Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে, কখন আমাদের আর চুপ করে থাকা উচিত নয়? || Lord Krishna: When We Must Speak?



 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা চুপ থাকা একটি ভালো গুণ বলে মনে করা হয়। শুধু তাই নয় আমাদের ধর্ম শাস্ত্রতেও মনোব্রতর খুবই মহিমা রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত একটি কাহিনীও জনমানুষে খুবই প্রচলিত রয়েছে।

"একজন চুপ থাকা ব্যক্তি ১০০ জনকে হারায় ;

একজন চুপ থাকা ব্যক্তি ১০০ জনকে খুশি দেয়।" 

কেননা এমনটা মানা হয় যে চুপ থাকার ফলে বড় বড় বিবাদ মিটে যায়। কিন্তু, এখানে একটি প্রশ্ন ওঠে যে সবসময় কি আমাদের চুপ থাকা উচিত? অর্থাৎ কখন চুপ থাকতে হয় আর কখন মুখর হয়ে আমাদের জবাব দেওয়া উচিত ! আমাদের সকলেরই এই বিষয়টির জ্ঞান থাকা জরুরী। আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণও ভগবদ্গীতাতে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তো চলুন, বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক এই প্রশ্নগুলির উত্তর আজকের এই বিশেষ লেখাটি। 


বন্ধুরা সবসময় আমাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে কিমবা সবসময় কোন কারন ছাড়াই কিছু বলতে হবে - এমনটা একেবারেই আবশ্যিক নয়। বেশি ফালতু বলা লোকেদের গম্ভীরতার সাথে কখনো নেয়া হয় না। অর্থাৎ তারা এত পরিমাণে বেশি বলে, যেই কারণে তাদের কথার কোনো দাম দেয়া হয় না। বন্ধুরা, সাধারণ ভাষায় সবকিছু দেখে-শুনে-বুঝে চুপচাপ থাকাকে মনোব্রত বলা হয়। বলা হয়ে থাকে আমরা যত বেশি পরিমাণে চুপচাপ থাকবো কিংবা মনোব্রততে লিন থাকবো, ততোই ভালোভাবে আমরা এই প্রকৃতিকে জানতে পারবো। অনেকবার বহু সময় ধরে আলোচনা করার পরেও অনেক সমস্যার সমাধান হয় না, তখন মনব্রত পালন করার কথা বলা হয়। আর বলা হয় ১ জন চুপ তো ১০০ জনা সুখী। অর্থাৎ জীবনের কিছু সময় আমাদের সকলকেই মনোব্রত পালন করে কাটানো উচিত। এর ফলে আন্তরিক উর্যার সঞ্জয় হয়। কিন্তু, বন্ধুরা যখন প্রশ্ন ওঠে নিজের প্রাপ্য কিংবা অধিকারের তখন চুপ থাকাকে সংযম নয়, বরং মূর্খতা বলা হয়।


মহাভারতের যুদ্ধের প্রথমের দিকে অর্জুন যখন নিজের পরিবার পরিজনদের যুদ্ধের রণভূমিতে দেখেন, তখন সে অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়ে। আর যুদ্ধ করতে মানা করে দেয়। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত করতে গীতার মূল্যবান জ্ঞান দেন। আর এই গীতা জ্ঞান শুধুমাত্র অর্জুনের জন্য কার্যকারি, তা কিন্তু একেবারেই নয়। এই জ্ঞান আমরা আমাদের জীবনেও কাজে লাগাতে পারি। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এটা বোঝান যে কখন চুপ থাকা প্রয়োজন আর কখন নিজের অধিকার অথবা প্রাপ্যের জন্য বলা উচিত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন বলেন, এই সংসারে মানুষদের একাধিক সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে। এর কারণ হল - যখন তাদের বলা উচিত ছিল তখনও তারা চুপ ছিলেন। অর্থাৎ যেখানে পাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে, যেখানে কোন কারন ছাড়াই সাধারণ মানুষদের শোষণ করা হচ্ছে, যেখানে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে - সেখানে চুপ করে থাকা অপরাধের শ্রেণীতে পড়ে। শুধু তাই নয় নিজের অধিকারের জন্য বলা খুবই জরুরী। কেননা সবসময় চুপ করে থাকার ফলে আপনি আপনার প্রাপ্য অনেক কিছুই হারাতে পারেন। আর কোনো কথা যদি আপনার সম্মান কিংবা সততার উপর উঠে আসে তাহলে সেই মুহূর্তে আপনাকে অবশ্যই বলা উচিত। বন্ধুরা জীবনে কোন পরিস্থিতিতে কথা যদি আপনার আত্মসম্মানের উপর আসে তাহলে সেই সময় চুপ থাকা একেবারেই উচিত নয়। যখন আপনি সত্যের পাশে দাঁড়ান তখন আপনার মনোব্রত পালনা কিংবা চুপ থাকা একদম জরুরী নয়।


বন্ধুরা, বেশিরভাগ সময় এটা দেখা যায় কোন শক্তিশালী মানুষের সামনে আমরা ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যাই। এমনটা মানুষেরা এই কারণে করে থাকেন, কারণ তারা কোন বিবাদ ও সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চান না। কিন্তু বন্ধুরা, তারা একেবারেই জানেন না যে, তাদের এই চুপ করে থাকাটি ভবিষ্যতে একটি বড় সংঘর্ষ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। কারণ আপনি যখন একটি খারাপ মানুষের অশুচি কর্মের সামনে কিছু না বলে চুপ করে থাকবেন, তখন সেই দুষ্ট প্রবৃত্তির মানুষটি আপনার চুপ করে থাকার ফলে সে আরও সমর্থন পাবে। যার ফলে সেই দুষ্ট প্রবৃত্তির মানুষটি নিজেকে আরও শক্তিশালী মনে করবে ও তার পাপ দিন দিন বাড়তেই থাকবে। এখান থেকেই আমাদের গড়ে ওঠা কিংবা পতন ঠিক হয়। আর আমরা যদি এখানেই চুপ থাকি তাহলে এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হবে। তাহলে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কি করে করা যায়? - এটা বোঝার জন্য আপনাকে আগে বুঝতে হবে যে কি এমন কারণ যে আপনাকে ওই দুষ্ট প্রবৃতির মানুষটির বিরোধতা করতে আটকাচ্ছে!  বন্ধুরা এই কারণটি সামনের জনার শক্তি কখনো হতে পারে না। এটাতো আমাদের মনের ভয় মাত্র, যে আমাদের চুপ থাকতে বাধ্য করে। তাহলে কি আমরা আমাদের মন থেকে ভয় বার করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারবো না ! ওই দুষ্ট প্রকৃতির অসৎ মানুষটি আমাদের কি বা এমন ক্ষতি করবে, সেটা ভাবুন। এমনটা করার ফলে আমাদের মন অনেকটা হালকা অনুভব করবে। 


মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণকালে সভাতে উপস্থিত বড় বড় মহারথী যোদ্ধাদের নিন্দা শুধুমাত্র এই কারণেই হয়, কারণ তারা সেই মুহূর্তে চুপ ছিলেন। আর বন্ধুরা ঠিক এরকমটাই বর্তমানের এই সংসারে হচ্ছে। যারা আমাদের থেকে অধিক শক্তিশালী তাদের বিরুদ্ধে আমরা কিছু বলতে পারি না। আর যেখানে আমাদের চুপ থাকা উচিত সেখানে আমরা বলে চলেছি। তাহলে একদিক দিকে আমরাও কোথাও না কোথাও পাপের ভাগীদার হচ্ছি। যা কিন্তু, একেবারেই উচিত নয়। আর বন্ধুরা ইতিহাসও সাক্ষী রয়েছে যে, এই সংসারের এত বিপুল পরিমাণে হানি শুধুমাত্র দুষ্টের শক্তির জন্য হয়নি বরং স্বজনদের চুপ করে থাকার ফলেই হয়েছে। যেখানে যতটা প্রয়োজন শুধুমাত্র ততক্ষণই চুপ করে থাকা উচিত। যখন কোন কথা সীমা অতিক্রম করছে এমনটা অনুভব হয়, তখন আওয়াজ তোলা খুবই জরুরী। আর আমাদের ধর্মও এটাই বলে। কেননা সব জায়গায় চুপচাপ থাকা ব্যক্তি সবসময় সবার মধ্যে দেবে থেকে যায়। বন্ধুরা গীতাতে পরিষ্কার করে লেখা রয়েছে -" অন্যায় সহ্য করা - অন্যায় করার থেকেও বেশি বড় পাপ বলে গণ্য।" 


তো বন্ধুরা আশাকরি আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন কখন আমাদের চুপ করে থাকা উচিত এবং কখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা উচিত। লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- শুক্র নীতি || কখনো কাউকে বলবেন না এই নয়টি কথা -CLICK HERE


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা