Breaking

Search Content

Follow Us

রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২

যখন মরতে মরতে কর্ণ জিজ্ঞাসা করলেন - আমার দোষ কি ছিল? || তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন আসল সত্য ! || Suryaputra Karn

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - যখন দান বীর সূর্য পুত্র কর্ণ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করেন যে, তাঁর দোষ কী ছিল? তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কী উত্তর দিয়েছিলেন?


দানবীর সূর্যপুত্র কর্ণ মহাভারতের এক এমন যোদ্ধা যার কথা আজও প্রচলিত রয়েছে। চলুন তাহলে জানা যাক সেই সময়ের সম্পর্কে যখন কর্ন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে কথোপকথন হচ্ছিল। এই সময় সূর্যপুত্র কর্ণ ভগবান কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার জন্ম হতেই আমার মা আমাকে ত্যাগ করে দেন, অবৈধ সন্তান হওয়া কি আমার দোষ ছিল? দ্রোণাচার্য আমাকে শেখাতে চাননি, কেননা আমি ক্ষত্রিয় পুত্র ছিলাম না। যখন পরশুরামের কাছে গেলাম তখন তিনি আমাকে শেখালেন, যখন আমি তার থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত করলাম আর তিনি আমার ব্যাপারে সব সত্যিটা জানলেন তখন তিনি আমাকে অভিশাপ দিলেন যে, যখন আমার ওই বিদ্যার সর্বাধিক প্রয়োজন পড়বে আমি তা ভুলে যাব। কেননা তাঁর অনুসারে আমি ক্ষত্রিয় ছিলাম না। এক গরুর শরীরে আমার তীর ভুল করে গিয়ে লাগে তখন তার প্রভুও আমায় অভিশাপ দেয়, যেখানে আমার কোনো দোষই ছিল না। দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভাতেও আমাকে খুব অপমান করা হয়। অবশেষে মাতা কুন্তী আমাকে আমার জন্মের রহস্য বলেন এবং সেই সময়ও তিনি আমাকে দান হিসেবে তাঁর পুত্রদের বাঁচাতে বলেন। যা কিছু আমি পেয়েছি দুর্যোধনের কাছ থেকেই পেয়েছি, তাহলে আমি যখন তার হয়ে যুদ্ধ করলাম তাতে আমার কোথায় ভুল ছিল? হে বাসুদেব ! 


এই সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উত্তর দেন, হে রাঁধে ! আমার জন্ম কারাগারে হয়। জন্মের আগেই মৃত্যু আমার প্রতীক্ষায় বসে ছিল, যেই রাতে আমার জন্ম হয় সেই রাতেই মাতা পিতার থেকে আমাকে আলাদা করে দেওয়া হয়। আমার মামা কংস আমাকে মারতে চাইতেন‌। তোমার ছোটোবেলা তো খর্গ, রথ, ঘোড়া, ধনুক ও তীরের মাঝে তার শব্দ শুনে কেটেছে। আমি তো গোয়ালের গোশালা পেয়েছি, গোবর পেয়েছি আর যখন দাঁড়িয়ে হাঁটতে না পারতাম তার আগেই অনেক প্রাণঘাতক আক্রমণ আমার পিছনে লেগে ছিল। রাক্ষসদের সাথে লড়াই করতে হয়েছিল যাদের স্বয়ং আমার মামা আমাকে হত্যা করার জন্য পাঠান। কোনো সেনা নয় কোনো শিক্ষা নয় শুধুমাত্র মানুষদের কাছ থেকে কথাই শুনতে হয়েছে যে, তাদের সমস্যার কারণ আমি। তোমার গুরু যখন তোমার প্রশংসা করছিলেন, আমি সেই বয়সে কোনো শিক্ষাই পাইনি। যখন আমার বয়স ১৬ বছর তখন গিয়ে আমি ঋষি সন্দীপনের গুরুকুলে পৌঁছাই। তুমি তোমার পছন্দের কন্যাকে বিয়ে করতে পেরেছো, কিন্তু যে কন্যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম তাকে আমি কখনোই পাইনি। আমার তাকে বিবাহ করতে হয়েছে যার আমার প্রতি চাহিদা ছিল অথবা যাকে আমি রাক্ষসের কাছ থেকে বাঁচিয়েছিলাম। আমার পুরো সমাজকে যমুনার তীর থেকে সরে গিয়ে এক দূর সমুদ্রের তীরে গিয়ে বাস করতে হয়, তাদের জরাসন্ধের থেকে বাঁচানোর জন্য আমায় এমন করতে হয়‌।


হে রাধে ! যদি দুর্যোধন যুদ্ধ যেতেন তাহলে তুমি অনেক সুনাম পাবে, কিন্তু যদি ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির যেতে তাহলে আমি কি পাবো? আমায় কেবল যুদ্ধ এবং যুদ্ধ থেকে তৈরি হওয়ার সমস্যার জন্য দোষ দেওয়া হবে, আমাকে অনেক অভিশাপ সহ্য করতে হবে, মায়েদের কষ্টের আহ্বান করতে হবে। নিজের মানুষদের থেকেই আমাকে দূর হতে হবে। একটি কথা মনে রাখবে রাধে, সবাইকেই জীবন একটি সুযোগ দেয়, জীবন কারো সাথেই অন্যায় করে না। দূর্যোধন অন্যায়ের মোকাবিলা করেছেন তো যুধিষ্ঠিরও অন্যায় সহ্য করেছে। কিন্তু, সত্য ধর্ম আসলে কি সেটা তুমি ভালোভাবেই জানো।


কোনো ব্যাপার নয়, সে তুমি যতই অপমান হও বা যা আমাদের অধিকার তা যদি আমার না পাই তাহলে সেটা কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু, গুরুত্ব এই কথার যে তুমি সেই সময় সেই সংকটের মোকাবিলা কিভাবে করতে আর যদি তুমি সেই সংকটের মোকাবিলা করে নিতে, তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না রাধে। এই কারণে কান্নাকাটি বন্ধ করো। হে রাধে ! জীবন কখনোই অন্যায় করে না, এর কারণ এই নয় যে তোমাকে অধর্মের পথে চলার অনুমতি দেওয়া হবে, আজ তোমার বধ্ নিশ্চিত তাও আবার অর্জুনের হাতে। 


এই সময় কর্ণ দ্বিতীয় বার শ্রীকৃষ্ণ কে জিজ্ঞাসা করেন, আমি মৃত্যুর জন্য তৈরি কিন্তু আমার সামর্থের কী হবে? তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন এটা ভাবো যে, তোমায় ছল করে হত্যা করা হচ্ছে রাধে ! এর থেকে বড় সামর্থ্য আর কি হতে পারে। তোমার রথ ওই ভূমিতে আটকে গেছে তার চাকা তোমায় বার করতেই হবে হে রাধে ! এটি কালচক্রের নিয়ম, সেই সময় ছলপূর্বক অর্জুনের অস্ত্র দিয়ে তোমাকে বধ করতেই হবে। রাধে ! এখান থেকেই ধর্মের বীজ বপন হবে। আর ধর্মের জন্য এসব করতেই হবে রাধে। এই কারণে এখন যত তুমি কান্নাকাটি করছো তা সব বন্ধ করো, তোমার সামর্থ্য এই দুনিয়া জানে। আর ভবিষ্যতে যে যুগ আসবে তাতে তোমার নাম সবার মুখে মুখে থাকবে, সূর্যপুত্র দানবীর মহারথী কর্ণ।


তাহলে বন্ধুরা আশাকরি আজকের লেখা আপনাদের ভালো লেগেছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর কর্ণের এই খাস কথোপকথন। লেখাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।


নমস্কার। ভালো থাকবেন।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন - এই যোদ্ধাকে কেন ভয় পেতেন ভগবান কৃষ্ণ? || কেউ জানে না আসল সত্য || Mahabharat stories CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা