নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
নমস্কার বন্ধুরা, আপনাদের সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে আজকের লেখাটি শুরু করছি। হিন্দু সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী আমরা জানি যে পুজো করার ক্ষেত্রে আমাদের না খেয়ে পুজো করতে হয় এরকম একটা নীতি প্রচলিত রয়েছে। আমরা অনেক সময়ই উপবাসও রেখে থাকি পুজোর কারণে। এবারে আপনাদের মনে অনেক সময় প্রশ্ন জেগেছে যে, শুধুমাত্র উপবাস বা না খেয়ে পুজো করলে তবেই কি ভগবান সন্তুষ্ট হয় নাকি খেয়েদেয়েও পূজা করা যায় !
এই মতটি নিয়ে অনেক রকম মতামত আমাদের মধ্যে চালু আছে। অনেকেই বলেন যে খেয়ে দেয়ে পূজা করলে কোনরকম অসুবিধা নেই আবার অনেকে মনে করেন যে উপবাস না করে খেয়ে দেয়ে পূজা করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হয়। আজকের লেখাতে আমি আপনাদের জানিয়ে দেবো কোনটি শাস্ত্রসম্মত খেয়েদেয়ে পুজো করা যায় নাকি যায় না। চলুন বন্ধুরা, সরাসরি লেখার মূল বিষয়বস্তুতে চলে আসি।
খাওয়া দাওয়া করে কি পুজো করা যায় নাকি কেবলমাত্র উপোস করে না খেয়েই পুজো করতে হয় - এই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রচলিত গল্প রয়েছে।
একটি ভক্তিমতী মহিলা যিনি প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই স্নান করে নিতেন তারপরে রান্না করে তিনি খাবার খেয়ে নিতেন এরপরে তিনি ভক্তি সহকারে পুজোর কাজ করতেন। একদিন তার বাড়িতে তার একটি ধার্মিক আত্মীয় এসে উপস্থিত হলেন, তিনি এসে দেখলেন এই মহিলাটি সকালবেলা উঠে যথা নিয়ম অনুযায়ী স্নান কার্য করার পর রান্না করে খাবার খেয়ে নিয়ে তারপরে পুজো করেন, এটিকে তিনি শাস্ত্র বিরোধী বলে তাকে বললেন এবং বললেন অবশ্যই সকালবেলা উঠে উপবাস রেখে কিছু না খেয়েই ঠাকুরের পুজো করতে হবে। মহিলাটি এই কথা শুনে শাস্ত্র অনুযায়ী এই ধারণা প্রশন করে শুরু করলেন সকালবেলা না খেয়ে পুজো করা। এরপর কিছুদিন এই কাজ করার পর তিনি লক্ষ্য করলেন যে তিনি আগে যেমন অনেক সময় ধরে ঠাকুরের পূজো করতে পারতেন বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না, তিনি খুব অল্প সময়ে ঠাকুরের ভক্তি সহকারে পুজোর কাজে সময় দিতে পারছেন, এর কারণে তিনি দেখলেন তার পেটের খিদে অর্থাৎ খিদের জন্য তার মন অন্যদিকে চলে যাচ্ছে যে কারণে তিনি সম্পূর্ণভাবে ঠাকুরের কাজে তার মন নিয়োগ করতে পারছেন না। এই দেখে তিনি খুব ভালো করে চিন্তা করে দেখলেন আগে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা যত্ন সহকারে বা ভক্তি সহকারে ঠাকুরের পুজোয় মনোনিবেশ করতে পারতেন কারণ সেখানে কোনো রকম ক্ষুধার জ্বালা ছিল না কিন্তু যখন থেকে তিনি সকালবেলা না খেয়ে পুজোর কাজ শুরু করেছেন, তখন থেকে তিনি সম্পূর্ণভাবে অনেকক্ষণ ধরে পূজোর কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না বড়ো জোর ১৫ মিনিট থেকে আধঘন্টা তিনি মনোযোগ দিয়ে পুজো করেন। এর পরেই তার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে খিদের জন্য, তাই তিনি ভেবে দেখলেন কোন কাজটি ঠিক।এমন সময় তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো এক বিজ্ঞ সাধু, তিনি তার বাড়িতে আসেন ভিক্ষা চাইবার জন্য। সেই বিজ্ঞ সাধুকে দেখে মহিলাটি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সাধু বাবা আপনি বলুন কোন কাজটি ঠিক, খেয়েদেয়ে পুজো করা উচিত নাকি না খেয়ে দেয়ে পূজা করা উচিত? সেই সময় সেখানে তার ধার্মিক আত্মীয়টিও উপস্থিত ছিল। সেই সময় সাধু বাবা উত্তর দিলেন যে, খেয়েদেয়ে পুজো করলে সম্পূর্ণভাবে আপনার মননিবেশ ঘটবে পুজোর কাজে কিন্তু, না খেয়ে পুজো করলে আপনার মনের বিচ্যুতি ঘটবে সেই পুজোর কাজ থেকে। ভগবান কোনরকম আরম্ভে................... বিশ্বাস করে না, তিনি বিশ্বাস করেন ভক্তি এবং শ্রদ্ধায় অর্থাৎ আপনি যদি এক মন দিয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করেন বা ঈশ্বরকে ডাকেন তাহলে আপনি খেয়ে তাকে পুজো করছেন নাকি না খেয়ে পুজো করছেন এটা কোনো ব্যাপারই নয়, বরং আপনি যদি খেয়ে পুজো করেন তাহলে আপনার মনটি সম্পূর্ণরূপে থাকবে ঈশ্বরের প্রতি, কোনভাবেই চঞ্চল হবেনা আপনার পেটের খিদের প্রতি।
সুতরাং বন্ধুরা আপনারা আপনাদের সুবিধা মতো যে কোনো একটি নিয়ম পালন করতে পারেন যদি মনে হয় আপনারা খেয়ে পুজো করবেন, তাহলে সেটি আপনারা বেছে নিতে পারেন।
অপরদিকে পরমহংস রামকৃষ্ণদেব বলেছেন, ঈশ্বরের আরাধনা করতে হলে প্রথমেই মনকে স্থির রাখতে হবে, মনকে স্থির করে তাকে ডাকলে তবেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ বা আশীর্বাদ পাওয়া সম্ভব। যারা বাইরে ভক্তি বা ভেতরে কপটতা দেখায়, অর্থাৎ যারা তাদের ভক্তির পেছনে রাখে তাদের স্বার্থ তাদের ডাক থেকে ভগবান অনেক দূরে থাকেন, সুতরাং আপনারা মন থেকে ভগবানকে ডাকুন কোনরকম স্বার্থ নিয়ে নয় বা কোনরকম কপটতা নিয়ে নয়। রামকৃষ্ণদেব আরো বলেছেন মন এবং মুখ এক করে তবেই ভক্তি করতে হবে অর্থাৎ মনে এক এবং মুখে আর এক এরকম করে ভগবান বা ঈশ্বরকে ডাকা ঠিক নয় তাই আপনার মনকে ফের করুন এবং মন থেকে ঈশ্বরের আরাধনা করুন তবেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ সম্ভব হবে, অবশ্যই ভক্তিটাই এখানে প্রাধান্য পাবে কোনভাবেই আপনি উপোস করে রয়েছেন নাকি খাওয়া দাওয়া করে পুজো করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং বন্ধুরা, আপনারা ভক্তি সহকারে আপনাদের ইচ্ছে অনুযায়ী অর্থাৎ আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী যদি মনে হয় খাওয়া দাওয়া করে ভক্তি আসা বেশি সম্ভব তাহলে সেই পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে পারেন।
আশাকরছি এই লেখাটি পড়ার মাধ্যমে আপনাদের মনে থাকা প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। আজ এখানেই শেষ করছি। সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।
নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন - যে জিনিস দান করা কখনোই উচিত নয় - নাহলে হিতে বিপরীত হয়। CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা