নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - দুঃখে থাকলে কি করবেন? সুখ ও দুঃখ আসলে কি - জেনে নিন গৌতম বুদ্ধের এই গল্পটি থেকে।।
একটি গ্রামে একটি কৃষক খুব দুঃখে জীবন কাটাচ্ছিলো। কেউ একদিন ওই কৃষককে বলল- তোমার এই দুঃখের সমাধানের জন্য ভগবান বুদ্ধের শরণাপন্ন হও। উনি তোমার সব দুঃখের সমাধান করে দেবে। এই শুনে ওই কৃষক বুদ্ধের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য চিন্তা করতে লাগল। যেমন আমাদের সবার জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি আসে, তেমন ওই কৃষকও অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছিল। কৃষকের মনে হলো বুদ্ধ মনে হয় আমাকে এই কঠিন পরিস্থিতির ভেতর থেকে বার করে নিয়ে আসবে, কোনো উপায় মনে হয় তাকে বলে দেবে। সে বুদ্ধের কাছে গিয়ে পৌঁছালো। সে বুদ্ধকে বলল- হে বুদ্ধ, আমি এক কৃষক; আমি চাষবাস করতে খুব ভালোবাসি। কিন্তু, অধিক বর্ষার জন্য আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। গত বছরেও আমার কাছে খাবার জন্য কিছু ছিল না। আর এই বছর আমি জমিতে ফসল লাগিয়েছি আর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে এর কারণে আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত আমার কাছে খাবারের প্রয়োজন মতো কিছু নেই। বুদ্ধ কৃষকের কথা গুলো ধ্যান দিয়ে শুনে যাচ্ছে। কৃষক বলল আমি বিবাহিত এবং আমার স্ত্রী আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমি ওকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু, কখনও কখনও সে আমার সঙ্গে খুব ঝগড়া করে, কখনও কখনও ওর জন্য আমার খুব বিরক্ত লাগে, আবার কখনও কখনও মনে হয় আমার স্ত্রী যদি আমার জীবনে না থাকতো তাহলে মনে হয় খুব ভালোই হতো। আমার বাচ্চাও আছে তারাও খুব ভালো কিন্তু কখনও কখনও ওরাও আমার কথা শোনে না আর আমার বাচ্চারা যখন আমার কথা না শোনে তখন মনে হয় এটা আমার বাচ্চাই না। কৃষক তার জীবনের এই কাহিনী গুলো বুদ্ধকে বলেই যাচ্ছেন আর এক এক করে তার জীবনের সমস্ত কঠিন পরিস্থিতির কথা বুদ্ধকে সব বললেন। কৃষকের জীবনে অনেক সমস্যা ছিল বুদ্ধ তার জীবনের সমস্যার কথা গুলো ধ্যান দিয়ে শুনছিলেন। বুদ্ধ একটা শব্দও করলো না আর উনি বলেই চলেছেন। এরকম বলতে বলতে এক সময় তার জীবনের সমস্ত সমস্যার কথা সমাপ্ত হয়ে গেল কৃষকের নিজের মন হালকা হওয়ার পর কৃষক চুপ হয়ে গেল আর সে প্রতীক্ষা করতে লাগল বুদ্ধ মনে হয় তার কিছু প্রতিকার বলবে কিন্তু, বুদ্ধ কিছু বলল না। কৃষক বললো আমি আপনার কাছে এসেছি আপনি কোনো সমস্যার সমাধান করে দেবেন না?
বুদ্ধ বলল, আমি তোমার কোনো সাহায্য করতে পারব না। কৃষক অবাক হয়ে বলল আপনি এটা কি বলছেন! সবাই বলে যে আপনি সবার দুঃখের সমাধান করে দেন তাহলে কি আপনি আমার দুঃখের সমাধান করতে পারবেন না। এইজন্য যে আমি একজন গরীব কৃষক। বুদ্ধ বলল সবার জীবনে কঠিন পরিস্থিতি আসে তোমার জীবনে যে কঠিন পরিস্থিতি চলছে সেটা কোনো নতুন কিছু নয়। এই কঠিন পরিস্থিতি তো সবার জীবনেই আসে আর চলে যায়। মানবজাতি কখনও সুখী হয় আবার কখনও দুঃখী হয়। কখনও কখনও পর ব্যক্তি তার আপন মনে হয় আবার কখনও আপন ব্যক্তি তার পর মনে হয়। এটাই জীবন চক্র এর থেকে কেউ বের হতে পারে না। বাস্তব এটাই যে আমাদের জীবনে কঠিন সমস্যা আছে। আমার তোমার এবং এখানে উপস্থিত সমস্ত মানুষের জীবনে কঠিন পরিস্থিতি রয়েছে।তুমি তোমার এই জীবনের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, কেউই করতে পারবে না। আমিও তোমার এই সমস্যার সমাধান করতে পারবোনা, যদি তুমি কোনো কঠিন কাজও করো আর তুমি যদি সেই কাজে সফলও হও তখন ওই জায়গায় আবার একটি নতুন সমস্যা দাড়িয়ে যাবে। জীবনের কোনো ভরসা নেই, তুমি যাদের খুব ভালোবাসো তারাও তোমাকে একদিন ছেড়ে চলে যাবে। আর একদিন এমন আসবে তোমার জীবনও তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। তুমিও এখান থেকে চলে যাবে, তাই এই জীবনের কোনো ভরসা নেই। এক সময় তোমার প্রিয়জনেরা ছেড়ে চলে যাবে, তারপর এমন দিন আসবে তুমিও চলে যাবে। সমস্যা সব সময় একই রকম থাকবে। আজ ওই সমস্যা একই রকম আছে যেমন 100 বছর আগেও ছিল কিংবা হাজার বছর আগেও যেমন ছিল। সমস্যা যেমন তেমনই থাকবে আর এই সমস্যার কেউ কখনও কোনো উপায় বার করতে পারবে না। কৃষক বুদ্ধের এই কথা শুনে রেগে গেল।
কৃষক বলল, সবাই বলে যে আপনি একজন মহাপুরুষ। আমি এই ভেবে এসেছিলাম যে, আপনি আমার কোনো সাহায্য করবেন। যদি আপনি আমার সমস্যার সমাধানই না করতে পারেন তাহলে আমার এখানে আসো তো ব্যর্থ হলো। তাহলে সবাই মিথ্যা কথা বলে যে আপনি নাকি সবার সমস্যার সমাধান করেন। আপনি তো আমার একটাও সমস্যার সমাধান করে দিলেন না। আপনার থেকে তো ওরা খুব ভালো যেই মহাপুরুষেরা দু বছর আগে আমার বাড়ি এসেছিল, ওরা আমার কাছ থেকে দান নিয়েছিল দক্ষিণা নিয়েছিল আর তখন আমার মনে খুব শান্তি অনুভব হচ্ছিলো। আর কিছু সময়ের জন্য সুখেও ছিলাম। কিছু দুঃখ কমে গিয়েছিল কিন্তু, আপনি তো আমার কোনো সমস্যার সমাধান করলেন না। আপনি তো আমায় স্পষ্ট বারণ করে দিলেন যে হবে না। বুদ্ধ বললেন, তোমার ওই সব করার জন্য তোমার কি সব দুঃখ চলে গেছে? তুমি কি আগের থেকেও বেশি দুঃখে নেই? - এই দুঃখ কোনদিনই শেষ হবে না। কৃষক বললো তাহলে কি আমি মেনেই নেব যে, আপনি আমার কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। আপনি যদি এই ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করতে না পারেন তাহলে আপনার শিক্ষা কোন কাজের?
বুদ্ধ বললেন, আমি তোমার 83 সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। কিন্তু, আমি তোমার 84 সমস্যার সমাধান করে দেব। কৃষক অবাক হয়ে বলল- 84 সমস্যা! সেটা আবার কোন সমস্যা? বুদ্ধ বললেন তুমিতো এই চাও যে তোমার জীবনে যাতে কোনো সমস্যাই না থাকে, এই সমস্যার জন্যই তোমার সমস্ত সমস্যার জন্ম হয়েছে। যদি তুমি এই কথাটা স্বীকার করে নাও যে, জীবনে সমস্যা থাকবেই, সবার জীবনে কোনো না কোনো সমস্যা আছেই। তুমি সর্বদা ভাবো যে তুমি এমন একটি ব্যক্তি যে এই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি দুঃখে রয়েছে আর তোমার মতোন আর কেউ দুঃখে নেই। তাহলে তোমার আশেপাশে একবার দেখো যারা তোমার আশেপাশে রয়েছে ওরা কি তোমার থেকে কম দুঃখে রয়েছে। তোমার নিজের দুঃখ বড় লাগে আর তোমার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের কাছে তাদের দুঃখ বড়। এই পৃথিবীতে সবার কাছে তার নিজের দুঃখই বড়। সবার এটাই মনে হয় দুঃখ ছোট কিংবা বড় হোক কিন্তু ওটা যার সঙ্গে ঘটে তার কাছে ওটাই বড় লাগে। আমাদের অন্য কারো ব্যাপারে কখনোই কোনো চিন্তা হয় না, আর অনেক দূরে থাকা মানুষের চিন্তা তো আমরা কখনোই করি না। আমাদের কাছের আত্মীয় স্বজন যদি কিছু থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে অল্প কিছু চিন্তা হয়তো আমরা করি কিন্তু, ওটাই যদি নিজের ব্যাপারে হয়ে থাকে তখন আমরা খুব বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যাই বিচলিত হয়ে যাই। আমাদের নিজেদের জীবনে যদি কোন সমস্যা না থাকে যদি জীবনে সুখ থাকে তাহলে আমরা ওই সময় অন্যদেরকে উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করি যে - এরকমভাবে চলো, ওরকম ভাবে চলো তাহলে তোমার জীবনেও সুখ আসবে, তুমি এত দুঃখ করছ কেন? দুঃখ আসে এবং চলে যায়। কিন্তু, যখন এই ঘটনাই আমাদের নিজেদের সাথে ঘটে, তখন এই উপদেশ আমরা বুঝতে পারি না। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের দুঃখে দুঃখী হতে পারি, এটাই হলো সেই 84 সমস্যা। যা তুমি চাও তোমার জীবনে কোনো সমস্যাই না থাকে এটাই হল সমস্ত সমস্যা তৈরীর কারণ। যদি তুমি এই ধ্যান দিয়ে দেখো আর বোঝার চেষ্টা করো যে জীবন সুখ আর দুঃখ দিয়ে ভরাই রয়েছে এটাকে তুমি কখনোই বদলাতে পারবে না। যদি তুমি এটা চাও যে তোমার জীবনে সর্বদা সুখ থাকুক এবং তুমি নিজে সর্বদা সুখী থাকতে চাও তো এটা সম্ভব নয়। আর তুমি যদি এটা চাও যে তোমার জীবনে সর্বদা দুঃখ থাকুক তো এটাও সম্ভব নয়। আর তুমি যদি এটা চাও যে সুখ আর দুঃখ প্রত্যেকের থাকে, দুটোই স্থগিত নয়, কোনো না কোনো সময় ঠিকই চলে যাবে তাহলে এটা সম্ভব হতে পারে। সুখ ও দুঃখ কে আসার জন্য আমরা কখনই বাধা দিতে পারি না। কিন্তু, সুখ আর দুঃখের জন্যে যেন আমাদের জীবনে কোনো প্রভাব না পড়ে এরকম ব্যবস্থা আমি করতে পারি। তাহলে আমি তোমার 84 সমস্যার সমাধান করে দিতে পারব। কিন্তু, আমার কাছে তোমার 83 সমস্যার সমাধান নেই। যদি তুমি এটা চাও যে তোমার জীবনে কোন সমস্যাই না থাক তাহলে তোমাকে এই কথাটা বুঝতে হবে যে জীবনে সমস্যা আসবেই কিন্তু আমি যেন এই সমস্যার জন্য বিভ্রান্ত না হই , বিচলিত না হই।
এই কথা শুনে কৃষক বুদ্ধের চরণে গিয়ে কেঁদে ফেলল আর বলল, হে বুদ্ধ! এত ছোট্ট একটা কথা আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। আপনি এত ছোট্ট একটি কথা আমাকে এত সরল শব্দে বুঝিয়ে দিলেন। এর জন্য আমি আপনার কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ রইলাম। এখন থেকে আমি আমার এই জীবনে পূর্ণভাবে বাঁচবো আর কখনোই আমি সুখ এবং দুঃখের মধ্যে পড়ে গিয়ে আমার জীবন আমি নষ্ট করব না।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- কেউ যদি অপমান করে তাহলে কি করবেন - জেনে নিন গৌতম বুদ্ধের এই গল্পটি থেকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা