নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - "A Short Bhuddhist Inspirational Story to Never Give Up" / গৌতম বুদ্ধের মতে, জীবনে কখনো হার মানা উচিত নয়।
গৌতম বুদ্ধের হাজার হাজার শিষ্য ছিল। যখন তার কোনো শিষ্য বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতেন তিনি তাকে কোনো এক দিকে পাঠিয়ে সেখানকার লোকেদের জাগ্রত করতে এবং জ্ঞান দিতে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিতেন।
বুদ্ধের এক শিষ্য বুদ্ধের কাছে ছয় বছর পর্যন্ত ছিল। সে একদিন মহাত্মা বুদ্ধের কাছে এলেন আর বুদ্ধকে বললেন-হে বুদ্ধ, আমি আপনার কাছে ছয় বছর ধরে রয়েছি, আমার পরে কত শিষ্য এসেছে আপনি তাদেরকে জ্ঞান দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু, আমাকে এখনো পর্যন্ত পাঠান নি, আমার কি এখনো বৌদ্ধ ধর্মের জ্ঞান লাভ হয়নি? বুদ্ধ হাসেন আর বলেন এটা তো তোমায় নিজেকেই বুঝতে হবে যে, তুমি কি বৌদ্ধ ধর্মের জ্ঞান লাভ করেছো না করনি।
শিষ্য বললেন-হে বুদ্ধ, আপনি আমাকে এই ছয় বছর পর্যন্ত যা কিছু উপদেশ দিয়েছেন আমার তা সব মনে আছে। আপনার বলা এক একটি কথা আমার মনে রয়েছে, আপনি আমাকে যা ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করতে পারেন, আমি আপনাকে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সক্ষম। আপনি আমাকে একটি সুযোগ দিন যাতে আমি যে কোনো দিকেই যেতে পারি আর লোকেদের আপনার জ্ঞান সম্পর্কেও বলতে পারি। বুদ্ধ বলেন জ্ঞানের কথা মনে রাখলেই সবকিছু হয়না, যতদিন না পর্যন্ত আপনি তা আপনার ব্যবহারে না আনেন। যতদিন আপনি যেকোনো জিনিসকে আপনার ব্যবহারে না আনবেন, ততদিন আপনি অন্যদের বলতে পারবেন না যে, সে তার ব্যবহারে সেই জিনিস নিয়ে আসুক। শিষ্য বললেন যা কিছুই হোক না কেন, কৃপা করে আপনি আমাকে একটি সুযোগ দিন। আপনি আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি সবাইকে আমার জ্ঞান দিয়ে প্রভাবিত করতে পারবো। আমি লোকেদের এমন কথা বলতে পারি যে কারণে তাদের জীবনে শান্তি আসবে। আর তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের জীবন কাটাতে পারবে। বুদ্ধ বললেন তুমি এখনও প্রস্তুত নও, যখন তুমি প্রস্তুত হয়ে যাবে আমি নিজে তোমাকে সঠিক রাস্তায় যাওয়ার জন্য অনুমতি দেবো। শিষ্য বললেন কেন বুদ্ধ? আপনি আমাকে এই ছয় বছরের ততটাও জ্ঞান দেননি, যা দিয়ে আমি লোকেদের প্রভাবিত করতে পারব। বুদ্ধ বললেন ঠিক আছে, তুমি পূর্ব দিকে যাও সেখানে তুমি একটি গ্রাম পাবে সেখানে গিয়ে তুমি ভিক্ষা করে আনো আর সেখানকার লোকেদের তোমার জ্ঞান দিয়ে সাহায্য করো। কাল সকালে তুমি সেখানে একা যাবে, আর সন্ধ্যে বেলা এসে আমাকে বলবে, তুমি কিভাবে সেখানকার লোকেদের সাহায্য করেছো। ওই শিষ্য এসব শুনে খুব খুশি হলেন এবং সে বুদ্ধের আশীর্বাদ নিয়ে চলে গেলেন। সে রাত জেগে জ্ঞান গুলোকে মনে করতে থাকল এবং মনে মনে ভাবলো যে, সে কাল এমন জ্ঞানের ছাপ রাখবে যা শুনে সেখানকার লোকেদের সাথে বুদ্ধও আমার ওপর প্রভাবিত হয়ে যাবে।
সকালে উঠে সে মহাত্মা বুদ্ধকে প্রণাম করতে গেলেন, তাঁকে প্রণাম করে সে পূর্ব দিকে রওনা দিলেন। সন্ধ্যাবেলা যখন সে ফিরে আসলো তখন বুদ্ধ দেখলেন ওই শিষ্যের মাথায় আঘাত লেগে রক্ত বের হচ্ছে। বুদ্ধ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি এই আঘাত কি করে পেলে? শিষ্য বলল যে বুদ্ধ সেখানকার লোকেরা খুবই খারাপ। তাদের মধ্যে কোনো বুদ্ধিই নেই। সে আরো বলেন - আমি ওই গ্রামে ভিক্ষা নিতে গেলাম কিন্তু, কেউ আমাকে ভিক্ষা দেয় নি বরং সবাই আমাকে গালি দিচ্ছিল। এক ব্যক্তি আমাকে ভিক্ষা দেয় কিন্তু তা নিচে ফেলে আর রূঢ় ভাবে বলে এটা উঠিয়ে নাও। আমি তাকে অনেক বোঝালাম কিন্তু, সে আমার কথা শোনার জন্য রাজিই ছিল না। উল্টে সে আমার সাথে মারামারি করে যার কারণে আমার আঘাত লাগে। হে বুদ্ধ আপনি আমাকে অন্য জায়গায় পাঠান যেখানকার লোকেদের মধ্যে বুদ্ধি আছে আর যারা এরকম নয়।
বুদ্ধ শিষ্যের কথা শুনে হাসলেন, আর বললেন যে যদি তুমি অন্য গ্রামেও এমন লোক পাও তখন তুমি কি করবে। শিষ্য বলল হে বুদ্ধ এরকম লোকেদের কেউ জ্ঞান দিতে পারবে না। ওই লোকেরা হলো অজ্ঞানী তাদেরকে কে বোঝাবে! বুদ্ধ বললেন, ওই লোকেরা অজ্ঞানী নয় বরং জ্ঞানী। তাদের অনেক বুদ্ধি আছে, কিন্তু তাদের কাছে নিজের জ্ঞান রয়েছে। এবার তুমি যদি অন্য কারো জ্ঞানকে খারাপ বলো তাহলে সে তো তোমাকে কিছু না কিছু বলবেই। তুমি এমন লোক সব জায়গাতেই পাবে, তখন তুমি তোমার জ্ঞান তাদেরকে কিভাবে দেবে? বুদ্ধ শিষ্যকে বললেন আজকে তুমি আরাম করো, কাল সন্ধ্যাবেলা আমার কাছে আসবে। শিষ্য বুদ্ধকে প্রণাম করে চলে গেল।
পরেরদিন সন্ধ্যাবেলায় শিষ্য যখন বুদ্ধের কাছে গেল তখন বুদ্ধের কাছে তাঁর আরেক শিষ্য উপস্থিত ছিল। তার হাতে আঘাত লেগেছিল। বুদ্ধ ওই শিষ্যের হাতে আঘাত দেখে তা ব্যান্ডেজ করে দিলেন এবং সেই শিষ্যকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই আঘাত কি করে পেলে? শিষ্য বললেন, হে বুদ্ধ; আপনি আমাকে পূর্বদিকের গ্রামে যেতে বলেছিলেন, সেখানে আমি এই আঘাত পেয়েছি। বুদ্ধ বললেন- এখানে তোমার সাথে কি কি হয়েছে তা তুমি আমায় বলো। শিষ্য বললেন-হে বুদ্ধ, সেখানে আমি সবার কাছে ভিক্ষা চাই কিন্তু কেউ আমায় ভিক্ষা দেয় নি এক ব্যক্তি যে ভিক্ষা দিয়েছিল, সেও ওই ভিক্ষা আমায় মাটিতে ফেলে দেয় আর বলে ওটা উঠিয়ে নাও। আমি চুপচাপ সেটা উঠিয়ে আমার পাত্রে রেখে দিই, আর তাকে কল্যান হওয়ার আশীর্বাদ দেই। তখন ওই ব্যক্তি আমায় বলে যে, আপনি বড়ই অদ্ভুত ব্যক্তি আমি আপনাকে অপমান করছি আর আপনি আমাকে আশীর্বাদ দিচ্ছেন। আমি তাকে বললাম যে আপনি দানি ব্যক্তি আপনি আমায় দান দিয়েছেন, এই কারণে আমি আপনাকে আশীর্বাদ দিলাম। তারপর সেখান থেকে আমি এগিয়ে যাই। তখন কিছু লোক আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। তারা আমার ওপর কিছু খারাপ কথা প্রয়োগ করে আর আমার ওপর পাথর ছোড়ে যার কারণে আমি এই আঘাত পাই। যখন আমি ফিরে আসছিলাম তখন আমি এক মাকে কান্না করতে দেখি। তিনি তার অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। আমি তৎক্ষণাৎ জঙ্গলে গিয়ে তার জন্য জরিবুটি বা (ভেষজ) নিয়ে আসি। কিন্তু, সেখানকার লোক আমাকে ভেষজ দিতে দেয়নি। তারপর আমি তাদের কাছে অনুরোধ করি যে তারা যেন আমায় ওই বাচ্চাটির চিকিৎসা করতে দেয়। তারপর আমায় তারা যেমন বলবে আমি তেমনটাই করবো। এরপর যে ব্যক্তি আমায় ভিক্ষা দিয়েছিলেন, তিনি গ্রামবাসীদের বোঝায় তখন তারা আমায় ওই বাচ্চাটিকে জরিবুটি বা ভেষজ লাগাতে দেয়। তারপর ওই বাচ্চাটি ঠিক হয়ে যায়।
তারপর গ্রামবাসীরা আমার সাথে করা- অভদ্র ব্যবহারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আমায় ধন্যবাদ জানায়। তারপর আমি সেখান থেকে চলে আসি।
হে বুদ্ধ, আপনার কাছে একটি অনুরোধ ওই গ্রামের লোক খুবই সহজ সরল এবং সাধারন। আমি কি রোজ ওই গ্রামে গিয়ে ভিক্ষা চাইতে পারি? এই সমস্ত কথা ওই প্রথম শিষ্যও শুনছিল, সে এইসব কথা শুনে বুদ্ধের চরণে নত হয়ে বলে- হে বুদ্ধ, আমি বুঝে গেছি যে, আমি এখনও ওই সবের যোগ্য হতে পারিনি যে, অন্যজনকে জ্ঞান দেবো। বুদ্ধ বললেন, আমরা বাইরে সেইসব লোককে দেখতে পাই যেমন আমরা ভেতর থেকে হই, যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজেকে বদলাতে পারবো না ততক্ষণ আমরা অন্যকেও বদলাতে পারবো না। এইজন্য নিজেকে পরিবর্তন করা খুবই জরুরী। যেকোনো কথা বলার আগে তাকে ব্যবহারে আনা অত্যন্ত জরুরী, কেননা নিজের ব্যবহারে আনা জিনিসকে বলা বা বোঝানো খুবই সহজ হয়। আর সেটা মানুষ খুবই সহজে ও ভালোভাবে বুঝতে পারে।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- গৌতম বুদ্ধ অনুযায়ী অলসতা কি এবং কেন আসে? গল্পটি শোনার পর আপনার কোনো অলসতা থাকবে না || A Buddhist Story on Laziness CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা