Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২

শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বললেন - যুধিষ্ঠির ও কর্ণের মধ্যে কে সবথেকে বেশি দানি? || Untold story of Danvir Karna



 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


আজকের এই লেখাটিতে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - শেষ পর্যন্ত কেনো ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিতে হয়েছিল সূর্যপুত্র দানবীর কর্ণ ও ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের দানশীলতার পরীক্ষা এবং শেষে এই পরীক্ষায় কে বিজয়ী হয়েছিল? সূর্যপুত্র কর্ণ নাকি যুধিষ্ঠির? 


একসময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে - অসুর বালির দানশিলতার ব্যাপারে বলেন যে, কিভাবে তিনি ভগবান বামনকে তিন ভাগ ভূমি দান করেছিলেন। বালির দানশীলতার ব্যাপারে জানার পরে হঠাৎ করে অর্জুনের মনে এক প্রশ্ন আসে তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেন, হে মাধব ! বালির মতন কোনো দ্বিতীয় দানি ব্যক্তি কি এই পৃথিবীতে আছে ? অর্জুনের এই প্রশ্ন শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে বলেন, বালির মতো শুধুমাত্র একজন দানি এই পৃথিবীতে রয়েছে। আর সে হল - দানবীর কর্ণ।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে কর্ণের প্রশংসা শুনে অর্জুনের খুবই রাগ হয়, আর তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলেন, মাধব আপনি কর্ণের একটু বেশিই প্রশংসা করছেন। আমাদের বড়ো ভাই যুধিষ্ঠিরও একজন বড় দানি আর তিনি ইন্দ্রপ্রস্থের সম্রাট। তার কাছে এত ধন-সম্পত্তি রয়েছে যে, সে যদি জীবন ভর তা দান করে তাহলেও তার কোনো কিছুই কখনো শেষ হয়ে যাবে না। অর্জুনের কথা শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হেসে বলেন, তাহলে চলো পার্থ আজকে এই দুজনের পরীক্ষা নেওয়া যাক। আর জানা যাক যে, কে সবথেকে বড়ো দানবীর তাদের দুজনের মধ্যে। এই কারণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর অর্জুন মিলে ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করেন আর দুজনেই যুধিষ্ঠিরের মহলের কাছে পৌঁছায়। 


আমরা সবাই জানি যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একজন কত বড়ো জ্ঞানী আর তার সাথে জড়িত এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যা অনেক মানুষ জানে, আর কিছু অজানাও রয়েছে।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর অর্জুন ব্রাহ্মণের রূপ ধরে যুধিষ্ঠিরের মহলে গিয়ে পৌঁছায়। যখন যুধিষ্ঠির তার সামনে দুই ব্রাহ্মণকে দেখলেন তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, হে ব্রাহ্মণ ! আমি আপনাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারি ? এরকম সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন তিনি যুধিষ্ঠির কে বলেন যে, তার একটি মন সুখী করা চন্দন কাঠ চাই। তখন যুধিষ্ঠির তার সেবকদের বলেন যজ্ঞের জন্য যে কাঠ রাখা হয়েছে তা নিয়ে এসে এই ব্রাহ্মণদের দিয়ে দাও। যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বলেন এই কাঠ যজ্ঞ সংকল্প করার জন্য রাখা হয়েছে, আর আমি তা একদমই গ্রহণ করতে পারি না। এই কথা শুনে যুধিষ্ঠির চিন্তায় পড়ে যান, যে এখন তো বাইরে বৃষ্টি পড়ছে এই পরিস্থিতিতে তিনি কিভাবে শুকনো চন্দন কাঠের ব্যবস্থা করবে। এই কথা চিন্তা করে যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণরূপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলেন, এখনতো চারিদিকে বর্ষা কোনো শুকনো চন্দন কাঠ আপনি পাবেন না। আপনি যদি চান তাহলে তার বদলে আপনি অন্য যা কিছু চাইতে পারেন। কিন্তু, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন শুধুমাত্র শুকনো চন্দন কাঠই তার চাই, আর সেটাও এই সময়ই। তারপর যুধিষ্ঠির যখন তা জানতে পারে তখন তিনি বলেন যে, সে আজ এই দান করতে পারবেন না, আর তিনি এই কারণে ব্রাহ্মণের কাছে ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।


ব্রাহ্মণ রূপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন হাসছিলেন আর অর্জুন সম্পূর্ণ অবাক হয়ে যান। কিন্তু, তারপর তাদের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল দানবীর কর্ণের প্রতি।


ব্রাহ্মণ রুপি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্ণের থেকে ওই একই দান চান যা তিনি যুধিষ্ঠিরের কাছে চেয়েছিলেন, আর এইবারও তিনি সেই একই শর্ত রাখেন যে, যজ্ঞের জন্য রাখা কাঠ সে নেবে না। সেই সময় অঙ্গরাজ কর্ণ তাদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলেন। অর্জুনও তখন চিন্তায় পড়ে যায় যে আসলে কর্ণ, যে শুধুমাত্র তার তীর ধনুক নিয়ে এসেছে এখন সে কোন দিব্য অস্ত্র প্রয়োগ করবে। যার কারণে ভেজা কাঠও শুকিয়ে যাবে ! যদি সে আগ্নেয় অস্ত্রের প্রয়োগ করে তাহলে সম্ভবত কাঠগুলি সম্পূর্ণ জ্বলে যাবে, এইভাবে সে তা কী করে দান করবে!


কিছু সময়ের মধ্যেই অঙ্গরাজ কর্ণ তার মহলের মুখ্য দরজাকে কেটে ফেলেন যা চন্দন দিয়ে তৈরি হয়েছিল, দেখতে দেখতেই সেখানে অনেক কাঠের যোগান পাওয়া গেল। এসব দেখে অর্জুনও অবাক হয়ে যান। তখন শ্রীকৃষ্ণ কর্ণকে বলেন, অঙ্গরাজ আমি এই কাঠগুলিকে স্বীকার করতে পারব না। কেননা, অনেক মানুষের স্পর্শে এই দরজা অপবিত্র হয়ে গেছে। এই সময় কর্ণ প্রথমে ভাবনা চিন্তা করতে থাকে আর তারপরে কর্ণ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার কক্ষে নিয়ে যান সেখানে সে তার শয্যাকে অর্থাৎ যেখানে তিনি বিশ্রাম করতেন সেটিকে সম্পূর্ণ কেটে ফেলেন সেটিও চন্দন কাঠের তৈরি ছিল এবং সেখানে অনেক কাঠের জমাট বেঁধে যায়। এইবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বলার আগেই অঙ্গরাজ কর্ণ বলেন, আমার দিব্য কবচ আর কুন্ডলের কারণে এখনো পর্যন্ত এই কাঠগুলি অপবিত্র হয়নি, আপনি এগুলিকে স্বীকার করুন। 


কিন্তু পুনরায় কর্ণের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্ণকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি আমি এটিও নিতে অস্বীকার করি তখন আপনি কি করবেন অঙ্গরাজ কর্ণ? তখন অঙ্গরাজ কর্ণ উত্তর দেন যে, তিনি দেবতাদের কাছে তার সমস্ত পুণ্যের পরিবর্তে তাদের জন্য চন্দন কাঠ চাইবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন যদি দেবতারা আপনাকে কাঠ দিতে না করে দেয় তাহলে? তখন কর্ণ বলেন আমি আমার বিজয় ধনুক, তীর এবং আমার সমস্ত দিব্য অস্ত্র দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে যাব, আর তার পরিবর্তে আপনার জন্য চন্দন কাঠের ব্যবস্থা অবশ্যই করব। 


কর্ণের এইরকম দানশীলতাকে দেখে অর্জুন সম্পূর্ণরূপে অবাক হয়ে যান। তার এই অবস্থা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে বলেন, পার্থ এখন তো তুমি অবশ্যই বুঝতে পেরেছো যে, আমি সব সময় কেন কর্নকে সবচেয়ে বড়ো দানবীর মনে করি। চন্দনের দরজা হোক অথবা চন্দনের সজ্জা, সেসব তো যুধিষ্ঠিরের কাছেও ছিল ; কিন্তু দান করার সময় তার এসবের স্মরণ হয়নি। যুধিষ্ঠির অবশ্যই দানি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কর্ণ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো দানবীর আর এটা সত্যি। 


এই দানবীরতার কারণে, কর্ণের বধ্ও হয়েছিল। দেবরাজ ইন্দ্র যখন তার কবচ আর কুন্ডল চেয়েছিলেন তখন তা দান করা, মাতা কুন্তিকে এই বচন দেওয়া যে, সে অর্জুনকে ছাড়া বাকি চার পাণ্ডবকে হত্যা করবেন না, এইসবও ছিল তার দানবীরতার কাহিনী।


আজকের লেখা এ পর্যন্তই। আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।।


আরো পড়ুন:- গরুড় পুরাণের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি কথা - যা মনে রাখলে কখনো বিপদে পড়বেন না।CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা