Breaking

Search Content

Follow Us

বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০২২

তারকেশ্বর মন্দিরের গোপন রহস্য - গল্প হলেও সত্যি || Tarakeswar Shiv temple

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


ভারতবর্ষের যে কয়েকটি জাগ্রত মন্দির রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো দেবাদিদেব মহাদেবের তারকেশ্বর মন্দির। এমনটা মানবতা রয়েছে যে এই মন্দিরে যদি কোনো ভক্ত মানদ করে বাবা ভোলানাথের পূজা করে থাকে তাহলে তার মনস্কামনা নিশ্চিত রূপে পূরণ হয়। তাই দূর দূরান্ত থেকে এই মন্দিরে ভক্তের আনাগোনা লেগেই থাকে। বিশেষ করে এই শ্রাবণ মাসের প্রত্যেকটি দিন, শিবরাত্রির দিন, চৈত্র সংক্রান্তির দিন এবং প্রত্যেক সোমবার দিন লক্ষাদিক ভক্তের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এই তারকেশ্বর শিবমন্দিরে। কি এমন রয়েছে এই প্রাচীন শিব মন্দিরে? কেনই বা এখানে দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল ভক্তের সমাগম হয়? এই সকল গোপন রহস্য আজ এই লেখাটির মাধ্যমে আপনাদের ব্যক্ত করব।


বন্ধুরা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তারকেশ্বরে এই জাগ্রত শিব মন্দিরটি অবস্থিত। শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতবর্ষ নয় সমগ্র পৃথিবীতে এই শিব মন্দিরটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি শিব মন্দির। কলকাতা থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। ভারতবর্ষে বা পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের শিব মন্দির খুব কমই দেখা যায়। মূল মন্দিরের সম্মুখে রয়েছে একটি নাট মন্দির। যেখানে ভক্তরা বসে তাদের মনের কথা ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করে। মন্দিরের উত্তর দিকে রয়েছে একটি পুকুর। যাকে বলা হয় দুধপুকুর। এমনটা মান্যতা রয়েছে যে পূর্ণ বিশ্বাস ও ভক্তির সঙ্গে এই পুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করলে ভক্তজনের সকল মনস্কামনা পূরণ হয় এবং বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ থেকে আরোগ্য লাভ হয়। মন্দিরের পাশেই রয়েছে শ্রী শ্রী লক্ষী নারায়ণ মন্দির। এরই সাথে রয়েছে এক অপূর্ব সুন্দর কালী মন্দির। বন্ধুরা তারকেশ্বরের এই শিব মন্দিরের উৎপত্তি যথেষ্ট রহস্যময়। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গকে 'স্বয়ং-ভূ' বলা হয়। কারণ তারকেশ্বরে তারকনাথকে অর্থাৎ বাবার এই শিবলিঙ্গ কে কেউ নির্মাণ করে স্থাপন করেননি। গঙ্গার পলি ভূমিতে এই ধরনের পাথর পাওয়াই অসম্ভব। সেই কারণে এমনটা গণ্য করা হয় যে, এখানে দেবাদিদেব মহাদেব শিব স্বয়ং আবির্ভূত হয়েছিলেন। মন্দিরের মধ্যে স্বয়ং ভূ-শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব যেমন রয়েছে তেমনই অধিষ্ঠান করেছেন স্বয়ং বাসুদেব। অনেকের মতো তিনি আসলে ব্রহ্মা। শিবের কিছু দূরে নন্দী ভৃঙ্গের অধিষ্ঠানও দেখা যায়। এই তারকেশ্বরের তারকনাথকে এই কারণে দ্বাদশ চতুলিঙ্গের অন্যতম বলেও গণ্য করা হয়।


বন্ধুরা এই মন্দিরে বাবা ভোলানাথের পূজার সূচনাও যথেষ্ট রহস্যময়। ইতিহাসের পাতা উল্টালে তারকেশ্বর মন্দিরের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায় যে, ১৭২৯ সালে রাজা বিষ্ণুদাসের ভাই এই মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন। অযোধ্যা থেকে বিষ্ণুদাস তারকেশ্বরের রামনগর গ্রামে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রতিদিন যখন জঙ্গলে ফলমূল, মধু সংগ্রহ করতে যেতেন তখন তিনি দেখতেন একটি কালো পাথর পড়ে রয়েছে এবং অদ্ভুতভাবে কয়েকটি গরু এসে রোজ সেই পাথরটিকে দুধ পান করাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে অনেকটাই অবাক হন বিষ্ণুদাস। পরে তিনি স্বপ্নাদেশ পান। স্বয়ং দেবাদী দেব মহাদেব তাকে স্বপ্নে আদেশ দিয়ে বলেন যে, তারকেশ্বরের কাছে জঙ্গলের গভীরে যে শিবলিঙ্গ রক্ষিত আছে সেই শিব লিঙ্গকে প্রতিষ্ঠা করো এবং সেখানে মন্দির নির্মাণ করো। বিষ্ণুদাস তার ভাই ভারমল্যকে এই দায়িত্ব দেন। ভারমল্য সেই শিলাখণ্ডটি জঙ্গলের স্থাপন না করে তা তুলে অন্যত্র স্থাপন করতে চাইলেন। কিন্তু কিছুতেই সেই শিলাখণ্ডটি তুলতে পারলেন না। এই ঘটনার কয়েকদিন পর স্বয়ং শিব ভারমল্যকে স্বপ্ন দেখা দিয়ে বলেন যে - এই শিলাখণ্ড টি কখনই তোলা যাবে না। কারণ এটি গয়া-কাশি পর্যন্ত বিস্তৃত আছে। সেই কারণেই সেই শিবলিঙ্গটিকে তোলার বদলে তিনি যেন ওই স্থানেই শিব মন্দিরটি নির্মাণ করেন। ফলে ভারমল্য বিষ্ণুদাস গড়ে তোলেন এই তারকেশ্বরের মন্দির। যা পরবর্তীকালে বর্ধমানের মহারাজের দ্বারা সংস্কার প্রাপ্ত হয়। এইভাবে তারকেশ্বর মন্দিরে ভগবান শিবের পূজার প্রচলন হয়। আর এই জাগ্রত শিব মন্দিরের কথা দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের নানা স্থান থেকে বাক কাঁধে নিয়ে অগণিত ভক্তরা শিবের মাথায় জল ঢালার উদ্দেশ্যে এই তারকেশ্বর মন্দিরে জল ঢালতে শুরু করে।


শিবরাত্রি, চৈত্র সংক্রান্তি, গাজন উৎসব, প্রত্যেকটি সোমবার এবং শ্রাবণ মাসের প্রত্যেকটি দিনে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্তরা তারকেশ্বর শিব মন্দিরে ভগবান শিবের মাথায় জল ঢেলে যান। বাক কাঁধে নিয়ে খালি পায়ে অসংখ্য ভক্তরা জয় বাবা তারকনাথ উচ্চারণে পদঘাট মুখরিত করে শত কষ্ট সহ্য করেও বাবার মাথায় জল ঢালার জন্য আসেন এবং আপন আপন মনোবাঞ্ছা বাবার কাছে জানিয়ে যান। দুধ পুকুরে আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে স্নান করে এবং মনের প্রার্থনা যাতে পূর্ণ হয় তার জন্য দন্ডি কেটে যায়, একাধিক ভক্ত।


সন্তান লাভ, মনের মত বরপ্রাপ্তি, আরোগ্য লাভ এবং জীবনের বিভিন্ন বাধা দূর করার উদ্দেশ্যে ভক্তরা এই সমস্ত ক্রিয়া করে থাকেন। বলা হয় পূর্ণ বিশ্বাস এবং নিষ্ঠার সঙ্গে করাই ক্রিয়ায় বাবা অত্যন্ত প্রসন্ন হন এবং ভক্তের মনোকামনা তিনি নিশ্চিত রূপেই পূরণ করেন। বন্ধুরা মন্দিরের পূজার সময় সাধারণত সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা বেজে ৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং বিকেল ৪ টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। কিন্তু, বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে মন্দির প্রাঙ্গণ সর্বসাধারণের জন্য এবং সারা দিনরাত্রি খোলা থাকে। মন্দিরের বাইরে ফুলমালা, প্রসাদের মিষ্টি, মোমবাতি, প্রদীপ ইত্যাদি বিক্রি করা হয়। এছাড়াও সর্বদা পূজো করার জন্য এই সময় পুরোহিতরা উপস্থিত থাকেন। 


এই মন্দিরের মাহাত্ম্য কতখানি সেই বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা একটি বাংলা চলচ্চিত্র সিনেমাও দেখেছি। চিত্র পরিচালক সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের "বাবা তারকনাথ"  সিনেমাটি নিশ্চয়ই আপনি দেখেছেন। এই মন্দিরে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পত্নী মা সারদা দেবী বহুবার পূজা করে গেছেন।বাবা তারকনাথের মহিমা খুবই আশ্চর্যজনক, তাই আপনি যদি এখনো পর্যন্ত একবারও তারকেশ্বর মন্দিরে না গিয়ে থাকেন, তাহলে অতি অবশ্যই অন্তত একবার হলেও দর্শন করে আসুন।


আশাকরি দর্শক বন্ধুরা তারকেশ্বর মন্দির সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে সক্ষম হয়েছেন। আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।।


আরো পড়ুন:- শ্রীকৃষ্ণের শহর আজ জলের তলায় ! কি করে ডুবলো দ্বারকা নগরী? CLICK HERE


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা