নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
মহাভারত যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর পান্ডবরা ৩৬ বছর পর্যন্ত হস্তিনাপুরে রাজ করেছে। তারপরে বিভিন্ন রকমের ভয়ংকর অশুভ ঘটনা ঘটতে শুরু করলো। ভগবান কৃষ্ণ গান্ধারী থেকে যে অভিশাপ পেয়েছিলেন এবং তার পুত্র ঋষিদের থেকে যে অভিশাপ পেয়েছিল তার কারণে যদুবংশ একে অপরের সাথে লড়াই করে ধ্বংস হয়ে গেছিল। তারপর বলরাম সমাধি ধারণ করে নিজের প্রাণ ত্যাগ করে। তারপর এক শিকারীর দ্বারা চালানো তীরে শ্রীকৃষ্ণও প্রাণ ত্যাগ করেন। এই কথা যখন পান্ডবরা শোনেন তখন তারা দ্রৌপদীকে বলে পরলোক যাওয়ার নির্ণয় নেয়। আর তারপরে তাদের শরীর পরলোক যাওয়ার জন্য প্রস্থান করে। কিন্তু, বন্ধুরা আপনারা কি জানেন এই যাত্রা যুধিষ্ঠির কে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে পার হতে হয়েছে, যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বন্ধুরা আপনাদের বলে দেই যে স্বর্গ যাত্রা সময় বেরোনোর আগে যুধিষ্ঠির ইউউৎসু কে ডেকে তাকে সমস্ত রাজ্যের দেখভাল করার ক্ষমতা দান করে দেন এবং অভিমুন্যের পুত্র পরীক্ষিতের রাজ্যভিষেক করে দেন। এরপরে দ্রৌপদী এবং পাণ্ডবরা সাধুদের বস্ত্র ধারণ করে আর স্বর্গ যাত্রার জন্য বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু, হস্তিনাপুর থেকে বেরোনোর পরে রাস্তায় একটি কুকুরও তাদের পেছনে পেছনে চলতে থাকে ; এই দৃশ্য দেখে অর্জুন, ভীম, নকুল ও সহদেব খুবই আশ্চর্য হলেন। তখন যুধিষ্ঠির তাদেরকে বলেন এটি আমার প্রভুভক্ত কুকুর। তারপর পাঁচ জন পাণ্ডব সহ দ্রৌপদী অনেক তীর্থ নদী আর সমুদ্রের যাত্রা করতে করতে আগে এগোতে থাকে। তারপর একদিন তারা সবাই যেতে যেতে লাল সাগর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কিন্তু, যাত্রা শেষ হওয়ার সময়ও অর্জুন তার গান্ডীব ধনুকের লোভ ত্যাগ করতে পারেনি, যে কারণে লাল সাগরের কাছে অগ্নিদেব প্রকট হন আর তিনি অর্জুন কে গান্ডীব ধনুক ত্যাগ করতে বলেন। তখন অর্জুনকে না চাইতেও ওই তীর আর ধনুক, জিনিস দুটি ত্যাগ করতে হয়েছিল। তারপর পান্ডবরা পৃথিবীর পরিক্রমণ পূর্ণ করার ইচ্ছায় উত্তর দিক থেকে যাত্রা শুরু করেন, এইভাবে যাত্রা করতে করতে পাণ্ডবরা হিমালয় পর্যন্ত পৌঁছে যান। যেখানে তাদের কেদারনাথের শিবের দর্শন হয় আর তারা বন্ধু-বান্ধবদের ও ভাতৃ হত্যা করার পাপ থেকে মুক্তি পান। তারপর ভগবান শিব তাদেরকে স্বর্গের রাস্তা বলে দিয়েছিলেন, এরপর পান্ডবরা আগে এগোতেই বালিভরা সমুদ্র দেখতে পায়। তারপর তারা সুমেরু পর্বতের দর্শন করেন, তার পরেও সবার শরীর স্বর্গের দিকে এগোতে থাকে। তখনই ইন্দ্রদেব সেখানে প্রকট হন, তিনি পান্ডবদের বলেন আমি তোমাদেরকে নিতে এসেছি তখন যুধিষ্ঠির বলেন প্রভু ক্ষমা করবেন আমরা আপনার সাথে স্বর্গে যেতে পারবো না। কারণ আমরা সবাই মানুষ আর আমাদের নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করেই স্বর্গে যেতে হবে। যুধিষ্ঠিরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে দেবরাজ ইন্দ্র প্রসন্ন হন এবং সেখান থেকে চলে যান। এরপর পাঁচজন পান্ডব, দ্রৌপদী এবং সেই কুকুরটিও খুবই দ্রুত গতিতে আগে এগোচ্ছিল, তখনই দ্রৌপদী কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যান। তা দেখে ভীম যুধিষ্ঠির কে বলেন দ্রৌপদী তো কখনও কোনো পাপ করেনি তাহলে কোন কারণে সে সবার প্রথমে নিচে লুটিয়ে পরলো?
তখন যুধিষ্ঠির বলেন, দ্রৌপদী আমাদের সবার মধ্য থেকে অর্জুনকে বেশি ভালবাসতেন এই কারণে তার সাথে এমন হলো। এরকম বলে যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে না দেখেই আগে এগিয়ে গেলেন। এর কিছুক্ষণ পর সহদেবও নিচে লুটিয়ে পড়ে তখন ভীম পুনরায় যুধিষ্ঠিকে সহদেবের পড়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেন ; তার উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেন যে, সহদেব কাউকেই তার মত বিদ্বান, বুদ্ধি জ্ঞান সম্পন্ন ভাবতেন না। এই দোষের কারণেই তাকে আজ নিচে পড়ে যেতে হল। এইভাবে কিছুক্ষণ পর নকুলও পড়ে যায় পুনরায় ভীমের জিজ্ঞাসা করায়, যুধিষ্ঠির বলেন যে নকুল তার রূপ নিয়ে খুব অহংকার দেখাতেন এই কারণে আজ তার সাথে এমন হলো। এইসব হওয়ার কিছুক্ষণ পর অর্জুনও পড়ে যান ! এই দেখে যুধিষ্ঠির ভীমকে বলেন যে, অর্জুনের তার পরাক্রমণের ওপর অহংকার ছিল। অর্জুন মনে করতেন যে তিনি একদিনেই সমস্ত শত্রুকে বিনাশ করে ফেলতে পারে। কিন্তু, সে কখনও তা করতে পারেনি। আর এই অহংকারের কারণেই অর্জুনের আজ এই পরিস্থিতি। এই বলে যুধিষ্ঠির আগে এগোতে থাকেন, তারপর কিছুটা এগোনোর পরে ভীমও নিচে পড়ে যান। যখন ভীম যুধিষ্ঠিরকে তার নিচে পড়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে তখন তিনি বলেন তুমি খুব খেতে আর তোমার শক্তির মিথ্যে পরিদর্শন করতে এই কারণে তোমাকে আজ মাটিতে পড়ে যেতে হয়েছে। এই কথা বলে যুধিষ্ঠির আগে এগোতে থাকে। এখন শুধু মাত্র রয়েছে সেই প্রভুভক্ত কুকুর যে তার সাথে যাচ্ছিল। কিছু দূর যাওয়ার পরেই যুধিষ্ঠির ওই কুকুরের সাথে স্বর্গের দরজায় প্রবেশ করে। যেখানে ধর্মরাজ তাকে এই কথা বলে আটকে দেন যে যুধিষ্ঠির তোমার সাথে এই কুকুর স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে না। ধর্মরাজের কথা শুনে যুধিষ্ঠির বলেন এই কুকুর আমার পরম ভক্ত এই কারণে একেও আমার সাথে স্বর্গে যাওয়ার অনুমতি দিন। কিন্তু, ধর্মরাজ - না করে দেয়। কিন্তু অনেক সময় ধরে বোঝানোর পরেও যুধিষ্ঠির যখন কুকুরটিকে ছাড়া স্বর্গ যাওয়া জন্য রাজি না হন, তখন কুকুররুপি যমরাজ তার বাস্তব রূপে ফিরে আসেন।
বন্ধুরা আপনাদের বলে দেই যে, যুধিষ্ঠির সমস্ত রাস্তায় যাকে প্রভু ভক্ত কুকুর ভেবেছিল বাস্তবে সেই কুকুরটি হল মৃত্যুর দেবতা যমরাজ ছিলেন।
যুধিষ্ঠিরকে তার ধর্মে স্থির দেখে যমরাজ খুবই প্রসন্ন হন। এরপর ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে তার সাথে স্বর্গে নিয়ে যান। কিন্তু, স্বর্গে পৌঁছে যুধিষ্ঠির এটি দেখে খুবই অবাক হন যে সেখানে দুর্যোধন এক দেব দিব্য সিংহাসনে বসে আছেন, যেখানে তার সাথে তার চার ভাই এবং দ্রৌপদী নেই। তখন যুধিষ্ঠির দেবতাদের বলেন, আমার ভাই তথা দ্রৌপদী যে লোকে গেছে আমিও সেখানে যেতে চাই। আমি তাদের থেকে ভালো লোকে থাকতে চাই না। তখন দেবতারা বলেন যদি আপনার এরকমই ইচ্ছা হয় তাহলে আপনি এই দেবদূতের সাথে চলে যান, ইনি আপনাকে আপনার ভাইদের কাছে পৌঁছে দেবে। যুধিষ্ঠির তখন ওই দেবদূতের সাথে চলে যান। তারপরে ওই দেবদূত যুধিষ্ঠির কে এমন রাস্তায় নিয়ে যায় যা খুবই দুর্গম এবং খারাপ ছিল। ওই রাস্তার চারিদিকে ছিল ঘোর অন্ধকার, চারিপাশে সারি সারি লাশের পাহাড় দেখা যাচ্ছিল। যা থেকে দুর্গন্ধ আসছিল, তাছাড়া লোহার চঞ্চুযুক্ত কাকউড়ে বেড়াচ্ছিল। সেটি ছিল অসিপত্র নামক নরক। সেখানের দুর্গন্ধে বিরক্ত হয়ে যুধিষ্ঠির দেবদূত কে জিজ্ঞাসা করেন, আমাদের এই পথে আর কতদূর যেতে হবে, আর আমার ভাইয়েরা কোথায় আছে?
যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে দেবদূত বলেন, দেবতারা বলেছিলেন যখন আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। যদি আপনি ক্লান্ত হয়ে যান তাহলে চলুন আমরা পুনরায় ফিরে যাই। যুধিষ্ঠির এরকম করারই নির্ণয় নেন। কিন্তু, যখন যুধিষ্ঠির পুনরায় ফিরতে থাকে তখন তিনি দুঃখী মানুষদের আওয়াজ শুনতে পান, তারা যুধিষ্ঠির কে বারবার সেখানে আরও কিছুক্ষণ থাকার জন্য অনুরোধ করছিলেন। ওই করুন আওয়াজ শুনে যুধিষ্ঠির যখন তাদের কাছে তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন তখন তারা কর্ণ, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব এবং দ্রৌপদীর রূপে তাদের পরিচয় দেয়। তখন যুধিষ্ঠির ওই দেবদূতদের বলেন যে তুমি পুনরায় দেবতাদের কাছে ফিরে যাও আমার এখানে থাকার কারণে যদি আমার ভাইয়েরা সুখী হয় তাহলে আমি এই দুর্গম স্থানেই থাকবো। এরপর দেবদূত গিয়ে এই কথা দেবরাজ ইন্দ্র কে বলে। তারপর কিছু সময় পরে সমস্ত দেবতা যুধিষ্ঠিরের কাছে যান, দেবতাদের আশাতে সেখানে সুগন্ধিত হাওয়া চলতে থাকে চারিদিক আলোকিত হয়ে যায়। এইসব দেখে যুধিষ্ঠির দেবতাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, হে দেবগন ! আমাকে প্রথমে এটা বলুন যে এসব কি?
তখন দেবরাজ ইন্দ্র যুধিষ্ঠির কে বলেন যে, তুমি অশ্বত্থমার মৃত্যুর কথা বলে ছল করে দ্রোণাচার্যকে বধ করিয়েছিলে। এই পরিনামের কারণে তোমাকেও ছলস্বরুপ কিছু সময়ের জন্য নরকের দর্শন পেতে হয়েছে। এখন তুমি আমাদের সাথে স্বর্গে চলো সেখানে তোমার ভাই ও অন্যান্য বীরেরা অনেক আগেই পৌঁছে গেছেন। তারপর দেবরাজ ইন্দ্রের কথা শুনে যুধিষ্ঠির গঙ্গায় স্নান করেন, স্নান করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মানব শরীর ত্যাগ করে দেবশরীর ধারণ করে নেন। এরপর অনেক মহর্ষি তার আহ্বান করতে করতে তাকে সেই স্থানে নিয়ে যান যেখানে তার চার ভাই আনন্দপূর্বক বিরাজমান ছিলেন। তারপর যুধিষ্ঠির সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন করেন, তারপর তিনি দেখেন যে সেখানে অর্জুন তার সেবা করছে। যুধিষ্ঠির কে আসতে দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন তাকে স্বাগত জানান। এরপরে যুধিষ্ঠির দেখেন যে ভীম আগের মত শরীর ধারণ করে বায়ুদেবের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্যদিকে কর্ণকে সূর্যের সমান স্বরূপ ধারণ করতে দেখন। আর নকুল ও সহদেবকে অশ্বিনী কুমারের সাথে দেখেন। তারপর দেবরাজ ইন্দ্র যুধিষ্ঠিরকে বলেন এই যে সাক্ষাৎ ভগবতী লক্ষ্মী দেখতে পারছো এর অংশ থেকেই দ্রৌপদীর জন্ম হয়েছিল। এরপর দেবরাজ ইন্দ্র মহাভারত যুদ্ধে মারা যাওয়া সমস্ত বীরদের ব্যাপারে যুধিষ্ঠির কে বিস্তারিত করে বলেন। এইভাবে যুধিষ্ঠির তার ভাই এবং তার সম্বন্ধীদের সেখানে দেখে খুবই প্রসন্ন হয়।
তাহলে বন্ধুরা আশাকরি যে আপনাদের মহাভারতের সাথে যুক্ত এই কথাগুলি খুবই ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পরুন - শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে, ক্রোধ বা রাগ কি? কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়? || কেনই বা মানুষ রাগ হয়ে থাকে? || Bhagwat Geeta : How to handle Anger? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা