Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০২২

অর্জুনের মৃত্যু দেখে - কেন হাসলেন দেবী গঙ্গা ? || Why Devi Ganga smiled at Arjuna's Death?



 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা আমরা সবাই যা জানি, মহাভারতের সবথেকে বড়ো ধনুকধারী হিসাবে অর্জুনকে মানা হয়। আর এটাও মানা হয় যে, তার যুদ্ধ কৌশলের কারণে সেই অজয় অর্থাৎ অর্জুনের সাথে যুদ্ধে কেউ জয়ী হতে পারত না। কিন্তু, আজকে আমি আপনাদের এমন একটি কাহিনী বলবো যেখানে অর্জুন না শুধু হেরেছিল বরং তার মৃত্যুও হয়েছিল। তাহলে চলুন বন্ধুরা, জেনে নেওয়া যাক যে, কে ছিলেন সেই মহান যোদ্ধা যে না শুধু অর্জুনকে হারিয়েছিল বরং তাকে নিহত করেছিলেন, যা দেখে দেবী গঙ্গা খিল খিল করে হেসেছিল !! 


বন্ধুরা এই কাহিনীটি হল সেই সময়ের যখন মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পরে যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরের রাজা বানানো হয়। তার কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের বলায় যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু করে। কৃষ্ণের আজ্ঞা অনুযায়ী, যজ্ঞের ঘোড়া যেখানে যেখানে যেত অর্জুন তার সেনা নিয়ে তার পিছনে পিছনে যেত। এইভাবে যোগ্যের ঘোড়া বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে দিয়ে পার হয়, যার মধ্যে কিছু কিছু রাজ্যের রাজা অর্জুনের সাথে যুদ্ধ না করেই হস্তিনাপুরের অধীনতা স্বীকার করে নেয়। আর যে এরকম করেনি তাকে অর্জুন যুদ্ধে পরাস্ত করে নিজের অধীনে করে নেয়। এইভাবে অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্ব একদিন মনিপুরে পৌঁছায়। ওই সময় মনিপুরের রাজা ছিল অর্জুন আর চিত্রাঙ্গদার পুত্র বভ্রূবাহন। বভ্রূবাহন যখন শোনে যে, তার পিতা অর্জুন তার রাজ্যে প্রবেশ করেছে তখন সে তাঁর সম্বোধনের জন্য রাজ্যের সীমায় গিয়ে পৌঁছায়। তখন সে তার পিতা অর্জুনকে দেখেই, তাঁর সম্মোধনের জন্য এগিয়ে যায় কিন্তু অর্জুন তাকে সেখানেই থামিয়ে দেন। অর্জুন বভ্রূবাহনকে বলেন আমি এই সময় তোমার পিতা নই বরং হস্তিনাপুর একজন প্রতিনিধি, এই কারণে ক্ষত্রিয় ধর্ম অনুসারে তুমি এই সময় আমার সাথে যুদ্ধ করো। ওই সময় অর্জুনের দ্বিতীয় স্ত্রী উলুপী সেখানে চলে আসে আর বভ্রুবাহনকে বলেন, হে পুত্র ! তোমার এখন উচিত তোমার পিতার সাথে যুদ্ধ করা। যদি তুমি যুদ্ধ না কর তাহলে তোমার পিতাকে অপমান করা হবে। মায়ের অনুমতি পেয়েই বভ্রুবাহন যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে যায়। এরপর অর্জুন আর বভ্রুবাহনের মধ্যে ঘোড় যুদ্ধ হয়। কিছুদিন পর্যন্ত যুদ্ধ চলার পরে যখন কোনো পরিণাম বের না হয় - তখন বভ্রুবাহন কামাখ্যা দেবীর থেকে প্রাপ্ত দিব্য বান দিয়ে অর্জুনের ওপর নিক্ষেপ করে, যার নিক্ষেপে অর্জুনের মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায়। তা দেখে হস্তিনাপুরের সেনাদের মধ্যে হইচই শুরু হয়ে যায় কারণ যুদ্ধে বভ্রুবাহন অর্জুনের আগে ভীমকেও পড়াস্ত করে দিয়েছিল।


এখানে এই কথা যখন শ্রীকৃষ্ণ জানতে পারে তখন তিনি তৎক্ষণাৎ দ্বারকা থেকে মণিপুরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। সেখানে অর্জুনের মাতা কুন্তী, অর্জুনের মৃত্যুর কথা শুনে মনিপুরের জন্য বেরিয়ে পড়েন। মনিপুর পৌঁছে অর্জুনকে মাটিতে পড়া দেখে শ্রীকৃষ্ণ খুব বড়ো ধাক্কা পান। তখন শ্রীকৃষ্ণ দেখেন দেবী গঙ্গা অর্জুনের মৃত্যুতে হাসছেন। এই সময়ে কুন্তীও সেখানে পৌঁছে যান আর নিজের সন্তানের মৃতদেহকে কোলে রেখে দুঃখ করতে থাকেন। কুন্তীকে দুঃখ করতে দেখে দেবী গঙ্গা থাকতে পারেননি, আর তিনি কুন্তীকে বলেন, হে কুন্তী ! তুমি বৃথাই কাঁদছো কেননা তোমার পুত্র অর্জুন তার কর্মের ফল পেয়েছে। আমার পুত্র ভীষ্ম তাকে নিজের সন্তানের মতই স্নেহ করতো, তার পরেও সে শিখন্ডীর সাহায্য নিয়ে আমার পুত্র ভীষ্মকে হত্যা করে। আমিও সেই সময় এইভাবে কান্না করছিলাম, যেভাবে তুমি আজ তোমার ছেলের জন্য কাঁদছো। আমি আমার সন্তানের হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছি, কেননা যে কামাখ্যা দেবীর বানের সাহায্যে বভ্রুবাহন অর্জুনের মাথা ধর থেকে আলাদা করে দেয়, সেটি আমার দ্বারাই দান করা বান। 


দেবী গঙ্গার মুখ থেকে প্রতিশোধের কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ অবাক হয়ে যান। আর তিনি বলেন, হে দেবী! আপনি কোন প্রতিশোধের কথা বলছেন! আপনি কার কার ওপর প্রতিশোধ নেবেন? অর্জুনের মা কুন্তীর ওপর নাকি অর্জুনের ওপর! আপনি একজন মায়ের উপর কি করে প্রতিশোধ নিতে পারেন! তখন দেবী গঙ্গা কৃষ্ণকে বলেন, হে বাসুদেব ! এসব তো আপনি জানেনই যে, অর্জুন সেই সময় আমার পুত্রকে হত্যা করেছিল, যখন সে নিহত্য ছিল। অর্জুনের এসব করা যখন উচিত হয়েছিল, তখন অর্জুনের হত্যা তার পুত্র দ্বারা করিয়ে - আমি কী ভুল করেছি? তখন শ্রীকৃষ্ণ দেবী গঙ্গাকে বুঝিয়ে বলেন, হে গঙ্গা‌ ! অর্জুন যেভাবে তার পিতামহকে হত্যা করেছে সেই পরিস্থিতি স্বয়ং পিতামহই অর্জুনকে বলেছিলেন।‌‌ পিতামহ জানতেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে পান্ডবদের বিজয় অসম্ভব এই কারণে তিনি স্বয়ং যুদ্ধ থেকে সরে যাওয়ার রাস্তা অর্জুন কে বলেছিলেন। অর্জুন তো বভ্রুবাহনের প্রহারকে শুধু আটকে ছিল ; স্বয়ং নিজে প্রহার তো করেনি। অর্জুন তো কামাখ্যা দেবীর দ্বারা দেওয়া বান, আর আপনার মান বাড়িয়েছে কৃষ্ণের কথা শুনে দেবী গঙ্গা দোটানায় পড়ে যান। আর শ্রীকৃষ্ণকে বলেন, এই দোটানা থেকে বাইরে বেরোনোর জন্য রাস্তা বলে দিতে। তারপর এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ দেবী গঙ্গাকে তার প্রতিজ্ঞা ফিরিয়ে নিতে বলেন। এরপর দেবী গঙ্গা, অর্জুনের মাথাকে শরীরের সাথে যুক্ত করার রাস্তা বলে দেন। তারপরে শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও বভ্রুবাহনের সৎ মা উলুপীর থেকে প্রাপ্ত নাগমণি দিয়ে অর্জুনকে জীবন্ত করে দেন।


তাহলে বন্ধুরা আশাকরি আপনাদের দেবী গঙ্গা আর অর্জুনের এই কাহিনী ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। নমস্কার। ধন্যবাদ। এখানেই শেষ করলাম। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পরুন - পার্বতী দেবী কি করে হলেন - মহাকালী ? || Origin of Mahakali - CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা