নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো - মহাভারতের এক এমন বীর যোদ্ধা যাকে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণও ভয় পেতেন। তাহলে কে ছিল মহাভারতের সেই সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা? যাকে দেখে এক পলকের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরও ঘাম বের হয়েছিল !
চলুন তাহলে আজকের এই লেখার মাধ্যমে তা জানা যাক।
মহাভারতের যুদ্ধ যেখানে অনেক যোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেছিলেন সবাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের থেকে কম ক্ষমতাশালী ছিল। কিন্তু, তাদের মধ্যে এক এমন যোদ্ধা ছিল যাকে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভয় পেতেন। তাহলে কি সে সূর্যপুত্র দানবীর কর্ণ ছিল? না। তাহলে কি সে গান্ধীব ধনুকধারী অর্জুন ছিল? না। তাহলে কি সে বায়ুপুত্র ভীম ছিল? না। তবে কি সে ইচ্ছামৃত্যু বরদান পাওয়া ভীষ্ম পিতামহ ছিলেন? একদমই নয়।
তাহলে কে ছিল সেই যোদ্ধা? যাকে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভয় পেতেন!
আসলে সে আর কেউ নয়, মহাভারতের যুদ্ধকে তিনবারের মধ্যে সমাপ্ত করে দেওয়ার সামর্থ্য রাখা ভীম পুত্র ঘটোৎকচ্ ও আহিলাবতী অর্থাৎ নাগ কন্যার পুত্র "বারবারিক" ছিলেন। এখন আপনারা বলবেন যে বারবারিক কি সত্যিই এতো শক্তিশালী ছিল ! যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং তাকে ভয় পেতেন। তাহলে আপনারা একদম ঠিকই বুঝেছেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক পলকের জন্য তাকে ভয় পেয়েছিলেন। তার পেছনের কারণ আসুন আপনাদের জানাই।
বারবারিক ছোটবেলা থেকেই অনেক শক্তিশালী ছিল। আর কেনই বা হবে না, যার ঠাকুরদা স্বয়ং ভীম ছিলেন যার পিতা স্বয়ং মায়াবী ঘটোৎকচ, তাহলে সে তো শক্তিশালী হবেই। বারবারিক ছোটবেলাতেই ভগবান বাল্মিকীর তপস্যা করে তাকে প্রসন্ন করেছিলেন। যার কারনে তিনি বারবারিক কে তিনটি তীর এবং একটি ধনুক দিয়েছিলেন। এই তীর তার লক্ষ্যকে ভেদ করে পুনরায় ফিরে আসত। এই তীর এত শক্তিশালী ছিল যে, তিন লোকেই বিজয় প্রাপ্ত করা যেত। এই তীরের কারণেই বারবারিককে তিন তীরধারী বলা হয়ে থাকে। তার মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা সে পেতে থাকে আর সে যুদ্ধে সব সময় সেনাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো।
মহাভারত যুদ্ধের ব্যাপারে আপনারা তো শুনেছেনই, যখন মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হয় তখন বারবারিকও তার মাতা আহিলাবতীর থেকে অনুমতি নেয়। তারপর বীর বারবারিক ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়ে পড়ে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দিব্য দৃষ্টি দিয়ে এসব দেখে নেন যে, স্বয়ং তিন তীরধারী ঘটোৎকচপুত্র বারবারিক আসছে। তিনি তাড়াতাড়ি এক ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে নেন আর বীর বারবারিকের সামনে হাজির হয়ে পড়ে। বারবারিককে সামনে দেখে আচমকাই সে হাসতে থাকে। বারবারিক যখন হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করে তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, হে বালক ! শুধুমাত্র তিনটি তীর আর তাও আবার শুধুমাত্র এই তিনটি তীর দিয়ে যুদ্ধ লড়বে। এই কথার উত্তরে বারবারিক বলেন, হে দেব ! পুরো যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য তো এর একটি তীরই যথেষ্ট, যদি তিনটে তীরই চালিয়ে দেই তাহলে তো তিন লোকেই ধ্বংসলীলা শুরু হয়ে যাবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখনই বলেন, আচ্ছা ! যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে যেই পিপল গাছের নীচে আমরা দাঁড়িয়ে আছি এর সমস্ত পাতাকে একটি তীর দিয়ে ভেদ করে দেখাও। এই কথা শুনেই, বারবারিক তীরগুলিকে লক্ষ্যে রেখে একটি তীর চালিয়ে দেয়। তীরটি কিছু সময়ের মধ্যেই পাতাগুলোকে ভেদ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পায়ের কাছে উড়তে থাকে। এই দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণও এক পলকের জন্য চমকে যায় যে এই তীর তাঁর পায়ের কাছে কেন উড়ছে ! আসলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পিপুল গাছের একটি পাতা তাঁর পায়ের নীচে লুকিয়ে রাখে। তখন বারবারিক তাঁকে অনুরোধ করে যে তাঁর পা সরিয়ে নিতে না হলে শ্রীকৃষ্ণের ক্ষতি হতে পারে। কেননা সে তার তীরকে শুধুমাত্র পাতা গুলিকে ভেদ করার অনুমতি দিয়েছে, না কারোর পা-কে ভেদ করার।
সেই সময় ধরুন যে, আকাশে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং অবাক এবং চিন্তিত হয়ে পড়ে। তিনি তার দিব্যদৃষ্টি দিয়ে এই সমস্ত কিছু জেনে গিয়েছিলেন যে, সে হেরে যাওয়া সেনাদের হয়েই যুদ্ধ লড়বে। যদি এই সময় কৌরবের সেনারা হারতো তাহলে সে কৌরবের সেনাদের হয়ে যুদ্ধ লড়তো। আর এই কারণে পান্ডবদের বিনাশ নিশ্চিত ছিল আর যদি পাণ্ডবরা হারতো তাহলে সে কৌরব সেনাদের বিনাশ করে দিত আর এই ভাবেই পুরো মহাভারতে যতো সেনা থাকতো তাদের সবাইকে সে একাই হারিয়ে দিত। এই সময় মহান বারবারিকের কাছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং তার মস্তক চায়। আর সেও হাসতে হাসতে তার মাথা কৃষ্ণ রুপি ওই ব্রাহ্মণকে দান করে দেয়।
তাহলে এই ঘটনা থেকে বলা যায় যে - যখন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভয়ভীত, অবাক ও চিন্তিত হয়ে পড়েন, তাহলে এর অর্থ এটাই যে মহাভারতের সব থেকে ভয়ংকর আর সব থেকে মাহাত্ম্যপূর্ণ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা আর কেউ নয় বরং তিন বানধারি বারবারিকই ছিল।
আশাকরি আজকের লেখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর লেখাটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
নমস্কার। ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন - শ্রীলঙ্কায় পাওয়া গেল - জীবন্ত রাবণ || Ravana 10000 Years old Mummy Found? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা