নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা গরুড় পুরানে ভগবান বিষ্ণু গরুড়কে মানুষের মৃত্যু, যমলোক যাত্রা, নরক যোনি তথা সম্প্রীতির মতন বিষয় সম্পর্কিত অনেক বৈশিষ্ট্য এবং রহস্যময় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তার সাথে এও বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তির অন্তিম সংস্কার করার পরে তাদের পরিবার পরিজনের, শ্মশান থেকে ফেরার সময় পেছন ফিরে তাকানো উচিত নয়। আসলে এর প্রধান কারণ কি, তাই আজ জানবো এই লেখার মাধ্যমে।
এই কথা তো আপনারা সবাই শুনেছেন যে, জীবন হলো একটি ভাড়া নেওয়া ঘরের মতো, যাকে বদলাতেই হয়। অর্থাৎ মৃত্যু নিশ্চিত। এর পরেও বেশিরভাগ মানুষই এই বিষয়ে কথা বলার থেকে এড়িয়ে চলে আর মৃত্যু শব্দকেও ভয় পায়। এই কারণে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন যে, দুনিয়ার সব থেকে বড়ো আশ্চর্য জিনিস এটাই যে মানুষ রোজ কাউকে না কাউকে মারা যেতে দেখে। কিন্তু, তারা স্বয়ং তাদের মৃত্যুর ব্যাপারে কখনোই ভাবেনা যে একদিন সবারই মৃত্যু হবে।
বন্ধুরা, আমাদের শরীর পঞ্চতত্ত্ব - পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু ও আকাশ দিয়ে তৈরি। আর একদিন এরই মধ্যেই সকলকে মিলিয়ে যেতে হবে। এই কারণে মানুষ যতই ধন-সম্পত্তি কামিয়ে নিক, একদিন তাকে সবকিছু এখানেই রেখে যেতে হবে, এটাই হল সংসারের নিয়ম। আর এই নিয়মকে না কেউ পরিবর্তন করতে পেরেছে, আর না কেউ পরিবর্তন করতে পারবে। গীতাতেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যে জন্ম নিয়েছে তার মৃত্যু নিশ্চিত আর যার মৃত্যু হবে তার পরের জন্মও নিশ্চিত। এটি হলো একটি চক্র যা অনবরত ঘুরে চলেছে। হিন্দু ধর্মে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মোট ১৬ টি সংস্কার আছে। যার মধ্যে ১৬ তম সংস্কার হলো অন্তিম সংস্কার। এই সংস্কারের অন্তর্গত অনেক বৈদিক নিয়ম রয়েছে যা পালন করা জরুরি; না হলে এরকমটা মেনে চলা হয় যে, যদি এই নিয়মের পালনে কোনো রকমের কোনো ভুল হয় তাহলে মৃতের আত্মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়।
সূর্যাস্তের আগে দাহ সংস্কার করা, কপাল ক্রিয়া তথা পিণ্ড দান এবং শ্রাদ্ধ কর্ম এরকম কিছু নিয়ম রয়েছে, যার উল্লেখ আমরা গরুড় পুরানে পেয়ে থাকি। এর মধ্যে বলা হয়েছে যে, মৃতের অন্তিম সংস্কার করার পর তাদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কারোরই পিছন ফিরে শ্মশানঘাটের দিকে দেখা উচিত নয়। আসলে অন্তিম সংস্কার করার পরে শরীর জ্বলে যায়, কিন্তু আত্মার অস্তিত্ব সেখানেই থাকে। কারণ গীতাতে বলা হয়েছে যে, আত্মাকে কোনো অস্ত্র কাটতে পারে না, আগুন জ্বালাতে পারে না এবং বায়ু শুকাতে পারে না। আর ওই আত্মা মৃত্যু থেকে শুরু করে মৃতের অন্তিম সংস্কার পর্যন্ত সমস্ত কাজ নিজের চোখে দেখে।
গরুড় পুরানে আরও বলা হয়েছে যে, মৃত্যুর পরেও কিছু লোকের আত্মা তার আত্মীয়দের সাথে মায়া জড়িয়ে থাকে। আত্মা মায়ায় জড়িয়ে যাওয়ার কারণে কিছু ব্যক্তির আত্মা তার আত্মীয় পরিজনের চারিপাশে ঘুরে বেড়ায়। এই পরিস্থিতিতে মৃতের আত্মার মুক্তির জন্য অনেক সমস্যা হয়। এই পরিস্থিতিতে মায়া কেটে যাওয়া খুবই জরুরী। কেননা যদি এরকম না হয় তাহলে মৃতের আত্মার পরলোক গমন সম্ভব হয় না। মৃতের আত্মা এবং পরিজনের মধ্যে এই মায়ারূপী সুতোকে কেটে ফেলার জন্য এক স্পষ্ট আদেশ রয়েছে যে, অন্তিম সংস্কারের পরে কোনো আত্মীয় স্বজন যেন পিছন ফিরে না দেখে। যদি কেউ পেছন ফিরে দেখে তাহলে মৃতের আত্মা মনে করবে আত্মীয়-পরিজনদের মনে তার জন্য এখনো অনেক টান বা মায়া রয়েছে। আর সে এই কারনেই ফিরতে আসতে পারে। আর যদি কেউ পিছন ফিরে না দেখে, তাহলে মৃতের আত্মার এটি বুঝতে সহজ হবে যে তার এই লোকে সময় শেষ হয়ে গেছে এবং সে তার মনকে অন্য লোকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে নেবে। মৃতের আত্মা আর এই লোকের মধ্যে স্থাপিত সম্পর্ককে ভাঙার জন্য আরও অনেক কর্মকাণ্ড রয়েছে যা ১৩ দিন পর্যন্ত চলে। যার মধ্যে পিছন ফিরে না দেখা প্রারম্ভিক কর্মের মধ্যে পড়ে। শ্মশানে জলন্ত চিতার দিকে পেছন ফিরে দেখার কারণে মৃতের আত্মা জীবিত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে বিরক্তও করতে পারে। এই কারণে শ্মশান থেকে ফেরার সময় বাচ্চাদের সবার প্রথমে রাখা উচিত।
বন্ধুরা পিছন ফিরে না দেখা এটি এক রকমের আদেশ ; যা বোঝায় - এখন তোমার সাথে আর জীবিত মানুষদের এবং তোমার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ভাঙার সময় চলে এসেছে। মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে এবার মুক্তির জন্য এগিয়ে যাও।
আত্মার মুক্তির সাথে জড়িত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো - যে মানুষের অকাল মৃত্যু হয় অর্থাৎ আত্মহত্যা অথবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এরকম মানুষের আত্মা তাড়াতাড়ি মুক্তি পায় না। হ্যাঁ, যদি তার কর্ম খুবই ভালো হয় তাহলে সে মুক্তি পেয়ে যায় নাহলে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। যদিও পুরানে অকাল মৃত্যু নিয়েও অনেক কর্মকাণ্ড বলা হয়েছে। কিন্তু শেখানো শর্ত দেখা যায় যে, সেই নিয়ম গুলি কে সঠিকভাবে পালন করা খুবই জরুরী। তো বন্ধুরা এই কারণেই অন্তিম সংস্কারের পরে শ্মশান ঘাটের দিকে পেছন ফিরে তাকানো উচিত নয়।
আশা করি বন্ধুরা, আমাদের আজকের লেখা পড়ে আপনাদের ভালো লাগেছে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার। ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পরুন - কলিযুগের ধ্বংসের আগে দেখা দেবে - এই ৬ টি লক্ষণ || কল্কি অবতারের এই পৃথিবীতে আসার সংকেত - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা