নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
এই লেখাটি পড়ার পর আপনি বুঝতে পারবেন যে - অলসতা কী, এর উৎপত্তি কিভাবে হয় এবং একে কি করে শেষ করা যায়।
একবার অলসতার কারণে চিন্তিত এক ব্যক্তি গৌতম বুদ্ধের কাছে আসেন আর বলেন বুদ্ধ আমার মধ্যে অনেক অলসতা রয়েছে, আমি এই অলসতার কারনে আমার জীবনে সেই সব জিনিস করতে পারিনা যা আমি করতে চাই। এই অলসতা আমাকে অনেক চিন্তিত করে রেখেছে, এর কারণে আমি আমার জীবনে উন্নতি করতে পারছি না। কৃপা করে আপনি আমাকে এই অলসতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় বলে দিন। এই কথা শুনে গৌতম বুদ্ধ হাসেন এবং ওই অলস ব্যক্তিকে বলেন তুমি কি করে জানলে যে তোমার মধ্যে অলসতা রয়েছে। তখন ওই অলস ব্যক্তি বলেন বুদ্ধ শুধু আমি নই বরং আমার পুরো পরিবার এই কথাই বলে আমি এক অলস ব্যক্তি। বুদ্ধ বলেন তুমি কি আমাকে এর প্রমাণ দিতে পারবে যে, তুমি এক অলস ব্যক্তি। তখন ওই অলস ব্যক্তি বলেন হ্যাঁ বুদ্ধ আমি দিতে পারবো। গৌতম বুদ্ধ বলেন তাহলে প্রমাণ দাও। তখন ওই অলস ব্যক্তি বলে বুদ্ধ আমি তো এটা জানি যে - সকালে উঠলে আমার স্বাস্থ্য এবং মন দুইই ভালো থাকবে। কিন্তু, আমার অলসতা আমাকে সকাল তাড়াতাড়ি উঠতে দেয় না। বুদ্ধ বলেন আচ্ছা তোমার কি জানা আছে যে অলসতা বলতে কী বোঝায়। ওই অলস ব্যক্তি বলেন বুদ্ধ আমি এটা জানি না যে অলসতা কী!! কিন্তু, তা যা কিছুই হোক না কেন - তা খুবই খারাপ।
বুদ্ধ তখন বলেন অলসতা হলো একটি মানসিক অবস্থা, একটি ভাব, একটি বিচার যাকে জেনেশুনে বা অজানায় আমরা মানুষেরা আমাদের মধ্যে জন্ম দেই। তারপর সেই অলস ব্যক্তি বলেন কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? বুদ্ধ বলেন প্রথমে তুমি এটা বোঝো আমাদের মধ্যে অলসতা দুটি কারণে আসে । প্রথম, কারণ হলো শারীরিক। আর দ্বিতীয় কারণ হলো মানসিক।
শারীরিক অলসতা
শারীরিক অলসতার প্রথম কারণ হলো ভোজন। যখন আমরা এমন খাবার খাই যার মধ্যে নিজেরই কোনো জীবন নেই তখন সেই খাবার আমাদের শরীরের জন্য বোঝা হয়ে যায়, আর তারপর সেটা আমাদের মধ্যে অলসতা তৈরি করে। কেননা আমাদের শরীর ভোজন থেকে পাওয়া উর্জার মাধ্যমেই গতিশীল থাকে। এই কারণে তুমি যদি অলসতা থেকে বাঁচতে চাও তাহলে সহজেই যেই খাবার পরিপাক হয়ে যায় এবং সরাসরি প্রকৃতি থেকে পাওয়া এমন খাবারকে গ্রহণ করো।
শরীরের স্তরে অলসতার দ্বিতীয় কারণ হলো ভুল নিয়মে চলাফেরা করা, ভুল নিয়মে বসা এবং ভুল নিয়মে শুয়ে থাকা। গৌতম বুদ্ধ আশ্রমের দিকে ইশারা করে ওই অলস ব্যক্তিকে বলেন, যদি তুমি আশ্রমের প্রতিটি ভিক্ষুদের মনোযোগ দিয়ে দেখো তাহলে তুমি দেখতে পাবে আশ্রমের প্রতিটি ভিক্ষুর - হাঁটাচলা, বসা, শুয়ে থাকার অবস্থাতে এক বিশেষ ধরনের সামঞ্জস্য রয়েছে। যখন এরা চলাফেরা করে তখন এদের পায়ের মাঝে এক ধরনের তাল মিল দেখা যায়। যখন এরা বসে তখন এদের মেরুদন্ডের হাড় সোজা থাকে এবং ঘাড় কিছুটা উঁচু থাকে। আর যখন এরা শুয়ে থাকে তখন এদের শরীর শিথিল হয়ে যায়, এদের শরীরের কোনো অঙ্গে কোনো রকমের কুঁজো হয়ে যাওয়া বা অন্য কোন সমস্যা থাকে না। যার কারণে এরা এক গভীর এবং আরামদায়ক নিদ্রা লাভ করে।
এরপর ওই অলস ব্যাক্তির জিজ্ঞাসা করেন- বুদ্ধ পর্যাপ্ত ঘুম কি খুবই জরুরী? বুদ্ধ বলেন - না কম, না বেশি। সর্বদা পর্যাপ্ত ঘুম লাভজনক হয়। যদি তুমি আজ রাত পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমাও তাহলে তোমার কালকের সারাদিন ক্লান্তি ও অলসতা পূর্ণ হবে। এই কারণে পর্যাপ্ত ঘুম ততটাই জরুরি। অলস ব্যক্তি বললেন- হ্যাঁ বুদ্ধ। এটা আমিও অনুভব করেছি।
বুদ্ধ বলেন শরীর স্তরে অলসতা তৃতীয় কারণ হলো সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি না ওঠা। এই কথা শুনে ওই অলস ব্যক্তি বললেন হ্যাঁ বুদ্ধ আমিতো সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারিনা। বুদ্ধ বললেন তুমি সকালে তাড়াতাড়ি তখন উঠতে পারবে যখন তুমি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাবে। বুদ্ধ আশ্রমে থাকা তার শিষ্যদের দিকে দেখিয়ে বললেন - এদের দেখো এরা রাতে তাদের ঘুমানোর এক নিশ্চিত সময় নির্ধারণ করে রেখেছে। আর এই কারনেই এরা রোজ সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারে। সকল বৈধ সন্ন্যাসী কে অনুশাসন পালন করতে হয়। আর এই অনুশাসন এদের জীবনে সামঞ্জস্য বজায় রাখে। কিছু লোক অনুশাসনকে এক বন্ধন মনে করে। তাদের মনে হয় অনুশাসন তাদের বেঁধে রাখে। কিন্তু, সত্যিটা হল যে অনুশাসন আমাদের বেঁধে রাখে না। বরং আমাদের স্বতন্ত্র করে তোলে। এই কারণে তুমি যদি শরীরে স্তরে অলসতা থেকে মুক্তি পেতে চাও তাহলে নিজেকে অনুশাসনের মধ্যে রাখো। এক নিশ্চিত অনুশাসন পালন করো প্রতিদিন।
ওই অলস ব্যক্তি বলেন- কিন্তু বুদ্ধ আমি শুরু করব কোথা থেকে? সঠিক খাবার খাওয়া, সঠিকভাবে বসা, সঠিকভাবে শোয়া আর সঠিক ভাবে চলাফেরা করলে নাকি সকালে তাড়াতাড়ি উঠলে?
বুদ্ধ বলেন, এখন থেকেই করো। যা তুমি আজ করছো তারপরও মনোযোগ দিয়ে করো। প্রথমে তুমি মনোযোগ স্তরে ধীরে ধীরে অলসতা কি এটা বোঝো।
মানষিক অলসতা
বুদ্ধ বললেন মনের স্তরে অলসতার প্রথম কারণ হলো আমাদের পুরনো ভুল ধারণা। যখন আমরা কোনো কাজের জন্য নিজেকে তার যোগ্য মনে না করি তখন আমাদের ভেতর অলসতা তৈরি হয়। যদি আমাদের মন এটা বিশ্বাস করে নেই যে শেষবারের মতো আমি এইবারও এই কাজটি করতে পারবোনা তখন সেই কাজ করতে আমাদের মধ্যে অলসতায় আসবে। যেহেতু আমরা নিজেদের বোঝাতে পারিনা যে শেষবার আর এইবারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখন আমরা মানসিকভাবে সেরকম নেই যেটা আগে ছিলাম। আমরা শেষ বার হেরে গিয়ে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, এই কারণে মানসিক অলসতা থেকে বাঁচতে গেলে সবার প্রথমে নিজের ওপর বিশ্বাস করতে শেখো।
মানসিক অলসতার দ্বিতীয় কারণ হলো নিম্ন ভাবনা চিন্তা করা। আর অলস ব্যক্তিদের সাথে থাকা। অনেক সময় এমন হয় যে আমরা নিজেরা অলস না হলেও কিছু অলস আর দুর্বল মানুষদের সাথে থেকে থেকে আমরা নিজেরাও অলস এবং অকর্মণ্য হয়ে যাই। এই কথা শুনে ওই অলস ব্যক্তি বলেন হ্যাঁ বুদ্ধ, এটা আমিও অনুভব করেছি। বুদ্ধ বলেন- তাহলে সবার প্রথমে অলস এবং অকর্মণ্য মানুষদের সাথে থাকা ছেড়ে দাও।
বুদ্ধ তারপর বলেন মানসিক অলসতার তৃতীয় কারণ হলো - কাজকে না বলার অভ্যাস। কাজকে এড়িয়ে যাওয়া অলসতা সবথেকে বড় কারন। শুরু থেকে তা আমরা বুঝতে পারি না। কিন্তু, ধীরে ধীরে না বলার অভ্যাস আমাদের মধ্যে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। আর এই একমাত্র অভ্যাস যা যেকোনো মানুষের জীবন নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। এই কারণে যেই কাজ আজকে করা যেতে পারে তা- "কাল, কাল" বলে কখনোই এড়িয়ে যাবেন না।
বুদ্ধ বলেন মানুষের মানসিক অলসতার চতুর্থ কারণ হলো- লক্ষ অস্পষ্ট থাকা। মনে করো তুমি কোনো বড় মরুভূমিতে ফেঁসে গেছো আর তুমি খুবই তৃষ্ণার্ত তখন তুমি কি করবে? ওই অলস ব্যক্তি বলেন আমি জলের সন্ধান করবো। আমি চেষ্টা করব তাড়াতাড়ি করে মরুভূমির আসে পাশের গ্রামে ঢুকে যাওয়ার। বুদ্ধ বলেন কিন্তু যদি অনেক চেষ্টা করার পরেও তুমি জল না পাও?
তখন ওই অলস ব্যক্তি বলেন, আমি চেষ্টা করতে থাকব কারণ আমার কাছে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প থাকবে না। গৌতম বুদ্ধ হেসে বললেন মানুষকে অলসতা তখনই গ্রাস করে যখন তার কাছে কোনো স্পষ্ট লক্ষ না থাকে অথবা যদি তার সামনে অনেক রকম বিকল্প থাকে।
এই কারণে লক্ষ নিশ্চিত থাকা খুবই দরকার। তুমি যদি সকালে উঠে ব্যায়াম করতে না পারো তাহলে তার কারণ হল তোমার লক্ষ স্পষ্ট না থাকা। এখন তুমি ভবিষ্যতে হওয়া রোগ ব্যাধি এবং ওই রোগের থেকে হওয়া যন্ত্রনা স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারছ না।
বুদ্ধ বলেন মনের স্তরে অলসতার পঞ্চম কারণ হলো - কোনো কাজ করার পেছনে বড় কোনো কারণ না থাকা। মনে করো তুমি অনেক দামি গয়না নিয়ে এক ফাঁকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছো তুমি যেতে যেতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেলে আর তোমার বসার ইচ্ছে হলো আর তুমি এক বড় গাছের নিচে আরাম করার জন্য বসে গেলে। তুমি যখন বসতে গেলে তখনই তুমি দেখলে দূর থেকে কিছু ডাকাত তোমার দিকে তেড়ে আসছে তাহলে কি এই পরিস্থিতিতেও তোমার অলসতা তোমাকে সেখান থেকে পালানোর জন্য আটকাবে? - সেটা তো নয়, তাই না!
তাহলে আমার একটা কথা বোঝো তোমার অলসতা কেবলমাত্র তোমাকে সেই কাজ করা থেকেই আটকায় যা করার জন্য তোমার কাছে কোনো বড় কারণ থাকে না। তখনই অলস ব্যক্তি বলেন আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বুদ্ধ। এখন আমি অলসতার সমস্ত স্তর বুঝতে পেরেছি। গৌতম বুদ্ধ বলেন শুধু একটি কথা সবসময় মনে রাখবে যেখানে স্পষ্টতা রয়েছে এবং কাজ করার একটি বড় কারণ রয়েছে সেখানে অলসতা আসতে পারবে না।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- গৌতম বুদ্ধ অনুযায়ী - কর্ম কি ? || What is Karma ? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা