলোর মধ্যে রয়েছে যারা আমাকে অপমান করে, আমাকে অনাদর করে, আমাকে আজেবাজে কথা শুনিয়ে ছোট করার চেষ্টা করে। আর গৌতম বুদ্ধ সেখানেও শান্ত থাকার উপদেশ দেয়, এটা ঠিক নয়। আসলে সেই শিষ্যটি রোজ রোজ লোকের ছোট-বড় কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই তার আরও বেশি করে এই কথা মনে হচ্ছিল। বুদ্ধ বললেন আমরা সেইসব মানুষের কথা ধরে বসে থাকি, যারা আমাদের অহংকারে আঘাত করে যারা আমাদের মনে আঘাত করে। আর সেইসব মানুষদের সংখ্যা কিন্তু খুব কম থাকে। উল্টোদিকে যারা আমাদের ভালোবাসে যারা আমাদের উৎসাহিত করে যারা বিপদের সময় আমাদের পাশে থাকে তাদের কথা আমরা অতোটা গুরুত্ব দেইনা । তাদের নিয়ে আমরা এত ভাবিও না, তাদের সংখ্যা কিন্তু তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি থাকে। আমরা তাদের সবাইকে ছেড়ে সেই দু একজন মানুষের কথা সবসময় ভাবতে থাকি যারা আমাদের অপমান করে বা ছোট করে। আর সেই সব মানুষের কথা ভেবে আমরা মন খারাপ করি। নিজের মধ্যে ক্রোধের সৃষ্টি করে নিজেকেই কষ্ট দেই। কিন্তু, সেই শিষ্য যেন কোনোভাবেই বুদ্ধের এই কথাগুলি মানতে পারছে না তার মনে হচ্ছিল তার জবাব দেওয়া দরকার। অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া দরকার। বুদ্ধ তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে বললেন এককাজ করো আজকে তুমি আমার সাথে ভিক্ষা করতে চলো, এই শুনে সেই শিষ্য খুব খুশি হলেন। সে ভাবল বুদ্ধের সঙ্গে ভিক্ষা করতে গেলে সম্মান পাবে, এনাকে সাথে রাখলে কেউ আর অপমান করার সাহস পাবে না। আর যদি কেউ অপমান করে তাহলে সেটা কেমন লাগে সেটাও উনি বুঝতে পারবেন।

 

এরপর সেই শিষ্য আর গৌতম বুদ্ধ দুজনে একটি গ্রামে ভিক্ষা করতে গেল সেখানে বুদ্ধকে দেখে সবাই খুব আদর যত্ন করল। আর বুদ্ধের সাথে যেহেতু সেই শিষ্যটি ছিল তারও খুব আদর যত্ন করল। অপমান তো দূরের কথা সেদিন যা সম্মান পাওয়া গেল তা শিষ্য আগে কখনো পায়নি। সে মনে মনে ভাবল এটাই তো রাজার পুত্রের সঙ্গে থাকার সুবিধা। সবাই জানে যে গৌতম বুদ্ধ একজন রাজপুত্র, এনাকে অপমান করবে এমন সাহস কার আছে! অপমান তো আমাদের মত ছোটখাট মানুষদের হয়, আমাদেরকে কেউ কেউ তো মানুষ বলে ভাবেই না। বুদ্ধ সেই শিষ্যের মুখের হাসি আর আনন্দ দেখে মুচকি হাসলেন। তো সেই গ্রামে ভিক্ষা নেওয়ার পর সেখান থেকে একটু দূরে আরেকটি গ্রামে তারা ভিক্ষা করতে গেলেন। শিষ্য তো খুব আনন্দের সঙ্গে সেখানে গেল সে ভাবল এখানেও তাদের খুব সম্মান করা হবে । আগের গ্রামের মতোই তাদের আদর যত্ন করা হবে। কিন্তু, এই গ্রামে ঠিক উল্টোটা হলো এই গ্রামের কিছু মানুষ বুদ্ধকে দেখতে পারত না। তারা তাকে অপছন্দ করত। তাই এই গ্রামের কিছু মানুষ তাদেরকে রীতিমতো আজেবাজে কথা শোনালো। কেউ কেউ তো বুদ্ধকে এত অপমান করল যা ওই শিষ্যকে কেউ কোনদিন করেনি। শিষ্যটি দেখল যে ওই গ্রামের লোকেরা বুদ্ধকে অপমান করছে কিন্তু, বুদ্ধ একইরকম শান্ত রয়েছে। তিনি সেই মানুষদেরকে আশির্বাদও করছে তাদের কল্যান চাইছে আর হাসিমুখে সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এইসব দেখে সেই শিষ্য খুব অবাক হয়ে গেল। এরপর ভিক্ষা নেওয়া হয়ে গেলে গৌতম বুদ্ধ সেই শিষ্যকে নিয়ে আশ্রমে ফিরে এলেন। ফিরে আসার পর শিষ্যটি লক্ষ্য করলো বুদ্ধির মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই, তিনি অন্যদিন যেমন থাকে আজও তেমনি আছে। সে মনে মনে ভাবল বুদ্ধের কি এত অপমানের পরেও একটুও খারাপ লাগলো না, তিনি এত শান্ত রয়েছেন কি করে? এরপর ওই শিষ্য আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে বুদ্ধকে বলেই দিল - হে বুদ্ধ!! আমার মনে হয় আমাদের ওই গ্রাম কে বহিষ্কার করা উচিত। আমাদের কারোরই ওই গ্রামে আর ভিক্ষা করতে যাওয়া উচিত নয়। ওই গ্রামের সেইসব মানুষদের বহিষ্কার করা উচিত যারা আপনাকে আমাকে অপমান করেছে। আমার তো তখন থেকে রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনই গিয়ে ওদের কিছু কথা শুনিয়ে আসি। আপনি কি করে এত শান্ত রয়েছেন? আপনার কি ওদের কথা একটুও খারাপ লাগেনি? 


বুদ্ধ হেসে বললেন - আচ্ছা ধরো তুমি একটা কোদাল নিয়ে মাটি খুড়তে গেলে, তো পৃথিবী কি তার প্রতিবাদ করবে? শিষ্য বলল- না। বুদ্ধ বললেন আচ্ছা ঠিক আছে ধরো কোনো ব্যক্তি একটা জ্বলন্ত মশাল নিয়ে নদীতে আগুন লাগাতে চাইছে সে কি নদীতে আগুন লাগাতে সক্ষম হবে? শিষ্যটি বলল- না। বুদ্ধ বললেন কেন? শিষ্য বলল- কারন নদীতে জ্বলার গুণ নেই। বুদ্ধ বললেন কেউ মাটি খুঁড়তে আসলে পৃথিবী তার প্রতিবাদ করেনা কিন্তু তাই বলে পৃথিবী কিন্তু দুর্বল নয়। পৃথিবী চাইলে সবাইকে নিজের মধ্যে সমাহিত করে নিতে পারে। নদীতে কেউ জ্বলন্ত মশাল নিয়ে আগুন লাগাতে চাইলে নদী জ্বলে না। কিন্তু এর দ্বারা এটা প্রমাণ হয়না যে নদী শক্তিশালী নয়। নদী চাইলে কিন্তু এক নিমেষে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ঠিক তেমনই তোমাকে কেউ অপমান করলে বা ছোট করতে চেষ্টা করলে তুমি কিন্তু ছোট হয়ে যাচ্ছ না। তোমাকে ছোট অনুভব করাচ্ছে তোমার মনের মধ্যের চিন্তা আর রাগ। তুমি যদি নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে যাও তাহলে তুমি এই মানুষগুলোকে উপেক্ষা করতে শিখে যাবে। আর এরা তখন একবার দুবার তিনবার অপমান করার পর আর কোনো আনন্দ পাবে না। আর যখন ওরা তোমাকে অপমান করে আর কোনো আনন্দ পাবে না তখন এরা নিজেরাই তোমাকে অপমান করা, ছোট করা বন্ধ করে দেবে। আর যদি তুমি এদের কথায় বা ব্যবহারে কষ্ট পাও বা রাগ করো তাহলে এরা তোমাকে একবার অপমান করে কষ্ট দেবে কিন্তু সেটা ভেবে তুমি নিজেই প্রতিদিন কষ্ট পাবে। তোমার মনের মধ্যে অশান্তি চলতে থাকবে, তোমার রাগ হবে, তোমার কাজে মন লাগবে না - তাই উপেক্ষা করতে শেখো। আর নিজের মনের মধ্যে মৈত্রীর ভাবনা নিয়ে আসো। নিজের কাজে একাগ্র থাকো ওদের জন্য নিজের মনের ভেতরকার শান্তিকে নষ্ট হতে দিও না।


তো বন্ধুরা গৌতম বুদ্ধ এরকম উপদেশ তাঁর শিষ্য কে দিলেন যা আমাদের জন্য খুবই কার্যকর । কিন্তু, এই উপদেশের অন্তর্নিহিত মানে সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে। অনেকের মনে হতে পারে যে যদি কেউ আমাদের অপমান করে আর আমরা তাদের কিছু না বলে ছেড়ে দেই তাহলে তারা তো আরো বেশি করে পেয়ে বসবে, আমরা কি আমাদের সাথে কেউ খারাপ করলে তার প্রতিবাদ করবো না? আমার মনে হয় গৌতম বুদ্ধের এই উপদেশের অন্তর্নিহিত মানে হলো আমাদের সবার আগে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা উচিত । কারণ ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যে আমরা অনেক সময়ে কেন বেশিরভাগ সময় এমন কোন মানুষের এমন কোন কথার জন্য কষ্ট পাই বা অপমানিত বোধ করি যেটা আমরা চাইলে উপেক্ষা করে যেতে পারতাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করে ফেলার পর পস্তাই। আর মনে করি ব্যাপারটাকে হালকা করে নিলেই ভালো হতো। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে খুব কমই এমন আসে যেখানে আমাদের প্রতিবাদ করতেই হয়। কিন্তু, সেটাও যেন মনের মধ্যে অশান্তি না রেখে আমরা করি ভেতর থেকে যেন আমরা ক্ষমাশীল হই। বাইরে থেকে হয়তো মারাত্মক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিবাদ করতে হতে পারে । যেখানে সত্যিকারেই অপর মানুষটা খারাপ করছে কিন্তু ভেতর থেকে যেন আমাদের মনে তার প্রতি মৈত্রীর ভাবনা থাকে আর জীবনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা যেগুলোকে অপমান মনে করি কেউ আমাদের ছোট করছে বলে মনে করি - সেগুলিকে আমরা কিন্তু চাইলেই উপেক্ষা করে যেতে পারি। কারণ কেউ আমাদের ছোট করলেই আমরা কিন্তু ছোট হয়ে যাই না। আমরা যেটা আমরা সেটাই থাকি। তবে হ্যাঁ - আমরা যদি নিজেই নিজেকে ছোট মনে করি তাহলে তো আমরা ছোট হয়েই যাব। তাই কোনভাবেই যেন আমরা নিজের কাছে ছোট না হয়ে যাই সেটা আমাদের সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে।


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

আরো পড়ুনঃ- গৌতম বুদ্ধের - জীবন বদলে দেওয়া একটি গল্প || A Short Bhuddhist Story to Change Your Life.  CLICK HERE


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা