নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
মা কালী হলেন হিন্দু ধর্মের এক অন্যতম দেবী। যার কালো এবং ভয়ংকর রূপের উৎপত্তি হয়েছে - রাক্ষস ও পাপীদের বিনাশ করার জন্য। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী মা সরস্বতী ও মা লক্ষ্মীর সাথে - মা কালী হলো মা দুর্গার তিনটি রূপের মধ্যে একটি। যিনি সব দেবীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। মা কালী হলেন সময় এবং মৃত্যুর দেবী। যাকে চেতনা এবং সময়ের দেবতা মহাকালের স্ত্রী হিসেবেও মানা হয়। এর অর্থ হল শিব নিজে চেতনা ও মহাকালের প্রতীক। আর মা কালী হলেন - শুদ্ধ সৃজনশক্তি। মহাকালীর ইতিহাসের উল্লেখ বিভিন্ন পৌরাণিক এবং তান্ত্রিক হিন্দু শাস্ত্রে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আজ আমরা জানবো - আদি শক্তি, মা মহাকালীর গল্প।
মহাকালী শেষই হল শুরু। কালিকা পুরাণে, একটি কথা বর্ণনা রয়েছে যে, হিমালয় পর্বতে অবস্থিত মতঙ্গ মুনির আশ্রমে সমস্ত দেবতাগণ মহামায়ার স্থিতি করতে পৌঁছান। ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে ভগবতী - দেবী মা দেবতাদের দর্শন দেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কার মন্ত্র পড়ছো?
সেই সময় দেবীর শরীর থেকে কালো পাথরের বর্ণের সমান এক দিব্য নারী বেরিয়ে আসে। ওই মহাতেজস্বিনী নিজেই দেবতাদের হয়ে উত্তর দিলেন যে, এরা আমাকে ডাকছে আমার মন্ত্রই পড়ছে। তিনি কাজলের সমান কালো ছিলেন তাই তার নাম হয় - কালী।
মহাকালী, মা কালীর সবথেকে রৌদ্র রূপ। কলিযুগে তিন দেবতাকে জাগ্ৰত বলা হয়েছে। যারা হলেন হনুমান, কালভৈরব ও মহাকালী। মা কালীর দুই রুপের মধ্যে প্রধান রূপ হিসেবে চিহ্নিত হয় লোকপ্রিয় - চতুহস্ত বিশিষ্ট সশস্ত্র কালীরূপ। আর নাহলে দশ অস্ত্রধারী মহাকালী রূপ। কালীকে মহাকালী রূপে ১০ টি মাথা, দশটি হাত এবং ১০ টি পা বিশিষ্ট দেবী রূপে চিত্রিত করা হয়।
মহাভাগবদ্ অনুসারে, মহাকালী হলেন প্রধান। তারই উগ্র এবং চন্ডীকা দুই রূপের মধ্যে অনেক রূপ ধারণকারী দশটি মহাবিদ্যা রয়েছে। এই ১০টি মহাবিদ্যা সিদ্ধিলাভ করতে সক্ষম। মহাকালীর দশটি রূপকে প্রদর্শিত না করে, এক একটি মুখ্য চিত্র কে দশটি হাতিয়ারের সাথেও প্রদর্শিত করা হয়। যা দশটি মহাবিদ্যাকে বোঝায়।
দেবী মহাকালীর রূপের ব্যাখ্যা কিছুটা এমন - তার শরীর রাতের অন্ধকারের মত কালো, চুল এলোমেলো। তাছাড়া মা কালী গলায় নরমুন্ডের মালা, চোখ সম্পূর্ণ ক্রোধে লাল, আর কখনো কখনো তাঁর মুখ থেকে ছোটো মাথা বের হয়। তার লাল জিভ বাইরে বেরিয়ে থাকে, সে হলো অনন্ত। তাই কোনরকম সীমিত পোশাক তাকে ঢাকতে পারেনা। তাকে অনেক হাতিয়ারের সাথে চিত্রিত করা হয়েছে। নগ্নরূপে মা কালীকে দিগম্বরী বলা হয়। মা কালীর লাল জিভ হল ইচ্ছার প্রতীক। তার সাদা দাঁত যা এই কথার প্রতীক হল যে,আমরা আমাদের জ্ঞান দিয়ে আমাদের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারি। তার দশটি হাতের মধ্যে প্রত্যেকটি হাতে হিন্দু দেবতাদের মধ্যে একজনের শক্তির প্রতিনিধিত্ব হিসাবে কাজ করে। আর প্রত্যেকটি হাতিয়ার কোনো দেবতা অথবা কোনো অনুষ্ঠানের রূপের পরিচয়। এই দশটি হাতের মধ্যে দুটি হাতে - একটি তলোয়ার আর একটি কাটা মাথা ধরে থাকে। তলোয়ার হল ঐশ্বরিক জ্ঞানের প্রতীক ও মানুষের মাথা মানুষের অহংকারকে দেখায়। যা মুক্তি প্রাপ্ত করার জন্য দৈব জ্ঞান দিয়ে হত্যা করা হয়।
মহাকালী হলেন নির্গুন ; ব্রহ্মাণ্ড শেষ হয়ে গেলেও মহাকালী তবুও থেকে যাবে। লোকোপ্রিয় বিশ্বাসের বিবৃতি হল মহাকালী কোনো খারাপের দেবী নয়। মহাকালী কোনো মানুষ বা পশুর বলি চায়না। বাস্তবে কালো রং নিরামিষাশী এবং সমস্ত প্রাণীকে দয়ালুতা শেখায়।
তাহলে বন্ধুরা আজকে মা মহাকালীকে নিয়ে লেখা, কাহিনী এই পর্যন্তই। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো দেখুন - মৃত ব্যক্তির অন্তিম সংস্কারের পর - পেছন ঘুরে তাকাতে নেই কেন? || গরুড় পুরাণ - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা