Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২২

ভগবান কি ছোটখাটো পাপ ক্ষমা করে দেন? || Do Gods forgive small Sins?



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - ছোট খাটো পাপ কি ভগবান ক্ষমা করে দেন?


বন্ধুরা আমাদের মধ্যে অধিক মানুষ এটাই জানেন না যে, পাপ কি এবং পূর্ণ কি? আজকালকার মানুষ তাদের ছোটখাটো ভুলগুলিকে হয়তো লুকিয়ে ফেলেন কিংবা সেটিকে তেমনভাবে নজর দেন না। আর বন্ধুরা আমাদের প্রত্যেকের করা এই ছোট ছোট ভুলগুলিই হিন্দু ধর্ম অনুসারে বাস্তবে পাপের শ্রেণীতে পড়ে। মানুষ এটা ভুলে যান যে, নিজের যে সমস্ত ছোট ছোট ভুলগুলিকে তারা এড়িয়ে যাচ্ছেন সেগুলিই আসতে চলা সময়ে তার জীবনে একটি বড় পাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বন্ধুরা আপনি কি জানেন, ভগবান আমাদের ছোটখাটো ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেন নাকি এর জন্যও আমাদেরকে সাজা পেতে হয়? যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই লেখাটি সম্পন্ন পড়ুন। আশাকরি এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার পর আপনি বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।


হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত কথা অনুযায়ী একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার পার্থ অর্জুনের সঙ্গে নগর পরিক্রমণ করতে বের হলেন। এইভাবে অনেকক্ষণ ঘুরতে ঘুরতে দুজনা একসময় একটি বনের কাছে এসে উপস্থিত হল। তখন তারা সেখানে একটি গাছের নিচে একটু বিশ্রামের জন্য বসে পড়েন। তারা বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুনতে পান কিছু মানুষ "চোর-চোর" বলে চিৎকার করছেন। ঠিক তখনই তারা দেখেন একটি মানুষকে তাদের দিকেই ছুটে আসতে। তখন অর্জুন বুঝতে পারে যে, এটাই চোর। আর অর্জুন সঙ্গে সঙ্গেই সেই মানুষটিকে ধরে ফেলে। অর্জুন তখন সেই ব্যক্তিটিকে বললেন - সুস্বাস্থ্য গঠিত ও বলবান হওয়া সত্বেও তুমি চুরি করছো, তোমার কি লজ্জা করে না? এরই মধ্যে গ্রামবাসীরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন এবং চোরটিকে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। তখন শ্রীকৃষ্ণ নিজের এবং তার পার্থ অর্জুনের পরিচয় দিয়ে গ্রামবাসীদের কে বলেন - আপনারা সকলে এই ব্যক্তিটিকে চোর কেন বলছেন? এই মানুষটি আপনাদের কি চুরি করেছে? 


তখন গ্রামবাসীরা উত্তরে বলেন -  হে প্রভু , এই দুষ্ট মানুষটি আমাদের বাগান থেকে থেকে ফল চুরি করেছে। এইজন্য এই চোরটিকে আমাদের হাতে তুলে দিন, সকল গ্রামবাসীরা মিলে এই চোরকে সাজা প্রদান করা হবে। তখন শ্রীকৃষ্ণ ওই মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করলেন - তুমি কি সত্যিই চুরি করেছো? আর যদি সত্যিই চুরি করে থাকো তাহলে- কেন? তখন সেই চোরটি বললেন- হে প্রভু, আমি খুবই ক্ষুধার্ত ছিলাম। যেই কারণে এই পাপ আমি না চাইতেও করে ফেলেছি। এটা শোনার পর শ্রীকৃষ্ণ গ্রামবাসীদের বলেন - এই ব্যক্তি নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে এবং সাজাস্বরূপ সে এক মাস পর্যন্ত আপনাদের ক্ষেতে কাজ করবে। এক মাসের সাজার কথা শুনে সেই চোর - শ্রীকৃষ্ণের কাছে অনুরোধ করে বলে, হে প্রভু ! এটা আমার প্রথম ভুল ছিল। কৃপা করে আমাকে ক্ষমা করুন। ক্ষমার কথা শোনার পরেই শ্রীকৃষ্ণ তার সাজা একমাস থেকে ছমাস করে দেন। শ্রীকৃষ্ণের সাজার কথা শোনানোর পর গ্রামবাসীরা সেই চোরটিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যান।

 

অন্যদিকে অর্জুন আবার এই পুরো ঘটনাটিকে খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করছিলেন। যখন সকল গ্রামবাসীরা সেখান থেকে চলে যান তখন অর্জুন নিজের মনের কৌতুহলবশত শ্রীকৃষ্ণের কাছে জিজ্ঞাসা করেন - হে বাসুদেব! চোরের মতে এটা তো তার প্রথম ভুল ছিল। তাহলে আপনি তার ক্ষমা চাওয়ার পরেও তার সাজা কমানোর বদলে বরং বাড়িয়ে দিলেন - এমনটা কেন করলেন, কৃপা করে আমাকে বলুন? 


এটা শোনার পর শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে তো একটু হাসলেন এবং তারপরে বললেন- হে পার্থ ! যাকে তুমি ছোট পাপ বলে মনে করছ, সেই ছোট ছোট পাপগুলি পরবর্তীতে বড় আকার ধারণ করে। আর এই পাপগুলি থেকেই মানুষেরা সর্বদা নজর এড়িয়ে চলেন। মানুষ এটা ভাবে না যে, এই ছোট ছোট পাপগুলিই পরবর্তীকালে বড় আকার ধারণ করতে পারে।


এরপর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন - এই বিষয়টি তোমাকে বোঝানোর জন্য আমি তোমাকে একটি গল্প বলছি, তাহলে হয়তো তুমি ভালোভাবে বুঝতে পারবে। আর সবশেষে তুমিই আমাকে বলবে যে আমি ওই চোরটির সঙ্গে ঠিক করেছি নাকি ভুল? এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার গল্পটি শোনাতে শুরু করলেন। 


একদা একসময় এক ব্রাহ্মণ তার দরিদ্রতার কারণে দুঃখী হয়ে রাজার কাছে কিছু সাহায্য চাইতে আসে। আর সেই রাজা ছিল খুবই দয়ালু প্রকৃতির। কিন্তু এরই সাথে ছিল তিনি খুবই চতুর। তিনি সকলকে দান করতে ভালোবাসতেন। কিন্তু, তার একটি শর্ত ছিল, আর সেই শর্ত যে পূরণ করতে পারতো রাজা শুধু তাকেই দান করত। রাজা কাউকে দান করার আগে সেই ব্যক্তি বা পাত্রকে পরীক্ষা করে দেখে নিতেন সেই পাত্রটি সুপাত্র নাকি অপাত্র। আর রাজার এই পরীক্ষায় পাস করতে পারলেই রাজা সেই ব্যক্তিকে তার ইচ্ছা মতো দান করতেন। রাজা দান করার আগে মানুষের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চারটি দরজা নির্ধারণ করেছিলেন। আর প্রত্যেকটি দরজায় একটি করে শর্ত ছিল , এই চারটি দরজার প্রত্যেকটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই তবেই সে রাজার কাছে দান চাইতে যেতে পারবে। 


সেই দরিদ্র ব্রাহ্মণ রাজার মহলের কাছে পৌঁছানোর পর মহলের প্রথম দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। প্রথম দরজা দিয়ে ঢুকতেই এক গণিকা ব্রাহ্মণের দিকে এগিয়ে আসে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করে- আপনি রাজমহলের ভিতরে কেন যেতে চান? তখন ব্রাহ্মণ উত্তরে বলে আমি রাজার কাছে কিছু ধনসম্পত্তির সাহায্য নিতে এসেছি। তখন সেই গণিকা বলে - হে ব্রাহ্মণ দেব! আপনি রাজার কাছে ধন সম্পত্তি চাইতে অবশ্যই যান কিন্তু এই দুয়াটিতে রাজা আমাকে অধিকার দিয়ে রেখেছে। এই কারণে আমার অনুমতি ছাড়া আপনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। আমি একজন গণিকা! অতএব আমাকে সন্তুষ্ট না করে আপনি ভেতরে যেতে পারবেন না। একজন গণিকার মুখে এরকম কথা শুনে সেই ব্রাহ্মণের মাথা নিচু হয়ে যায়। এরপর সেই ব্রাহ্মণ - ধিক্কার জানায়। তখন সেই গণিকা ব্রাহ্মণ কে বলেন তাহলে আপনি অন্য দরজা দিয়েই ভিতরে যান। তারপর সেই ব্রাহ্মণ অধর্ম করার থেকে ভালো অন্য দরজা দিয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করে।


এরপর যখন সেই ব্রাহ্মণ দ্বিতীয় দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তখনই তার সামনে দুইজন দুয়ার রক্ষক এসে দাঁড়ায়। আর তারা ব্রাহ্মণ কে বলে- এই দুয়ারের দায়িত্ব রাজা আমাদেরকে দিয়েছে। যে আমাদের শর্ত মেনে নেবে তারাই কেবল এই দুয়ার দিয়ে ভেতরে যেতে পারবে। এরপর তারা ব্রাহ্মণ কে বলে - আমাদের মাংস অতি প্রিয়। আর এখন ভোজনের সময়ও হয়ে গেছে। আর আজকে ভোজনে হরিণের মাংস রান্না হয়েছে। তাহলে চলুন আগে আপনি আমাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ভজন করবেন, তারপরে মহারাজের সঙ্গে দেখা করবেন। এই শুনে ব্রাহ্মণ বলে আমি একজন নিরামিষাসী ব্রাহ্মণ, আমি মাংস খেতে পারব না। এটা শুনে ওই দুয়ার রক্ষকরা পরিষ্কার জানান তাহলে তারাও তাকে এই দুয়ার দিয়ে মহলের প্রবেশ করতে দিতে পারবেন না। আপনাকে তবে অন্য কোন দরজা দিয়ে যেতে হবে।


এরপর ব্রাহ্মণ তৃতীয় দুয়ারে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে ব্রাহ্মণ দেখে কিছু জন নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করছিল। ব্রাহ্মণ তাদের না দেখার ভান করেই ভেতরে যেতে শুরু করে। আর ঠিক তখনই এক ব্যক্তি ব্রাহ্মণ কে এসে বলে আমাদের সঙ্গে একটু নেশা করে নাও তবেই তুমি ভেতরে যেতে পারবে। ব্রাহ্মণ এটা কেউ উচিত মনে না করে চতুর্থ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে থাকে। চতুর্থ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সময় ব্রাহ্মণ দেখেন সেই দরজার কাছে কিছু লোক সেখানে জুয়া খেলছে। আর তাদের শর্ত ছিল এই দুয়ার শুধুমাত্র জুয়ারীদের জন্য। যে ব্যাক্তিরা জুয়া খেলবে তারাই এই দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। জুয়া খেলা ধর্মের বিরুদ্ধে ছিল, তাই ব্রাহ্মণ খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। সে ভাবতে থাকে কি করে সে ভিতরে যাবে। কারণ চারটি দরজাতেই ধর্মের বিরুদ্ধে শর্ত রয়েছে, আবার অন্যদিকে সেই ব্রাহ্মণের অর্থের খুবই প্রয়োজন তার রাজার সঙ্গে দেখা করতেই হবে। 


এরপর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন কে বলছেন - হে পার্থ! তার একদিকে ধর্ম ছিল এবং অন্যদিকে ধর্মের বিরুদ্ধে শর্ত ছিল। এই দুটি নিয়ে তার মনের মধ্যে যুদ্ধ হতে শুরু হয়। আর তখনই সে সব থেকে বড় ভুল করে। সে মনে করে জুয়া খেলা খুব ছোট পাপ, এই পাপ যদি সামান্য কিছু পরিমাণ করা হয় তাতে তার কোনো ক্ষতি হবে না। এরপর সেই ব্রাহ্মণভাবে তার কাছে দুটাকা রয়েছে, এই দু টাকা দিয়ে সে যদি জুয়া খেলে নেয় তাহলে সে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পাবে। তারপর সে সেই ২ টাকা দিয়ে জুয়া খেলতে শুরু করে। ব্রাহ্মণ জুয়া খেলায় যতটা পারদর্শী না হলেও তার ভাগ্য ভালো ছিল। সে সেই দু টাকা থেকে চার টাকা, ৪ টাকা থেকে ৮ টাকা, ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা এইভাবে সে টাকা জিততেই থাকে। এমত পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণ রাজার কাছে যাওয়ার কথা ভুলেই যায়। আর সে জুয়া খেলায় প্রচুর পরিমাণে মত্ত হয়ে যায়। এরপর সে সন্ধ্যার মধ্যে হাজার হাজার টাকার অর্থ জিতে নেয়। সন্ধ্যার সময় জুয়ার আসর বন্ধ হয়ে যায়। সেই ব্রাহ্মণ তখন সারাদিনে কিছুই খায়নি, সে ক্ষুধায় কাতর ছিল। তার কাছে ভুল পথে সঞ্চয় করা টাকা ছিল, তাই বুদ্ধিও এদিক-ওদিক হতে শুরু করে। তারপর ব্রাহ্মণভাবে এখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে কেইবা আমায় দেখতে পাবে! দ্বিতীয় দরজায় গিয়ে মাংস ভোজনই করে নেওয়া যাক। যার মাধ্যমে তার ভোজন করা হয়ে যাবে আর তারই সঙ্গে কোন টাকাও খরচা হবে না। আর হলে তো শুধু সামান্য পরিমাণ পাপই হবে, ওতে আর কি হবে! আর আমি তো অন্যের পাপের প্রায়শ্চিত্তই করাই, সেক্ষেত্রে আমার পাপেরও প্রায়শ্চিত্ত আমি নিজেই ঠিক করে নেব। এইভাবে ব্রাহ্মণ গেল দ্বিতীয় দরজায়। দ্বিতীয় দরজায় গিয়ে ব্রাহ্মণ মাংস আহার করে। এর আগে কোনদিন ব্রাহ্মণ মাংস আহার করেনি। যে কারণেই প্রথমবার মাংস আহার করার পরে ব্রাহ্মণের শরীর অন্যরকম লাগতে থাকে। তখন ব্রাহ্মণের ইচ্ছে জাগে নেশা জাতীয় কিছু পান করার। তখন সেই ব্রাহ্মণজাতীয় দরজায় এবং সে ভাবে এখান থেকে কিছু নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করে নেয়া যাক। হলে তো শুধু সামান্য পরিমাণ পাপই হবে, আর কি বা হবে ! এই ভেবে সে তৃতীয় দরজা থেকে নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করে।


এই মত অবস্থায় ব্রাহ্মণ তিন প্রকারের নেশায় জর্জরিত ছিল। প্রথমত ব্রাহ্মণের কাছে অর্থ ছিল যে কারণে তার অর্থ লোভ জেগেছিল। দ্বিতীয়ত ব্রাহ্মণ মাংস আহার করে, সেই জন্য তার মনের মধ্যে আমিষ খাবার নেশাও ছিল। আর তারপরে পাপ কে বাড়ানোর নেশা জাতীয় পদার্থও তার শরীরের মধ্যে এসে গিয়েছিল। আর মদ্যপানের পর সুন্দরী রমণীর ভাবনা আশা স্বাভাবিক। তখন ব্রাহ্মণ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকার কারণে পাপ ও পুণ্যের মাঝে কোন পার্থক্য দেখেনা। তখন ব্রাহ্মণ ভাবতে থাকে তাকে প্রথম দরজায় এক গণিকা কামের নেমন্তন্ন করেছিল। আর রাত্রে এটা অস্বীকার করা পাপ। তখন সেই ব্রাহ্মণের মাথায় নেশা চরে গিয়েছিল। সে পাপ পুণ্যের মাপ দন্ড নিজের হিসেবেই ঠিক করতে শুরু করে। ব্রাহ্মণ ভাবে এতগুলো ছোটখাটো পাপ যখন করলাম তাহলে আরেকটি পাপ করেই নি। তারপরে সমস্ত পাপকে একসঙ্গে প্রায়শ্চিত্ত করে নেব। এরপরে ব্রাহ্মণ যায় সেই প্রথম দরজায়। গণিকা তাকে সন্তুষ্ট করে এবং সবশেষে সে দিনের বেলায় জুয়া খেলে যেই অর্থ ব্রাহ্মণ জিতেছিল সব অর্থ তার থেকে নিয়ে নেয় গণিকা। এইভাবে সারারাত কাটিয়ে দ্বিতীয় দিন সকালে যখন ব্রাহ্মণ ঘুম থেকে উঠে তখন সে দেখে সেই গণিকা তাকে ঘেন্না চোখে দেখে এবং ব্রাহ্মণকে বলে - কাঙাল সাথীর তার কোনো প্রয়োজন নেই, সে যেন তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়।


অন্যদিকে এই সমস্ত খবর রাজার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। ওদিকে আবার ব্রাহ্মণ আবার চতুর্থ দরজায় এসে একে একে সব দরজায় ঘুরতে থাকে এবং বলতে থাকে - আমি সব শর্তে রাজি আছি , আমাকে একবারও মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে দাও। কিন্তু ওই দিনকে সেখানকার নিয়ম পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। শর্তের সাথেও তাকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে রাজি হয় না। আর তাকে সমস্ত দরজা থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন ব্রাহ্মণ প্রবেশ দরজার বাইরে বসে আপন মনে ভাবতে থাকে আমি রাজার কাছে অর্থ তো পেলামই না। আর আমার কাছে যে দু টাকা ছিল তাও হারালাম। ব্রাহ্মণ না পেলে মায়া, আর না পেলেও রাম। ছোট ছোট পাপ করে কোন হানি হয় না - এই চিন্তা ভাবনার ভুলে সে নিজের ধর্ম ও অর্থ দুটোই হারায়।


এই কারণেই বন্ধুরা শ্রীকৃষ্ণ বলেন নিজের উপর বিচার করা প্রয়োজন। আমরা এই ব্রাহ্মণ এর মত ভুল করছি না তো। কোন পাপকেই ছোট মনে করে এড়িয়ে চলা উচিত নয়। কেননা এই ছোটখাটো পাপ থেকেই বড় পাপের উৎপত্তি হয়। আর এই পাপের গর্তে একবার পড়ে গেলে তার থেকে রেহাই পাওয়া খুবই কষ্টকর। ছোটখাটো পাপ থেকে আমাদের এরকম ভাবে বাঁচতে হবে যেমন আমরা ছোট্ট একটি আগুনের শিখা থেকেও নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখি। কেমন না ছোটখাটো পাপ গুলি ওই ছোট্ট একটি আগুনের ফুলকির মতনই। যা ভবিষ্যতে বড় আকার ধারণ করতে পারে। জীবনে কোন মানুষ দুজনের থেকে কোন কিছু লুকাতে পারে না। এক ঈশ্বরের থেকে দ্বিতীয়তঃ নিজের থেকে। আর নিজের কাছে একবার যদি নিজে ছোট হয়ে যান তাহলে সারা জীবনই আপনার বেঁচে থেকেও মরার মত অনুভুতি হবে। এই কারণেই বন্ধুরা ছোটখাট পাপকে সর্বদা এড়িয়ে চলুন। 


সবশেষে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন - হে অর্জুন, এই কারণের জন্যই আমি ওই চোরকে এই ছোট্ট একটি ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিয়েছে। 


তো বন্ধুরা আশা করি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং আপনারা আপনাদের প্রশ্নের উত্তরটি পেয়ে গেছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ। 

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।।


আরো পড়ুন:- এই ১১ টি কর্ম নির্ণয় করে আমাদের পরবর্তী জন্ম - গরুড় পুরাণ অনুসারে  CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা