আচার্য চাণক্যের এই 5 টি কথা যদি আপনি জেনে যান তাহলে কেউ কখনো আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না || Chanakya Niti

 

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 

আচার্য চাণক্যের এই পাঁচটি কথা যা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে। বন্ধুরা সকল মানুষেরাই চায় তার জীবন একটি রাজার মতো হোক। তার জীবনে নাতো মূলধনের অভাব দেখা দিক, আর না তো ঐশ্বর্যের। তার যেন সকল রকমের সফলতা প্রাপ্ত হয়। ধন, বৈভব ও ঐশ্বর্যে তার যেন কখনো কমতি না পরে। কিন্তু বন্ধুরা, আমরা জেনে কিংবা না জেনেই অনেক ভুল করে বসি। যার ফলে আমাদের ভাগ্যও আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তো বন্ধুরা এই কারণেই আজকের এই বিশেষ লেখাটিতে আমরা সবাই মিলে এটি জানার চেষ্টা করব যে, মহান আচার্য চাণক্য এমন কোন পাঁচটি কথা বলেছেন - যা আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে !

বন্ধুরা মহান আচার্য চাণক্যকে আমরা সবাই জানি। তার দেওয়া নীতি গুলির আগে যেমন গুরুত্ব ছিল ঠিক বর্তমানের কলিযুগেও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তার এক একটি কথা মানুষকে জীবন কাটানোর মূল নীতি শেখায়।

সবার প্রথম কথাটি আচার্য চাণক্য বলেছেন, মূর্খ লোকেদের সঙ্গে কখনো বিবাদে কিংবা যুক্তি-তর্কে জড়াতে যাওয়া উচিত না। যতটা সম্ভব তাদের সঙ্গে কথা বলা থেকে এড়িয়ে চলুন। কিন্তু বন্ধুরা এর অর্থ এটা নয় যে, কেউ যদি কোনো সঠিক কারণে বিবাদ করে থাকে তাহলে সে মূর্খই হবে। বরং সে একজন জ্ঞানী ব্যক্তিও হতে পারে। বন্ধুরা একটি কথা আপনি হয়তো শুনেছেন যে, " মূর্খের সঙ্গে কথা বলা, আর দেওয়ালে নিজের মাথা ঠোকা - দুটোই সমান।" কারণ এই দুইয়ের ফলে আপনার কেবল মাথাব্যথা হবে। জীবনে যদি আপনার এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা করার ইচ্ছে থাকে কিংবা জীবনে কিছু একটা করে সফলতার স্বাদ আপনি নিতে চান তবে নিজের জীবনে এমন বন্ধু বান্ধব বানান যারা সবসময় পজিটিভ চিন্তা ভাবনা করে। আর সদা সর্বদা মূর্খের থেকে দূরে থাকুন।

বন্ধুরা এরপর আচার্য চাণক্য দ্বিতীয় যে কথাটি বলেছেন তা হল - নিজের দুর্বলতা কখনো কাউকে আমাদের বলা উচিত নয়। বন্ধুরা সেই দুর্বলতাটি যে কোনো প্রকারেরই হতে পারে। দুর্বলতাটি এমনও হতে পারে যে, আপনি আর্থিক দিক থেকে কতটা সম্পন্ন কিংবা সামাজিক দিক থেকে কতটা স্বাবলম্বী অথবা সমাজে আপনার কতটা কি দাম রয়েছে - এইসব বিষয়ের উপরও অনেক সময় দুর্বলতা নির্ভর করে। বন্ধুরা সামাজিক, ভাবনাত্মক ও আর্থিক অথবা যেকোনো স্তরের দুর্বলতা আপনি কখনো কাউকে বলবেন না। এমনকি নিজের পত্নী কেও না। আচার্য চাণক্য এর পিছনে যে কারণটি বলেছেন তা খুবই রোমাঞ্চকর। আসলে বন্ধুরা এই দুনিয়াতে প্রত্যেকটি মানুষ একা এসছে আর একাই যেতে হবে। এমত অবস্থায় বিপদের সময় যদি আপনার মিত্র বা বন্ধু - শত্রু হয়ে যায় তাহলে সে আপনার দুর্বলতার লাভ উঠাতে পারে। বন্ধুরা এই কথাটি আপনি রাবণ ও বিভীষণের উদাহরণটি নিয়েও বুঝে নিতে পারেন। এই কারণেই বন্ধুরা নিজের দুর্বলতা কখনো কাউকে বলা উচিত নয়। এর ফলে আপনার জীবনে এগিয়ে চলার পথে কখনো কোনো রকম ভয় থাকবে না।

তৃতীয় সবথেকে মহত্মপুণ্য যে কথাটি আচার্য চাণক্য বলেছিলেন, মূলধন বুঝেশুনে খরচ করা উচিত। এর মানে কিন্তু এমনটা কখনোই নয়, যে আপনি মূলধন খরচা করতে খুবই কঞ্জুষি করুন এবং আপনার প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীগুলিও না কিনুন। বরং এর মানে হচ্ছে - মূলধনের ফালতু খরচে লাগাম লাগানো উচিত। যদি আপনার মনে হয় কোন জিনিস আপনি আপনার শখের জন্য কিনছেন এবং যার ফলে আপনার ভবিষ্যতে করা সেভিংসের উপর প্রভাব পড়তে পারে তাহলে সেটা না কেনাই ভালো। কিন্তু সেই শখের জিনিসটি পূরণ করার জন্য আপনি আরও বেশি পরিমাণে কাজ করে বেশি মূলধন কামাতেই পারেন। এর ফলে ভবিষ্যতে আশা যে কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে আর্থিক দিক থেকে আপনি সবসময় সম্পন্ন থাকবেন। এর সাথে আপনি অধিক পরিমাণে কাজ করে যদি আপনার শখের জিনিসটিও পূরণ করে নিতে পারেন তাহলে আপনার ইচ্ছাটিও বজায় থাকলো। বন্ধুরা এই বিষয়টি আপনি একটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝে নিতে পারেন - বন্ধুরা, ধরুন একটি মানুষ একটি ঘর বানানোর জন্য অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে মূলধন জমাতে থাকে, আর কোনো দুর্ঘটনা জনিত কারণে সেই ঘরটি ধ্বংস হয়ে গেলে তার কাছে কোনো দ্বিতীয় বিকল্প থাকে না। তখন তাকে আবার শুরু থেকে শুরু করতে হয়। সেই ব্যক্তি আবার সেখানেই চলে যান যেখান থেকে তিনি জীবন শুরু করেছিলেন। এই কারণেই বন্ধুরা এরকম ভুল কখনোই করবেন না। বরং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঞ্চয় করুন। আর বন্ধুরা, আপনার অর্জিত ধন-সম্পত্তি তখনই খরচ করুন যখন তার সঠিক প্রয়োজন হবে। নচেৎ ফালতু কারণে মূলধন অধিক ব্যয় করলে, তা ব্যর্থই হবে। আর বন্ধুরা আপনার কাছে যদি অধিক ধন সম্পত্তি থাকে তাহলে সেটা কোন ভালো কাজে লাগান। যেমন কোন গরীব-দুখী, দুস্থদের উদ্দেশ্যে কিছু দান করতে পারেন। এতে আপনার অধিক পূর্ণ লাভ হবে।

বন্ধুরা চতুর্থ যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি আচার্য চাণক্য বলেছেন তা হলো - সকল মানুষের উপর বিশ্বাস করা উচিত নয়। বন্ধুরা প্রথমে বলে রাখি বিশ্বাস এবং অন্ধবিশ্বাসের মধ্যে অনেক তফাৎ। এই কারণে আশ্চর্য চাণক্য যেই বিষয়টির উপর কথা বলেছেন সেটি অন্ধবিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। যেমন - কোনো রাজা যদি তার রাজপাঠ সামলানোর বদলে সবসময় সুখ ও আরামে লিপ্ত থাকে, আর নিজের মন্ত্রীর ওপর পুরোপুরি ভাবে বিশ্বাস করে তাহলে তার মন্ত্রী তাকে যেকোনো বড় রকমের সমস্যায় ফেলতে পারে। শুধু তাই নয় রাজ্যের পুরো ক্ষমতাও রাজার হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও মন্ত্রীর ওপর তার কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতে হবে। কেননা? সকল কার্যভার রাজা একা হামলাতে পারবে না। ঠিক সেরকমই বন্ধুরা বর্তমান কলিযুগে আপনি কারোর উপর ততটাই বিশ্বাস করুন যতটা প্রয়োজন। আর বন্ধুরা অন্ধবিশ্বাস কিন্তু একেবারেই ভুল। এটি আপনার জীবনে বড় রকমের সমস্যা ডেকে আনতে পারে। কিন্তু বন্ধুরা যত যাই হোক বিশ্বাসের ওপরেই কিন্তু একটি পরিবার কায়েম থাকে। এই বিশ্বাসের মাধ্যমে পরিবারের মধ্যে মেলবন্ধন বজায় থাকে। এই কারণে এই নীতি অনুযায়ী সম্পর্কে বুঝেশুনে সন্দেহের অবকাশ আনা উচিত। কিন্তু, সেটি পরিস্থিতি এবং যে ঘটনাটি ঘটছে তার ভিত্তিতে করা উচিত। কেননা বন্ধুরা আমাদেরকে সবদিক থেকেই সন্তুলন বজায় রাখতে হবে, আর এর নামই হল - জীবন।

পঞ্চমত, যে কথাটি আচার্য চাণক্য বলেছেন আজকের দিনে তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আচার্য চাণক্য বলেন, আপনি যদি জীবনে সফলতা প্রাপ্ত করতে চান তাহলে কারো প্রতি আসক্ত হওয়ার থেকে দূরে থাকুন। আচার্য চাণক্য এই নীতিটিকে সফলতার বড় বাধা বলে মনে করতেন। বন্ধুরা আজকালকার দিনে অল্প বয়স থেকেই প্রেম প্রসঙ্গের দৌড় চলছে। মিত্রতা থেকে শুরু হওয়া কথা প্রেম ও আসক্ততা ডেকে আনছে। বন্ধুরা আচার্য চাণক্য অনুযায়ী এসব থেকে দূরে থাকাই ভালো। কেননা এগুলি আপনার জীবনের সফলতার মার্গটিকে ভঙ্গ করা ছাড়া আর কিছুই করবে না।

তো বন্ধুরা এই ছিল আচার্য চাণকের পাঁচটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নীতি। যেগুলি আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে জীবনের সফলতার স্বাদ অনুভব করতে পারব। বন্ধুরা, আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 

আরো পড়ুন - ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুযায়ী, এই দুই ধরনের মানুষের ভাগ্য কখনোই বদলায় না? CLICK HERE