নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আমরা প্রায়শই এটা শুনে থাকি যে, ভগবান যা চায় সেটাই হবে। অর্থাৎ হবে সেটাই যা বিধাতা দ্বারা রচিত। এখন এমত অবস্থায় আমাদের মধ্যে অনেকবার কিছু এমন ঘটনা ঘটে থাকে যা আমাদের এটা ভাবতে বাধ্য করে যে, সত্যিই কি সবকিছু ঈশ্বরের দ্বারা রচিত, নাকি এর পিছনে অন্য কোনো সত্য লুকিয়ে রয়েছে ! বিশেষ করে সেই সময় যখন আমরা কারো আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। তখন আমাদের মনে এই প্রশ্নটি ঘুরতে থাকে যে সত্যিই কি এর পিছনে ভগবানের ইচ্ছা ছিল ? তো বন্ধুরা, চলুন জেনে নেওয়া যাক এই প্রশ্নের উত্তর আজকের এই বিশেষ লেখাটির মাধ্যমে।
বন্ধুরা এই গম্ভীর প্রশ্নটি বোঝার জন্য সবার প্রথমে আমাদের কর্ম কে জানতে হবে। কেননা অধিকাংশ মানুষের এমনটা মনে হয় যে এই জীবনে সবকিছু প্রারব্ধ কর্মের অনুসারে হয়। কিন্তু, এমনটা কখনোই নয়। গীতা অনুসারে কর্মের আধারেই আমাদের পরবর্তী জন্ম নির্ধারিত হয়। আর কোন যোনিতে জন্ম হবে সেটাও ঠিক হয় কর্মের উপর ভিত্তি করেই। আজকে আমরা যেই ফলই ভোগ করে থাকি না কেন তা সবকিছুই আমাদের পূর্ব জন্মের কর্মের কারণে। কিন্তু এই কথাটিকে গভীরভাবে বোঝার জন্য আমাদেরকে কর্মের সিদ্ধান্তটিকে ভালো করে বুঝতে হবে। যেই প্রসঙ্গে একটু পরেই আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব।
ব্যক্তি নিরন্তর কর্ম করে যায়। ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিও কর্ম করে চলেছে। কর্মের সম্বন্ধ আমাদের শরীর, মন, মস্তিষ্ক ও চিত্তের গতির উপর নির্ভরশীল। গতি কখনো থেমে থাকে না, আর থামার মধ্যেও একটি গতি রয়েছে। এই কর্মের গতি থেকেই পরবর্তী কর্মের গতি নির্মিত হয়। শরীর, বাণী ও মন থেকে করা ক্রিয়াকে ' কর্ম ' বলা হয়। কর্ম তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা - সঞ্চিত, প্রারব্ধ ও ক্রিয়ামান। অনেক জন্মে একত্রিত হয়ে করা কর্মকে 'সঞ্চিত কর্ম' বলা হয়। এর মধ্যে পূর্ব জন্ম থেকে সঞ্চিত হয়ে থাকা কর্মকে নিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত কর্ম গৃহীত রয়েছে। সঞ্চিত কর্মের যেই ভাগ আমাদের এই জন্মে ভুগতে হবে, তাকে প্রারব্ধ বলে। আর ক্রিয়ামান কর্ম হলো সেটা যাকে আমরা এখন করে চলেছি।
কর্মের মাহাত্ম্য বলতে গিয়ে ' রামচরিত মানষে ' - তুলসী দাশ জি বলেছেন, ঈশ্বর এই সংসারকে কর্ম প্রদান করে রেখেছে। এর মধ্যে যেই মানুষ যেরকম কর্ম করে তার সেরকমই ফলপ্রাপ্ত হয়। আর এই আঁধারের ভিত্তিতে কিছু মানুষের মনে এরকম প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যে, যখন সবকিছু হচ্ছে পূর্ব জন্মের মুখ্যতার প্রারব্ধের আঁধারে তাহলে যদি কেউ আত্মহত্যাও করে তাহলে এটাও তারই পরিনাম। কিন্তু বন্ধুরা, এরকমটা একেবারেই নয়। আত্মহত্যা কখনো নিশ্চিত হয় না। কেননা ঈশ্বর পূর্ব জন্মের আঁধারের ভিত্তিতে পরিস্থিতি দিয়েছে যার উপর কারো কোনো জোর চলে না। কিন্তু, ঈশ্বর আমাদের মনস্তিথিও দিয়েছে। যা কেবলমাত্র আমাদের উপর রয়েছে, নাকি ঈশ্বরের উপর। আপনি এটাকে যেভাবে উপযোগ করবেন, সেরকমই পরিণাম হবে। যখন মানুষ কোনো দুঃখ বা কষ্টের কারণে অবসাদে চলে যায় তখন আপনার মনস্থিতি বলে - " ব্যাস ! এখন আর এই জীবনে কিছুই নেই। আমারতো চারিদিকে শুধু দুঃখ আর দুঃখ।" বন্ধুরা এমতো অবস্থায় সেই মানুষের মনে আত্মহত্যা করার মতো বিচার আসে। কিন্তু, ওই মনস্থিতেই আপনার কাছে ভগবানের ধ্যান, ভগবানের ভক্তি ও নাম-ভজনা করার বিকল্প রয়েছে, যাকে সূক্ষ্মাজাদী বলে। এই কারণে সেই মানুষ নিজের আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্তটি কে বদলে দিতে পারে। আর বন্ধুরা, তার এমনটা অবশ্যই করা উচিত। কেননা পরিস্থিতিকে বদলানো আমাদের হাতে নেই। কিন্তু, মনোস্থিতিকে বদলানোর পুরো অধিকার আমাদের সকলেরই আছে। পরিস্থিতি প্রারব্ধ থেকে আসবে, আর তাকে আপনি কি করে সামলে নেবেন তা পুরোটাই আপনার উপর নির্ভর করছে। এতে ঈশ্বর কিছুই করতে পারবেন না। একে বন্ধুরা আপনি এভাবে বুঝে নিতে পারেন যে, যখন আপনি কোনো পরীক্ষায় বসেন তখন সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে একাধিক বিকল্প প্রশ্ন থাকে, তখন আপনি স্বতন্ত্র থাকেন যে ওই সকল প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন বেছে নিতে। আমাদের কর্মের আধার হল - আমাদের বিচার। আমাদের মনে সব সময় কোন না কোন বিচার চলতে থাকে। প্রতিদিন হাজার হাজার বিচার মনে আসে এবং যায়। কিছু বিচার একবারই চলে আসে, আবার কিছু বিচার বারবার চিন্তাভাবনা করার পরও আসে না। যে বিচার বারবার আসে তার ওপর আমরা সিদ্ধান্ত টিকিয়ে নি। যার ফলে সেই বিচারটি আমাদের কর্মতে পরিবর্তিত হয়। এখন যদি আমাদের মনে সুবিচার আছে তাহলে ভালো কর্ম আমরা করবো। আর যদি কুবিচার আসে তাহলে তার ফল হবে - খারাপ কর্ম। এই কারণে বলা যেতে পারে আমাদের ভালো এবং খারাপ কর্মের ফল আমাদের বিচারের উপর নির্ভরশীল। আমাদের মন না তো, চুপচাপ থাকতে পারে আর না তো আমরা কোনো কর্ম না করে থাকতে পারি। মনের মধ্যে কোন না কোন বিচার আসতেই থাকে। আর আমাদের কর্মের স্তর এইভাবে বাড়তেই থাকে। এই কারণে যদি এই জন্মে এবং পরবর্তী জন্মে সুখে থাকতে চাও তাহলে মনসা, বাচা, কর্মনা - কারোরই খারাপ করো না। অর্থাৎ মন থেকে, নিজের কর্ম দিয়ে, নিজের বচন দিয়ে - কখনো কারোর খারাপ করো না।
আপনি প্রকৃতি ও পরিস্থিতি কাউকেই বদলাতে পারবেন না। কিন্তু, নিজের কর্মকে বদলে নিজের জীবন সামলে কিমবা গুছিয়ে নিতে পারেন। সুখ এবং দুঃখ জীবনের অংশ। জীবনে কেউ না তো সবসময়ের জন্য দুঃখী থাকে, আবার কেউ না তো সবসময় এর জন্য সুখী থাকে। ভাগ্যের নির্মাতা আপনি স্বয়ং। যদি আপনি আপনার নিজের কর্ম ঠিক রাখেন তাহলে আপনি পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে সক্ষম হবেন। আর না হলে আপনি অনেক আত্মঘাতী পদক্ষেপও নিতে পারেন। এই কারণেই বন্ধুরা আত্মহত্যা ভগবানের ইচ্ছা কখনোই নয়। গরুর পুরানে এইজন্য আত্মহত্যা কে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে এমনটা করার ফলে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। আর সেই আত্মার মুক্তি মিলতেও অনেক বাধা আসে।
বন্ধুরা, এই গরুর পুরানে " মানুষের আত্মহত্যা করে মৃত্যু হলে আত্মার সঙ্গে কি হয় " ? - এই সম্পর্কিত একটি লেখা পূর্বেই আমাদের এই অমৃত কথা ওয়েবসাইটে দেওয়া রয়েছে আপনি যদি প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে সেটি দেখে নিতে পারেন - CLICK HERE
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনি সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ তখন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- আচার্য চাণক্যের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি ।। CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা