নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা, ভগবান শিবের অনেকগুলি অংশ অবতার রয়েছে। যার বর্ণনা আমরা পুরাণে পেয়ে থাকি। বিশেষ করে শিব পুরাণে প্রত্যেকটি অবতার সম্পর্কে বিস্তারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের ইতিহাসে ভগবান শিবের প্রত্যেকটি অবতারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু, বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে ভগবান শিবের তিনটি এমন অবতার সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি যাদের বল, পরাক্রম ও শক্তির কোনো সীমা ছিল না। বন্ধুরা ভগবান শিবের এই শক্তিশালী তিনটি অবতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
কালভৈরব :-
শিব মহাপুরাণে রুদ্রসহিতার অষ্টম অধ্যায় অনুসারে যখন একটি সময়ে ব্রহ্মাজি কটাক্ষ করে ভগবান শিবকে কটু বচন বলেন তখন ওই বচন গুলি শোনার পর ভগবান শিব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। মহাদেবের ক্রোধের পরিমাণে এতটা বৃদ্ধি পায় যে তৎক্ষণাত তার সেই ক্রোধের থেকে আরেকটি পুরুষ উৎপন্ন হয়। তার নাম ছিল ভৈরব। ভগবান শিব সেই পুরুষকে আদেশ দিয়ে বলেন - হে কাল রাজ, তুমি স্বয়ং কালের সমান ; এই কারণেই আজ থেকে তুমি জগতে কাল ভৈরব নামে খ্যাত হবে। শুধু তাই নয় ভগবান শিব কালভৈরব কে আরো বলেন যে, হে কাল ভৈরব তুমি ব্রহ্মার গর্ব নষ্ট কর। আজ থেকে আমি তোমায় কাশি ও পুরীর আধিপত্য প্রদান করলাম। সেখানকার পাপীদের দন্ড দেওয়া তোমার কার্যের মধ্যেই পড়বে। ভগবান শিবের এই আদেশকে কাল ভৈরব প্রসন্নতা পূর্বক গ্রহণ করেন। তারপরে তিনি তার বাঁ হাতের আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে ব্রহ্মাজীর পঞ্চম মস্তকটি কেটে ফেলেন। এটা দেখার পর ব্রহ্মাজি অত্যন্ত ভয় পেয়ে যান। সেই মুহূর্তে তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে, শতরুদ্রীয় পাঠ করতে লাগলেন। এছাড়াও ব্রহ্মাজি শিবজিকে অপমান করেছিলেন যেই কারণে তার খুবই পাশ্চাতাপ হচ্ছিল। তখন ভগবান শিব তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তারপর থেকেই ভগবান শিব কাল ভৈরব কে আদেশ দেন যে, সে যেন ভগবান বিষ্ণু ও ব্রহ্মার সযত্ন সহকারে সেবা করে।
বীরভদ্র:-
মাতা সতি যখন নিজের প্রাণের আহুতি দিয়ে দিয়েছিলেন সেই সময় ক্রোধিত হয়ে তক্ষ প্রজাপতির যোগ্যকে ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানেই ভগবান শিব নিজের জটাকে রোশ পূর্বক আছড়ে মারেন। আর সেখান থেকেই উৎপন্ন হয় মহাবলী বীরভদ্র। আর এছাড়া অন্য একটি জটা থেকে ভগবান শিব তার ক্রোধের মাধ্যমে ভদ্রকালী কে উৎপন্ন করেন। এই দুই নতুন রূপ খুবই ভয়ংকর ছিল। এই বীরভদ্র ও ভদ্রকালীকে ভগবান শিব আদেশ দিয়ে বলেন তক্ষের যোঞ্জ নষ্ট করার জন্য। শুধু তাই নয় তাদেরকে তক্ষের মস্তক কেটে নিয়ে আসারও আদেশ দেন ভগবান শিব। ভগবান শিব সেই মুহূর্তে এতটাই ক্রুদ্ধ ছিলেন যে তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যদি কোন দেবতা বা গান্ধার বা অন্য কেউ তোমাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তাদেরকেও তোমরা ভস্ম করে দেবে।এরপর বীরভদ্র ও ভদ্রকালী যেই স্থানে যজ্ঞ হচ্ছিল তার আশেপাশের নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকা তছনছ করতে শুরু করে। যোগ্য স্থানে তাদেরকে যারাই আটকানোর চেষ্টা করেছে তাদের প্রত্যেকের ঘর থেকে মাথা আলাদা করে দিয়েছে বীরভদ্র ও ভদ্রকালী। এছাড়াও যে সমস্ত দেবগণেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারা প্রত্যেকে ওই যোগ্যটিকে রক্ষা করার কথা ভাবেন। প্রত্যেকে নিজের বাহনে চেপে বীরভদ্র ও ভদ্রকালী কে আটকানোর জন্য চেষ্টা করেছিলেন। বীরভদ্র সেখানে বলেন তোমরা সকলে এই দুষ্টের দোষের সঙ্গে অন্ধ হয়ে পড়েছ এবং ভগবান শিবের অপরাধী হয়েছো। বীরভদ্র এর পরে তার তান্ডব ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে। বীরভদ্র বরুণ দেবের ছত্র নষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্র দেবের বজ্রকেও নিষ্ক্রিয় করে দেন। এই প্রকার ভাবে সকল দেবতাকে একে একে হারানোর পর সবশেষে দক্ষের ধর থেকে মস্তক আলাদা করে দেয় বীরভদ্র।
কূর্মপুরাণ অনুসারে মহাবলী বীরভদ্র সুদর্শন চক্রের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে গরুড়ের উপর প্রস্থান করা ভগবান শ্রীবিষ্ণুকেও তার বানের সাহায্যে সামান্য পরিমাণে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বন্ধুরা আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি বিভিন্ন পুরাণে এই ঘটনার আলাদা আলাদা বর্ণনা পাওয়া যায়।
হনুমান :-
বন্ধুরা এই কাহিনী রামায়নের শুরুতেই উল্লেখ আছে পৃথিবীতে ভগবান বিষ্ণুর অবতার রাম রূপেই হয়েছিল। সকল দেবতা জানতেন যে রামচন্দ্র জগতের পালনকর্তা হবেন। আর এই নামই মানুষের সকল দুঃখ দূর করবে। রামায়নে বলা হয়েছে একবার ভগবান শিবের ইচ্ছা হয়েছিল রামের সঙ্গে দেখা করার। সেই সময় রামচন্দ্র ছিলেন পাঁচ বছরের। ভগবান শিব নিজের আসল রূপে রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। সেই কারণে ভগবান শিব তার ১১ টি রুদ্ররূপের মধ্যে বানর অবতার টি ধারণ করেন। আর এই বানররূপটিই পরে হনুমান নামে পরিচিত হয়। বন্ধুরা আমরা রামায়ণে হনুমানের ব্যাখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে পেয়েছি। হনুমান যেমনি বলশালী ছিলেন, তেমনি ছিল তার বুদ্ধি। এই কারণেই হনুমান ভগবান শিবের অন্যতম একটি শক্তিশালী রুদ্ররুপ বলে গণ্য।
তো বন্ধুরা আশাকরি ভগবান শিবের এই বিশাল তিনটি শক্তিশালী রূপ সম্পর্কে জানতে পেরে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। বন্ধুরা ভগবান শিবের মোট ১৯ অবতার বা রূপ রয়েছে এবং রুদ্র রূপ রয়েছে ১১ টি। এই সকল রূপের মধ্যে শক্তিশালী তিনটি রূপ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। পরবর্তী কোন লেখাতে এই সকল ১৯ টি অবতার বা রূপ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব। আজ এখানেই শেষ করলাম।
নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- সর্বদা এইদিকে মুখ করে খাবার খেতে হয়||খাবার খাওয়ার সঠিক নিয়ম - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা