নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা গুরু অথবা শিক্ষক সে হন, যে আমাদের জীবনকে অন্ধকারের দিক থেকে আলোর দিকে নিয়ে যায়। বন্ধুরা এটা হয়তো আপনি জানেনই যে, দেবতাদের গুরু ছিল - গুরু বৃহস্পতি। আর অসুরদের গুরু ছিলেন - শুক্রাচার্য। শুক্রাচার্য একজন মহান গুরু হওয়ার সাথে সাথে তিনি একজন ভালো নীতিকারও ছিলেন। তিনি একবার নয় বরং অনেকবারই নিজের বুদ্ধি-নীতির মাধ্যমে অসুরদের স্বর্গের রাজপাট পাইয়ে দিয়েছিলেন। গুরু শুকরাচার্যের কিছু কথা এমন আছে যেগুলি আজও খুবই মহত্বপূর্ণ। কারণ তিনি জীবনকে নিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন, যেগুলি পালন করার মাধ্যমে মানুষেরা নিজের জীবনে খুশি তো থাকবেই, তার সাথে জীবনে সফলতাও অর্জন করতে পারবে। তো বন্ধুরা আজকের এই বিশেষ লেখাটিতে আমরা আলোচনা করব গুরু শুকরাচার্যের দ্বারা বলা এমন ৯ টি কথা সম্পর্কে, যা সবসময় একটি মানুষের গোপন রাখা উচিত।
প্রথমত, (আয়ু) - দৈত্য গুরু শুকরাচার্য তার নীতিতে প্রথমেই বলেন যে, কোনো মানুষকে তার আয়ু গুপ্ত রাখা উচিত। যতটা সম্ভব হয় এই আয়ুকে কারো সামনে প্রকট না হতে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু বন্ধুরা, এখন অনেক মানুষের মনে এমনটা প্রশ্ন আসতে পারে যে - আয়ু সম্পর্কে অন্য কেউ জানতে পারলে কি এমন খারাপ হবে? বন্ধুরা এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে যে, আপনার সঠিক আয়ু জেনে যাওয়ার ফলে আপনার অনেক শত্রুরা আপনার কার্যকলাপ বা কৌশল গুলি আগে থেকে বুঝে নিয়ে নিজেরা লাভ ওঠাতে পারে এবং আপনার হানি ঘটাতে পারে।
দ্বিতীয়ত, (মূলধন) - বন্ধুরা এই দুনিয়াতে প্রায়ই এরকমটা দেখা যায় যে, মানুষেরা অন্যের কামাই এর উপর সবসময় নজর রাখেন। আর সবসময় এটা জানার চেষ্টায় থাকে যে আপনি কতটা পরিমাণ মূলধন সঞ্চয় করেন। এই সম্পর্কে দৈত্য গ্রুরু শুক্রাচার্য বলেন যে - আপনার কাছে যতই বিপুল পরিমাণে ধন সম্পত্তি থাকুক না কেন, আপনি যত সুখেই আপনার জীবন কাটান না কেন - এই সকল কথাগুলি আপনার পরিবার ছাড়া কখনো কাউকে বলবেন না। এই কারণে আপনার কাছে বেশি ধনসম্পত্তি থাকলেও আপনাকে সেগুলির প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। বন্ধুরা এই কথাগুলো সব সময় গোপন রাখা উচিত। কেননা বন্ধুরা যতই কেউ আপনার নিকটতম সম্বন্ধী হোক না কেন - একবার যদি কোন খারাপ মনের মানুষ আপনার ধন-সম্পত্তি সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে সে অবশ্যই আপনার ধনসম্পত্তি লুটে নেওয়ার চেষ্টা করবে।
তৃতীয়ত, (পারিবারিক ভেদ) - বন্ধুরা আপনি অনেক এরকম মানুষকে দেখেছেন হয়তো যারা নিজের পরিবারের সমস্যা সম্পর্কে অন্য মানুষদের কাছে গিয়ে বলে। আর বন্ধুরা এরকম মানুষেরাই পরবর্তী জীবনে অনেক পস্তায়। কেননা যাদের সামনে আপনি আপনার পরিবারের সমস্যা সম্পর্কে গুণগান করছেন তারা যে বিশ্বাসের পাত্র হবে তা কিন্তু কখনোই জরুরী নয়। এই কারণে গুরু শুকরাচার্য বলেছেন আপনাকে জীবনের কোন পরিস্থিতিতেই নিজের পরিবারের পারিবারিক ভেদকে কারো সামনে প্রকট হতে দেওয়া উচিত নয়। কেননা এর ফলে আপনার পরিবারের প্রতিষ্ঠা তো খারাপ হবেই এবং তারই সাথে অনেক মানুষ এই বিষয়টির লাভ উঠিয়ে আপনার পরিবারের দ্বন্দ্ব-কলহ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এরকম পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি হয় তাহলে আপনার নিশ্চিত হানি ঘটবে।
চতুর্থত, (মন্ত্র এবং কৃপা) - বন্ধুরা এই সংসারের সকল ব্যক্তি সফলতার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। আর এই কারণেই সবাই সকল সন্ধ্যা পরম আত্মার পূজা পাঠে লেগে থাকে। অনেক মানুষ আবার এর জন্য কোন বিশেষ গুরুকে মেনে চলেন, আবার অনেক মানুষ বিশেষ প্রকারের পূজা ও মন্ত্রের জপও করে থাকেন। এই প্রসঙ্গে গুরু শুর্কাচার্য বলেন যে, কোন পূজা ও মন্ত্র তখনই ফলদায়ী হয় যখন সেটি সম্পূর্ণ গুপ্ত রূপে করা হয়। আর যদি এমনটা না হয় তাহলে তার গম্ভীর পরিনামও ভুগতে হতে পারে।
পঞ্চমত, বন্ধুরা অনেক মানুষেরাই হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে নিজের জীবনের খুব নিচু মাপের কথাগুলোকেও পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে বসে, কিন্তু এমনটা আপনি কখনই করবেন না। কেননা শুক্র নীতিতে বলা হয়েছে, এই ধরনের কথা - কোনো মানুষের ভুল করেও কারো সঙ্গে আলোচনা করা উচিত না। আর এটাই মর্যাদা প্রাপ্য মানুষদের নিশানি। কিন্তু, তা সত্ত্বেও যদি কোনো মানুষ এমনটা করে তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাকে জীবনের কোনো না কোনো দিন অবশ্যই লজ্জার সম্মুখে পরতে হবে। আর এরকম মানুষেরা সমাজের অন্যান্য মানুষদের সামনে উপহাসের পাত্র হয়ে যায়।
ষষ্ঠত, (ঔষধি) - শুক্র নীতিতে এমনটা বলা হয়েছে, যদি আপনার কোন প্রকারের রোগ থাকে। আর আপনি সেই রোগ নিরাময়ের জন্য ঔষধি গ্রহণ করে থাকেন। তবে এটি খুবই জরুরী যে, আপনি আপনার ঔষধিকে গুপ্ত রাখুন। অন্যথায় যে আপনার সঙ্গে বরাবরই শত্রুতা বজায় রাখে সে আপনার ঔষধিটি জেনে নিয়ে অনৈতিকভাবে আপনার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণে যতটা সম্ভব নিজের রোগ ও ঔষধের কথা নিজের চিকিৎসক এবং পরিবারের মধ্যেই সীমিত রাখুন।
সপ্তমত, (দান) - বন্ধুরা অনেক মানুষ এরকম রয়েছে যে কাউকে দান দেওয়ার পরে, ঢোল পিটিয়ে বেড়ান। কিন্তু, এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। আপনি তো জানেনই যে, আমাদের সনাতন ধর্মের দানের কথাটা মাহাত্ম্য রয়েছে। দান দেওয়ার ফলে আপনি না তো শুধুমাত্র ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন, বরং ফলে আপনার কষ্ট ও রোগ দূর হতে থাকে। কিন্তু শুক্রাচার্য দেব বলেন, দান এমন একটি শুভ কর্ম যা যেকোনো দশাতে গুপ্তরূপে হওয়া উচিত। তখনই এর পূর্ণ ফলপ্রাপ্ত হয়। অন্যথায় দান করা ব্যর্থ হয়। যদি আপনি কোন এমন মানুষকে দান দিয়ে থাকেন যার সত্যিই দান প্রয়োজন তাহলে সে ভগবানের কাছে আপনার জন্য প্রার্থনা করবে ও আপনার মঙ্গল কামনা করবে। কিন্তু, আপনি যদি তাকে কিছু একটা দান করছেন সেটা আপনি প্রদর্শন করেন সমাজে সবার সামনে তাহলে সেই ব্যক্তির মনে কোথাও না কোথাও একটু হলেও দুঃখ লাগে। যা আপনার জন্যও শুভ একেবারেই নয়। যার ফলে আপনার করা দানের কোন ফল মেলেনা।
অষ্টমত, (সম্মান ও প্রশংসা) - বুদ্ধিমান মানুষ কখনো নিজের মান-সম্মান বিষয়ক চর্চা অন্য কোন মানুষের সামনে করে না। কিন্তু, তা সত্য যে সকল মানুষ নিজের প্রশংসা নিজেই সমাজে অন্যান্য মানুষদের সামনে করে থাকে সেই মানুষেরা অন্য লোকেদের কাছে নিজেরই দাম কমিয়ে ফেলে। আর নিজের প্রশংসা নিজে করা এমন ব্যক্তির সঙ্গে মানুষ মিত্রতার বদলে তার সঙ্গে শত্রুতা করে নেয়। যে কারণে যারা নিজের প্রশংসা নিজে করে নিজেদেরই সমস্যার মুখে ফেলে। এই কারণেই বন্ধুরা সব সময় এমনটা করা থেকে বিরত থাকুন। আর এর বদলে আপনি বরং আপনার আশেপাশে থাকা মানুষদেরই আপনাকে বিচার করতে দিন তাদের বুদ্ধির মাধ্যমে যে আপনি কেমন। তারা যদি ভালো মনে করে আপনার প্রশংসা করে তাহলে ওর থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারে না।
নবমত, (অপমান) - যেমনটা বন্ধুরা আমরা এখন জানলাম যে, কখনো আমাদের নিজেদের মান সম্মান বিষয়ক চর্চা করা উচিত নয়। ঠিক সেরকমই আমাদের অপমান বিষয়ক কথাবার্তা গুলি অন্যের সামনে আলোচনা না করাই ভালো। অর্থাৎ আমরা যদি কখনো কোন সময় কারো কাছে অপমান হয়ে থাকি তাহলে সেই কথাগুলি অন্য কাউকে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এগুলি নিজের মধ্যেই গোপন রাখুন। কিন্তু, বন্ধুরা কিছু মানুষ শুকনো নীতি সম্পর্কে না জানার কারণে তারা এমনটা করে থাকেন যার ফলে সমাজের অন্যান্য মানুষ তার দুঃখটি বোঝার বদলে উল্টে তাকে নিয়েই হাসি ঠাট্টা তামাশা করে।
তো বন্ধুরা, আপনিও যদি শুক্রাচার্যের এই নয়টি কথা গোপন রাখতে পারেন তাহলে এই বিষয়টি সম্ভাবনা অধিক যে, আপনার সফলতা প্রাপ্ত হবে। বন্ধুরা আশা করি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন।
ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন - অন্যান্য যুগের মত কলিযুগে দেয়া অভিশাপ কেন লাগেনা? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা