Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২

হিন্দু ও সনাতন ধর্মে কি পার্থক্য? || Is Hinduism a Religion or we should call us a Sanatani ?



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - হিন্দু ও সনাতন ধর্মে কি পার্থক্য? 


বন্ধুরা সনাতন ধর্মে অনেক সম্প্রদায় রয়েছে। এই সম্প্রদায়গুলির কথা বলার আগে সংক্ষেপে জানা যাক যে, ধর্ম কী?


ধর্মের বাস্তব অর্থ হলো দায়িত্ব অথবা ভগবানের বলা নিয়মের পালন করা। এই নিয়মের পালন করাকেই বাস্তবে ধর্ম বলা হয়। ধর্ম আমাদের স্বভাবেই থাকে, কালান্তরে ধর্মের অর্থ বাস্তবিক অর্থের থেকে পুরোপুরি আলাদা। এছাড়াও অন্যান্য কিছু গ্রন্থতে উল্লেখ আছে যে, ভগবান দ্বারা যে নিয়ম বলা হয়েছে সেই নিয়মগুলি সঠিকভাবে পালন করে নিজের জীবন সুখময় করে তোলা এবং সমাজে সঠিক কর্ম করাই হলো ধর্ম । সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সনাতন ধর্মই হলো বাস্তব ধর্ম। সনাতন ধর্মে চারটি সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, কোথাও কোথাও পাঁচটি সম্প্রদায়েরও উল্লেখ রয়েছে।


বন্ধুরা তাহলে আসুন প্রথমে জানা যাক, সম্প্রদায় কী? সম্প্রদায় ও ধর্মের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে, অথবা এটাও বলতে পারেন দুটির মধ্যে কোনো মিল নেই। ধর্মের অর্থ যেটা আমি আপনাদের বলেছি - ব্যক্তির স্বভাব, তার প্রগতি, তার দায়িত্ব আর ভগবান দ্বারা বলা নিয়মের পালন করা। আর অন্যদিকে সম্প্রদায় হলো একটি মাধ্যম যেটাকে একটি বিশেষ ব্যক্তি দ্বারা সঞ্চালিত করা হয়। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য একই হয় কিন্তু তাদের উপায় আলাদা। সবার উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বর পর্যন্ত পৌঁছানো। কিন্তু, বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্ন বিভিন্ন রাস্তা অবলম্বন করে ভগবানের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে।


বন্ধুরা এখানে আমরা শুধুমাত্র সনাতন ধর্মের কথা বলছি, দয়া করে এই কথাগুলি অন্যান্য ধর্ম বা সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত করে দেখবেন না। এই লেখার মধ্যে আমরা পাঁচটি সম্প্রদায়ের কথা বর্ণনা করবো।

তাহলে আসুন জানা যাক সনাতন ধর্মের সবথেকে মুখ্য সম্প্রদায় গুলি সম্পর্কে?


1.বৈষ্ণব সম্প্রদায়- ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করা ভক্ত বৈষ্ণব সম্প্রদায়- এর অনুসরণ করে। শাস্ত্রে ভগবান বিষ্ণুর মোট চব্বিশটি অবতারের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে মুখ্য অবতার হল দশটি, যাকে দশাবতারও বলা হয়। এই দশাবতার হল মৎস্য, কচ্ছপ, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ আর কল্কি অবতার। সনাতন ধর্মের পুস্তকে যেমন- ঈশ্বর সংহিতা, বিষ্ণু সংহিতা, মহাভারত, বিষ্ণুপুরাণ, রামায়ণ আর বেদের মধ্যে ঋকবেদে বৈষ্ণব বিচারধারার বর্ণনা পাওয়া যায়। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অন্তর্গত চারটি সম্প্রদায় রয়েছে। যাদের নাম- শ্রী সম্প্রদায়, ব্রহ্মা সম্প্রদায়, রুদ্র সম্প্রদায় আর হলো কুমার সম্প্রদায়। এছাড়া এই সম্প্রদায় গুলির বিভিন্ন উপসম্প্রদায়ও রয়েছে। যেমন হল সখী, বৈরাগী, রাধাবল্লভ, গৌড়ীয়, রামানন্দ,দাস ইত্যাদি। বৈষ্ণবেরা প্রধানত শ্রীকৃষ্ণ এবং রামের আরাধনা করে। এই সম্প্রদায়ের প্রমূখ তীর্থস্থান হল- জগন্নাথ (পুরী), শ্রীনাথজি ,খাটু শ্যামজি, বদ্রিনাথ, দ্বারকা, তিরুপতি বালাজি, মথুরা আর অযোধ্যা।


2.শিব সম্প্রদায়- মহাদেব শিবের আরাধনা আর তাকেই পরমপিতা মনে করা ভক্ত শিব সম্প্রদায়ের অনুসরণ করে। এই সম্প্রদায়ে আত্মশুদ্ধির জন্য অনুষ্ঠান করা হয়। উল্লেখ আছে যে 12 টি রুদ্রের মধ্যে মুখ্য রুদ্রই হল - শঙ্কর, মহাদেব, শিব ও ভোলেনাথ ইত্যাদি নামে জানা যায়। মনে করা হয়েছে মহাদেব তার অর্ধাঙ্গিনী মা পার্বতীর সাথে কৈলাস পর্বতে বিরাজমান। শিব সম্প্রদায়ের প্রমূখ গ্রন্থ হল - শিব পুরাণ, শ্বেতাশ্বেতরোপনিষদ্‌, আগাম গ্রন্থ ইত্যাদি। এরমধ্যে শিবের অনেক অবতারের কথা বর্ণনা করা রয়েছে যার মধ্যে মহাকাল, তারা, ভুবনেশ, ভৈরব, ছিন্নমস্তা, গিরিজা, বগলামুখী, মাতং আর কমল ইত্যাদি প্রধান অবতার। এই সমস্ত অবতারদের সম্পর্ক তন্ত্রশাস্ত্রের সাথে রয়েছে। শিব সম্প্রদায়ের প্রমূখ তীর্থস্থান হল- অমরনাথ, কেদারনাথ, রামেশ্বরম, আর হল সোমনাথ।


3. শাক্ত সম্প্রদায়- দেবী পার্বতী অথবা দুর্গার উপাসক শাক্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। শাস্ত্রে পার্বতীকে শক্তি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। এই সম্প্রদায়ের বিচারধারা অনুসারে - স্ত্রী সংসারের সর্বোচ্চ শক্তি। এই কারণে এই সম্প্রদায়ে দেবী শক্তিকেই ঈশ্বর মানা হয়েছে। মনে করা হয় যে, সংসারে যেখানে সৃজনশক্তি রয়েছে সেখানে প্রকৃতি রয়েছে, এই কারণে দেবীকে প্রকৃতি বলা হয়েছে। এই সম্প্রদায়ে অনুষ্ঠানের অনেক মাহাত্ম্য রয়েছে।


শাক্ত সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো- শ্রী দুর্গা ভগবত পুরান। এর পাঠ খুবই মাহাত্ম্যপূর্ণ বলা হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ নবরাত্রি তে এটি পাঠ করেন। শাক্ত সম্প্রদায়ের প্রমূখ তীর্থস্থান হলো- কলকাতার কালীঘাট, গোয়াহাটির কামাক্ষা মন্দির ইত্যাদি।


4. স্মার্ত সম্প্রদায়- সর্বপ্রথম ঈশ্বর স্বয়ং বেদের জ্ঞান ঋষি-মুনিদের শুনিয়েছিলেন। এইভাবে বেদের জ্ঞান এই সংসারে শ্রুতির মাধ্যমে এসেছিল। এই কারণে বেদকে শ্রুতি গ্রন্থ বলা হয়। মানা হয় যে বেদ ছাড়া আর সমস্ত গ্রন্থ - স্মৃতি গ্রন্থ। এই গ্রন্থের জ্ঞানকে স্মৃতি থেকে প্রচার করা হয়েছে। এই স্মৃতি গ্রন্থের মধ্যে 'মনুস্মৃতি' হল সমস্ত স্মৃতি গ্রন্থ এবং পুরান সম্মিলিত। এই স্মৃতি গ্রন্থের উল্লেখ অনুসরণ করা মানুষেরা স্মার্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। অর্থাৎ এই সম্প্রদায় অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণু, মহাদেব শিব, দেবী দুর্গা সবার আরাধনা করা হয়। এইসব মানুষেরা সাম্প্রদায়িকতা থেকে দূরে থাকে, ভারতবর্ষে অধিকাংশ মানুষ স্মার্ত সম্প্রদায়ের হয়ে থাকে।


5. বৈদিক সম্প্রদায়- যদিও মনুষ্য জীবনের আঁধার হল বেদ। আর সমস্ত সম্প্রদায়েই বেদে উল্লেখিত নিয়ম কে মানা হয় এবং দেখা যায় যে সমস্ত সম্প্রদায় বৈদিক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। কিন্তু, কালান্তরে অনেক ভ্রান্তির কারণে আধ্যাত্মকতায় অনেক মিশ্রণ ঘটেছে। বৈদিক সম্প্রদায় অনুসরণ করা মানুষেরা বেদ কেই মানে। এই সম্প্রদায়ে কেবল একজন ঈশ্বরেরই আরাধনা করা হয়, যার কোন আকার নেই। 

                    

কবির - যিনি তার দোঁহার মাধ্যমে মানুষের বিচার বুদ্ধিকে জাগরিত করেছে, তিনি বৈদিক সম্প্রদায়েরই অনুসরণ করতেন।


বন্ধুরা এইভাবে সনাতন ধর্মের মানুষেরা ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুসরণ করে। কিন্তু, সবার উদ্দেশ্য কেবল আত্ম জ্ঞানের সন্ধান পেয়ে মুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া ।


বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুনঃ- কে, কেন চালিয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের উপর বারোটি ঘাতক তীর?CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা