Breaking

Search Content

Follow Us

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৩

সত্যিই কি গ্রহ-নক্ষত্র মানুষের ভবিষ্যত ঠিক করে? || Who Decide The Future of a Person?



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


বন্ধুরা আপনারা অনেক মানুষের মুখে এই কথাটি অবশ্যই শুনেছেন যে, আমাদের জীবনে যা কিছু হচ্ছে তা সবকিছুই গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাবের কারণে হচ্ছে। আবার এর বিপরীতে কিছু মানুষ এই কথাটি কে একেবারেই না মেনে তারা বলেন সব আমাদের কর্মের উপর নির্ভরশীল। এমত অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে - বাস্তবে কি সত্যিই আমাদের জীবনে গ্রহ নক্ষত্রের কোন প্রভাব রয়েছে? 


বর্তমানে বহু মানুষেরা কিছু শুরু করার প্রথমে গ্রহ নক্ষত্রের দশাকে কোনো জ্যোতিষবিদের কাছে বা শাস্ত্রবিদের কাছে আগে দেখান। যেমন উদাহরণস্বরূপ - একটি নতুন ঘরে প্রবেশ করার সময়, বিবাহের সময়, কোন শিশুর নামকরণের সময়। বন্ধুরা এই গ্রহ নক্ষত্রের সম্পর্ক জ্যোতিষ বিদ্যার সঙ্গে অঙ্গা আঙ্গি ভাবে যুক্ত। এই কারণে চলুন সর্বপ্রথম জ্যোতিষ কে বুঝে নেওয়া যাক। কেননা এই বিদ্যার মাধ্যমে গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব সম্পর্কে বোঝা যায়।


 বন্ধুরা এমত অবস্থায় যদি প্রশ্ন ওঠে জ্যোতিষ কি? তাহলে বলতে হয়, জ্যোতিষকে যদি পরিভাষিত করা হয় তাবে 'জ্যোতিষ' শাস্ত্রজ্ঞান অর্থাৎ গ্রহ ও নক্ষত্রের অধ্যায়ন করাকে বোঝানো হয়। এই জ্যোতিষের অধ্যয়নের ফলে প্রাকৃতিক ও সাংসারিক প্রভাব এবং মানব জীবনের সঙ্গে সম্বন্ধিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর তার প্রভাব তথা তার ভবিষ্যৎ কে অনুমান করে এবং ভবিষ্যতে আসতে চলার সমস্যার সমাধান সম্পর্কে বলে। এই বিদ্যার মাধ্যমে মানুষ নিজের জীবনে আসতে চলা দুর্ঘটনা অথবা কঠিন পরিস্থিতির সম্পর্কে আগে থেকেই সাবধান হতে পারে কিমবা সেই কঠিন পরিস্থিতির প্রভাব গুলোকে কম করতে পারে।


বন্ধুরা জ্যোতিষ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে বুঝে নেওয়ার পর চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এই জ্যোতিষ শাস্ত্র জ্ঞান আমাদের জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে? বন্ধুরা এই বিষয়টি বুঝে নেওয়ার জন্য আমাদের একটি পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে প্রথমে আলোচনা করতে হবে। 


একদা ভগবান বিষ্ণু গরুড়ের উপর চেপে কৈলাস পর্বতে গেলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর দুয়ারের সম্মুখে গরুড় কে রেখে ভগবান বিষ্ণু মহাদেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। কৈলাসের অপ্রীতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে গরুড় খুবই মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই সময় তখন তিনি একটি ছোট্ট পাখি দেখতে পেলেন। ওই ছোট্ট পাখিটি খুবই সুন্দর ছিল। গরুড় সেই সময়ে সকল বিচার ভুলে গিয়ে সেই পাখিটির দিকে আকর্ষিত হয়ে দেখতে লাগলেন। সেই সময় তখন সেখানে যমরাজ এসে হাজির হলেন এবং কৈলাস পর্বতের ভিতরে যাওয়ার আগে তিনি আশ্চর্য সঙ্গে ওই পাখিটির দিকে তাকালেন। তখন গরুড় বুঝে গেলেন যে ওই পাখিটির অন্তিম সময় কাছিয়ে এসেছে এবং কৈলাস পর্বত থেকে ফেরার সময় যমরাজ ওই পাখিটিকে নিজের সঙ্গে করেই যমলোকে নিয়ে যাবেন। গরুড়ের মনে তখন দয়া উৎপন্ন হল। এত সুন্দর ছোট্ট একটি পাখিকে সে মরতে দেখতে পারবে না। এই কারণে গরুড় সেই পাখিটিকে নিজের পাঞ্জরের মধ্যে নিয়ে কৈলাস থেকে হাজার কোষ দূরে একটি জঙ্গলে নিয়ে এসে ছেড়ে দেন। তারপরে গরুড় আবার কৈলাস পর্বতে ফিরে আসেন। এরপর যখন যোমরাজ বাইরে এলেন তখন গরুড় নিজের কৌতূহলবশত তার কাছে জিজ্ঞাসাই করে নিলেন যে, কেন তিনি ওই পাখিটিকে এত আশ্চর্যপূর্বক দেখছিলেন? 

 

তখন যমরাজ গরুড় কে বললেন, হে গরুড় ! আমি যখন ওই পাখিটিকে দেখছিলাম তখন আমি দেখলাম এই পাখিটি কিছুক্ষণ পরেই হাজার কোষ দূরে একটি নাগ দ্বারা মৃত্যু প্রাপ্ত হবে। আমি তখন এটাই ভাবছিলাম যে, ওই ছোট্ট একটি পাখি এত তাড়াতাড়ি এতদূরে কি করে যাবে ! কিন্তু, এখন যখন সে এখানে নেই তাহলে নিশ্চিত রূপেই সে মারা গেছে।


এখন বন্ধুরা আপনারাই বলুন গরুড়ের সিদ্ধান্ত নির্ণয় ভালো ছিল নাকি খারাপ? আসলে বন্ধুরা নির্ণয় নেওয়ার সময় আমরা সব সময় এটাই আশা করে থাকি যে পরিণাম সবসময় আমাদের অনুকূলে থাকবে, আর আমরা সফলতা পাব। কিন্তু, বাস্তবের সব সময় সফলতা যে আসবেই তার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আমাদের নির্ণয় সব সময় ঠিক হয় না। এই কারণে সফলতার মার্গ দর্শনের জন্য জ্যোতিষ শাস্ত্রের অধ্যায়ন আবশ্যক হয়ে পড়ে। জীবনে জ্যোতিষ শাস্ত্রের অধ্যায়নের ফলে সফলতার পরিমাণ বৃদ্ধি হতে পারে। যার কারনে একজন ব্যক্তি সফল এবং পরিপূর্ণ হতে পারে। আমাদের সকল নির্ণয় কোনো না কোনো ধারণার উপর চিন্তা করে নেয়া হয়। আমরা কখনো সবকিছু একসঙ্গে বুঝে উঠতে পারিনা। এই কারণে কোনো না কোনো পর্যায়ে ধারণার একটু গরমিল হলেই আমাদের নির্ণয়টি ভুল হয়ে যায়। অনেকবার অনুমান ভুল হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধুরা এখানে জ্যোতিষ শাস্ত্রের অধ্যায়নের মাধ্যমে আমরা আমাদের অনুমান বা ধারণাকে ভুল করার থেকে অনেকটাই বাঁচাতে পারি। সকল নির্ণয় নেওয়ার আগে নিজের ধারণা বা অনুমান গুলিকে ভালো করে বারবার ভেবে দেখা প্রয়োজন। সেই সময় আপনি চাইলে নিজের স্বয়ং জ্যোতিষশাস্ত্র অধ্যয়ন করে তার ভিত্তিতে নির্ণয় নিতে পারেন, কিমবা কোনো জ্যোতিষ শাস্ত্রবীদের কাছে পরামর্শ নিয়ে তারপর সঠিক নির্ণয় গ্রহণ করতে পারেন। এই কারণেই জ্যোতিষ শাস্ত্র লাখ লাখ মানুষের কাছে খুবই মহত্ত্বপূর্ণ। জ্যোতিষ শাস্ত্র একটি দিবিও জ্ঞান। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের সম্পর্কে জানতে সহায়তা মেলে। জ্যোতিষ শাস্ত্র পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রাণীদের ওপর গ্রহের প্রভাব সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। একজন ভালো জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ গণনা করে এটাও অনুমান করে বলতে পারে যে, এইবার বৃষ্টি ভারী হবে নাকি কম! শুধু তাই নয় যতদূর ভালো এবং খারাপ প্রভাবের সম্বন্ধ রয়েছে সেই সম্বন্ধে বলা হয়েছে যখন মরশুম পাল্টায় তখন কিছু মানুষ রোগাক্রান্ত হন। এটি এই কারণে হয় যে, যার মধ্যে যতটা প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে সে ততটা ভালোভাবে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে পারবে। ঠিক সেরকমই গ্রহের প্রভাবও প্রত্যেকটি প্রাণীর উপর পড়ে। যার ফলে একাধিক মানুষ একাধিক সমস্যার ভুক্তভোগী হয়। কেউ কেউ সেই সমস্যাগুলিকে কাটিয়ে উঠতে পারে, আবার কেউ পারেনা। প্রত্যেকটি গ্রহ ভালো কিংবা খারাপ কোনোটিই নয়। কেননা প্রত্যেকটি গ্রহই এই পৃথিবীতে কিছু না কিছু জিনিস উৎপন্ন বা নিয়ন্ত্রণ করছে। যেমন চন্দ্রমার কারণে জোয়ার ভাটা হয়, চন্দ্রমা পূর্ণিমা তিথিতে এক রকম এবং অমাবস্যা তিথিতে আরেক রকম। ঠিক সেরকম সূর্য দেবতাও বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার ভাবে কিরন দেয়। এমত অবস্থায় কোন ব্যক্তি জন্মালে সেই সময় গ্রহের স্থিতি কেমন রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে ব্যক্তির জন্ম কুণ্ডলী তৈরি হয়। এক্ষেত্রে কোন গ্রহ দুর্বল থাকতে পারে আবার কোন গ্রহ ভারী প্রভাবও ফেলতে পারে। আর গ্রহের প্রভাবেই ওই ব্যক্তির প্রকৃতি সৃষ্টি হয়। যেখানে খারাপ কিছু যদি ভবিষ্যতে হাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে তাহলে তা বদলানোও সম্ভব এই জ্যোতিষ শাস্ত্র জ্ঞানের মাধ্যমে। কিন্তু বন্ধুরা এক্ষেত্রে বলে রাখি সেই জ্যোতিষী শুধুমাত্র এই সমস্ত বিষয়গুলি ভালো করে পর্যালোচনা করে দেখতে পারবেন যার কাছে এই জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত বেশ কিছু বছর ধরে কিছু মানুষ একে নিজের ব্যবসাতে পরিণত করেছেন। যার ফলে কলিযুগের মানুষেরা বহুবার প্রতারিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনার সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন মানুষের জীবনে জ্যোতিষ শাস্ত্র গানের গুরুত্ব সম্পর্কে। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- ১২ বছর পর কেন হয় কুম্ভ মেলা? মহাকুম্ভ, পুর্ণকুম্ভ ও অর্ধ কুম্ভ মেলা‌ কি ? CLICK HERE






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা