নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
''যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম্ ধর্মস্য তদাত্মানম্ শ্রীজাময়ম্।''
নমস্কার বন্ধুরা, আপনারা কি জানেন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আসলে কী? আর আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ভগবদ্গীতার কি মাহাত্ম্য রয়েছে?
আসলে বন্ধুরা আপনারা এটিকে আধুনিক ইংরেজি শিক্ষার প্রভাব বলুন কিংবা ধর্মের প্রতি উদাসীনতাই বলুন, কিন্তু একটি কঠিন সত্য হলো যে হিন্দু ধর্মের মানুষেরাই তাদের হিন্দু ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থ অনুসারে কিছুই জানেনা। আর বন্ধুরা এটাই হলো সব থেকে বড় কারণ যে আজকাল মানুষ হিন্দু ধর্মকে মেনে চলার স্থানে নিজেকে ' সেকুলার ' হিসেবে গণ্য করে, যার কোনো অস্তিত্বই নেই। বন্ধুরা আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে, আজকালকার যুবক-যুবতীদের - " আই লাভ ইউ, আই মিস্ ইউ "- বলার ৫০ টি উপায় জানা আছে। কিন্তু, যখন তাদের কাছে পরম পবিত্র " বেদ অথবা শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা " - সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তারা এর সম্পর্কে শুধু এইটুকুই জানে যে এগুলি হলো আমাদের ধর্মগ্রন্থ, যা আমাদের ঘরের পূজা স্থানে রাখা হয়। এটি আমাদের হিন্দু সমাজের জন্য কিছুটা চিন্তার বিষয়, কারণ আজকে যারা যুবক যুবতী রয়েছে তারাই ভবিষ্যতে বয়স্ক মানুষ হবেন। আর যদি তারাই তাদের ধর্ম আর পুরান সম্পর্কে কিছু না জানে তাহলে তারা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে কি বোঝাবেন ! এই কারণে আজকে আপনারা জেনে নিন আমাদের পরম পবিত্র শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সম্পর্কে যে, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আসলে কি? আর এর কি মাহাত্ম্য রয়েছে?
সাধারণ শব্দে যদি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সম্পর্কে বলা হয় তাহলে এটা আমরা সবাই বলি যে এটি মানব জীবন সম্পর্কে জড়িত জ্ঞানের একটি সংকলন ও সাগর যা আমাদের সবাইকে জীবনে বেঁচে থাকার সঠিক প্রেরণা দেয়। আর আমাদের ধর্ম এবং অধর্মের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।
যখন অর্জুন মহাভারত যুদ্ধে বিচলিত হয়ে তার কর্তব্য থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছিলেন, তখন শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতার দিব্য জ্ঞান ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সখা কুন্তি পুত্র অর্জুনকে শোনান। ধর্মগ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, ভগবদ্গীতার উপদেশ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে শুনিয়েছিলেন। এর ভালো দিক হলো যে, এই দিব্যজ্ঞান আজকের দিনেও অতটাই প্রাসঙ্গিক এবং উপযোগী। আর ততদিন প্রাসঙ্গিক থাকবে যতদিন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে মানব জীবনের অস্তিত্ব থাকবে।
ধর্মগ্রন্থের অনুসারে গীতার উপদেশ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে প্রায় ৪৫ মিনিট পর্যন্ত শুনিয়েছিলেন। ভগবান গীতার এই জ্ঞান কর্তব্য থেকে পিছিয়ে আসা অর্জুনকে কর্তব্য শেখানোর জন্য আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধর্মজ্ঞান শেখানোর জন্য দিয়েছিল, যাতে এই পৃথিবীতে আসা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্জুনের মতো কর্তব্য থেকে পিছিয়ে না পড়ে। আর সব সময় ধর্মের পথেই চলে এবং ধর্মের পক্ষে থাকে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার উপদেশ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন তার সখা অর্জুনকে দিচ্ছিলেন তখন এই দিব্য জ্ঞান অর্জুন ছাড়া কেবল ধৃতরাষ্ট্র এবং সঞ্জয় শুনেছিলেন। আর বন্ধুরা আপনারা এই কথাটি জেনে হয়তো আপনি আশ্চর্য হবেন যে, অর্জুনের আগে এই গীতার উপদেশ ভগবান সূর্যদেব কে দেওয়া হয়েছিল।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার গণনা আমাদের হিন্দু উপনিষদে হয়ে থাকে, যা হলো আমাদের হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ। এই উপনিষদে জীবনের বিভিন্ন ধাপ এবং জীবনে বেঁচে থাকার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আমাদের বলা হয়েছে। তার সাথে দুনিয়ার সবথেকে বড় মহাকাব্য মহাভারতের একটি অধ্যায় - 'শান্তি পর্বের' একটি অংশও রয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার মূল কথা হলো সমস্ত মানুষকে কোনরকম পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া উচিত নয় এবং তার কর্তব্য থেকেও পিছিয়ে পড়া উচিত নয়। কেননা শেষে জয় সবসময় সত্যেরই জয় হয়ে থাকে এবং পরিবর্তনই হল এই সংসারের নিয়ম। এটি হলো সেই শাশ্বত সত্য যা সর্বদা একই থাকে, আর ভবিষ্যতেও থাকবে।
বন্ধুরা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় মোট ৭০০ টি শ্লোক রয়েছে, যার মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ৫৭৪ টি শ্লোক, অর্জুন ৮৫ টি শ্লোক, ধৃতরাষ্ট্র ১ টি শ্লোক, তথা সঞ্জয় ৪০ টি শ্লোক বলেছেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার জ্ঞান হল দিব্য এবং অমূল্য এই কারণে আমাদের সবার উচিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ করা, আর তারমধ্যে বলা উপদেশ গুলিকে নিজেদের জীবনে অনুসরণ কিংবা প্রয়োগ করা। বন্ধুরা আমরা যদি শুধুমাত্র এই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার জ্ঞান জেনে থাকি, কিন্তু জানা সত্বেও নিজের জীবনে প্রয়োগ না করি - তাহলে সে ক্ষেত্রে কোনো সুফল আমরা পাব না। আমরা যখন এই জ্ঞান জানার পর নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করবো তখনই আমরা ধর্মের পথে সৎকর্ম করে চলতে পারব এবং সঠিক সিদ্ধান্ত ও বিচার নির্ণয়ে সক্ষম হব।।
আশাকরি বন্ধুরা, আজকের লেখাটি পড়ে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা সম্পর্কে আপনারা কিছু না কিছু নতুন জিনিস অবশ্যই জানতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পরুন - পঞ্চপান্ডবের অন্তিম যাত্রার বৃত্তান্ত আলোচনা || শুধুমাত্র যুধিষ্ঠিরই কেন স্বর্গলাভ করলেন? || Pandava's Journey to Heaven ! CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা