নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - গৌতম বুদ্ধের ও তার শীর্ষের "জীবন বদলে দেওয়া একটি গল্প" সম্পর্কে।
গৌতম বুদ্ধের সঙ্গ সবার জন্য সবসময় খোলা থাকতো, সবাই তার শিষ্য হতে চাইতো। কিছু মানুষদের গৌতম বুদ্ধ সরাসরি তার শিষ্য করে নিত, আর কিছু মানুষদের বলতেন তুমি একদিন রাতে শ্মশানে গিয়ে থাকো।
এইভাবে এক ব্যক্তি গৌতম বুদ্ধের কাছে আসলেন আর বললেন আমাকে তোমার শিষ্য বানিয়ে নাও। বুদ্ধ ওই ব্যক্তিকে বললেন, তোমাকে আমার শিষ্য হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ একদিন শ্মশানে থাকতে হবে। আর তুমি সেখানে যা কিছু শিখবে আমাকে এসে বলতে হবে। এরপরেই তুমি আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে আমার শিষ্য হয়ে। ওই ব্যক্তি এই কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন। সে বুদ্ধ কে বলল দিনে তো ঠিক আছে কিন্তু রাতে শ্মশানে থাকা খুবই বিপদজনক। বুদ্ধ বললেন- কেমন বিপদ? ব্যক্তি বলেন ওখানে ভুত-প্রেত আছে, তারা আমাকে ধরে নেবে। বুদ্ধ বললেন তুমি কি ভুত প্রেত দেখেছো? ব্যক্তিটি বললেন না। কিন্তু , আমি অনেক শুনেছি আর কিছু মানুষদের দেখেছি যাদের উপর ভূত ভর করে, তারা অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যবহার করে। তখন বুদ্ধ বললেন তাহলে তোমার কাছে তো খুব ভালো সুযোগ এটা জানার যে, ভুত-প্রেত আছে কি নেই!? তুমি ওখানে একদিন আর এক রাত থাকো। আর তারপরে বিশ্লেষণ করে বলবে যে, ভুত-প্রেত আছে কি নেই। যদি তুমি সেটা পেয়ে যাও তাহলে তার বিশ্লেষণ করে বলবে যে, তারা কেমন হয়। আর যদি না পাও তাহলে তুমি এটাও জানতে পারবে যে, ভুত-প্রেত বলতে কিছু নেই। তুমি শুধু ভয় পাবে না, ওখানে যাওয়ার পর কিছু ঘটনা ঘটবে তুমি আমাকে সেসব এসে বলবে। ব্যক্তিটি বললেন ঠিক আছে গুরুদেব যদি আপনি চান তাহলে একটা পুরো দিন আর পুরো রাত আমি শ্মশানে থাকবো। বুদ্ধ বললেন ঠিক আছে, এখন তুমি আশ্রমের আরাম করো এবং কাল সকালেই শ্মশানের জন্য বেরিয়ে পড়বে। বুদ্ধ তাঁর চার শিষ্যকে বললেন ওই ব্যক্তি কাল শ্মশানে যাবে তোমরা তার পেছনে যাবে, আর তার ওপর নজর রাখবে। তার খেয়াল রাখবে কিন্তু মনে রাখবে যে সে যেন এ কথা জানতে না পারে যে, তোমরা তার পেছনে নিয়েছো।
পরের দিন ওই ব্যক্তির বুদ্ধের কাছে গেলেন আর বললেন, যেমন আপনি বলেছিলেন আমি শ্মশানের জন্য রওনা দিচ্ছি। বুদ্ধ ওই ব্যক্তিকে বললেন - ঠিক আছে, এখন তুমি যেতে পারো। ওই ব্যক্তি শ্মশানে গেল। তারপরের দিন ওই ব্যক্তি বুদ্ধের কাছে আসলেন, তখন বুদ্ধ তাকে দেখে হাসলেন আর বললেন - তুমি একটা পুরো দিন এবং পুরো রাত ওইখানে কাটিয়েছো তুমি কি দেখেছো এবং কি শিখেছ?
ব্যক্তিটি বললেন আমি ওখানে সকাল-সকাল গিয়েছিলাম কিছু সময় পর আমি দেখলাম যে কিছু লোক একটি শবদেহ নিয়ে আসছে, কিছু লোক স্বাভাবিক ছিল আর কিছু লোক খুবই খুশি ছিল। তারা বলছিল যে ওই ব্যক্তি ভালো কাজ করেছে তিনি খুবই ভাগ্যবান, ওই ব্যক্তির ছেলে তার চিতায় আগুন দিয়েছে। তারা কিছু সময় ওই খানে দাঁড়িয়ে ছিলো। তারপর এক এক করে সব লোক চলে যেতে থাকে। কিছু সময় পর সেখানে আরো দুটো শবদেহ নিয়ে এলো। যার মধ্যে একটি শবদেহ ছিলো এক ধনী ব্যক্তির যেটা খুবই সজ্জিত ছিল। তার সাথে অনেক লোক ছিলেন। আর যেখানে দ্বিতীয় শবদেহ ছিল এক গরীব ব্যক্তির, যেটা খুবই সাধারণ ছিল আর যেটায় অনেক কম লোক ছিল। ধনী ব্যক্তির চিতা চন্দন কাঠ দিয়ে জ্বালানো হয়েছিল, আর গরিব ব্যক্তির চিতা সাধারণ কাঠ দিয়ে জ্বালানো হয়েছিল। প্রথমে ধনী ব্যক্তির চিতা জ্বালানো হয় কেননা সে ছিল ধনী, আর শেষে গরীব ব্যক্তির চিতা জ্বালানো হয়। কিছু সময় পর দুই ব্যক্তিরই চিতা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর সমস্ত লোক সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু আমি ওখানে দাড়িয়েই সেগুলো কে দেখছিলাম।
বুদ্ধ বললেন তুমি ওদের চিতাকে দেখে কি বুঝলে? ব্যক্তিটি বললেন - বুদ্ধ, দুজনের চিতাই সমান ছিল। দুজনের শরীর ওই চিতাতে একসাথে জ্বলছিল। তারপরে দুজনে তাতে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। শেষে যেটা ছিল তাও একই রকমই ছিল সেগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। হে বুদ্ধ, তারপর সেখানে একজন স্ত্রীর শবদেহ এল। ওই স্ত্রীর স্বামী খুবই দুঃখিত ছিলেন, আর সেখানে আসা সমস্ত মানুষই খুব দুঃখিত ছিল। তারা সবাই ওই স্ত্রীর স্বামীকে সান্তনা দিচ্ছিল। হে বুদ্ধ, সেখানে আমি দেখলাম কিছু লোক খুবই জ্ঞানী ছিলেন, তারা জ্ঞানের কথা বলছিলেন। ওই সব মহাজ্ঞানীরা বলছিলেন যে, এখানে তো একদিন সবাইকে আসতেই হবে, জীবন কালে আমাদেরকে জ্ঞান এবং পরোপকারের সাথে বাঁচতে হবে। কাউকে কখনই কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। টাকা পয়সা সম্পত্তির পেছনে দৌড়ে কখনো কিছু পাওয়া যায় না। শেষে আমাদের সবাইকে একদিন শ্মশানে যেতেই হবে। তারপর সেখানে আর কেউ এলোনা। আর আমি সারারাত সেখানেই থাকলাম, আর পরেরদিন সকালে আপনার কাছে চলে এলাম।
বুদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি সেখানে কোন ভুত-প্রেত দেখেছো? ব্যক্তিটি বললেন- না; আমি সেখানে কোনো ভুত-প্রেত দেখিনি। সারারাত আমি ভয় পাচ্ছিলাম। গাছের পাতাকে ভয় পাচ্ছিলাম, পশুদের ডাকে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু, সারারাত আমি কোনো ভুত-প্রেত খেয়াল করিনি। বুদ্ধ ওই ব্যক্তিকে বললেন, ঠিক আছে এখন তুমি যাও আর আশ্রমে আরাম করো। কালকে আবার সারাদিন আর সারারাত তোমাকে শ্মশানে থাকতে হবে। ওই ব্যক্তি এই কথা শুনে বললেন আপনি এ কেমন কথা বলছেন, আপনার বলাতে আমি আজ সারাদিন- সারারাত ওখানে থেকেছি। ওই সময়টা আমি কিভাবে কাটিয়েছি তা শুধুমাত্র আমিই জানি। এখন আমি দ্বিতীয়বার আর ওখানে যাব না। বুদ্ধ বললেন দেখো, যেই আসল জিনিস তুমি ওখানে গিয়ে পাবে তা তুমি এখনো পাওনি। তুমি একদিন ও এক রাত আবার ওখানে থাকো, তুমি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে। ব্যক্তিটি বললেন ঠিক আছে, আমি আপনার বলাতে আরও একবার আবার সেখানে চলে যাব। এই কথা বলে ওই ব্যক্তি আশ্রমে আরাম করতে থাকেন।
পরের দিন ওই ব্যক্তি আবার বুদ্ধের আশীর্বাদ নিয়ে সেখান থেকে শ্মশানের জন্য বেরিয়ে পড়লেন। এক সারাদিন কাটিয়ে পরের দিন আবার বুদ্ধের কাছে আসলেন। বুদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন তাহলে তুমি সেই জিনিস পেলে? ব্যক্তিটি বললেন হ্যাঁ, আমি সেটি পেয়েছি। বুদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন তাহলে বলো তুমি ওখানে কি পেলে? ব্যক্তিটি বললেন আমি দেখলাম যে কিছু লোক সন্ধ্যেবেলা আমার শবদেহ নিয়ে আসছে আমার পেছনে চেনা পরিচিত পনেরো কুড়ি জন লোক হেঁটে আসছে। আর আমাকে চারজনের কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে আসছে। আমার পিতা আগে আগে হাঁটছে। কিছু লোক আমার ওপর ফুল ছড়াচ্ছে, আর আমার কিছু আত্মীয়-স্বজন আমার পেছনে হেঁটে আসছে, ওইসব লোকেরা খুবই দুঃখিত। আমার বাবা এবং ভাইও খুবই দুঃখিত। তাদের মধ্যেই কিছুজন দুঃখ পাওয়ার নাটক করছে, আর কিছু লোক আমার বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আমার ভাই খুবই দুঃখিত কিছু লোক তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছে যে, তুমিই এখন সবার একমাত্র বংশধর। আবার কিছু মানুষ বলছে - এটা ঠিক হয়নি, ওই ছেলেটি তো এখনও ছোট ছিল সে তো এখনও কিছুই দেখেনি, আর তার সাথে এমন ঘটনা ঘটে গেল। আর তখনই আমাকে চিতায় শুয়ে দেওয়া হল, আর সমস্ত কার্যকলাপ করা হচ্ছিল। আমি এই সমস্ত চিতায় শুয়ে দেখছিলাম। আমি চিতা থেকে উঠতে চাইছিলাম কিন্তু, আমি উঠতে পারিনি। আমি শ্বাস নিতে চাইছিলাম কিন্তু, শ্বাস নিতে পারছিলাম না। কেননা আমার মধ্যে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। আমি আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম কিন্তু, আমি তাও করে উঠতে পারছিলাম না। আমি আমার ভাইকে জড়িয়ে ধরতে চাইছিলাম তাকে বলতে চাইছিলাম যে, তুমি বাবা মায়ের খেয়াল রাখবে। কিন্তু, আমি শুধু তা শুয়ে দেখছিলাম। কিছু করতে পারছিলাম না। তারপর আমার চিতার উপর কাঠ সাজানো হচ্ছিল, আমার মুখও ঢেকে দেওয়া হল। আমি তখন ওই চাদরের বাইরে কিছুই দেখতে পারছিলাম না। তারপর সেসব হওয়ার পর আমি গরম অনুভব করছিলাম। তারপর আমি দেখলাম আমাকে আগুন দিয়ে জ্বালানো হচ্ছে। আমার হাত-পা জ্বলতে থাকে, আমার হাড়-চামড়া সব জ্বলতে থাকে। ধীরে ধীরে আগুন আরো বেশী উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। আমি সেখান থেকে উঠতে চাইছিলাম, আমি শ্বাস নিতে চাইছিলাম কিন্তু, আমি এসব কিছুই করতে পারছিলাম না। আমি ওই আগুনে সম্পূর্ণ হারিয়ে গেলাম। আমি সারারাত আমাকে এইভাবে জ্বলতে দেখলাম। আমি দেখলাম শেষ পর্যন্ত আমার কাছে শুধুমাত্র আমার ছাই গুলি পড়ে রয়েছে। ওই সারারাত না আমি ভয় পেলাম, না আমি ভয় কি! - তা বুঝলাম। জানিনা সারারাত আমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। আর সকাল হওয়ার সাথে সাথে আমি আপনার কাছে চলে এলাম। বুদ্ধ হাসলেন আর বললেন, এখন তুমি আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারো। আর বাস্তবে ধ্যান আর জ্ঞান হওয়ার জন্য ধ্যানের বীজ ভেতরে থাকা খুবই দরকার। ওই বীজ তুমি কাল রাতে পেয়েছো, যখন তুমি জানলে ওখানে সবকিছু নশ্বর, এই পৃথিবীতে সমস্ত ব্যক্তি শ্মশানে যাওয়ার পর এটা তো বুঝতে পারে যে সবাইকে ওখানে যেতে হবে কিন্তু, যখনই ওখান থেকে বাইরে বের হয় তারা এইসব ভুলে যায়। আর তারপর নিজের জীবন আগের মতোই চালায় এবং আগের মতনই কর্ম করে, আগের মতোই অধর্ম করে, আগের মতই লোভ করে আর আগের মতই রাগ দেখায় আর যখনই শ্মশানে যায় সবাই ধার্মিক হয়ে যায়। প্রথমবার যখন তুমি শ্মশানে যাও তখন তুমিও ওই জ্ঞানী ব্যক্তিদের মতোই ছিলে। যেমন - ওখানে সব মহাজ্ঞানী ব্যক্তিরা আসে।
আর যখন তুমি দ্বিতীয়বার সেখানে গেলে আর আজ ফিরে এসেছো তাহলে তোমার মধ্যেও জ্ঞানের বীজ উৎপন্ন হয়েছে। আমরা ততক্ষণ জীবনকে বুঝতে পারিনা যতক্ষণ না আমার মৃত্যু কে জানতে পারি।
যে ব্যক্তি অসুস্থ সেই শাস্ত্রের মাহাত্ম্যকে বুঝতে পারে। যে ধ্যানের বীজ তুমি কাল রাতে পেয়েছো, এখন তোমায় সেটাকে লক্ষ বানাতে হবে। আর এমন বিশাল লক্ষ তোমার মধ্যে উৎপন্ন হবে যা সবাইকে ধ্যানের আচ্ছাদনের পরিপূর্ণ করবে।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- জীবনে কখনো হার মেনে নেওয়া উচিত নয় | Never Give up - গৌতম বুদ্ধ - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা