নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা মহাভারতের যুদ্ধে এত রহস্য ছিল যে, আপনারা যত তার পাতা উল্টাবেন ততই তার অদ্ভুত রহস্য আপনার সামনে আসবে। ওই রহস্য গুলির মধ্যে মহাভারতের এক রহস্য অর্জুনের রথের সঙ্গেও জড়িত রয়েছে। বন্ধুরা মহাভারতের যুদ্ধে বড় বড় যোদ্ধারা তাদের সবথেকে শক্তিশালী দিব্যিও অস্ত্র এবং বাহনের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তাদের মধ্যে সবথেকে বেশি চর্চায় ছিল অর্জুনের রথ, যার সারথি ছিলেন ভগবান স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু, অর্জুনের এই দিব্য রথের সাথে জড়িত এক বিচিত্র বিষয় মহাভারতে আমাদের সামনে আসে। যা অনুসারে অর্জুন রথের থেকে নামার পরেই রথটি জ্বলে ছারখার হয়ে যায়। তাহলে বন্ধুরা আপনারা কি সেই কারণগুলো জানেন যেই কারণে এই দিব্য রথ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, না জেনে থাকলে আজকের লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং জানুন অর্জুন আর কৃষ্ণের রথ কেন জ্বলে গেছিল?
বন্ধুরা, কিভাবে অর্জুনের দিব্য রথ জ্বলে গিয়েছিল এটা জানার আগে আমি আপনাদের জানিয়ে দেই যে, অর্জুনের রথ কোনো সাধারণ রথ ছিল না। বরং দিব্যশক্তির সাথে জড়িত এক এমন রথ ছিল যেটি ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো লোকে এবং যেকোনো দিকে যেতে পারতো। শুধু এটুকুই নয় তার এতটা দিব্য হওয়ার পিছনের কারনের বর্ণনা আমাদের ধর্মশাস্ত্রে আমরা পেয়ে থাকি, যা হলো কিছুটা এরকম - বলা হয় যে, অর্জুন যে রথে চড়ে মহাভারতের যুদ্ধ লড়েছিলেন তা সূর্যদেব তাকে দিয়েছিলেন। একবার খান্ডব বনে ভ্রমণ করার সময় অর্জুন আর শ্রীকৃষ্ণের, - অগ্নিদেবের সাথে দেখা হয় যিনি ছিলেন খুবই ক্ষুধার্ত আর এই ক্ষুধায় বশীভূত অগ্নিদেব ওই পুরো খান্ডব বন জ্বালানোর কথা বলতে থাকেন ওই সময় ওই বনে নাগরাজা তক্ষকও থাকতেন যে ছিল ভগবান ইন্দ্রের খুবই ভালো বন্ধু। এই কারণে যখনই এইরকম পরিস্থিতি উৎপন্ন হয় তখন অগ্নিদেবের আয়োজন বন্ধ করার জন্য ইন্দ্রদেব সেখানে বৃষ্টি নামিয়ে দেন। তা দেখে অগ্নিদেব শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনকে সাহায্য করার কথা বলে। যার পরে তারা তিনজন মিলে সমুদ্র দেবতা বরুণকে আহ্বান জানান যার পর অর্জুনের সাহায্যের জন্য খুশি হয়ে অগ্নিদেব অর্জুনকে দেন ওই দিব্য রথ যাতে চারটি ঘোড়া বাঁধা ছিল, আর বরুনদেব অর্জুনকে দেন গান্ডীব ধনুক।
এখন আসি আমাদের আজকের আলোচনায়। বন্ধুরা, মহাভারতের শল্য পর্বে অধ্যায় ৬২ অনুসারে, সঞ্জয় - ধৃতরাষ্ট্রকে বৃত্তান্ত শোনানোর সময় বলেন যে, দুর্যোধনকে বধ করার পর সমস্ত পাণ্ডবগগণ প্রসন্ন হয়। প্রসন্ন চিত্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজান , যার পরে কুন্তিনন্দন বা কুন্তি পুত্র অর্জুনও দেবদত্ত নামক শ্রেষ্ঠ শঙ্খের ধ্বনি দেন, তাদের সাথে অন্যান্য যোদ্ধারাও নিজের নিজের শঙ্খ বাজান এবং তাদের প্রসন্নতাকে ব্যাপ্ত করেন। এই ধ্বনি এত অদ্ভুত এবং প্রচন্ড ছিল যে সমস্ত আকাশ তাদের ধ্বনির সুরে ভরে যায়। তারপরেই কুন্তিপুত্ররা সর্বপ্রথম দুর্যোধনের শিবিরে প্রবেশ করেন। ওই শিবির একদম শোভাহীন দেখতে লাগতো। গুরুরাজের শিবিরে পৌঁছে যখন পঞ্চ পাণ্ডব নিজের নিজের রথ থেকে নামেন তখন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে সবার প্রথমে রথ থেকে নামতে বলেন এবং তার সাথে আদেশ দেন যে, পার্থ ! তুমি তোমার সাথে ' গান্ডীব ধনুক ' ও এই বান (তীর) দিয়ে ভরা ' অক্ষয় তর্কস ' রথের থেকে নামিয়ে ফেলো; তারপরে আমি নামবো। অতএব এটাতেই তোমার ভালো হবে।
প্রথমত, অর্জুন শ্রী কৃষ্ণের এমন বলার কারণ বুঝতে পারেনি। কিন্তু, তা সত্বেও অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী সব করেন আর রথ থেকে নেমে যান। তারপরেই শ্রীকৃষ্ণ রথের ঘোড়া ছেড়ে তৎক্ষণাৎ নিচে নেমে যান। কিন্তু, তারপর যা হয় তা অর্জুনের জন্য খুবই আশ্চর্যের ঘটনা ছিল। তারপর অর্জুনের ওই বিশাল রথ, যা দ্রোণাচার্য এবং কর্ণের দিব্যীয় অস্ত্রের থেকে এখনো পর্যন্ত অস্পর্শ ছিল তা একদম আগুনে জ্বলে পুড়ে যায়। সেখানে উপস্থিত সমস্ত পাণ্ডব আশ্চর্য হয়ে গেল আর অর্জুন এই ঘটনা দেখেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহিমা বুঝতে পেরে হাত জোড় করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেন, হে গোবিন্দ ! আমার রথের এই দশা কি করে হলো? এর পেছনের কারণ কি ? কৃপা করে এর পেছনের কারণ আমায় বলুন !
অর্জুনের জিজ্ঞাসা করায় শ্রীকৃষ্ণ তার প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ সরল ভাবে দেন। তিনি বলেন, হে পার্থ ! এই রথটি তো প্রথম থেকেই নানা রকমের অস্ত্রের আঘাতে জ্বলে গিয়েছিল আর আমি এতে বসে থাকার কারণে সংগ্রামে ভস্ম হয়ে তা পড়ে যায়নি। আর কুন্তী নন্দন আজ যখন তুমি তোমার বাকি কাজ পূরণ করে ফেলেছ তাই আমি এটিকে ছেড়ে দিয়েছি এই কারণে প্রথম থেকেই ব্রহ্মাস্ত্রের তেজে চলে যাওয়া এই রথ এইভাবে এলোমেলো হয়ে পড়ে যায়।
(বন্ধুরা ওই রথটি মহাভারতের যুদ্ধের সময় একাধিক বার ক্ষত বিক্ষত হয়েছে, শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের লীলার কারণে ওই রথটি ঠিকঠাকভাবে কার্যকারী অবস্থায় ছিল। শ্রীকৃষ্ণ ভালোভাবেই জানতেন সেই রাথটি তিনি নামার সঙ্গে সঙ্গেই জ্বলে ভষ্মিভূত হয়ে যাবে। এই কারণে তিনি আগে অর্জুনকেই রথ থেকে নামতে বলেন এবং পরে তিনি নামেন। )
তাহলে বন্ধুরা আশাকরি, মহাভারত যুদ্ধের পরে অর্জুনের রথ কেন জ্বলে গিয়েছিল তার কারণ আপনারা পেয়ে গেছেন। বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পরুন - শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা - আসলে কী ? || আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ভগবদ্গীতার কি মাহাত্ম্য রয়েছে ? || What Exactly is Shrimad Bhagwat Geeta? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা