১২ বছর পর কেন হয় কুম্ভ মেলা? || কুম্ভ মেলার ইতিহাস || কুম্ভ মেলার একাধিক প্রকার গুলি কি?

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।

বন্ধুরা সনাতন ধর্মে কুম্ভ মেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাহাত্ম্য রয়েছে। সাধারণ কুম্ভমেলা প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয়। পুরো বিশ্বের সবথেকে বড় ধার্মিক মেলা এটাকে মানা হয়। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগে (প্রয়াগরাজ) অর্ধকুম্ভ আয়োজিত হয়। এই কুম্ভ মেলা আবার ১২ বছর অন্তর একবার হয়। প্রতি বারো বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়। যেখানে গোটা দুনিয়া থেকে মানুষেরা এসে ভিড় করেন এবং পবিত্র নদীতে স্নান করেন। বারোটি পূর্ণকুম্ভ অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ। কিন্তু বন্ধুরা ভাবার বিষয় এটাই যে ১২ বছর অন্তর কেন এই পূর্ণ কুম্ভ মেলা হয়?  

বন্ধুরা এই মহামেলায় সব থেকে বেশি ভিড় হয়। এই মেলাটি শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই মেলার প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হয়ে যায়। এই মেলার আয়োজন পবিত্র নদীর তীরে চারটি তীর্থস্থানের নিকটে হয়। এই স্থান গুলি হল - উত্তরাখণ্ডের গঙ্গা তীরের হরিদ্বার, মধ্যপ্রদেশে শিপ্রা নদীর তীরে উজ্জ্বয়িনী, গোদাবরী নদীর তীরে নাসিক ও উত্তরপ্রদেশের তিনটি নদী, গঙ্গা-যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থল প্রয়াগরাজ। 

মান্যতা অনুযায়ী যখন বৃহস্পতি কুম্ভ রাশিতে ও সূর্য মেষ রাশিতে প্রবেশ করে তখন মহাকুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। বন্ধুরা এমনিতে তো প্রয়াগের অর্থাৎ গঙ্গা যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলার মাহাত্ম্য অধিক। বন্ধুরা এই মেলার ইতিহাস খন্ডন করলে দেখা যায় এই মেলাটি সাড়ে ৮০০ বছরেরও অধিক পুরনো। বলা হয়ে থাকে আদি শঙ্করাচার্য এই মেলা সূচনা করেছিলেন, যার পরবর্তীতে তার শিষ্যরা গঙ্গা-যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে বিশেষ স্নানের ব্যবস্থা করেন। আবার অন্যদিকে কিছু পৌরাণিক কথা এমনও বলে যে, কুম্ভ মেলার আয়োজন সমুদ্রমন্থনের আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাটি হল - সমুদ্র মন্থন কালে একাধিক বস্তু বের হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল - অমৃত। আর অমৃত পাওয়ার লোভে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এমত অবস্থায় ধস্তাধস্তির ফলে কিছুটা পরিমাণ অমৃত পৃথিবীতে এসে পড়ে। সেই অমৃতের ফোটা গুলো যেই যেই স্থানে পৃথিবীতে পড়ে সেখানে সেখানেই কুম্ভ মেলা আয়োজন করা হয়। বন্ধুরা এই অমৃতের ফোঁটা গুলো মূলত পড়েছিল - প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে। আর তারপর থেকেই এখানে প্রতি ১২ বছর পর পর কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বন্ধুরা কিছু কথা আবার এমনও রয়েছে যে, অমৃতকে অসুরের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চন্দ্রমা নিজের কাছে অমৃতকে লুকিয়ে নেয় এবং তারপরে সেই অমৃতের কলসটি আবার গুরু বৃহস্পতি নিজের কাছে লুকিয়ে নেয়। তথা সূর্যদেব সেই কলশটি কে ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং এরপরে শনিদেব সেই কলশটিকে ইন্দ্র দেবের কাছ থেকে রক্ষা করেছিলেন। এই কারণে যখন এই গ্রহগুলির সংযোগ যখন একটি রাশিতে এসে মেশে তখন এই মহাকুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। বন্ধুরা আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি, এই গ্রহগুলির জন্যই অমৃত রক্ষা হয়েছিল। তারপরে সেই অমৃত ভগবান শ্রী নারায়ন গ্রহণ করেছিল। শুধু তাই নয় শাস্ত্র অনুযায়ী পৃথিবী বাসীদের একটি বছর দেবতাদের একদিনের সমান। এরপর গণনা অনুসারে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ ১২ সাল পর্যন্ত চলেছিল। আর বন্ধুরা এটাই কারণ যে ১২ বছর পর এই পূর্ণকুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়।

তো চলুন বন্ধুরা এবার জেনে নেওয়া যাক কোন সময় থেকে শুরু হতে চলেছে কুম্ভ? 

বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে গ্রহ একটি রাশিতে এক বছর পর্যন্ত থাকে। বৃহস্পতি যখন কুম্ভ রাশিতে ও সূর্য যখন মেষ রাশিতে প্রবেশ করে তখন হরিদ্বারে কুম্ভের আয়োজন শুরু হয়। 

বন্ধুরা কুম্ভ মেলা বেশ কিছু প্রকারের রয়েছে। সেগুলির মধ্যে প্রথমটি হলো - 

মহাকুম্ভ মেলা:- এটা কেবল উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে আয়োজন করা হয়। এটি ১৪৪ বছর পর অর্থাৎ ১২ টি পূর্ণকুম্ভ মেলার পর একটি মহাকুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। 

পূর্ণকুম্ভ মেলা:- এটি প্রতি ১২ বছর অন্তর অন্তর হয়। বিশেষ করে ভারতের চারটি খ্যাতিনামা জায়গায় এই কুম্ভ মেলা লক্ষ্য করা যায়। প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়। 

অর্ধ কুম্ভ মেলা:- অর্ধ কুম্ভ মেলা অর্থাৎ অর্ধেক কুম্ভ মেলা। এটি পূর্ণ কুম্ভ মেলার অর্ধেক হয়। এই অর্ধ কুম্ভ মেলা ছয় বছর অন্তর অন্তর হয়। অর্ধ কুম্ভ মেলা হরিদ্দার ও প্রয়াগরাজে আয়োজিত হয়। 

তো বন্ধুরা আশাকরি আপনারা কুম্ভ মেলা সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন কেন ১২ বছর অন্তর অন্তর কুম্ভ মেলা হয়। লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

আজ এখানেই শেষ করলাম। 

নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।